রসালো ফল কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা
- আপডেট টাইম : ০৯:২০:৫২ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১৩ জুন ২০২২
- / ২৪৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
মাসুদ রানা-স্টাফ রিপোর্টার।।
গাজীপুরে মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকে আষাঢ় মাসের শেষ পর্যন্ত যেনো মৌসুমী ফল কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায় । সুস্বাদু মৌসুমী ফল কাঁঠালের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে সকলেরই। পথের পাশে অস্থায়ী কিংবা বাজারের দোকানে সাজানো রসালো এ ফলের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে তা কিনে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর উপজেলার প্রায় সব এলাকার দৃশ্য যেনো একই। ওই এলাকার প্রায় ৯৪ শতাংশ বাড়িতে জাতীয় ফল কাঁঠালের ফলন হয়। এ জন্য কেউ কেউ গাজীপুরকে বলা থাকেন কাঁঠালের রাজধানী। দেশের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের বাজারও গাজীপুরের শ্রীপুরে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজারে বসে দেশের সর্ববৃহৎ কাঁঠালের বাজার। মৌসুমের প্রতিদিনই এ বাজারে বিক্রি হয় হাজার হাজার কাঁঠাল। দিনে-রাতে প্রায় সব সময়ই চলে এ বেচাকেনা। তবে জমজমাট থাকে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
কাঁঠালব্যবসায়ী মুসলেম উদ্দিন জানান, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া, মধ্যপাড়া, বোয়ালী ও মৌচাক ইউনিয়ন এলাকায় কাঁঠালের আবাদ বেশী হয়ে থাকে। সেইসাথে শ্রীপুর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাতেই প্রচুর কাঁঠালের চাষাবাদ হয়। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসেন শ্রীপুরের জৈনাবাজারের কাঁঠালের হাটে। কাঁঠাল নিয়ে যান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আর বাগান থেকে বাজারে আনা, কেনাবেচা, গাড়িতে ওঠা-নামা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন শত শত লোক।
মুখলেছুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পাইকারদের থাকা-খাওয়ার অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে জৈনাবাজার হয়ে উঠেছে কাঁঠালের সবচেয়ে বড় বাজার। শ্রীপুরের জৈনাবাজার, সিডেস্টোর, মাওনা বাজার, বগার বাজার, বানিয়ারচালা ও ভবানীপুর বাজারেও প্রতিদিন কাঁঠালের বাজার বসে।
এদিকে, গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রীপুরের কাঁঠাল বাগান মালিকেরা। গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে বাজারজাত করার জন্য বাড়ির পুরুষদের পাশাপাশি ব্যস্ত নারীরাও। প্রতিদিন ভোরে বাগান থেকে পাকা কাঁঠাল সংগ্রহ করে পুরুষরা তা বিক্রির জন্য ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, টমটম, অটোরিকশায় করে নিয়ে আসেন বাজারে।
শ্রীপুরের সিঙ্গারদিঘীর দেলোয়ার হোসেন এক বাগান মালিক বলেন, ‘এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি, সুস্বাদু ও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। ’
কালিয়াকৈরের ফুলবাড়িয়া এলাকার হেকমত আলী জানান, তার বাড়ির পাশে বাগানে ৩০০টিরও বেশি গাছ রয়েছে। গাছে মুচি আসার সময় খড়া থাকায় বেশ কয়েক বছরের মতো এবারও কাঁঠাল কম ধরেছে। তবে দাম মোটামুটি ভালো থাকায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে।প্রতিবছর প্রায় এক লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি করি। এবারও বেশ ভালো বিক্রি হবে আশা করছি।
ঢাকা থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী মালেক মিয়া জানান, ঢাকায় তার কাঁঠলের আড়ৎ আছে। রাজধানীতে খুব চাহিদা থাকায় প্রতিবছরই এখান থেকে কাঁঠাল নিতে আসেন তিনি। প্রতি কাঁঠালে ১০-২০ টাকা, আবার কখনো আরো বেশী লাভ হয়। স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছেও তা বিক্রি করি।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে বেশি। ন্যায্যমূল্য পেয়ে খুশি কৃষক, বাগান মালিক ও বিক্রেতারা। এ অবস্থা মৌসুমের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে বিক্রেতারা আশাবাদী ।
গাজীপুরে মৌসুমী এ বাজারে অনেকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। অল্প পুঁজি কিংবা অন্যের পুঁজি দিয়ে শুধু শ্রম দিয়েও অনেকে ব্যবসা করছেন ওই বাজারে। অনেকেই সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জৈনাবাজারে এসে ট্রাক ভর্তি করে কাঁঠাল কিনে নিচ্ছেন প্রতিদিন। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ ট্রাক দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই জৈন বাজার থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে।