শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ -মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান

- আপডেট টাইম : ০৪:২৬:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
- / ৪ ১৫০০০.০ বার পাঠক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, শহীদ নিজামীর খুনীদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন বাংলাদেশে আর কোন ফ্যাসিবাদকে আসতে দেওয়া হবে না।
১১ মে রোববার পাবনার সাঁথিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর শাহাদাত উপলক্ষ্যে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মাওলানা নিজামী একটি ইতিহাস একটি নাম। তাঁর সাথে সবশেষ দেখা হয়েছে জেলখানায়। সেদিন তিনি জীবনের অনেক কিছু আমার কাছে বলেছেন। তিনি বলেন, পাবনার এই সাঁথিয়ার নাম কয়জন জানতো-চিনতো? তাও আবার মনমথপুরের ছেলে নিখিল-পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতিছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ভারত মাওলানা নিজামীর নেতৃত্বকে ভয় পেতো। ভারত জানতো দুই মহিলার নেতৃত্ব না থাকলে মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশের নেতৃত্বে দিবেন। তাই ভয় পেয়ে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতেই এই বিচারের আয়োজন করেছিল। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা তদন্তকর্মকর্তা এবং মিথ্যা বিচারপতি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলেছে এটা ছিল বিচারিক গণহত্যা। বাংলাদেশের মানুষ জানে এটা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড।
তিনি বলেন, বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখী করতে হবে। কারণ এরা খুনি। নইলে বাংলাদেশের জনগণ এদের বিচার করতে বাধ্য করবে। শুধু তা-ই নয়, হাসিনা তার বাহিনী দিয়ে গুম, খুন, হত্যা করেছে। কারাগারে আটক করে রেখেছিল অনেক মানুষকে। কারণ একটাই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা।
রফিকুল ইসলাম খান জোর দিয়ে বলেন, হাসিনা পালিয়েছে, তার মন্ত্রী এমপিরা পালিয়েছে। আমাদের নেতারা ফাঁসির মঞ্চে কালেমা পড়তে পড়তে গিয়েছেন, কিন্তু পালাননি।
তিনি শহীদ মীর কাসেম আলীর উদাহরণ টেনে বলেন, তিনি বিদেশে থেকে যেতে পারতেন। তিনি এয়ারপোর্টে নেমে আমাকে ফোন করলেন। বললেন নিজামী ভাইদের জেলে রেখে আমেরিকা থাকতে পারিনা। আমাদের নেতারা পালাননি। আপনারা পালালেন কেন? শুধু প্রধানমন্ত্রী পালাননি। জাতীয় মসজিদের ঈমাম পর্যন্ত পালিয়েছেন। তারা বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করেছিলেন।
আমরা দাবি জানাই সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বিচার করতে হবে। অনেক ফ্যাসিবাদের দোসর শার্ট পরিবর্তন করে জুলাই যোদ্ধা সাজার চেষ্টা করছে। কোন কিছুর বিনিময়ে তাদেরকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে প্রশ্রয়কারীদেরও একই কাতারে রাখা হবে। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাচারের টাকা ফেরত আনতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে আগে স্থানীয় নির্বাচন পরে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। যেনতেন নির্বাচন দেওয়া চলবে না। এই দেশ কারো বাপ দাদার নয়। ১৮ কোটি মানুষ সিদ্ধান্ত নিবে তারা কাকে আগামি দিনে কাকে ক্ষমতায় পাঠাবে। সচিবালয় থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে রব উঠেছে সবদল দেখা শেষ জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ।
রফিকুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে। হাসিনা পালিয়েছে, তার এমপিরা পালিয়েছে। তার বিচারপতিরা পালিয়েছে। কিন্তু এখনো জামায়াতের নিবন্ধন ফেরত দেওয়া হলো না কেন? আগামি ১৩ তারিখ নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, শহীদদের স্বপ্ন আল্লাহর আইন আর সৎ লোকের শাসন কায়েম না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। জামায়াতে ইসলামী মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। মাঝখানে কোন বিরতি নাই।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মাওলানা নিজামীর অবর্তমানে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনকে রেখে গেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে তিনি নির্বাচন করতেন। তার ছেলেকে আগামি নির্বাচনে সমর্থন এবং ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মরহুম মাওলানা নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমীর মাওলানা আবদুর রহীম, জেলা আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল, সিরাজগঞ্জ জেলা আমীর, মো. শাহিনুর আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ডা. আবদুল বাসেত খান ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল, ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার ও সোস্যাল মিডিয়া সম্পাদক, জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা জহুরুল ইসলাম খান, প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসাইন, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল গাফফার খান, সাপ্তাহিক সোনারবাংলার চেয়ারম্যান একেএম রফিকুন্নবী প্রমুখ।
জেলা আমীর আবু তালেব মন্ডল বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা চেয়েছিলেন আমাদের শীর্ষ নেতাদের শহীদ করে জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করতে চেয়েছিলেন। কি নির্মম পরিহাস এক বছরের মধ্যে তাদেরকেই জনগণ তাদের নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আজও আমাদের ভাই এটিএম আজহার ভাই কারাগারে। তিনি নির্দোষ। সাঁথিয়া বেড়া ইসলামের দুর্গে পরিণত হয়েছে। একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করে আমরা শহীদের প্রতি ফোটা রক্তের বদলা নেবো।
প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসাইন বলেন, শুধুমাত্র দ্বীনের দায়িত্ব পালনের কারণে আওয়ামীলীগ ২০১৬ সালের ১১ মে মাওলানা নিজামীকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছে। ৯ বছরের ব্যবধানে একই তারিখ আওয়ামীলীগ ও তার সকল অঙ্গ সংগঠন ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছে। এটা মহান আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একমাত্র জামায়াতে ইসলামী মজলুম দল। আগামি নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত পাবনার ৫ প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
আবদুল গাফফার খান বলেন, শহীদের ময়দান থেকে আমরা ঘোষণা করতে চাই আওয়ামীলীগের ডালপাতা পাতাসহ পুড়ে দিতে চাই। শিকড়সহ উপড়ে ফেলে দিতে চাই। তাদের ঠাই বাংলার মাটিতে হবেনা। মাওলানা নিজামীর প্রতি ফোটা রক্তের মূল্য আদায় করে ছাড়বো।
ডা. আবদুল বাসেত খান বলেন, ১১ তারিখ মাওলানা নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। গতকাল তারাও (আওয়ামীলীগ) ফাঁসিতে ঝুলেছে। তিনি সাঁথিয়াতে নিজামী সাহেবের ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে নির্বাচনে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন বিজয় আমাদের কড়া নাড়ছে। আমরা নিজামী সাহেবের চরিত্র থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবো। ‘বুনইয়ানুনমারসুছ’ সিসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় আমরা থাকবো। এবং পাবনাতে জামায়াতে ইসলামীকে বিজয়ী না করে মাঠ ছাড়বো না।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মাওলনা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, মাওলানা আবদুস সোবহানের ছেলে নেসার আহমেদ নান্নু, শহীদ আলী আহসান মুজাহিদের ছেলে আলী আহমদ মাবরুর, শহীদ কামরুজ্জামানের ছেলে হাসান ইমাম ওয়াফি, শহীদ মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম আরমান, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে হাছান জামিল মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন।
বেড়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক ও সাঁথিয়া উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আনিসুর রহমানের সঞ্চালনায় মিলাদ মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন, সাথিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোখলেসুর রহমান, বেড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আতাউর রহমান, পাবনা আলহেরা স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল মকসুদ আলম চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান। ইসলামী ছাত্রশিবির পাবনা জেলা শাখার সভাপতি ইসরাইল হোসেন শান্ত, পাবনা শহর শাখার সভাপতি ফিরোজ হোসেন।
উপস্থিত ছিলেন পাবনা পৌর জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল লতিফ, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবু সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক রেজাউল করিম। সভা শেষে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন।