ঢাকা ১০:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৯০ ইলা লালালালা: সবুজ ঘাসের লাল দ্রোহের সুর যার কন্ঠে তরুণ আইনজীবী সাইফুলকে যেভাবে হত্যা করা হয় গাজীপুরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতিত অতিষ্ঠ জনসাধারণ সমাবেশে গিয়ে টাকা না পেয়ে বাড়ি ঘেরাও, ৫ প্রতারক আটক অভিনব সিন্ডিকেট: সয়াবিন তেলের সঙ্গে চাল-ডাল কেনা বাধ্যতামূলক! সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন হাসনাত ডেপুটি রেজিস্ট্রার হয়েও নার্সিং ইনস্টিটিউট ব্যবসা নিলুফার ইয়াসমিনের অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তলব পুলিশ প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তন হলেও এসআই মিজানের অসাধু নীতির পরিবর্তন হয়নি

কবি গুরু- শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সংগ্রহ-দৈনিক সময়ের কন্ঠ-
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৬:৫৩ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২ জানুয়ারি ২০২৩
  • / ১৮৭ ৫০০০.০ বার পাঠক

গুরুদেব বলতেন-কবে যে ছুটি পাব – কোনো কাজ থাকবে না, বসে বসে শুধু আকাশ দেখব, গাছ দেখব, পথ দিয়ে লোকজন যাচ্ছে-এই দেখে দেখে কাটিয়ে দেব। তা নয়, কেবল লেখা লেখা লেখা। আর ভালো লাগে না। ছবিও আঁকতে পারছি নে। যখনই ভাবি আঁকি এইবারে -অমনি মনে হয় এই-এই কাজ বাকি আছে, সে-সব সেরে আঁকব। কিন্তু সেই বাকি বাকিই থাকে।

রানী চন্দকে গুরুদেব চিঠিতে লিখেছেন-

বর্ধমান থেকে ফিরে আসার পর থেকে শরীরটা একটুও ভালো বোধ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেন স্বাস্থ্যের ভিত্ গেছে ভেঙে। রোজ বেলা দুটো থেকে চারটে পর্যন্ত হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকি, তার পরে সেটা কেটে যায়। হয়তো দলবল নিয়ে পশ্চিম প্রদেশে গেলে সেই উপলক্ষে হাওয়া বদল হতে পারবে। ডাক্তারের মত এই, যকৃত্‍টা অসদব্যবহার করছে; খাওয়া-দাওয়া যে বাদশাহী চালে, তা বলতে পারি নে, তবে কিনা কিছুদিন স্পর্ধাপূর্বক দুধ খেতে লেগেছিলুম, সেটা এখন বর্জন করাই স্থির করেছি, তার স্থলে অর্জন করব কী তা ভেবে পাই নে। মনটা এখন শুধু পথ্যে পরিবর্তন নয়, পথ পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকেছে। যে-সমস্ত কাজে-অকাজে এতকাল জড়িত বিজড়িত ছিলুম তার জাল কেটে একেবারে ফাঁকায় বেরিয়ে পড়বার জন্য চিত্ত উত্‍কন্ঠিত। কিন্তু খবরের কাগজওয়ালা মেসেজ চায়, কবি চায় অভিমত, জননী চায় কন্যার নাম, মুসলমান চায় তাদের প্রভুর নামে স্তবগান, মাদ্রাজি গ্রন্থকর্তারা চায় গ্রন্থের ভূমিকা, ডাকযোগে পত্র আসছে প্রত্যুত্তরের প্রত্যাশায়, মাসিকপত্র গদ্যে পদ্যে রসদের নিয়মিত বরাদ্দ দাবি করে, পাতানো নাতনীরা অভিমান করে, সুধীর কর আসেন পা টিপে টিপে প্রুফ নিয়ে, নানা প্রস্তাব নিয়ে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

গুরুদেব বলতেন, এ হল আমার বড়ো হবার শাস্তি। বেশ ছিলেম পদ্মার তীরে তীরে নদীর স্রোতে। সহজ আনন্দের দিন ছিল তখন। সেইদিন কি আর ফিরে পাব?

