রাজউকের মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে অনিশ্চয়তা ২০ বছরের ড্যাপ চূড়ান্তের আগেই ছয় বছর পার ছয় বছর চলে যাওয়া কোনোভাবে যৌক্তিক হতে পারে না -ড. আদিল মুহাম্মদ খান
- আপডেট টাইম : ০৮:২৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১
- / ২১৩ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২০ বছর মেয়াদি ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ছয় বছর চলে গেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানটি চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারিগরি বিতর্ক অবসানে আবাসন খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজন ও পেশাজীবীদের সঙ্গে জাতীয় সেমিনার করার কথা রয়েছে। কিন্তু আর মাত্র তিন মাস অবশিষ্ট থাকলেও তা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।
রাজউকের সংশোধিত মাস্টারপ্ল্যানে (ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ) নতুন অনেক চমক থাকলেও সবশেষ সেটা কতটুকু গেজেটভুক্ত হবে তা নিয়েও সন্দেহ ও সংশয় তৈরি হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর ‘ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা’ কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে-ড্যাপের গেজেট হতে পারে আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। এমন আলোচনা ড্যাপ গেজেটভুক্তকরণের সময় বাড়ানোর ইঙ্গিত বহন করে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়-সংশোধিত ড্যাপের সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এবার ড্যাপে নতুন করে জনঘনত্ব কমানো, রিডেভেলপমেন্ট, মেট্রো স্টেশনভিত্তিক উন্নয়ন, ২ হাজার ৭৪৯ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি, ১ হাজার ৩২৭ কিলোমিটার জলপথ তৈরিসহ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে ভবনের উচ্চতা সর্বোচ্চ আটতলা নির্ধারণ, ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবনা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ভূমি ও আবাসন ব্যবসায়ী এবং স্থপতিদের কাছ থেকে বাধা এসেছে। এসব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে বিষয়টির সুরাহা করে ড্যাপের গেজেট করার কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়। এজন্য ব্যয় না বাড়িয়ে প্রয়োজনে সময় আরও ছয় মাস থেকে এক বছর বাড়ানো হতে পারে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ড্যাপের গেজেট করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
রাজউক সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের মার্চে সংশোধিত ড্যাপ প্রণয়নের কাজ শুরু করে রাজউক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ড্যাপের গেজেট চূড়ান্ত করার কথা ছিল। সে সময় কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। পরে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এর আগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে রিভাইসড ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) প্রণয়ন করে রাজউক। এরই আলোকে সংশোধিত ড্যাপ প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। যদিও রিভাইসড ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যানের এখনো গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।
জানা গেছে, রাজউক ঢাকা শহরের উন্নয়নের জন্য ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫) প্রণয়ন করে। আর (১৯৯৫-২০০৯) আরবান এরিয়া প্ল্যান প্রণয়ন করে। এর আলোকে ২০১০ সালের ২২ জুন ড্যাপের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ভূমি ও আবাসন ব্যবসায়ীদের বাধায় ২৭ জুন ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করে। সাতজন মন্ত্রীকে নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর রাজউকে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য প্রায় ২ হাজার ৫০০টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে বেশকিছু আবেদন মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। বিশেষ তদবিরে এসব পরিবর্তন হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের আবেদন পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো মাস্টারপ্ল্যান পরিবর্তনযোগ্য। রাজউকের ড্যাপও এর বাইরের কিছু নয়। এজন্য আর সময় না বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান গেজেটভুক্ত হয়ে যাওয়ার দরকার। তিনি বলেন, ২০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে ছয় বছর চলে যাওয়া কোনোভাবে যৌক্তিক হতে পারে না। এরপরও যে সময় গেছে, সামনে যেন আর সময় নষ্ট না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। আবারও সময় বাড়ানো হলে এ বিষয়ে আর বলার কিছু থাকবে না। এছাড়া সময় বাড়ানো অপ্রয়োজনীয় হবে। কেননা ড্যাপের মৌলিক কাজগুলো ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) তাজুল ইসলাম বলেন, আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে রিভাইসড ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। ড্যাপ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে- নগরপরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, রিহ্যাব, ভূমি ও আবাসন ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ড্যাপের গেজেট প্রকাশ করা সম্ভব হবে।