কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ৩ বছরের কমিটি চলছে ৭ বছর, সভাপতি ছাড়া ৮ মাস
- আপডেট টাইম : ০২:৩৬:০৯ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩
- / ৩০০ ৫০০০.০ বার পাঠক
বিভিন্ন অজুহাত আর দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন বছরের কমিটি এখন ৭ বছর পার করেছে। এরমধ্যে ৮ মাসের বেশি সময় ধরে সভাপতি হীন এ কমিটি। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও কাউকে দেওয়া হয়নি দায়িত্ব। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে দলীয় কার্যক্রম এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। পদ প্রত্যাশীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের এই স্থবিরতার কারণে নেতৃত্বের বিকাশ হচ্ছে না। দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকান্ড এবং নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা।
দলীয় সূত্রে জানা যায় যে, ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই কেন্দ্র থেকে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়। এতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফুল ইসলামকে সভাপতি ও প্রভাষক মো. শামীম আহম্মদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সহসভাপতি খায়রুল বাশার, মোখলেছুর রহমান মিথুল, তাসলিম সাজ্জাদ সামজাদী বাপ্পি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.ওয়ারিসুজ্জামান, আব্দুস সাত্তার রনি, মো. জাকির হোসেন সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাহজাহান, মুত্তাকিল পলাশ, প্রচার সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন নিলয় এবং সহ দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউল হক বাতেন। তিন বছরের এ আংশিক কমিটির বয়স সাত বছর হয়ে গেলেও দেখা মেলেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটির। এদিকে গত প্রায় ৮ মাস আগে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক বর্ধিত সভাকে ঘিরে দলীয় বিশৃংখলার অভিযোগ এনে অব্যাহতি দেওয়া হয় সভাপতি শরিফুল ইসলামকে। এরপর লিখিত বা মৌখিকভাবে কেন্দ্র থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি কাউকে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ তিন বছর থাকলেও সেখানে হয়ে যায় সাত বছর। এতে দলে বিরাজ করছে অসন্তোষ। দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়া আর দলীয় কোন্দলের কারণে জেলার অন্যান্য উপজেলা ও পৌর কমিটিতেও পড়েছে এর প্রভাব। অনেক উপজেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও জেলা কমিটির কারণে নতুন কমিটি করা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানান, সম্মেলন দলের একটা প্রাণ। সম্মেলন না হলে নেতাকর্মীদের মনে একঘেয়েমি চলে আসে। রাজনীতির যে আকর্ষণ তা নষ্ট হয়ে যায়। দলের ভেতরে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এসব পরিহার করে জেলা সম্মেলন খুবই প্রয়োজন। গঠনতন্ত্রে রয়েছে তিন বছরের বেশি কোনো কমিটি থাকবে না। যদি তিন বছরের বেশি হয় তাহলে, আহবায়ক কমিটি হবে। আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে সম্মেলন হবে। অথচ সাত বছর হয়ে গেলেও কিছুই হয়নি। এদিকে ২০১৬ সালে কমিটি ঘোষণার পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিছুদিন এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকলেও এরপর থেকে দলীয় কোন্দল তৈরি হয় তাদের মধ্যে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে কোনো কর্মসূচিও পালন করেনি। আবার ১২ সদস্যের আংশিক কমিটিও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তাই দীর্ঘ দিনেও পূণাঙ্গ কমিটি দূরে থাক আয়োজন করতে পারেনি একটি বর্ধিত সভাও। তাই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দলে দুই পক্ষের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করে আসছিল। তবে দীর্ঘদিন পর গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত হয় এক বর্ধিত সভা। এসময় পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরীফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদের অনুসারীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চ ত্যাগ করে চলে যান। এ ঘটনায় পরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হকের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করা হয় যে, কিশোরগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরীফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই সভাপতি পদ শূন্য থাকে কিশোরগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের। এমনকি এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কেন্দ্র হতে কাউকে লিখিত বা মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে শিবলী বলেন, বর্তমানে যে কমিটি আছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। পুরাতন নেতৃত্বে জেলা কমিটি চলতে পারে না। যারা যোগ্যতা সম্পন্ন নেতা রয়েছেন এবং যারা সঠিকভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবে তাদেরকে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। এতে সংগঠনে প্রাণ ফিরে পাবার পাশাপশি দলীয় কার্যক্রমও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।
এ বিষয়ে সংগঠনটির এক নম্বর সহসভাপতি খায়রুল বাশার মঙ্গলবার (২৩ মে) বলেন, যেহেতু কেন্দ্র থেকে সভাপতিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক নম্বর সহসভাপতি হিসেবে আমাকেই ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ ৮ মাস হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমি বা অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে সংগঠনের নেতাদের মধ্যে অসোন্তষ বিরাজ করছে। এখন সংগঠনের কার্যক্রম কিভাবে চলে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এইভাবে নিজেরা নিজেরাই অঘোষিতভাবে সভাপতি বানিয়ে চালিয়ে দেই। আসলে এভাবে কোনো সংগঠন চলতে পারে না। অচিরেই এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মো. শামীম আহম্মদ দাবি করে বলেন, সভাপতি বা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া না হলেও সংগঠনের কার্যক্রম থেমে নেই। মাঝে করোনার কারণে দলীয় কার্যক্রম বাধাগ্রস্তের পাশাপাশি বর্ধিত সভাও করা যায়নি এবং বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অচিরেই সম্মেলন করে পুরাতন কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা হবে। কারণ সম্মেলন মানেই নতুন নেতৃত্ব। সৎ, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নতুন কমিটিতে মুল্যায়ন করা হবে।