রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রাজধানীর মিরপুরে বিদেশি সিগারেটের কোটি টাকার বাণিজ্য
- আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:৫৪ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩
- / ২১৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
অবৈধপথে আসা বিদেশি চোরাই সিগারেটে রমরমা ব্যবসাকেন্দ্র এখন মিরপুর এলাকার বাজার এলাকায়, আর এসব অবৈধ সিগারেটের পাইকারি বাণিজ্যে কোটি টাকার ব্যবসা হলেও স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার। মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চললেও অধরায় থেকে যায় মূল হোতারা। এতে প্রতি মাসে কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অবৈধপথে আসাএসব সিগারেটের
রাজধানী মিরপুর এলাকার মূল ডিলার চার ব্যক্তি শরিফ, ফয়সাল, শিপলু ,আরাফাত, এমনই অভিযোগ পাওয়া যায়।
সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায় মিরপুরের কাফরুল থানা এলাকার সেনপাড়া পর্বতা ক্লাবের সামনে দোকান মালিক মোহাম্মদ কোবির , মোহাম্মদ আজিজ, শ্যামল, মিরপুর মডেল থানার সামনে, দোকান মালিক সিদ্দিক, শাহীন, মিরপুর ১০ নাম্বার গোল চত্বর এলাকার ফুট ওভার ব্রিজের নিচে খাবার হোটেল আল বারাকা এর সামনে দোকান মালিক মোঃ আরিফ পিতা ইব্রাহিম খলিল স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট জেলা, থানা মোড়লগঞ্জ, গ্রাম চর হোগলা বুনিয়া, বর্তমান ঠিকানা কাফরুল থানা এলাকার গিরিঙ্গির মোড় সংলগ্ন, ঢাকা, নুরুজ্জামান, চান মিয়া, হাজির বিরিয়ানির সামনে মোহাম্মদ মনির হোসেন, সুজন আলম, চৌরঙ্গী মার্কেটের সামনে শরীফ পিতা ইব্রাহিম খলিল, স্থায়ী দোকান মালিকদের সাথে আলাপকালে তথ্য পাওয়া যায় রাজধানীর মিরপুরএলাকা ,রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিদেশি সিগারেট দীর্ঘদিন যাবত পাইকারি বিক্রি করে আসছেন কুমিল্লার শরীফ, চট্টগ্রামের আরাফাত, শিপলু ও ফয়সাল, এবং আরো বলেন রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকার বিভিন্ন থানা এলাকায় শত শত দোকান রয়েছে উল্লেখিত চার ব্যক্তি প্রতি মাসে বিদেশি সিগারেটের অবৈধভাবে বিক্রির মধ্য দিয়ে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেন।
এ ছাড়াও আবাসিক এলাকায় ভাড়াবাসা নিয়ে একটি সিন্ডিকেট প্রতিদিন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন দোকানে মাঠকর্মীদের দিয়ে সিগারেট বিক্রি করছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব সিগারেট অনায়াশে ঢুকছে রাজধানীতে।
কিছুদিন আগেও জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের তিন যাত্রীর কাছ থেকে ৮১৪ কার্টন সিগারেট জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১২ লাখ ২১ হাজার টাকা। এর আগে একই ফ্লাইটে আসা ৫৪৭ কার্টনে আনা ১ লাখ ৯ হাজার ৪০০ শলাকা সিগারেট ও রিদমি ব্র্যান্ডের ২০টি মোবাইল সেট পরিত্যক্ত অবস্থায় আটক করা হয়।
এ ছাড়া ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল ফেল্ট (এক ধরনের ফোম) আনার ঘোষণা থাকলেও ‘৩০৩’ ও ‘মন্ড’ ব্র্যান্ডের ৬৫০ কার্টন সিগারেট আনা হয়েছে। যার মূল্য ১৩ কোটি টাকা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, এ পর্যন্ত আটক হওয়া বিদেশি সিগারেটের মধ্যে এটিই সর্ববৃহৎ চালান। ওই বছরের ৭ মে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার পিস সিগারেট পাওয়া যায়। শুল্কসহ যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি ৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রায় সময় বিভিন্নভাবে ধরা পড়ছে সিগারেটের চালান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চাহিদা অনুযায়ী এসব বিদেশি সিগারেটের ক্রেতা হচ্ছেন নিয়মিত ধূমপায়ীদের তুলনায় উঠতি বয়সি তরুণরা। ফলে যুবসমাজের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সব সিগারেটের প্যাকেটে ‘ছবিযুক্ত সংবিধিবদ্ধ সতর্কতা’ এবং ‘রাজস্ব স্ট্যাম্প’ ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা থাকলেও অবৈধ এসব সিগারেটের প্যাকেটে কিছুই লেখা থাকে না। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখও নেই এসব সিগারেটে।
