ঢাকা ০৩:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
জেলে পল্লীর নীরব কান্না , দুশ্চিন্তাই এখন নিত্যদিনের সঙ্গী! বাঁচতে চায় জামিলা সকলের নিকট মানবিক সাহায্যের আবেদন মধ্যরাতে রাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগত শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু এখনো ঊর্ধ্বমুখী তেল-চালের দাম, অস্থির মসলার বাজার ট্রাম্প ২.০: বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের ‘নাক গলানো’ কী কমবে? ভৈরবে ট্রেন থেকে ছিনতাইকারী তিন নারী গ্রেপ্তার গাজীপুরের শ্রীপুরে বিপ্লব হত্যা মামলার আসামী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অসহায় পুলিশ প্রশাসন জেনেও নীরব স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আর ফ্যাসিবাদী সহযোগীর মিলনে গণতন্ত্র পরিপুষ্ট হবেনা ।।ঠাকুরগাঁওয়ে শামসুজ্জামান দুদু জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মোংলা উপজেলার ২নং বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের ওর্য়াড কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন টাঙ্গাইলে আলহাজ্ব মোজাম্মেল হককে ও জাতীয় পার্টির কার্যক্রমকে কঠোর হস্তে দমন করবে বিএনপি-জামায়াত নেতারা, আওয়ামী-জাপা দালাল সাংবাদিকদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব

স্বাধীনতার পর তাই শাসনতন্ত্র রচনার সময় বাংলাদেশের চার মূল নীতি: সমাজতন্ত্রের স্বরূপ সন্ধানে

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৭:০৩:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ২৪২ ৫০০০.০ বার পাঠক

বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান

১৯০ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তিরস্বাদ আস্বাদনের জন্য, ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া ভারতবর্ষের পাকিস্তান অংশের সঙ্গে যুক্ত হলাম আমরা। কিন্তু সেই ধর্মের মোহ কাটতে খুব বেশি সময় লাগলো না। ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, হাজার মাইল দূর থেকে, পাকিস্তানিরা মাত্র দুই যুগের মধ্যে আমাদের সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করলো। পাকিস্তান গঠনের মাত্র দেড় যুগের মাথায় বাংলায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলো। যে বাংলায় আগে খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকতো, পশ্চিম পাকিস্তানিদের সার্বিক শোষণে ১৯৬৪ সালে সেখানে খাদ্য আমদানি করতে হলো। মুষ্ঠিমেয় কয়েকটি পরিবারের হাতে রাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদ কুক্ষিগত হতে থাকলো। এই শ্রেণিটার বড় পুঁজিপতিদের অংশটাকে ইতিহাসে বাইশ পরিবার বলে আখ্যায়িত করা হয়। রাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ সম্পদ মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে চলে যায়। একসময় যে বঙ্গবন্ধু তার পূর্বসূরীদের সঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, দেশ ভাগের কিছুদিনের মধ্যেই তার কাছে পুরো ধোঁকাবাজিটা স্পষ্ট হয়ে গেলো। তখন থেকেই তিনি সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য ভাবতে থাকলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ শোষিতের মুখে হাসি ফোটানের জন্য দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কারের পরিকল্পনা করতে থাকেন তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। সমাজতন্ত্রের ধারণটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে তখন থেকেই যুক্ত। দেশ স্বাধীনের পর সংবিধানের রাষ্ট্রের চার মূল নীতির সঙ্গে এটি হুট করেই যুক্ত হয়নি। এর ঐতিহাসিক ভিত্তি বাস্তবতার অনেক গভীরে প্রোথিত।

সমাজতন্ত্র বলতে অনেকেই মনে করেন-ধর্মহীনতা, অথবা চীন বা রাশিয়ার মতো পৃথিবী থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন আলাদা রাষ্ট্রব্যবস্থা। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য, স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি এবং একটি পুঁজিবাদী একটি শ্রেণি আমাদের দেশীয় সমাজতন্ত্রের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অপপ্রচার চালিয়েছে। যেকারণে, এই বিষয়ে কেউ খুব একটা কথা বলতে চান না। আসুন আজ আমরা এই বিষয়েই কথা বলবো।

কারণ, বঙ্গবন্ধু যে সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন, স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সেই সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাই চেয়েছিল এই বাংলার জনগণ। আর আপামর জনতার সেই আকাঙ্ক্ষার ওপরে ভিত্তি করেই পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ১৯৭০ সালে একচেটিয়াভাবে জয় লাভ করেছিল আওয়ামী লীগ। তার আগে, প্রাদেশিক নির্বাচনে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণও ছিল একই। কৃষক-শ্রমিকরা অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্নে বিভোর হয়ে টাকাওয়ালা জমিদার-জোতদারদের ভোট না দিয়ে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিল যুক্তফ্রন্টকে। এমনকি স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে মানুষ এককভাবে ভোট দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু যতোবার নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন, ততোবার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনজুড়ে শোষিত নিপীড়িত মানুষের দুঃখ লাঘবের কথা বলেছেন। সামাজিক শোষণ থেকে তাদের মুক্তির কথা বলেছেন। সাম্যভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবতর্দন করতে চেয়েছেন। এবং এই বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর আস্থা রেখেছিল বলেই বারবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। এমনকি এই অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তির জন্য পাকিস্তানি জান্তাদের আধুনিক ও ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রায় খালি হাত প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও দ্বিধা করেনি আপামর জনতা।

