টিআই মাহাবুবার রহমানের পরিচালনায় বিরামপুরে সেচ্ছা শ্রমেই চলছে আনসার ও ভিডিপি স্কুল
- আপডেট টাইম : ০৮:১৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
- / ৪২ ৫০০০.০ বার পাঠক
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ( আনসার ও ভিডিপি) প্রশাসনের সহযোগিতার ও সার্বিক দিক নির্দেশনায় সারাদেশে শিক্ষাবঞ্চিত ও ঝরেপড়া প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগে ৩টি স্কুল পরিচালিত হয়ে আসছে। ঢাকা ও বগুড়ার পরেই অত্র দিনাজপুরের বিরামপুর আনসার মাঠের দক্ষিণ পশ্চিম কর্ণারে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ও দিক নির্দেশনায় ২০১৭ ইং সালে “বিরামপুর আনসার ও ভিডিপি স্কুলটি মোঃ আইয়ুব আলী সহ স্থানীয় পাঁচজন শিক্ষানুরাগি নারী ও পুরুষের উদ্যোগে নামে মাত্র বেতনে অনেকটায় সেচ্ছাসেবার মাধ্যমে এলাকার গরীব, অসহায় ও ছিন্নমুল ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় স্কুলে গিয়ে
বিরামপুর আনসার ও ভিডিপি স্কুলটির বর্তমান দায়ীত্বে থাকা পরিচালক বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী( আনসার ও ভিডিপি’র)
বিরামপুর উপজেলা প্রশিক্ষক (টিআই) মোঃ মাহাবুবার রহমানকে স্কুলে শিক্ষকের ভূমিকায় কম্পিউটার ক্লাশ নিতে দেখা যায় । এ সময় তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাচ্চাদের বিজ্ঞান ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। ২০২৩-২০২৪ সাল থেকে আমি স্কুলের পরিচালকের দায়ীত্বে আছি। দায়ীত্ব পাওয়ার আগে থেকেই শিশুদের স্কুলটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। অফিসের পাশেই আমাদের স্কুলটি হওয়ায় সরকারি কাজের ফাঁকে সময় পেলেই স্কুলে গিয়ে বাচ্চাদের ক্লাশ নিয়েছি। স্কুলের সাথে আমি ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই স্কুলটির প্রতিষ্ঠানকালীন চাঁদাদাতাদের মধ্যে ও আমি অন্যতম। বর্তমানে অত্র স্কুলটিতে মান সম্পন্ন পাঠ দানের পাশাপাশি বিনোদন ও খেলা-ধুলার সকল ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রতি বছর স্কুলের প্রচারণায় মাইকিং, লিফলেট ও বাচ্চাদের খেলা-ধুলার সামগ্রী ক্রয় খরচ নিজে বহন করছি। শিক্ষাদানের মতো সেবা দেওয়ার কাজটি করতে আমার খুব ভালো লাগে। টি আই মাহাবুবার রহমান আরো জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত স্কুলটি পরিদর্শণ করেছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপির) মহাপরিচালক, উপ-পরিচালক, রেঞ্জ কমান্ডার, জেলা কমান্ড্যান্ট, স্থানীয় সংসদ সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সম্প্রতি গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিনাজপুর জেলার সুযোগ্য জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ নুরুজ্জামান স্কুলটি পরিদর্শন করেন। তিনি স্কুলের পরিচালক, শিক্ষকমন্ডলী, উপস্থিত শিক্ষার্থী ও সুধীবৃন্দের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আনন্দিত হয়েছেন। এমন সেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের জন্য তিনি সকলের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলে টিআই মাহাবুবার রহমান জানিয়েছেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আইয়ুব আলি জানান, অত্র স্কুলের পরিচালক টিআই মাহাবুবার রহমান নিয়মিত শিক্ষক ব্রিফিং, অবিভাবক সমাবেশ, বিজ্ঞান ক্লাশ, আধুনিক সিলেবাস তৈরীতে সহযোগিতা করণ, শিক্ষাসফর, জাতীয় প্রগ্রামে অংশগ্রহনসহ বিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে উর্ধ্বনত কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় সাধন করেন। এ ছাড়াও অত্র স্কুলের সকল বিষয়ে তিনি অত্যন্ত আন্তরিক।
এ সময় অত্র স্কুলের অভিভাবক সাবিনা খাতুন জানিয়েছেন, অত্র স্কুলটি স্থাপিত হওয়ার কারণে এলাকার স্বপ্ল আয়ের মানুষরা নাম মাত্র বেতনে বাচ্চাদের শিক্ষাদানের সুযোগ পেয়েছেন। এতে করে এলাকার ঘরেঘরে প্রাথমিক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে। এ সময় স্কুলের পরিচালক টিআই মাহাবুবার রহমানের স্কুলের বাচ্চাদের প্রতি সকল সহায়তা প্রদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপজেলা কর্মকর্তা মোছাঃ তাহেরা খাতুন সহ স্থানীয়রা জানান, মাত্র কয়েক বছর আগেও বিরামপুর আনসার ও ভিডিপি অফিস সংলগ্ন আনসার মাঠের ওই স্থানটির অন্ধকার পরিত্যাক্ত বৃক্ষ আগাছার আড়ালে ছিলো মাদক সেবীদের নিরাপদ আস্তানা। স্থানটি শহরের একপাশে হওয়ায় মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকিদিয়ে প্রতিনিয়তয় সন্ধার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলতো গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক সেবনের আসর। বর্তমানে এখানে এই ফুল ও ফলের বাগান বেষ্টিত বিশাল মাঠ সংলগ্ন একটি সুন্দর পরিবেশে “বিরামপুর আনসার ও ভিডিপি স্কুল” টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অত্র এলাকাটি মাদক মুক্ত হয়ে একটি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। নিরক্ষরতা দূরে তাড়িয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ৫ জন সেচ্ছাসেবী শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৪৮ জন ছাত্র-ছাত্রীর এই স্কুলটি ধীরে ধীরে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু করে অল্প দিনের মধ্যেই মানসম্পুর্ন গতিশীলতা পেয়েছে। স্কুলটিতে আধুনিক পাঠদানের পাশাপাশি ধর্মীয়, কালচারাল ও কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা সুচারুভাবে চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য অবিভাবকদের আলাদা খরচ বহন করতে হয় না। সেই বিষয়টি স্কুল পরিচালক টিআই মাহাবুবার রহমানের একটি উজ্জ্বল দিকনির্দেশনা বলে এলাকার সর্বস্থরের সচেতন মহল ও শিক্ষার্থী অবিভাবকবৃন্দ মনে করেন।
বিরামপুর আনসার ও ভিডিপি স্কুলটি এলাকার স্বপ্ল আয়ের মানুষের কাছে অল্প বেতনের পছন্দের স্কুল।।