সম্পদশালি হতে মাদক ব্যবসায় দুই ভাই, মামলার সাক্ষীকে হুমকির অভিযোগ
- আপডেট টাইম : ০২:২২:৫৯ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
- / ২৫৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ সহোদর দুই ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল অল্প সময় সম্পদশালি হবেন। আর এ জন্যই বেছে নেন মাদক ব্যবসাকে। বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি তাদের বাড়ি হওয়ার সুবাদে নিরাপদে মাদক ব্যবসা করছিলেন, সহোদর দুই ভাই মোঃ ওয়াসিম আলী (৩৫) ও মোঃ উজ্জল হোসেন (৩১)। তাঁদের বাড়ি রাওথা গ্রামে (স্কুল পাড়া/দত্তপাড়া)। বাঘা থানার সীমানা লাগোয়া চারঘাট থানাধীন রাওথা গ্রাম। এ গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে ওয়াসিম আলী ও উজ্জল হোসেন।
দুই ভাইয়ের এই ব্যবসা ধরে ফেলে বাঘা থানা পুলিশ। বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ ব্রাক অফিসের পাঁকা রাস্তার সামনে থেকে আটক করা হয়, দুই ভাইয়ের একজন উজ্জল হোসেনকে। উদ্ধার করা হয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুল্যের ১০০ (এক)শ’ গ্রাম হিরোইন । পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক উজ্জল জানায়, বিক্রির জন্য ওই হিরোইন তার ভাই ওয়াসিমের কাছ থেকে নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বাঘা থানার উপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম বাদি হয়ে দুই ভাইকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। বাঘা থানার মামলা নম্বর-১৪ তাং-১৫-০২-২০২২ ইং।
এসব তথ্য জানিয়ে উপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম জানান,সংগীয় উপরিদর্শক রবিউল ইসলামসহ ফোর্স নিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় গোপন সংবাদের সুত্রে জানতে পারেন মাদক পাচারের কথা। সেই সুত্র ধরে ওৎ পেতে থাকাকালিন সময়ে মোটরসাইকেল যোগে এক ব্যক্তি চারঘাট-বাঘা সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় গতিরোধ করে তল্লাশি করা হয়। এ সময় উজ্জল হোসেনের দেহ তল্লাশি করে ১০০ (এক)শ’ গ্রাম হিরোইন উদ্ধার করে পুলিশ। যার আনুমানিক মূল্যে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উদ্ধার করা হিরোইন উজ্জলের কাছে বিক্রির জন্য ওয়াসিমকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলায় সাক্ষী না দেওয়ার জন্য ওয়াসিম ও তার ছোট ভাই জুয়েল রানার বিরুদ্ধে একজন সাক্ষীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। মামলার সাক্ষী উপজেলার মহদিপুর গ্রামের নাজিম উদ্দীন গত ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন বলে জানান এসআই শাহ আলম। (বাঘা থানার জিডি নম্বর-৮৬৬)
উপ পরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম জানান, তারা দেশের বিভিন্ন জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে আসছিলেন। মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের অভিযোগে তাদের দুই ভাইয়ের নামে বাঘা ও চারঘাট থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে উজ্জলের নামে বাঘা থানায় ৩টি ও চারঘাট থানায় ৩টি মামলা রয়েছে। আর ওয়াসিম আলীর নামে বাঘা থানায় ৪টি ও চারঘাট থানায় ১টি মামলা রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব মামলা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহোদর দুই ভাইয়ের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় জেল হাজতে রয়েছেন উজ্জল হোসেন। আর গ্রেফতার এড়াতে ওয়াসিম আলী আতœগোপনে আছেন বলে জানান এই এস আই ।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,চোরাচালান ব্যবসার মাধ্যমে আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। আর এই ব্যবসার মাধ্যমে অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন তারা। মামলা হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে আবার শুরু করেন ব্যবসা। তবে তাদের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলে কথা বলতে সাহস পাননি।
মুঠোফোনে কথা হলে মামলার পলাতক আসামি ওয়াসিম আলী বলেন, আমাদের দুই ভাইকে মাদক মামলায় জড়িয়ে ফাঁসানো হয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে পাশের গ্রামের লোক পুলিশের যোগসাজসে হিরোইন দিয়ে মামলা দিয়েছে। তার দাবি, ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে রাওথার নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে তার মায়ের চিকিৎসার জন্য বড় ভাই রাজ্জাকের বাড়িতে টাকা নেওয়ার জন্য বের হন উজ্জ্বল হোসেন । বড় ভাই রাজ্জাক থাকেন মীরগঞ্জ সীমান্ত এলাকার রাওথা গ্রামের নদীর ধারের বাড়িতে। সেখানে যাওয়ার পথে পালপাড়া মসজিদ এলাকায় বাঘা থানার এসআই রবিউল ইসলাম তার গতিরোধ করে বাঘা থানা এলাকায় নিয়ে যায়। পরে রুবেল ও বুলবুল- পলাশের মাধ্যমে তার হাতে হিরোইন ধরিয়ে দেয়। পরে এসআই রবিউল ইসলামের নাম ব্যবহার করে রিয়েল প্রথমে ১লাখ, পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। কোন টাকা দিতে চাননি বলে মামলা দিয়েছে বলে দাবি করেন ওয়াসিম। এতো টাকার হিরোইন দিয়ে কেন ফাঁসাতে যাবে, এমন প্রশ্ন করা হলে ওয়াসিম বলেন, রুবেল ও বুলবুলের সাথে আগের শত্রুতা রয়েছে।
কথা বলার জন্য মুঠোফোনে রিয়েলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে রুবেল ও পলাশ মুঠোফোনে জানিয়েছেন উদ্ধার করা ১০০ গ্্রাম হিরোইনের মূল্যে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এত টাকা মূল্যের হিরোইন কিনে, কেন ফাসাতে যাবো। রুবেল বলেন,ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। পলাশ বলেন, একটি মামলার বিষয়ে রাতে থানা থেকে ফিরার পথে মীরগঞ্জ মোড়ে পুৃলিশের গাড়িতে একজনকে দেখে,নাম জানতে চাইলে পুলিশ তার নাম উজ্জল বলে জানায়। তাদের দাবি মামলায় জড়িয়ে আবোল তাবোল বলে বেড়াচ্ছে।
এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, উজ্জলকে আটকের পর তাদের লোকজন আমাকে বলে, ১ লক্ষ টাকা দিচ্ছি উজ্জলকে ছেড়ে দেন। তাদের কথায় রাজি না হয়ে পরিষ্কার বলেছি মাদকের বিষয়ে কোন ধরনের আপস হবে না।
তারা চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের মাদক ব্যবসা ছাড়া, অন্য কোন ব্যবসা নেই। নিজেদের ব্যবসাকে আড়াল করতে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে । তবে অভিযানে উপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলমের সাথে সংগীয় অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন বলে জানান তিনি।##