শেবাচিম হাসপাতালে সংকটের কথা শুনে বিস্মিত বিভাগীয় কমিশনার
- আপডেট টাইম : ১০:৫৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১
- / ২৭১ ৫০০০.০ বার পাঠক
- দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥
মহামারি করোনাকালীন সময়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে চিকিৎসা সেবায় দক্ষিণাঞ্চলবাসীর নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল।
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস এবং বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারসহ জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে হাসপাতাল পরিদর্শনকালে বিভাগীয় কমিশনার সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং করোনা ও ডায়রিয়া আক্রান্তসহ সকল ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সেবার উন্নয়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা করেন। এ সময় হাসপাতালের নানামুখী সংকট আর সমস্যার কথা শুনে বিস্মিত হন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল।
রবিবার দিনভর পরিদর্শন শেষে পৃথক দুটি মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক হোসেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ মনিরুজ্জামান শাহীন, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিচালক ডাঃ জসিম উদ্দিন, জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল। তিনি হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত খোঁজ খবর নেন। পাশাপাশি করোনা ইউনিটে রোগীর চাঁপ বৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে চিকিৎসকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
এসময় বিভাগীয় কমিশনারের কাছে হাসপাতালের বিভিন্ন সংকট, সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা। পাশাপাশি এগুলো দ্রুত সমাধান করে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি করা হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা মতবিনিময়কালে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ব্যাপক সংকট রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী। করোনা রোগীর অধিক চাঁপ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বপালন করা চিকিৎসক এবং নার্সরা কোয়ারেন্টাইনে থাকার ফলে চিকিৎসক ও সাপোটিং স্টাফের ঘাটতি থাকছে। তারা আরও বলেন, করোনা ওয়ার্ডে লিফট না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা। আবার করোনা ওয়ার্ডের মধ্যে থেকেও ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে অতিমাত্রায় নোংরা হচ্ছে করোনা ইউনিটটি। তাছাড়া প্রায় বছর ধরে শেবাচিমের বর্জ্য অপসারণ করছে না সিটি কর্পোরেশন। ফলে গোটা হাসপাতাল ক্যাম্পাসে দুর্গন্ধসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। করোনা ওয়ার্ডে আইসিইউ বেডের চরম সংকট রয়েছে। আবার আইসিইউসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য নেই দক্ষ টেকনিশিয়ান। ফলে নষ্ট হচ্ছে দামি যন্ত্রপাতি।
বিভিন্ন সংকট এবং সমস্যার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বলেন, আমরা সবাই মিলে করোনা মহামারি প্রতিরোধে একসাথে কাজ করবো। সবাই নিজের স্থান থেকে দেশকে ভালোবেশে দেশের মানুষের সেবা করে যাবো। হাসপাতালের যেসব সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে সে বিষয় নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
পাশাপাশি আগামী সাতদিনের মধ্যে শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে লিফট স্থাপনে গণপূর্ত বিভাগকে এবং হাসপাতাল চত্বর থেকে বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার।
এদিকে শেবাচিম হাসপাতাল পরিদর্শন এবং মতবিনিময় শেষে বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল। সেখানে ডায়রিয়া ওয়ার্ড পরির্দশন করে তিনি কথা বলেন চিকিৎসাধীন রোগী এবং তাদের স্বজনদের সাথে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ প্রতিরোধক টিকা প্রদান কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন বিভাগীয় কমিশনার।
উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বরিশালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে বিভাগজুড়ে। ফলে হাসপাতালগুলোর ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের জায়গা হচ্ছেনা। তাদেরকে ওয়ার্ডের বাইরে সামিয়ানা টাঙিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব বিষয় প্রত্যক্ষ করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার।