সাক্ষাৎকার: ড. বেনজীর আহমেদ নকল পণ্যের বিরুদ্ধে পুলিশের সব ইউনিট সক্রিয় রয়েছে
- আপডেট টাইম : ০৬:৩৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট ২০২১
- / ৩২৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।
নকল পণ্য উৎপাদন ও খাদ্যে ভেজাল দেওয়া ক্ষমাহীন অপরাধ। অত্যন্ত জঘন্য কাজ। যারা নকল পণ্য তৈরি করছে তারা সমাজের নীরব ঘাতক। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এসব নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। এদের কারণে একটি প্রজন্ম নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সরকারের অর্থনৈতিক ক্ষতিও সাধন হচ্ছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে নিজ কার্যালয়ে সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নকল ও ভেজাল পণ্য প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে এমন কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, নকল পণ্য প্রস্তুত ও বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সব ইউনিট সক্রিয় রয়েছে।
গত বছর থেকে ‘নকল পণ্য কিনবো না, নকল পণ্য বেচবো না’ শীর্ষক প্রচারাভিযানে নামে সমকাল। এ প্রচারাভিযানে অন্যতম সহযোগী ছিল র্যাব। ওই সময় র্যাবপ্রধান হিসেবে সময়ের কন্ঠরে প্রচারাভিযানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. বেনজীর আহমেদ। পরে পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন- সকল পএিকাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, পত্রিকার পক্ষ থেকে নকল পণ্যের বিরুদ্ধে বিশেষ প্রচারাভিযান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলে। এটা সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। আগামীতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে ইতোমধ্যে নকল পণ্যের বিরুদ্ধে একটি ভালো আইন তৈরি হয়েছে। আমরাও ৭-৮ বছর ধরে নকল পণ্য এবং খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। এই দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। একসময় আমাদের এখানে খাদ্যে প্রচুর ফরমালিন মেশাতে দেখেছি। এর বিরুদ্ধেও পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমন এক সময় ছিল, যখন দেশে আমসহ মৌসুমি ফল খাওয়া যেত না। মাছ কিনলে তা পচত না। এখন কিন্তু মৌসুমি ফল কিনলে পচে। বাড়িতে মাছ নিয়ে গেলেও সময়মতো রান্না না হলে কিংবা ফ্রিজে না রাখলে পচে যায়। আমি মনে করি, আগে এ সেক্টরে যে অবস্থা ছিল সবার সমন্বিত ব্যবস্থার কারণে তা বদলাচ্ছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, নকল ও ভেজাল পণ্য রোধে আমাদের যে আইন বর্তমানে রয়েছে, এটা কিন্তু বেশ কঠোর। নকল পণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের অনেক লিগ্যাল টুলস রয়েছে। এটাও বলব- নকল ও ভেজাল পণ্য রোধ করা জাতির জন্য চ্যালেঞ্জ। অনেক চ্যালেঞ্জের মতো এই চ্যালেঞ্জও আমরা অতিক্রম করব। আমি মনে করি, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নকল পণ্যের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করার কাজও করতে হবে। জরিমানার অঙ্ক বাড়াতে হবে, যাতে একবার জরিমানা করলে নকল পণ্য প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ী আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারে। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোর বার্তা এই সিন্ডিকেটকে দিতে হবে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক আরও বলেন, নকল পণ্যের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি আমরা। বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্নিষ্ট যারা রয়েছে, তাদের সবাইকে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম এগিয়ে নেব। আমি বলতে চাই, এরই মধ্যে ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপকভাবে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। আর যারা কনজুমার, তারাও বেশ সচেতন হয়ে উঠছে। তাই নকল পণ্যের বিরুদ্ধে সমাজে একটা দ্বিমুখী উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যারা সৎ ও প্রকৃত ব্যবসায়ী তারা যথাসম্ভব চেষ্টা করেন সব ধরনের নকল পণ্য পরিহার করতে। যারা ক্রেতা তারা সচেতন থাকেন যাতে তাদের ঘরে নকল পণ্য না ঢোকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ যেমন পুলিশসহ সহযোগী যারা রয়েছেন, তারাও ক্রমাগতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটা বলতে হবে, নকল পণ্যের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে মিডিয়ার একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তারা ধন্যবাদ পাওয়ার মতো কাজ করে যাচ্ছে। শুরু থেকে নকল ও ভেজাল পণ্যবিরোধী সরকারের সব কার্যক্রম শতভাগ সমর্থন দিয়ে আসছে আমাদের গণমাধ্যম।
পুলিশ মহাপরিদর্শক আরও বলেন, ২০১৪ সালে যখন আমি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ছিলাম, তখন চারদিকে ফরমালিন আতঙ্কে সবাই বেশ অস্থির ছিল। তখন আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে ফরমালিনের বিরুদ্ধে বিশাল আন্দোলন গড়ে তুলি। যারা নানা খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশাচ্ছিলেন তারা নীরব ঘাতকের মতো মানুষ খুন করছিলেন। তখন আমরা ফরমালিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করি। একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। ঢাকার প্রবেশপথে বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়ে ফরমালিন চেক করা হয়েছে। তখন এই কার্যক্রম ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। অনেক মার্কেটেও ফরমালিন টেস্টের জন্য বুথ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সভা-সমাবেশ করে ক্রেতাদের নকল ও ভেজাল পণ্যের ব্যাপারে সচেতন করেছি। অনেক জায়গায় টানা তল্লাশি করে এসব চক্রের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হয়। ওই সময় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণের কারণে সমাজে বড় ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দেশে আস্তে আস্তে ফরমালিনের আমদানি কমে আসে। একসময় আমাদের দেশে বছরে ৭০০ টন ফরমালিন আমদানি হতো। অপারেশনের পরের বছর তা কমে বছরে ৯০ টনে দাঁড়ায়। ফরমালিনের কিন্তু বৈধ সীমিত ব্যবহার রয়েছে। ল্যাবরেটরিতে, ক্লিনিকে ও ফার্নিচারের রং করার কাজে এটা ব্যবহূত হয়। এ ছাড়া বিদেশ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফরমালিন মিশ্রিত খাদ্য আমদানি করত। এখন কিন্তু বাইরে থেকে ফরমালিন মিশ্রিত ফলসহ খাদ্যদ্রব্য এলে আমাদের বিমানবন্দর ও নৌবন্দরে শনাক্ত করার ব্যবস্থা আছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক আরও বলেন, নকল পণ্য তৈরির কোম্পানি ধ্বংস করলে কিছুদিন পর দেখা যায় নতুনভাবে অন্য কোথাও তারা কোম্পানি খুলে বসেছে। পণ্যর প্যাকেটে বারকোড সংযুক্ত করা থাকলে ক্রেতারা খুব সহজে আসল-নকল চিনতে পারবে। এতে মানুষের হয়রানি কমবে এবং বাজারে নকল পণ্যও থাকবে না। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের নজর দেওয়ারও আহ্বান জানান।