রায়পুরে বালু উত্তোলনে ভাঙন আতঙ্ক
- আপডেট টাইম : ০৯:০০:১৪ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪
- / ৭২ ৫০০০.০ বার পাঠক
রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদী ও এর সংযোগ খালসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করছে স্থানীয় একটি চক্র। এতে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, তেমনি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এলাকার রাস্তা-ঘাট, জমি, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনা। প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্যে চক্রটি তাদের অবৈধ বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এসব দেখার মতো কেউ নেই। গত চার মাস ড্রেজারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোন অভিযান না থাকায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০টি ড্রেজার দিয়ে নদীর চর ঘেঁসে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলমান রয়েছে। এমনকি ড্রেজার লাগিয়ে মেঘনা চরের ফসলি জমি পর্যন্ত কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে চরে ব্যাপকভাবে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে স্থানীয়দের আশঙ্কা চলতি বর্ষা মৌসুম শেষে এর প্রভাবে (বালু উত্তোলনে) ভাঙন বাড়বে নদীতে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে নদী পাড়ের স্থানীয়রা।
জানা যায়, ২০২২ সালে জেলার রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেতৃত্ব দিয়ে কয়েকদিন টানা অভিযান পরিচালনা করে এক দিনেই ১১টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন জব্দসহ মোটা অংকের জরিমানা করে। ওই সময় ৮নং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রশিদ মোল্লার ছেলে ইউপি সদস্য দিদার মোল্লাকে ৫লাখ টাকা জরিমানা করলে কয়েক মাস বন্ধ হয়ে যায় বালু উত্তোলন। কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার বালু উত্তোলন শুরু হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন জনসচেতনতামূলক সভা করে ড্রেজার চালাতে নিষেধ করার পরেও তা না থামায় ২৩ সালের অক্টোবর মাসে আবারও কঠোর অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। এসময় ৩ জনকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন সাবেক রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন দাস। এঘটনার পর কয়েক মাস বন্ধ থাকলেও ডিসেম্বরে ওই নির্বাহী কর্মকর্তা বদলি হওয়ার সাথে সাথে আবারও শুরু হয় অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের রাজত্ব। অবৈধ ড্রেজার মেশিন মালিকরা জানান, নিচু জমি ভরাট, বাসা-বাড়ি ও নির্মাণ কাজসহ বিভিন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য স্বল্প খরচে বালু উত্তোলন করে তা তারা বিক্রি করেন। বালুর দাম নির্ভর করে দূরত্বের ওপর।
জানা গেছে ড্রেজার ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক রুপ নিয়েছে সাপ-নেউলের ন্যায়। জড়িত চৌকিদার, জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন প্রভাবশালীদের একটি অংশ। ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়ন সভাপতি মনির মোল্লা ও তার ভাই ইউপি সদস্য দিদার মোল্লাসহ ২৫ থেকে ৩০ জন এ বালু ব্যবসা ও উত্তোলনের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত। মনির মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে গত ২৭ জুন সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএম শাহজালাল রাহুল বলেন, মনির মোল্লা অবৈধ বালু উত্তলনকারি ও সরকার দলীয় শক্তির অপব্যবহারকারী। কদিন আগেই মনির মোল্লার ভাই দিদার মোল্লাকে ড্রেজিং মেশিনসহ আটক করে প্রশাসন। বালু উত্তলন করে মনির মোল্লাসহ তার পরিবারের সদস্যরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। গ্রামের বাড়িতে তার রয়েছে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি, ঢাকার মোহাম্মদপুরে রয়েছে আলিসান একাধিক ফ্ল্যাট। এলাকায় তার দুটি মার্কেট আছে, আপনারা খোঁজখবর নিয়ে দেখেন সে গত ১০ বছর আগে কি ছিলো, তার এমন কি ইনকাম আছে, সে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তলোন করে এতো কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই শিকার হতে হয় বিভিন্ন মামলা হামলার।
এবিষয় জানতে ইউপি সদস্য দিদার মোল্লা বলেন, আমরা রাজনীতি করি, আমাদের নাম বিক্রি করে অনেকে অনেক অপকর্ম করে, আপনাদেরকে দেখলে আমাদের নাম বলে। আমি ড্রেজার ব্যাবসার সাথে জড়িত না।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মনির মোল্লা বলেন, আমি প্রশাসনকে বলেছি ড্রেজারের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য। আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছি। পদে থাকার কারণে অনেকেই নিজেদের বাঁচাতে আমাদের নাম বিক্রি করে। আর ঢাকায় বাড়ি আমার বৈধ টাকার ইনকামে কেনা। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করি। আপনারাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনে লিষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। ড্রেজারের কথা বললে আমি মারধর করি মানুষকে এ অভিযোগটি সম্পুর্ন মিথ্যা। আমি যেহেতু সভাপতি তার জন্য তারা আমি কোন ড্রেজার ব্যাবসার সাথে জড়িত না। আমি জড়িত থাকলে প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিক। আর কেউ যদি আমার নাম দিয়ে ড্রেজার চালায়, তাহলে আমি কি করবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা সহকারী প্রকৌশলী গোকুল চন্দ্র বলেন, মেঘনা নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন জানতে পেরেছি। বর্তমানে রায়পুরে তিনটি ইউনিয়ন ভাঙন হুমকিতে। এখন বর্ষাকাল, তা শেষ হলেই ব্যাপক আকারে ভাঙ্গন সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে আমি জেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিং ও যেই যেই জায়গা কথা বললে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আমি কথা বলবো। সহসাই নদী রক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহেদ আরমান বলেন, আমরা নিয়মিত অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি, যখনেই খবর পাই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেই।