ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি বিদেশে থাকা হামাস নেতাদের ওপর ভবিষ্যতে আরও হামলার সম্ভাবনা বাতিল করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন। জেরুসালেমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যেখানে যেখানেই তারা থাকুক, তারা নিরাপদ নয়। প্রতিটি দেশের অধিকার আছে নিজেদের সীমারেখার বাইরে নিজেকে রক্ষা করার।” নেতানিয়াহুর এ মন্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে এসেছে, যেখানে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
গত সপ্তাহে কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়। এই হামলার সময় ছয়জন নিহত হয়, তবে হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব বেঁচে যায়। কাতার গাজা যুদ্ধের সময় মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ২০১২ সাল থেকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো সেখানে অবস্থান করছে। ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ছিল গাজায় হামাসের নেতৃত্বকে দমন করা এবং এই নেতারা যেকোনো জায়গায় থাকলেও ‘ইমিউনিটি’ পাবেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারকে আশ্বাস দেন, “এ ধরনের হামলা আর হবে না।” তবে নেতানিয়াহু জানান, ভবিষ্যতে তারা অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকবে না।
নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা একাই এ হামলা চালিয়েছি, অন্য কেউ নয়।” রুবিও নিশ্চিত করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গালফ অঞ্চলের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রেখেছে। নেতানিয়াহু ও রুবিও বৈঠকে দুই দেশের প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রশংসা করেছেন। এ সময় আরব নেতারা কাতারের প্রতি সমর্থন জানাতে এক সম্মেলন আয়োজন করেছেন, যেখানে কাতারের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “ডবল স্ট্যান্ডার্ড” না মানার আহ্বান জানান।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার পশ্চিমাঞ্চলে বাড়িঘর ধ্বংসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করতে প্রস্তুত। প্রায় ২৫০,০০০ ফিলিস্তিনি ইতিমধ্যেই পালিয়েছে, তবে অনেকেই অর্থাভাবে এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে দক্ষিণে যেতে পারছে না। গাজার বাসিন্দা হাফেজ হাবুশ বলেন, “দক্ষিণে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করতে ৩০০ শেকেল চাওয়া হচ্ছে। আমাদের কাছে ১০০ শেকেলও নেই, খাবারের টাকার অভাবও আছে।” জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজায় খাদ্য সংকট ও দারিদ্র্য চলমান অবস্থায় হামলা বাড়ালে সাধারণ মানুষ আরও বিপদের মুখে পড়বে।
নেতানিয়াহু-রুবিও বৈঠকে পশ্চিম তীরের বসতি সম্প্রসারণ, গাজা শহর দখলের সামরিক পরিকল্পনা এবং ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইসরায়েল আগস্টে ই-ওয়ান (E1) বসতি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, যা পশ্চিম তীরকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করবে। নেতানিয়াহু বলেছেন, “এই ভূমি আমাদের। কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না।” ফাইন্যান্স মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচও পশ্চিম তীরের চার-পঞ্চমাংশ দখলের প্রস্তাব উন্মোচন করেছেন।
বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে প্রায় ৭,০০,০০০ ইহুদি বসতি রয়েছে, যেখানে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বসতি অবৈধ। রুবিও সিটি অফ ডেভিড আর্কিওলজিকাল পার্ক পরিদর্শন করবেন, যেখানে রোমান যুগের রাস্তা পুনর্নিমাণ করা হয়েছে। সমালোচকরা মনে করেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রত্নতত্ত্ব ব্যবহার করার চেষ্টা। তথ্যসূত্র : বিবিসি
প্রিন্ট