ঢাকা ০১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

কক্সবাজারে প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে অবাধে পাহাড় কাটা

  • আপডেট টাইম : ১১:০২:৪৮ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ২০৯ ৫০০.০০০ বার পাঠক

সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।

চট্টগ্রাম কক্সবাজার  টেকনাফ রুটের অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম খুলশী। জাকির হোসেন সড়কের উভয়পাশের এ এলাকাটি মূলত গড়ে উঠেছে পাহাড়ের ওপর। এ স্থানটির প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা বিপুল। এ চাহিদাকে সামনে রেখে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। সময়ের সঙ্গে এ এলাকায় বাড়ছে পাহাড় কেটে উঁচু ভবন নির্মাণের কাজ। এক দশক ধরে কেটে শেষ করা হয়েছে পাহাড়ের দুই-তৃতীয়াংশ। অথচ খুলশী আবাসিক এলাকার কাছেই পরিবেশ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়। প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে অবাধে পাহাড় কাটা।
অবশ্য মাঝে মাঝেই অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ১৪ আগস্ট বায়েজিদ এলাকার সৈয়দ শাহ রোডে অভিযান চালিয়ে সিরাজুল মামুন নামের এক ব্যক্তিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ১৮ আগস্ট হাটহাজারীর সমবায় আবাসিক প্রকল্পে অভিযান চালিয়ে ৭৩১ বর্গফুট পাহাড় কাটার অভিযোগে নাসির উদ্দিনকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২০০ টাকা, ১৬ আগস্ট চন্দ্রনগর এলাকায় মো. দস্তগীর আলমকে ১ লাখ, বাহাউদ্দিনকে ৬ লাখ ও সামসুদ্দিন বাদলকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর (সংশোধিত ২০১০) ধারা ৭ অনুযায়ী জরিমানা আদায় করা হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে পাহাড় কাটার অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেয়া হয়।অন্যদিকে জরিমানা ও শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করেন সংশ্লিষ্টরা। যেমন পাহাড়ের জমি কেনার পর তা নামজারি না করা। পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ফটিকছড়ির বাসিন্দা মো. দিদারুল ইসলাম নাসিরাবাদ এলাকায় বিপুল পরিমাণ পাহাড় কেটে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলছেন বলে তাদের কাছে খবর আসে। এর ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে জরিমানা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করার জন্য জমির তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে দেখা যায়, ওই পাহাড়ি জমি মো. দিদারুল ইসলামের নামে নামজারি হয়নি। মূলত জমি কেনার পর পাহাড় কাটার জন্য জমির নামজারি না করে প্রশাসনের নজর থেকে রক্ষা পেতে এ কৌশল বেছে নিয়েছিলেন তিনি।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতার তুলনায় তাদের আওতাধীন এলাকা অনেক বড়। তাছাড়া নমনীয় পরিবেশ আইন ও যথাযথ তদারকির অভাবও চট্টগ্রামে অবাধে পাহাড় কাটার অন্যতম কারণ। জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কার্যালয়ে মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৩৭। তার বিপরীতে এখন কর্মরত মাত্র ১২ জন। এ স্বল্প জনবল দিয়ে বন্দরনগরীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পার্বত্য এলাকাগুলো সুষ্ঠুভাবে তদারক করা অসম্ভব। ফলে পাহাড় কাটার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।গত কয়েক দিনে নগরীর অন্তত ১০টি এলাকায় পাহাড় কেটে আবাসিক ও বহুতল ভবন নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট থানা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আশপাশের এলাকাগুলোতে পাহাড় কাটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে খুলশী, আমবাগান, মতিঝর্ণা, চন্দ্রনগর, আরেফিন নগর এলাকায় পাহাড় কাটার পরিমাণ বেশি।চন্দ্রনগর আবাসিক: নাসিরাবাদের চন্দ্রনগর আবাসিকটি প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে পাহাড় কাটার মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে শহরের ভেতরে এ আবাসিকে বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। আবাসিকের পাশে এখনো বেশ কয়েকটি পাহাড় অবশিষ্ট রয়েছে। তবে যেভাবে ক্রমান্বয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে, তাতে দ্রুত রাতের অন্ধকারে এসব পাহাড়ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গ্রীনভ্যালি আবাসিক: চন্দ্রনগর আবাসিকের পাশের এ এলাকাটিও পাহাড় কেটে তৈরি। এলাকার শেষপ্রান্তের বড় পাহাড়টিরও অর্ধেক কেটে ফেলা হয়েছে। আবাসিকের সুউচ্চ কয়েকটি ভবনের পাশেই কেটে রাখা পাহাড়টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় পাহাড়টি ধসে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সপ্তাহের শুরুতে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে বেশ কয়েকটি বড় ট্রাক রাখা হয়েছে। পাহাড় কাটার মাটি এসব ট্রাকে করে অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব মাটি কোনো স্থান ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হবে বা বিক্রি করা হবে।
