বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে: পাকিস্তান

- আপডেট টাইম : ১২:০৬:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
- / ৩ ৫০০০.০ বার পাঠক
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকটিতে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি যৌথ সংকল্প প্রতিফলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।
ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৫ বছর বিরতির পর, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ১৭ এপ্রিল ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ দফা দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বসে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে এই আলোচনা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি যৌথ সংকল্প প্রতিফলিত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত এবং কৌশলগত সহযোগিতার ওপর একটি বিস্তৃত মতবিনিময় করেছে, যা তাদের জনগণের অভিন্ন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক সখ্যতা এবং অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। নিউ ইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া এবং জেদ্দায় সাম্প্রতিক উচ্চ-স্তরের যোগাযোগেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছে।
এতে আরও বলা হয়, উভয় পক্ষ নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপের মাধ্যমে গতি বজায় রাখা, মুলতুবি চুক্তিগুলো দ্রুত চূড়ান্ত করা এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা এবং সংযোগে সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। পাকিস্তান তার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুযোগ প্রদান করে, অন্যদিকে বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক শিক্ষায় কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করে। বাংলাদেশি পক্ষ পাকিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বৃত্তি প্রদানের প্রস্তাবকেও স্বীকৃতি দেয় এবং শিক্ষা খাতে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
‘যোগাযোগকে অগ্রাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে উভয় পক্ষ করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। ভ্রমণ এবং ভিসা সহজীকরণের ক্ষেত্রে অগ্রগতিতেও তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, বাংলাদেশি পক্ষ ঢাকায় প্রখ্যাত পাকিস্তানি শিল্পীদের সাম্প্রতিক পরিবেশনার প্রশংসা করেছে, অন্যদিকে পাকিস্তানি পক্ষ পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করেছে। ক্রীড়া, গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যার মধ্যে এই ক্ষেত্রগুলোতে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক চূড়ান্তকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
‘বহুপাক্ষিক বিষয়গুলোতে, উভয় পক্ষই সার্ককে এর প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশি নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, সার্ক প্রক্রিয়া দ্বি-পাক্ষিক রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে।’
এতে আরও বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশি পক্ষকে অবৈধভাবে ভারত-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের (IIOJK) পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে এই বিরোধের দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার সময়, উভয় পক্ষই অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে, বিশেষ করে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। আলোচনায় আঞ্চলিক সংহতি, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং বহিরাগত চাপ থেকে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ককে দূরে রাখার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করা হয়। একটি ভবিষ্যৎমুখী অংশীদারিত্বের প্রতি যৌথ প্রতিশ্রুতি উঠে আসে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর মুহাম্মদ ইসহাক দারের আসন্ন সফরের জন্য অধীর আগ্রহের কথা জানান।
বিবৃতির শেষে উল্লেখ করা হয়, উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ পাকিস্তানের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পরবর্তী দফা পরামর্শ ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়েছে।