দেশ স্বাধীনের আগে ও পরে, এই ভূমির সাত কোটি মানুষের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আমৃত্যু কাজ করেছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর তাই শাসনতন্ত্র রচনার সময় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার মূলনীতি ঠিক করেন তিনি। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার পাশাপাশি তিনি এখানে যুক্ত করে দেন সমাজতন্ত্র। এই সমাজতন্ত্রকে বিশ্বের অন্য কোনো দেশের ধারণার সঙ্গে মেলালে হবে না। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রচলনের মাধ্যমে দেশের ৯০ ভাগ শোষিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন- এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর মৌলিক চিন্তা থেকে আসা একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে সাম্যভিত্তিক ও মানবিক সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে করতে চাওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশের সমাজতন্ত্র মানে শোষিতের গণতন্ত্র

এ ব্যাপারে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার সমাজতন্ত্রের মূল কথা হলো শোষণহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। একেক দেশ একেক পন্থায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়েছে। রাশিয়া যে পন্থা অবলম্বন করেছে, চীন তা করে নাই, সে অন্যদিকে চলেছে। রাশিয়ার পার্শ্বে বাস করেও যুগোস্লাভিয়া, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া তাদের দেশের এনভারমেন্ট নিয়ে, তাদের জাতির ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে, সমাজতন্ত্রের অন্য পথে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যান- ইরাক একদিকে এগিয়ে চলেছে, আবার মিসর অন্যদিকে চলেছে। বিদেশ থেকে হাওলাত করে এনে কোনোদিন সমাজতন্ত্র হয় না; তা যারা করছেন, তারা কোনোদিন সমাজতন্ত্র করতে পারেন নাই। কারণ– লাইন, কমা, সেমিকোলন পড়ে সমাজতন্ত্র হয় না। সেজন্য দেশের এনভারমেন্ট, দেশের মানুষের অবস্থা, তাদের মনোবৃত্তি, তাদের কাস্টম, তাদের আর্থিক অবস্থা, তাদের মনোভাব, সব কিছু দেখে স্টেপ বাই স্টেপ এগিয়ে যেতে হয়।’

আর আগে, স্বাধীনতা অর্জনের পর পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেই নতুন রাষ্ট্রের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর, ১৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শোষণমুক্ত দেশ, তথা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠাই আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য।’ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক পন্থায় বিশ্বাসী। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের অবস্থা বিভিন্ন রকম। বাংলাদেশকে বাংলাদেশের অবস্থা অনুযায়ী পন্থা গ্রহণ করতে হবে।’ এরপর থেকে প্রতিটি জনসভায়, সংসদে, বৈঠকে সবখানেই ‘বাংলাদেশ স্টাইলের সমাজ

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

স্বাধীনতার পর তাই শাসনতন্ত্র রচনার সময় বাংলাদেশের চার মূল নীতি: সমাজতন্ত্রের স্বরূপ সন্ধানে

আপডেট টাইম : ০৭:০৩:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান

১৯০ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তিরস্বাদ আস্বাদনের জন্য, ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া ভারতবর্ষের পাকিস্তান অংশের সঙ্গে যুক্ত হলাম আমরা। কিন্তু সেই ধর্মের মোহ কাটতে খুব বেশি সময় লাগলো না। ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, হাজার মাইল দূর থেকে, পাকিস্তানিরা মাত্র দুই যুগের মধ্যে আমাদের সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করলো। পাকিস্তান গঠনের মাত্র দেড় যুগের মাথায় বাংলায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলো। যে বাংলায় আগে খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকতো, পশ্চিম পাকিস্তানিদের সার্বিক শোষণে ১৯৬৪ সালে সেখানে খাদ্য আমদানি করতে হলো। মুষ্ঠিমেয় কয়েকটি পরিবারের হাতে রাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদ কুক্ষিগত হতে থাকলো। এই শ্রেণিটার বড় পুঁজিপতিদের অংশটাকে ইতিহাসে বাইশ পরিবার বলে আখ্যায়িত করা হয়। রাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ সম্পদ মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে চলে যায়। একসময় যে বঙ্গবন্ধু তার পূর্বসূরীদের সঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, দেশ ভাগের কিছুদিনের মধ্যেই তার কাছে পুরো ধোঁকাবাজিটা স্পষ্ট হয়ে গেলো। তখন থেকেই তিনি সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য ভাবতে থাকলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ শোষিতের মুখে হাসি ফোটানের জন্য দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কারের পরিকল্পনা করতে থাকেন তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। সমাজতন্ত্রের ধারণটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে তখন থেকেই যুক্ত। দেশ স্বাধীনের পর সংবিধানের রাষ্ট্রের চার মূল নীতির সঙ্গে এটি হুট করেই যুক্ত হয়নি। এর ঐতিহাসিক ভিত্তি বাস্তবতার অনেক গভীরে প্রোথিত।