আরেফিন নগর: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সিটির পাহাড় কাটায় সবচেয়ে আলোচিত এলাকা আরেফিন নগর। মূলত এলাকাটি পাহাড় কেটেই গড়া। আরেফিন নগর এলাকায় এখনো যেসব পাহাড় অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলো রাতের আঁধারে কেটে স্থাপনা নির্মাণ করছে দখলকারীরা। প্রথমে পাহাড়ের নিম্নাংশ কেটে বেশ কিছুদিন রেখে দেয়া হয়। সে সময় পাহাড়ের চারপাশে টিন কিংবা কোনো অস্থায়ী স্থাপনা দিয়ে আড়াল তৈরি করে এরপর মাটি সরিয়ে নেয়া হয়। মূলত পাহাড় কাটার জন্য বর্ষা মৌসুমকেই বেছে নেয়া হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অবস্থিত এ এলাকায় মাঝে মধ্যে প্রশাসনিক অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হলেও নির্বিচারে পাহাড় কাটা চলছেই। সম্প্রতি দেখা গেছে বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদের নাম ভাঙিয়ে পাহাড় কাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রভাবশালীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির নির্দেশেই চলছে এসব কাজ।
বায়েজিদ লিংক রোড: পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্য করে অবৈজ্ঞানিক পন্থায় পাহাড় কেটে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। অধিদপ্তরের নির্দেশনা সত্ত্বেও ৯০ ডিগ্রি কোণে পাহাড় কেটে সড়ক তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয় ছাড়াও যানবাহন ও চলাচলকারী মানুষের জানমালের ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে কাটা পাহাড়। সম্পূর্ণ পার্বত্য এ এলাকার মধ্য দিয়ে সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে সড়ক নির্মাণের ফলে আশপাশের পাহাড়গুলো কেটে বাড়ি, আবাসিক এলাকা, মার্কেটসহ বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সাধারণ মানুষ ও প্রভাবশালীরা।
লেকসিটি-২: সম্প্রতি আকবর শাহ থানায় লেকসিটি-২ নামের একটি আবাসিক এলাকা পাহাড় কেটে বিস্তৃত হয়েছে। স্থানীয় একজন রাজনৈতিক প্রভাবশালীর নেতৃত্বে এ এলাকার পাহাড় কেটে কয়েকশ আবাসিক প্লট তৈরির প্রমাণও পাওয়া গেছে। আবাসিক এলাকাটির চারপাশ এখনো পাহাড় দিয়ে বেষ্টিত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকার অবশিষ্ট পাহাড়গুলো কেটে বসতি ও আবাসিক প্লট তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় সব পাহাড়ে বসতি স্থাপন করে রাতের আঁধারে পাহাড় কাটার প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। পাহাড় কেটে তৈরি এসব প্লট এরই মধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
আমবাগান: এলাকাটি মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) মালিকানাধীন। তবে ব্যক্তি পর্যায়েও কিছু জমি রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি জমি দখল করে বিক্রি ও পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা এখনো চোখে পড়েনি। রেলওয়ের নিজস্ব জমি হওয়ায় পাহাড়ি এ এলাকায় পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ ও পাহাড় কাটা মাটি বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ এখানে খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিকেট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি, পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ এলাকাসহ বেশকিছু স্থানে পাহাড় কাটার প্রমাণও পাওয়া যায়।
খুলশী আবাসিক: জাকির হোসেন রোডের দুই পাশের খুলশী উত্তর ও দক্ষিণ আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে মূলত পাহাড়ের ওপর। পাহাড়ি এ আবাসিক এলাকা তৈরিতে এক সময় বিপুল পরিমাণ পাহাড় কাটা হয়েছে। অবশিষ্ট পাহাড়গুলো কেটেও এখন বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ভারী রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ করে পাহাড় কাটা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভবন। এখনো বেশ কয়েকটি বড় ভবন নির্মাণ হচ্ছে পাহাড় কেটে। এরই মধ্যে এপিক প্রপার্টিজ চট্টগ্রামের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কার্যালয় সড়কের মুখে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। এক বছর আগেও এটি একটি পাহাড় ছিল। পিবিআই ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের কাছের এ এলাকাতেও নির্বিচারে চলছে পাহাড় কাটা।
লালখান বাজার মতিঝর্ণা: পুরো লালখান বাজার এলাকাটি চট্টগ্রামের পাহাড় কাটার অন্যতম কেন্দ্র। পাহাড় কাটার পাশাপাশি পাহাড় ধসের জন্যও পরিচিত এলাকাটি। গত এক দশকে এ এলাকা একাধিক বড় পাহাড় ধসের ঘটনায় অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব মৃত্যুর পরও প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে অস্থায়ী আবাস গড়ে ভাড়া দিচ্ছে। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমেই এখানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকাটি পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাধ্যমে একটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমেও এ এলাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।
পার্সিভাল হিল: চকবাজারের পার্সিভাল হিল একটি পাহাড় বেষ্টিত আবাসিক এলাকা। এখানে অনেক আগে থেকেই ব্যক্তি পর্যায়ের প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে আবাসিক এলাকা নির্মাণ করতে শুরু করেন। সাম্প্রতিক সময়ে এপিক প্রপার্টিজ কাগজে-কলমে সমতল ভূমি দেখিয়ে আবাসনের একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এলাকাটি ঘুরে পাহাড় কাটার প্রস্তুতি ও বেশকিছু পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী পার্সিভাল হিল তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য হারাবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।

ষোলশহর: বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পার্শ্ববর্তী ডানকান হিল এলাকায় সানমারসহ একাধিক আবাসন কোম্পানি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। পাহাড়বেষ্টিত এ এলাকায় মেগা প্রকল্পের আবাসন নির্মাণ হলে অবশিষ্ট পাহাড়গুলোও ধ্বংস হয়ে যাবে। এছাড়া প্রবর্তক সংঘের পাহাড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পাহাড় কেটে আবাসন নির্মাণের কাজ করছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন) পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী বলেন, বন্দরনগরীর হাজার হাজার শিল্প-কারখানার পরিবেশ দূষণসহ বিভিন্ন নজরদারির মধ্যেও পাহাড় কাটা রোধে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এর পরও পাহাড় কাটা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রভাবশালীরা নানা কৌশল অবলম্বন ছাড়াও স্বল্প আয়ের মানুষদের পাহাড় কাটায় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। সাম্প্রতিক সময়ে নামজারি না করে পাহাড় কাটা ও মামলায় জামিনে বেরিয়ে এসে আরো বেপরোয়াভাবে পাহাড় কাটার ঘটনা দেখা গেছে। স্বল্প জনবল সত্ত্বেও সাধ্যমতো পাহাড় কাটা রোধে চেষ্টা করা হচ্ছে।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রতি বর্গফুটে ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা হারে জরিমানার বিধান রয়েছে। অধিদপ্তর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে পাহাড় কাটায় অভিযুক্তকে জরিমানা করে। পরে কয়েক দফায় অভিযোগ পাওয়া গেলে জরিমানার পর আদালতে মামলা করা হয়। এসব মামলা নিষ্পত্তি হতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়। তাছাড়া অভিযুক্তরা গ্রেফতারের পর জামিনে এসে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে অতীতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড় কাটা বন্ধে স্থানীয়রা সচেতন না হলে কেবল সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষে এসব রোধ করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ওপর জোর দেন পরিবেশবাদীরা। তাদের শঙ্কা, দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে চট্টগ্রামের অবশিষ্ট পাহাড়গুলোরও আর অস্তিত্ব থাকবে না।

সূত্রঃ সময়ের অনুসন্ধান রিপোর্টে

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কক্সবাজারে প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে অবাধে পাহাড় কাটা

আপডেট টাইম : ১১:০২:৪৮ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।

চট্টগ্রাম কক্সবাজার  টেকনাফ রুটের অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম খুলশী। জাকির হোসেন সড়কের উভয়পাশের এ এলাকাটি মূলত গড়ে উঠেছে পাহাড়ের ওপর। এ স্থানটির প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা বিপুল। এ চাহিদাকে সামনে রেখে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। সময়ের সঙ্গে এ এলাকায় বাড়ছে পাহাড় কেটে উঁচু ভবন নির্মাণের কাজ। এক দশক ধরে কেটে শেষ করা হয়েছে পাহাড়ের দুই-তৃতীয়াংশ। অথচ খুলশী আবাসিক এলাকার কাছেই পরিবেশ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়। প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে অবাধে পাহাড় কাটা।
অবশ্য মাঝে মাঝেই অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ১৪ আগস্ট বায়েজিদ এলাকার সৈয়দ শাহ রোডে অভিযান চালিয়ে সিরাজুল মামুন নামের এক ব্যক্তিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ১৮ আগস্ট হাটহাজারীর সমবায় আবাসিক প্রকল্পে অভিযান চালিয়ে ৭৩১ বর্গফুট পাহাড় কাটার অভিযোগে নাসির উদ্দিনকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২০০ টাকা, ১৬ আগস্ট চন্দ্রনগর এলাকায় মো. দস্তগীর আলমকে ১ লাখ, বাহাউদ্দিনকে ৬ লাখ ও সামসুদ্দিন বাদলকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর (সংশোধিত ২০১০) ধারা ৭ অনুযায়ী জরিমানা আদায় করা হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে পাহাড় কাটার অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেয়া হয়।অন্যদিকে জরিমানা ও শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করেন সংশ্লিষ্টরা। যেমন পাহাড়ের জমি কেনার পর তা নামজারি না করা। পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ফটিকছড়ির বাসিন্দা মো. দিদারুল ইসলাম নাসিরাবাদ এলাকায় বিপুল পরিমাণ পাহাড় কেটে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলছেন বলে তাদের কাছে খবর আসে। এর ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে জরিমানা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করার জন্য জমির তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে দেখা যায়, ওই পাহাড়ি জমি মো. দিদারুল ইসলামের নামে নামজারি হয়নি। মূলত জমি কেনার পর পাহাড় কাটার জন্য জমির নামজারি না করে প্রশাসনের নজর থেকে রক্ষা পেতে এ কৌশল বেছে নিয়েছিলেন তিনি।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতার তুলনায় তাদের আওতাধীন এলাকা অনেক বড়। তাছাড়া নমনীয় পরিবেশ আইন ও যথাযথ তদারকির অভাবও চট্টগ্রামে অবাধে পাহাড় কাটার অন্যতম কারণ। জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কার্যালয়ে মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৩৭। তার বিপরীতে এখন কর্মরত মাত্র ১২ জন। এ স্বল্প জনবল দিয়ে বন্দরনগরীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পার্বত্য এলাকাগুলো সুষ্ঠুভাবে তদারক করা অসম্ভব। ফলে পাহাড় কাটার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।গত কয়েক দিনে নগরীর অন্তত ১০টি এলাকায় পাহাড় কেটে আবাসিক ও বহুতল ভবন নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট থানা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আশপাশের এলাকাগুলোতে পাহাড় কাটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে খুলশী, আমবাগান, মতিঝর্ণা, চন্দ্রনগর, আরেফিন নগর এলাকায় পাহাড় কাটার পরিমাণ বেশি।চন্দ্রনগর আবাসিক: নাসিরাবাদের চন্দ্রনগর আবাসিকটি প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে পাহাড় কাটার মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে শহরের ভেতরে এ আবাসিকে বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। আবাসিকের পাশে এখনো বেশ কয়েকটি পাহাড় অবশিষ্ট রয়েছে। তবে যেভাবে ক্রমান্বয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে, তাতে দ্রুত রাতের অন্ধকারে এসব পাহাড়ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গ্রীনভ্যালি আবাসিক: চন্দ্রনগর আবাসিকের পাশের এ এলাকাটিও পাহাড় কেটে তৈরি। এলাকার শেষপ্রান্তের বড় পাহাড়টিরও অর্ধেক কেটে ফেলা হয়েছে। আবাসিকের সুউচ্চ কয়েকটি ভবনের পাশেই কেটে রাখা পাহাড়টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় পাহাড়টি ধসে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সপ্তাহের শুরুতে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে বেশ কয়েকটি বড় ট্রাক রাখা হয়েছে। পাহাড় কাটার মাটি এসব ট্রাকে করে অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব মাটি কোনো স্থান ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হবে বা বিক্রি করা হবে।
আরেফিন নগর: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সিটির পাহাড় কাটায় সবচেয়ে আলোচিত এলাকা আরেফিন নগর। মূলত এলাকাটি পাহাড় কেটেই গড়া। আরেফিন নগর এলাকায় এখনো যেসব পাহাড় অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলো রাতের আঁধারে কেটে স্থাপনা নির্মাণ করছে দখলকারীরা। প্রথমে পাহাড়ের নিম্নাংশ কেটে বেশ কিছুদিন রেখে দেয়া হয়। সে সময় পাহাড়ের চারপাশে টিন কিংবা কোনো অস্থায়ী স্থাপনা দিয়ে আড়াল তৈরি করে এরপর মাটি সরিয়ে নেয়া হয়। মূলত পাহাড় কাটার জন্য বর্ষা মৌসুমকেই বেছে নেয়া হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অবস্থিত এ এলাকায় মাঝে মধ্যে প্রশাসনিক অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হলেও নির্বিচারে পাহাড় কাটা চলছেই। সম্প্রতি দেখা গেছে বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদের নাম ভাঙিয়ে পাহাড় কাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রভাবশালীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির নির্দেশেই চলছে এসব কাজ।
বায়েজিদ লিংক রোড: পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্য করে অবৈজ্ঞানিক পন্থায় পাহাড় কেটে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। অধিদপ্তরের নির্দেশনা সত্ত্বেও ৯০ ডিগ্রি কোণে পাহাড় কেটে সড়ক তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয় ছাড়াও যানবাহন ও চলাচলকারী মানুষের জানমালের ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে কাটা পাহাড়। সম্পূর্ণ পার্বত্য এ এলাকার মধ্য দিয়ে সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে সড়ক নির্মাণের ফলে আশপাশের পাহাড়গুলো কেটে বাড়ি, আবাসিক এলাকা, মার্কেটসহ বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সাধারণ মানুষ ও প্রভাবশালীরা।
লেকসিটি-২: সম্প্রতি আকবর শাহ থানায় লেকসিটি-২ নামের একটি আবাসিক এলাকা পাহাড় কেটে বিস্তৃত হয়েছে। স্থানীয় একজন রাজনৈতিক প্রভাবশালীর নেতৃত্বে এ এলাকার পাহাড় কেটে কয়েকশ আবাসিক প্লট তৈরির প্রমাণও পাওয়া গেছে। আবাসিক এলাকাটির চারপাশ এখনো পাহাড় দিয়ে বেষ্টিত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকার অবশিষ্ট পাহাড়গুলো কেটে বসতি ও আবাসিক প্লট তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় সব পাহাড়ে বসতি স্থাপন করে রাতের আঁধারে পাহাড় কাটার প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। পাহাড় কেটে তৈরি এসব প্লট এরই মধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
আমবাগান: এলাকাটি মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) মালিকানাধীন। তবে ব্যক্তি পর্যায়েও কিছু জমি রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি জমি দখল করে বিক্রি ও পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা এখনো চোখে পড়েনি। রেলওয়ের নিজস্ব জমি হওয়ায় পাহাড়ি এ এলাকায় পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ ও পাহাড় কাটা মাটি বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ এখানে খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিকেট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি, পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ এলাকাসহ বেশকিছু স্থানে পাহাড় কাটার প্রমাণও পাওয়া যায়।
খুলশী আবাসিক: জাকির হোসেন রোডের দুই পাশের খুলশী উত্তর ও দক্ষিণ আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে মূলত পাহাড়ের ওপর। পাহাড়ি এ আবাসিক এলাকা তৈরিতে এক সময় বিপুল পরিমাণ পাহাড় কাটা হয়েছে। অবশিষ্ট পাহাড়গুলো কেটেও এখন বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ভারী রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ করে পাহাড় কাটা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভবন। এখনো বেশ কয়েকটি বড় ভবন নির্মাণ হচ্ছে পাহাড় কেটে। এরই মধ্যে এপিক প্রপার্টিজ চট্টগ্রামের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কার্যালয় সড়কের মুখে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। এক বছর আগেও এটি একটি পাহাড় ছিল। পিবিআই ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের কাছের এ এলাকাতেও নির্বিচারে চলছে পাহাড় কাটা।
লালখান বাজার মতিঝর্ণা: পুরো লালখান বাজার এলাকাটি চট্টগ্রামের পাহাড় কাটার অন্যতম কেন্দ্র। পাহাড় কাটার পাশাপাশি পাহাড় ধসের জন্যও পরিচিত এলাকাটি। গত এক দশকে এ এলাকা একাধিক বড় পাহাড় ধসের ঘটনায় অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব মৃত্যুর পরও প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে অস্থায়ী আবাস গড়ে ভাড়া দিচ্ছে। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমেই এখানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকাটি পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাধ্যমে একটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমেও এ এলাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।
পার্সিভাল হিল: চকবাজারের পার্সিভাল হিল একটি পাহাড় বেষ্টিত আবাসিক এলাকা। এখানে অনেক আগে থেকেই ব্যক্তি পর্যায়ের প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে আবাসিক এলাকা নির্মাণ করতে শুরু করেন। সাম্প্রতিক সময়ে এপিক প্রপার্টিজ কাগজে-কলমে সমতল ভূমি দেখিয়ে আবাসনের একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এলাকাটি ঘুরে পাহাড় কাটার প্রস্তুতি ও বেশকিছু পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী পার্সিভাল হিল তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য হারাবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।

ষোলশহর: বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পার্শ্ববর্তী ডানকান হিল এলাকায় সানমারসহ একাধিক আবাসন কোম্পানি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। পাহাড়বেষ্টিত এ এলাকায় মেগা প্রকল্পের আবাসন নির্মাণ হলে অবশিষ্ট পাহাড়গুলোও ধ্বংস হয়ে যাবে। এছাড়া প্রবর্তক সংঘের পাহাড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পাহাড় কেটে আবাসন নির্মাণের কাজ করছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন) পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী বলেন, বন্দরনগরীর হাজার হাজার শিল্প-কারখানার পরিবেশ দূষণসহ বিভিন্ন নজরদারির মধ্যেও পাহাড় কাটা রোধে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এর পরও পাহাড় কাটা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রভাবশালীরা নানা কৌশল অবলম্বন ছাড়াও স্বল্প আয়ের মানুষদের পাহাড় কাটায় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। সাম্প্রতিক সময়ে নামজারি না করে পাহাড় কাটা ও মামলায় জামিনে বেরিয়ে এসে আরো বেপরোয়াভাবে পাহাড় কাটার ঘটনা দেখা গেছে। স্বল্প জনবল সত্ত্বেও সাধ্যমতো পাহাড় কাটা রোধে চেষ্টা করা হচ্ছে।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রতি বর্গফুটে ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা হারে জরিমানার বিধান রয়েছে। অধিদপ্তর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে পাহাড় কাটায় অভিযুক্তকে জরিমানা করে। পরে কয়েক দফায় অভিযোগ পাওয়া গেলে জরিমানার পর আদালতে মামলা করা হয়। এসব মামলা নিষ্পত্তি হতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়। তাছাড়া অভিযুক্তরা গ্রেফতারের পর জামিনে এসে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে অতীতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড় কাটা বন্ধে স্থানীয়রা সচেতন না হলে কেবল সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষে এসব রোধ করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ওপর জোর দেন পরিবেশবাদীরা। তাদের শঙ্কা, দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে চট্টগ্রামের অবশিষ্ট পাহাড়গুলোরও আর অস্তিত্ব থাকবে না।

সূত্রঃ সময়ের অনুসন্ধান রিপোর্টে