র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে অসন্তোষ জানাল বাংলাদেশ
- আপডেট টাইম : ০৫:১৪:৫০ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২১
- / ২৯১ ৫০০০.০ বার পাঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন মার্কিন দূতকে বলেন, একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ ‘সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের জন্য দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক আলাপসহ সক্রিয় আলোচনার প্রয়োজন।
শনিবার সকালে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ওই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশের অসন্তোষের কথা জানান।
জবাবে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগের বিষয়টি আমলে নিয়ে তা ওয়াশিংটনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন।
পরে দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিব মোমেনের কার্যালয়ে এলে তিনি বাংলাদেশের অসন্তোষ প্রকাশ করে জানান যে- মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই একতরফাভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূতকে বলেন, আগে থেকে কোনো ধরনের ইঙ্গিত ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ ‘সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞাটি’আরোপের জন্য দু’পক্ষের মধ্যে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক আলাপসহ সক্রিয় আলোচনার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের আইন প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে কিছু বিপথগামী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে কোনো আইন শৃঙ্খলা সংস্থার উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা ঠিক নয়।
এ সময় মোমেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এমন একটি একটি সরকারি সংস্থাকে ‘অবমূল্যায়ন’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- যেটি জঙ্গিবাদ, মাদক পাচার ও অন্যান্য জঘন্য ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখসারিতে রয়েছে। অথচ এই অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানকে মার্কিন প্রশাসনও ধারাবাহিকভাবে প্রাধান্য দিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, যে সুনির্দিষ্ট ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সে সম্পর্কে এর আগেই বিভিন্ন সময়ে যথাযথ বিচার ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তথ্যসহ কেবল মার্কিন প্রশাসনই নয়, বরং জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার কাছে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তটি প্রকৃত ঘটনার পরিবর্তে অপ্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে নেয়া হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূতকে বলেন, এই অভিযোগের সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের ঘটনাগুলোর কোনো নিশ্চিত সম্পর্ক নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পররাষ্ট্র সচিব মার্কিন রাষ্ট্রদূতে বলেছেন, বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করে নেওয়া এই সিদ্ধান্তটি জাতিসংঘ অভিহিত ‘জাতিগত নিধন’ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বর্ণিত গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত দেশগুলোর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে।
তিনি রাষ্ট্রদূতে জানান, বাংলাদেশ সরকার আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ অথবা বিপথগামীতা কঠোর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে।
মোমেনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সব ইউনিফর্মধারী বাহিনী তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের অন্যায় আচরণের অভিযোগ তদন্তে আইনি ও প্রশাসনিক পদ্ধতির অনুসরণ করে এবং র্যাব এর ব্যাতিক্রম নয়।’
ব্যাতিক্রম নয়।’
পররাষ্ট্র সচিব সংলাপ, যোগাযোগ ও সহযোগিতার পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আগামী বছরে বন্ধু-প্রতিম দুটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের কথা তুলে ধরেন।তলবের সময়
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগের বিষয়টিকে আমলে নিয়ে তা ওয়াশিংটনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনার সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এই অভিমতও দিয়েছেন যে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার বিদ্যমান কাঠামো এবং উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মধ্য দিয়ে চমৎকার ও বহুমাত্রিক এই সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করার সুযোগ রয়েছে।
পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মার্কিন সরকারের ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকতে চাওয়ার সদিচ্ছার বিষয়টিও আর্ল মিলার উল্লেখ করেছেন।