ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে রেন্ট এ কারের গাড়ী ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে জুলাই গণঅভুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে নান্দাইলে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আবরার ফাহাদ হত্যা : হাইকোর্টের রায় রোববার ৪৩ দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প কালিয়াকৈরে ট্রাক ও সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩ আহত ২ নাসিরনগরে ধরমন্ডল ইউনিয়ন যুবদলের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের থানায় মামলার বাদীকে মারধর, গুলির চেষ্টা রংপুরে উপপুলিশ কমিশনার শিবলি কায়সার চাতলপাড় ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অনুষ্ঠিত মোংলায় জামায়াতের উদ্যোগে এক বিশাল ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

সৈয়দপুরে অসামাজিক কাজে বাধা দেওয়ায় কাউন্সিলরকে মারধর করেছে থিমপার্ক কর্তৃপক্ষ

রাজু আহম্মেদ প্রতিনিধি রংপুর বিভাগ।।
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ১৫৩ ৫০০০.০ বার পাঠক

বিনোদন পার্কে প্রকাশ্যে চলমান অসামাজিক কাজে বাধা দেওয়ায় এলাকার পৌর কাউন্সিলরকে আটকে রেখে বেধড়ক মারপিট করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধায় নীলফামারীর সৈয়দপুর থিম পার্কের এই ঘটনায় উত্তেজিত জনতা পার্ক ঘেরাও করে কাউন্সিলরকে উদ্ধার করে।

পরে পুলিশ এসে ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়েছে এবং পার্ক তালাবন্ধ করে দিয়েছে। আটক ৪ জন হলো মালিক আবু বাশার মোহাম্মদ সাঈদ, তার শ্বশুড় কাজী মইনুল ও শ্বাশুড়ি রওশন, স্ত্রী মুক্তা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের ছেড়ে দেওয়ায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আহত সৈয়দপুর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ারুল ইসলাম মানিক সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলেন, সৈয়দপুর থিমপার্ক গড়ে উঠেছে রেলওয়ের জায়গায়। বিনোদন কেন্দ্রের আড়ালে সেখানে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলমান। বিশেষ করে রাস্তার সাথের পুকুরপাড়ে। এখানে নিরিবিলিতে কপোত কপোতীর বসার স্থান করে দেওয়া হয়েছে।

ইতোপূর্বে অনেকবার সতর্ক করেছি। তবুও তারা বিরত হয়নি। বরং সম্প্রতি ওই পুকুরপাড় টিন দিয়ে ঘিরে আড়াল তৈরী করা হয়েছে। এতে ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশাসহ নানা অনৈতিক কারবার বেড়েছে। এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সন্ধায় পার্কে গেলে ঢুকতে বাধা দেয়।

এতে প্রতিবাদ করলে অফিসে থেকে বেরিয়ে এসে থিমপার্ক মালিক সাঈদের শ্বাশুড়ি রওশন আমাকে অতর্কিত থাপ্পর মারে। পরে সাইদ, তার স্ত্রী মুক্তাসহ অন্যান্যরাও চড়াও হয় এবং আটকে রেখে এলোপাথাড়ি মারধর করে। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন আসলে ভিতর থেকে গেট বন্ধ করে দেয়। পরে দেওয়াল টপকে ভিতরে ঢুকে আমাকে উদ্ধার করেন। মূলতঃ আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন জাপা নেতা কাজী মইনুল রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখল করে এই পার্ক গড়েছে। তার মেয়ে জামাইসহ এখানে বেআইনি কারবার চালাচ্ছে। আবাসিক এলাকায় পার্কে অসামাজিক কাজ হওয়ায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আগে এলাকার লোকজন ভিতরে ঢুকে এসবের প্রতিবাদ করলেও তারা তোয়াক্কা করেনি। এখন কাউকেই ঢুকতে দেয়না। এমনকি কাউন্সিলরকেও বাধা দিয়েছে। প্রতিবাদ করায় তাকে লাঞ্ছিত করেছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) শরিফুল ইসলাম বলেন, থিমপার্কের জায়গা রেলওয়ের। কারো নামেই এটি লিজ দেওয়া হয়নি। এখানে যে কোন স্থাপনা অবৈধ। লোকবলের অভাবে আমরা এটি উচ্ছেদ করতে পারছিনা।

এদিকে পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র জিয়াউল হক বলেন, সৈয়দপুর থিমপার্ক কর্তৃপক্ষ বিগত পৌর পরিষদের কাছে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেনি। তাই তাদের লাইসেন্স বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ দিন থেকে তারা অনেকটা গায়ের জোরেই পার্ক চালাচ্ছে।

শনিবার সকালে থিমপার্কে গেলে সাংবাদিকদের প্রবেশেে বাধা দেয় এবং কর্তৃপক্ষ কেউ নেই বলে জানায় গেটম্যান কামরুল। পরে মুঠোফোনে সৈয়দপুর থিমপার্ক মালিক আবু বাশার মোহাম্মাদ সাইদ বলেন, তেমন কিছুই ঘটেনি জাস্ট ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। মারপিট বা আটকে রাখার অভিযোগ সঠিক নয়। অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কথাও সত্য নয়।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে জানা যায় এলাকাবাসী কাউন্সিলরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছে। এ ঘটনায় পার্কে তালা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মালিকসহ ৪ জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে কাজী মইনুল হক মুচলেকা দেওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পার্ক কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী এখনও ঘেরাও করে রেখেছে। তারা অসামাজিক কাজ বন্ধেরও দাবী জানিয়েছেন। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আর কাউন্সিলর মানিক হাসপাতাল থেকে ফিরে অবৈধ পার্ক বন্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়াসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে জানিয়েছেন।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সৈয়দপুরে অসামাজিক কাজে বাধা দেওয়ায় কাউন্সিলরকে মারধর করেছে থিমপার্ক কর্তৃপক্ষ

আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

বিনোদন পার্কে প্রকাশ্যে চলমান অসামাজিক কাজে বাধা দেওয়ায় এলাকার পৌর কাউন্সিলরকে আটকে রেখে বেধড়ক মারপিট করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধায় নীলফামারীর সৈয়দপুর থিম পার্কের এই ঘটনায় উত্তেজিত জনতা পার্ক ঘেরাও করে কাউন্সিলরকে উদ্ধার করে।

পরে পুলিশ এসে ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়েছে এবং পার্ক তালাবন্ধ করে দিয়েছে। আটক ৪ জন হলো মালিক আবু বাশার মোহাম্মদ সাঈদ, তার শ্বশুড় কাজী মইনুল ও শ্বাশুড়ি রওশন, স্ত্রী মুক্তা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের ছেড়ে দেওয়ায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আহত সৈয়দপুর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ারুল ইসলাম মানিক সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলেন, সৈয়দপুর থিমপার্ক গড়ে উঠেছে রেলওয়ের জায়গায়। বিনোদন কেন্দ্রের আড়ালে সেখানে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলমান। বিশেষ করে রাস্তার সাথের পুকুরপাড়ে। এখানে নিরিবিলিতে কপোত কপোতীর বসার স্থান করে দেওয়া হয়েছে।

ইতোপূর্বে অনেকবার সতর্ক করেছি। তবুও তারা বিরত হয়নি। বরং সম্প্রতি ওই পুকুরপাড় টিন দিয়ে ঘিরে আড়াল তৈরী করা হয়েছে। এতে ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশাসহ নানা অনৈতিক কারবার বেড়েছে। এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সন্ধায় পার্কে গেলে ঢুকতে বাধা দেয়।

এতে প্রতিবাদ করলে অফিসে থেকে বেরিয়ে এসে থিমপার্ক মালিক সাঈদের শ্বাশুড়ি রওশন আমাকে অতর্কিত থাপ্পর মারে। পরে সাইদ, তার স্ত্রী মুক্তাসহ অন্যান্যরাও চড়াও হয় এবং আটকে রেখে এলোপাথাড়ি মারধর করে। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন আসলে ভিতর থেকে গেট বন্ধ করে দেয়। পরে দেওয়াল টপকে ভিতরে ঢুকে আমাকে উদ্ধার করেন। মূলতঃ আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন জাপা নেতা কাজী মইনুল রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখল করে এই পার্ক গড়েছে। তার মেয়ে জামাইসহ এখানে বেআইনি কারবার চালাচ্ছে। আবাসিক এলাকায় পার্কে অসামাজিক কাজ হওয়ায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আগে এলাকার লোকজন ভিতরে ঢুকে এসবের প্রতিবাদ করলেও তারা তোয়াক্কা করেনি। এখন কাউকেই ঢুকতে দেয়না। এমনকি কাউন্সিলরকেও বাধা দিয়েছে। প্রতিবাদ করায় তাকে লাঞ্ছিত করেছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) শরিফুল ইসলাম বলেন, থিমপার্কের জায়গা রেলওয়ের। কারো নামেই এটি লিজ দেওয়া হয়নি। এখানে যে কোন স্থাপনা অবৈধ। লোকবলের অভাবে আমরা এটি উচ্ছেদ করতে পারছিনা।

এদিকে পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র জিয়াউল হক বলেন, সৈয়দপুর থিমপার্ক কর্তৃপক্ষ বিগত পৌর পরিষদের কাছে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেনি। তাই তাদের লাইসেন্স বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ দিন থেকে তারা অনেকটা গায়ের জোরেই পার্ক চালাচ্ছে।

শনিবার সকালে থিমপার্কে গেলে সাংবাদিকদের প্রবেশেে বাধা দেয় এবং কর্তৃপক্ষ কেউ নেই বলে জানায় গেটম্যান কামরুল। পরে মুঠোফোনে সৈয়দপুর থিমপার্ক মালিক আবু বাশার মোহাম্মাদ সাইদ বলেন, তেমন কিছুই ঘটেনি জাস্ট ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। মারপিট বা আটকে রাখার অভিযোগ সঠিক নয়। অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কথাও সত্য নয়।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে জানা যায় এলাকাবাসী কাউন্সিলরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছে। এ ঘটনায় পার্কে তালা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মালিকসহ ৪ জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে কাজী মইনুল হক মুচলেকা দেওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পার্ক কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী এখনও ঘেরাও করে রেখেছে। তারা অসামাজিক কাজ বন্ধেরও দাবী জানিয়েছেন। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আর কাউন্সিলর মানিক হাসপাতাল থেকে ফিরে অবৈধ পার্ক বন্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়াসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে জানিয়েছেন।