বলতেন, কেমন সুন্দর মেঘলা করেছে, টিপ টিপ করে বৃষ্টি ঝরছে, এমন দিনে কোথায় চুপটি করে বসে বসে এই-সব দেখব, না, কাজ আর কাজ – লেখা আর লেখা। বিধাতা যিনি – যখন পারে টেনে তুলবেন –  নাকালের একশেষ করে এপারের যত ঢেউ খেতে খেতে তার পরে তুলবেন, আর কি হবে এ-সব শুনিয়ে। এই দেখ-না, জরুরি তাগিদ এসেছে ‘বাণী’ দিতে হবে সেরে ফেলি আগে – এখন সরো সব এখান থেকে। ব’লে লেখার টেবিলে ঝুঁকে বসতেন।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কবি গুরু- শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আপডেট টাইম : ০৬:০৬:৫৩ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২ জানুয়ারি ২০২৩

গুরুদেব বলতেন-কবে যে ছুটি পাব – কোনো কাজ থাকবে না, বসে বসে শুধু আকাশ দেখব, গাছ দেখব, পথ দিয়ে লোকজন যাচ্ছে-এই দেখে দেখে কাটিয়ে দেব। তা নয়, কেবল লেখা লেখা লেখা। আর ভালো লাগে না। ছবিও আঁকতে পারছি নে। যখনই ভাবি আঁকি এইবারে -অমনি মনে হয় এই-এই কাজ বাকি আছে, সে-সব সেরে আঁকব। কিন্তু সেই বাকি বাকিই থাকে।

রানী চন্দকে গুরুদেব চিঠিতে লিখেছেন-

বর্ধমান থেকে ফিরে আসার পর থেকে শরীরটা একটুও ভালো বোধ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেন স্বাস্থ্যের ভিত্ গেছে ভেঙে। রোজ বেলা দুটো থেকে চারটে পর্যন্ত হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকি, তার পরে সেটা কেটে যায়। হয়তো দলবল নিয়ে পশ্চিম প্রদেশে গেলে সেই উপলক্ষে হাওয়া বদল হতে পারবে। ডাক্তারের মত এই, যকৃত্‍টা অসদব্যবহার করছে; খাওয়া-দাওয়া যে বাদশাহী চালে, তা বলতে পারি নে, তবে কিনা কিছুদিন স্পর্ধাপূর্বক দুধ খেতে লেগেছিলুম, সেটা এখন বর্জন করাই স্থির করেছি, তার স্থলে অর্জন করব কী তা ভেবে পাই নে। মনটা এখন শুধু পথ্যে পরিবর্তন নয়, পথ পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকেছে। যে-সমস্ত কাজে-অকাজে এতকাল জড়িত বিজড়িত ছিলুম তার জাল কেটে একেবারে ফাঁকায় বেরিয়ে পড়বার জন্য চিত্ত উত্‍কন্ঠিত। কিন্তু খবরের কাগজওয়ালা মেসেজ চায়, কবি চায় অভিমত, জননী চায় কন্যার নাম, মুসলমান চায় তাদের প্রভুর নামে স্তবগান, মাদ্রাজি গ্রন্থকর্তারা চায় গ্রন্থের ভূমিকা, ডাকযোগে পত্র আসছে প্রত্যুত্তরের প্রত্যাশায়, মাসিকপত্র গদ্যে পদ্যে রসদের নিয়মিত বরাদ্দ দাবি করে, পাতানো নাতনীরা অভিমান করে, সুধীর কর আসেন পা টিপে টিপে প্রুফ নিয়ে, নানা প্রস্তাব নিয়ে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

গুরুদেব বলতেন, এ হল আমার বড়ো হবার শাস্তি। বেশ ছিলেম পদ্মার তীরে তীরে নদীর স্রোতে। সহজ আনন্দের দিন ছিল তখন। সেইদিন কি আর ফিরে পাব?

বলতেন, কেমন সুন্দর মেঘলা করেছে, টিপ টিপ করে বৃষ্টি ঝরছে, এমন দিনে কোথায় চুপটি করে বসে বসে এই-সব দেখব, না, কাজ আর কাজ – লেখা আর লেখা। বিধাতা যিনি – যখন পারে টেনে তুলবেন –  নাকালের একশেষ করে এপারের যত ঢেউ খেতে খেতে তার পরে তুলবেন, আর কি হবে এ-সব শুনিয়ে। এই দেখ-না, জরুরি তাগিদ এসেছে ‘বাণী’ দিতে হবে সেরে ফেলি আগে – এখন সরো সব এখান থেকে। ব’লে লেখার টেবিলে ঝুঁকে বসতেন।