সমাজতন্ত্র বলতে অনেকেই মনে করেন-ধর্মহীনতা, অথবা চীন বা রাশিয়ার মতো পৃথিবী থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন আলাদা রাষ্ট্রব্যবস্থা। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য, স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি এবং একটি পুঁজিবাদী একটি শ্রেণি আমাদের দেশীয় সমাজতন্ত্রের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অপপ্রচার চালিয়েছে। যেকারণে, এই বিষয়ে কেউ খুব একটা কথা বলতে চান না। আসুন আজ আমরা এই বিষয়েই কথা বলবো।

কারণ, বঙ্গবন্ধু যে সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন, স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সেই সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাই চেয়েছিল এই বাংলার জনগণ। আর আপামর জনতার সেই আকাঙ্ক্ষার ওপরে ভিত্তি করেই পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ১৯৭০ সালে একচেটিয়াভাবে জয় লাভ করেছিল আওয়ামী লীগ। তার আগে, প্রাদেশিক নির্বাচনে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণও ছিল একই। কৃষক-শ্রমিকরা অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্নে বিভোর হয়ে টাকাওয়ালা জমিদার-জোতদারদের ভোট না দিয়ে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিল যুক্তফ্রন্টকে। এমনকি স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে মানুষ এককভাবে ভোট দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু যতোবার নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন, ততোবার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনজুড়ে শোষিত নিপীড়িত মানুষের দুঃখ লাঘবের কথা বলেছেন। সামাজিক শোষণ থেকে তাদের মুক্তির কথা বলেছেন। সাম্যভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবতর্দন করতে চেয়েছেন। এবং এই বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর আস্থা রেখেছিল বলেই বারবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। এমনকি এই অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তির জন্য পাকিস্তানি জান্তাদের আধুনিক ও ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রায় খালি হাত প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও দ্বিধা করেনি আপামর জনতা।

দেশ স্বাধীনের আগে ও পরে, এই ভূমির সাত কোটি মানুষের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আমৃত্যু কাজ করেছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর তাই শাসনতন্ত্র রচনার সময় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার মূলনীতি ঠিক করেন তিনি। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার পাশাপাশি তিনি এখানে যুক্ত করে দেন সমাজতন্ত্র। এই সমাজতন্ত্রকে বিশ্বের অন্য কোনো দেশের ধারণার সঙ্গে মেলালে হবে না। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রচলনের মাধ্যমে দেশের ৯০ ভাগ শোষিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন- এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর মৌলিক চিন্তা থেকে আসা একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে সাম্যভিত্তিক ও মানবিক সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে করতে চাওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশের সমাজতন্ত্র মানে শোষিতের গণতন্ত্র

এ ব্যাপারে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার সমাজতন্ত্রের মূল কথা হলো শোষণহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। একেক দেশ একেক পন্থায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়েছে। রাশিয়া যে পন্থা অবলম্বন করেছে, চীন তা করে নাই, সে অন্যদিকে চলেছে। রাশিয়ার পার্শ্বে বাস করেও যুগোস্লাভিয়া, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া তাদের দেশের এনভারমেন্ট নিয়ে, তাদের জাতির ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে, সমাজতন্ত্রের অন্য পথে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যান- ইরাক একদিকে এগিয়ে চলেছে, আবার মিসর অন্যদিকে চলেছে। বিদেশ থেকে হাওলাত করে এনে কোনোদিন সমাজতন্ত্র হয় না; তা যারা করছেন, তারা কোনোদিন সমাজতন্ত্র করতে পারেন নাই। কারণ– লাইন, কমা, সেমিকোলন পড়ে সমাজতন্ত্র হয় না। সেজন্য দেশের এনভারমেন্ট, দেশের মানুষের অবস্থা, তাদের মনোবৃত্তি, তাদের কাস্টম, তাদের আর্থিক অবস্থা, তাদের মনোভাব, সব কিছু দেখে স্টেপ বাই স্টেপ এগিয়ে যেতে হয়।’

আর আগে, স্বাধীনতা অর্জনের পর পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেই নতুন রাষ্ট্রের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর, ১৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শোষণমুক্ত দেশ, তথা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠাই আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য।’ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক পন্থায় বিশ্বাসী। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের অবস্থা বিভিন্ন রকম। বাংলাদেশকে বাংলাদেশের অবস্থা অনুযায়ী পন্থা গ্রহণ করতে হবে।’ এরপর থেকে প্রতিটি জনসভায়, সংসদে, বৈঠকে সবখানেই ‘বাংলাদেশ স্টাইলের সমাজ