চাটখিলের খিলপাড়ায় জোরপূর্বক চলাচলের রাস্তায় বেড়া: সন্ত্রাসী সাজু ও টুক্কুন এর নৈরাজ্য
- আপডেট টাইম : ০৫:২৭:৩০ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট ২০২২
- / ২১৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে সাইজ করতে চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিয়েছে আরেক পক্ষ। বিষয়টিকে এলকাবাসী অমানবিক বললেও চলাচলের রাস্তায় বেড়া দেওয়ায় জড়িতরা বলছে নিজ জমিতে কি করবেন সেটি তাদের বিষয়। আর ভুক্তভোগীর অভিযোগ ইউনিয়ন অফিসে প্রক্রিয়াধীন অভিযোগ তুলে নিতে প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়ে তার ওপর জোর জবরদস্তি করছে প্রতিপক্ষ। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের খিরিহাটি গ্রামের রুইর বাড়ি নামক স্থানে।
ভুক্তভোগী আব্দুল হাশেম জানান, ‘প্রতিবেশির সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিন জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। ৩০ শতক বসত বাড়ির জমি নিয়ে এই বিরোধ, আমাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি বুঝে নেওয়ার জন্য আমরা জমি পরিমাপের দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু প্রতিপক্ষ তা না করে আমাদের হয়রানী করে আসছে। এ ব্যাপারে গ্রাম আদালতে অভিযোগ বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া গ্রামে মাদক ও চোরাকারবার কাজে বাঁধা দেওয়া ও প্রতিবাদ জানালে রুইর বাড়ির সন্ত্রাসী টুক্কুন ও তার ছেলে মাদক ব্যবসায়ী সাইফুল, মনোয়ার হোসেন মনা, মৃত হোসেন এর ছেলে সাজু প্রকাশ ইয়াবা সাজু সহ অন্যরা আমাদের পরিবারের উপর জুলুম করছে। আর এর নেপথ্যে কাজ করছে রুইর বাড়ির মৃত আব্দুল আজিজ এর ছেলে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সেলিম।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পুরুষ সদস্যদের অনুপস্থিতিতে বাড়ির মহিলাদের লাঞ্চিত করেছে তারা। এখন হুমকি দিচ্ছে আমাদের প্রাপ্য জমি দাবী করলে প্রানে মেরে ফেলবে। আমি এতে রাজি না হওয়ায় এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও নারী নির্যাতনকারী সেলিমকে সাথে নিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। আমার বসতবাড়ির রাস্তা ঘিরে রেখে প্রায় ১৫০ বছর ধরে ব্যবহার করা বাড়ির রাস্তায় জোরজবরদস্তি করে বেড়া দিয়েছে, চলাচলের রাস্তায় গাছ লাগিয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা নূর আলম বলেন, বসতবাড়ির রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া অন্যায়, অমানবিক। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মত দেন নুর আলম। একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আরেক প্রতিবেশী যুবক মৃত আব্দুর রবের ছেলে শহীদ। তিনি বলেন, ‘বসতবাড়ির রাস্তা বন্ধ করায় পরিবারটি অসহায় অবস্থায় আছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। সত্যিই অমানবিক। আর সেলিম প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এটা সবাই জানে। তার বিরুদ্ধে আরও অনেকের জোরপূর্বক সম্পত্তি দখলের অভিযোগ থানায় রয়েছে।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সেলিম বলেন, ‘বাড়ির রাস্তায় বেড়া দেওয়া বিষয়টা অন্যায় তবে এ ব্যাপারে আমার কোনও মতামত নেই। প্রতিবেশিকে ‘সাইজ’ করার জন্য তাদের জায়গা তারা ঘিরে রেখেছে। তাদের জায়গায় তারা কী করবো সেটা তাদের ব্যাপার।’
এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, বেড়া দেওয়ার সাথে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। ‘আমি রাতে সাজু ও টুক্কুন ভাইয়ের সাথে ছোটঘাট একটা ব্যবসা করি, তাতে হাশেম জামেলা সৃষ্টি করে’ কি ব্যবসা করেন জানতে চাইলে কোনও সদুত্তর দিতে না পেরে, এখন ব্যস্ত আছি বলে লাইন কেটে দেন তিনি।’
অভিযুক্ত সাজু মুঠোফোনে জানান, তারা এটা ১০০ বছর ধরে পথ হিসেবে ব্যবহার করলেও এটা আমাদের জায়গা। আমাদের জায়গা আমরা কি করবো সেটা আমাদের ব্যাপার। দীর্ঘদিনের চলাচলের পথ আটকাতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চুপ থেকে লাইন কেটে দেন তিনি।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন জানান, ‘আমার জানা মতে, খিরিহাটি গ্রামে একটি অভিযোগ বিচারাধীন আছে। তাছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত চলাচলের রাস্তায় কারও বেড়া দেওয়া বা বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। চলাচলের রাস্তায় বেড়া দেওয়ার বিষয়ে এখনো কেউ কিছু জানায় নি। তারপরও আমি বিষয়টা খোঁজ নিয়ে গুরুত্বের সাথে দেখছি’।
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গিয়াস উদ্দিন জানান, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে কেউ আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবো।’
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে চাটখিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূইয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত চলাচলের রাস্তায় বেড়া দেওয়া বা বাধা দেওয়া আইন বর্হিভূত। বিষয়টি অমানবিকও বটে। এ নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় নি। অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আইনের ভাষ্য কি বলে: তামাদি আইনের ২৬ ধারায় দীর্ঘদিন (সরকারীভাবে ৬০ বছর ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ২০ বছর) ব্যবহারের ফলে সুখাধিকার কীভাবে শক্তপোক্তভাবে তৈরি হয়, তার নিয়ম-কানুন বলা আছে। এই ধারা অনুসারে, আলো, বাতাস, রাস্তা, জলাধার, পানির ব্যবহারের ওপর জনগণের বা কোনো নিদির্ষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবগের্র সুখাধিকার তৈরি হতে পারে। সে অনুসারে শতবর্ষী চলাচলের রাস্তা আটকানোর কোনও সুযোগ নেই।
অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, খিলপাড়া ইউনিয়নের খিরিহাটি গ্রামের রুইর বাড়িতে মৃত হাফেজ বদিউজ্জামান প্রকাশ বদিয়া হাফেজ এর ক্রয়কৃত ও পৈত্রিক সম্পত্তি অন্যায়ভাবে জবরদখল করে ভোগ করে আসছে টুক্কুন, সেলিম, সাজু, মনোয়ার হোসেন মনা, সাইফুল সহ আরও কয়েকজন। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ার বদিয়া হাফেজের পরিবারটিকে বিভিন্ন সময় হয়রানী, অত্যাচার করে আসছে উল্লেখিত ব্যক্তিরা। স্থানীয়দের মতে এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ছিনতাই, চুরি, সম্পত্তি জবরদখল, নারী নির্যাতন সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এসব এখন সবাই জানে। তবুও কোন খুটির জোরে পুলিশের নজর হতে তারা পার পেয়ে যায় সেটা বোধগম্য নয়। চলবে