চোরাই সিগারেটের ওপর বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এক বাজার জরিপে দেখা গেছে, বিদেশি সিগারেট আমদানিতে ৩৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৭ কোটি ৪০ লাখ বিদেশ থেকে আসা চোরাই সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। সরকার সব সিগারেট থেকে আমদানি শুল্ক আদায় করতে পারলে বছরে আরো প্রায় ১৩০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় হতো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুর এলাকায় ৩০ থেকে ৪০টি দোকানে প্রকাশ্যেই এসব সিগারেট বেচাকেনা চলছে। প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিদেশি সিগারেট বেচাকেনা হয়। সাজানো সিগারেটের মধ্যে রয়েছেÑ ইজি স্পেশাল গোল্ড, মন্ড, স্ট্রবেরি, ভন ইন্টারন্যাশনাল, উইনস্টোন, গ্র্যান্ড-২০০০, ইজি অউরা, ব্লাক, মালবোরো, উলসন ল্যান্ড এম, ত্রি জিরো ত্রি, মডার্ন, ডাবল হ্যাপিনেস, ডানহিলসহ বিভিন্ন নামের সিগারেট।
অনুসন্ধানে ক্রেতা সেজে চোরাই সিগারেটের বিক্রি ও বিপণন নিয়ে জানতে চাইলে মিরপুর এলাকার সিগারেট দোকানের এক কর্মচারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, অবৈধ উপায়ে সমুদ্রপথে এবং বিমানবন্দরের মাধ্যমে সিগারেটগুলো বেশি নিয়ে আসা হয়। বন্দরের কর্মকর্তা ও পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশে একটি শক্তিশালী চক্র এই কাজটি করে থাকেন। এসব চোরাই সিগারেট কেনাবেচার নির্দিষ্ট কিছু লোক আছে। ফোন করে খবর দিলেই তারা এসে দোকানে দোকানে সিগারেট দিয়ে যায়। এখন খুচরা বিক্রেতাদের এসব সিগারেট কিনতে বা বেচতে কোনো ঝুঁকি পোহাতে হয় না। সূত্রটি আরো জানায়, বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। আবার উচ্চ সেগমেন্টের ২০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেটের দাম ১০৮ টাকা।এই দুই সেগমেন্টের ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতেই বিদেশ থেকে চোরাইপথে আনা এসব সিগারেটের ২০ শলাকার প্যাকেট বিক্রি করা হয় ১৪০-১৫০ টাকা। যেমন মন্ড স্ট্রবেরি, মন্ড আপেল এই ২০ শলাকার একটি প্যাকেটের দাম মাত্র ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, যা দেশীয় প্রিমিয়াম সেগমেন্টের ২০ শলাকার সিগারেটের চেয়ে অনেক কম। ফলে এসব সিগারেটের প্রতি ক্রেতার চাহিদাও বেশি।
কিন্তু আমদানি শুল্ক দিয়ে বৈধপথে আনলে ২০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেট প্রায় তিন গুণ দামে বিক্রি হতো। চোরাকারবারিরা শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, চীন ও দুবাই থেকে অবৈধ পথে এসব সিগারেট আনছে। দেশি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের সিগারেট বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতারা যে পরিমাণ মুনাফা পান, বিদেশি এসব অবৈধ সিগারেট বিক্রি করলে তার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি মুনাফা পান। এসব সিগারেটে কর সংযুক্ত থাকে না বিধায় ক্রেতার জন্যও লাভজনক হয়।
শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বেশির ভাগ সিগারেট আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বন্দর দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।