ঢাকা ১১:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
পুলিশ প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তন হলেও এসআই মিজানের অসাধু নীতির পরিবর্তন হয়নি ঠাকুরগাঁওয়ে নারীদের ভূমি অধিকার ও কৃষি ভূমি সংষ্কার বিষয়ক সমাবেশ কালিয়াকৈরে ধর্ষণের অভিযোগে বাড়ির মালিক গ্রেফতার পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত কঠিন সময়ে কীভাবে পাশে ছিলেন স্ত্রী, জানালেন কোহলি ইতালিতে জি৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনার তালিকায় নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে আরো যা ‘পদক্ষেপ’ নিতে বললেন নূরুল কবির মেগা মানডে’: ৩ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী অর্থের লোভ দেখিয়ে ‘গণঅভ্যুত্থানের’ ব্যর্থ চেষ্টা, নেপথ্যে কারা? ইমরান খানের হাজারো সমর্থক গ্রেপ্তার

আত্রাইয়ে দেশি মাছ সংকট, শুঁটকিপল্লীতে মন্দা

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩৩:৪৭ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২২
  • / ২২৩ ৫০০০.০ বার পাঠক

শাহাদুল ইসলাম (বাবু) নওগাঁ প্রতিনিধি।।

দেশজুড়ে কদর রয়েছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় উৎপাদিত দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোটমাছের শুঁটকির। শুধু দেশেই নয়, ভারতে রয়েছে এখানকার শুঁটকির কদর। তবে এবছর মাছের অভাবে শুঁটকি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী। সবমিলিয়ে ভালো নেই আত্রাইয়ের শুঁটকিপল্লী।

উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। পাশাপাশি রয়েছে আরও শতাধিক জলাশয়। গতবছর বন্যা না হওয়ায় আগেই নদী ও খালবিলের পানি কমে গেছে। জলাশয়ে মিলছে না দেশি প্রজাতির মাছ। এজন্য শুঁটকি উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় ও উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৫৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৫৫০ মেট্রিক টন অর্জিত হয়েছিল। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ৮০০ মেট্রিক টনের জায়গায় অর্জিত হয়েছিল ৬০১ মেট্রিক টন। এ উপজেলায় ৪০ জন ব্যবসায়ী শুঁটকি উৎপাদন করেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়। আর এসব মাছ আসে আত্রাই নদী, হালতি, খৈলাবাড়িয়া, বিলসুতি, মাগুরা, ভবানিগঞ্জ জলাশয়সহ বিভিন্ন খাল-বিল থেকে।

আত্রাই উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে শুঁটকি তৈরি শুরু হয়, চলে পৌষ-মাঘ মাস পর্যন্ত। এসময় ব্যস্ত সময় পার করেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। শুঁটকি তৈরি ও বাজারজাত করে যে আয় হয় তা দিয়ে সারাবছর চলে যায় ব্যবসায়ীদের।

আত্রাই রেলস্টেশন সংলগ্ন ভরতেঁতুলিয়া গ্রামটি মূলত শুঁটকির গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এছাড়া আত্রাই আহসানগঞ্জ রেললাইনের দুইপাশে ও কেডিসি সংলগ্ন এলাকায় মাচাতে শুঁটকি মাছ শুকানো হতো। কিন্তু এ বছর মাছের অভাবে অনেক মাচা ফাঁকা পড়ে আছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের উত্তরের জেলা সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর ও ঢাকায় সরবরাহ হয় নওগাঁর শুঁটকি। তবে প্রধান বাজার ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য। এই শুঁটকি প্রথমে সৈয়দপুর যায়। এরপর সেখান থেকে ট্রেনযোগে রপ্তানি করা হয় ভারতে। তবে গতবছর বন্যা না হওয়ায় এবং খাল-বিলের পানি শুকিয়ে আসায় দেশীয় মাছে উৎপাদন কমে গেছে। এতে শুঁটকি উৎপাদন নিয়ে হতাশায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পুঁটি, টাকি ও খলিসা মাছ। এক মণ পুঁটি শুকিয়ে ১৫ কেজি, চার মণ টাকি থেকে এক মণ এবং তিন মণ খলিসা মাছ শুকিয়ে এক মণ শুঁটকি হয়। বর্তমানে শুঁটকি ছোট পুঁটি ১৫০ টাকা, বড় পুঁটি ৪০০ টাকা, টাকি ৪০০-৪৫০ টাকা এবং খলিসা ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুঁটকি তৈরির প্রক্রিয়ার বিষয়ে ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের গৃহবধূ মৌসুমি ইয়াসমিন রুনা জানান, বাজার থেকে কাঁচা মাছ কিনে নিয়ে আসার পর পরিষ্কার করে চাঁটায়ের ওপর রোদে শুকাতে হয়। গুঁড়া মাছের আঁশ ছাড়ানোর দরকার হয় না। লবণ দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হয়। এক মণ মাছ শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগে।

শুঁটকি তৈরিতে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পারিশ্রমিক পান রুনা। তারমতো আরও ৩০ জন এখানে কাজ করেন। প্রতিবছর এ কাজ করে তারা বাড়তি আয় করেন। তবে এ বছর মাছের অভাবে মন্দা যাচ্ছে বলে জানান তারা।

বড়দের পাশাপাশি মাছ পরিষ্কার করে বাড়তি আয় করে শিক্ষার্থীরাও। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা, সুমি ও নিশিতা জানায়, স্কুলে যাওয়ার আগে ও ছুটির পর কাঁচা মাছ থেকে আঁশ ছাড়ানো কাজ করে তারা। প্রতিদিন এ কাজ করে ৫০ থেকে ৮০ টাকা আয় হয় তাদের। কাজ করে বাড়তি আয় করায় তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে হাত খরচের টাকা নিতে হয় না।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আত্রাইয়ে দেশি মাছ সংকট, শুঁটকিপল্লীতে মন্দা

আপডেট টাইম : ০৩:৩৩:৪৭ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

শাহাদুল ইসলাম (বাবু) নওগাঁ প্রতিনিধি।।

দেশজুড়ে কদর রয়েছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় উৎপাদিত দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোটমাছের শুঁটকির। শুধু দেশেই নয়, ভারতে রয়েছে এখানকার শুঁটকির কদর। তবে এবছর মাছের অভাবে শুঁটকি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী। সবমিলিয়ে ভালো নেই আত্রাইয়ের শুঁটকিপল্লী।

উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। পাশাপাশি রয়েছে আরও শতাধিক জলাশয়। গতবছর বন্যা না হওয়ায় আগেই নদী ও খালবিলের পানি কমে গেছে। জলাশয়ে মিলছে না দেশি প্রজাতির মাছ। এজন্য শুঁটকি উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় ও উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৫৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৫৫০ মেট্রিক টন অর্জিত হয়েছিল। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ৮০০ মেট্রিক টনের জায়গায় অর্জিত হয়েছিল ৬০১ মেট্রিক টন। এ উপজেলায় ৪০ জন ব্যবসায়ী শুঁটকি উৎপাদন করেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়। আর এসব মাছ আসে আত্রাই নদী, হালতি, খৈলাবাড়িয়া, বিলসুতি, মাগুরা, ভবানিগঞ্জ জলাশয়সহ বিভিন্ন খাল-বিল থেকে।

আত্রাই উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে শুঁটকি তৈরি শুরু হয়, চলে পৌষ-মাঘ মাস পর্যন্ত। এসময় ব্যস্ত সময় পার করেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। শুঁটকি তৈরি ও বাজারজাত করে যে আয় হয় তা দিয়ে সারাবছর চলে যায় ব্যবসায়ীদের।

আত্রাই রেলস্টেশন সংলগ্ন ভরতেঁতুলিয়া গ্রামটি মূলত শুঁটকির গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এছাড়া আত্রাই আহসানগঞ্জ রেললাইনের দুইপাশে ও কেডিসি সংলগ্ন এলাকায় মাচাতে শুঁটকি মাছ শুকানো হতো। কিন্তু এ বছর মাছের অভাবে অনেক মাচা ফাঁকা পড়ে আছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের উত্তরের জেলা সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর ও ঢাকায় সরবরাহ হয় নওগাঁর শুঁটকি। তবে প্রধান বাজার ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য। এই শুঁটকি প্রথমে সৈয়দপুর যায়। এরপর সেখান থেকে ট্রেনযোগে রপ্তানি করা হয় ভারতে। তবে গতবছর বন্যা না হওয়ায় এবং খাল-বিলের পানি শুকিয়ে আসায় দেশীয় মাছে উৎপাদন কমে গেছে। এতে শুঁটকি উৎপাদন নিয়ে হতাশায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পুঁটি, টাকি ও খলিসা মাছ। এক মণ পুঁটি শুকিয়ে ১৫ কেজি, চার মণ টাকি থেকে এক মণ এবং তিন মণ খলিসা মাছ শুকিয়ে এক মণ শুঁটকি হয়। বর্তমানে শুঁটকি ছোট পুঁটি ১৫০ টাকা, বড় পুঁটি ৪০০ টাকা, টাকি ৪০০-৪৫০ টাকা এবং খলিসা ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুঁটকি তৈরির প্রক্রিয়ার বিষয়ে ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের গৃহবধূ মৌসুমি ইয়াসমিন রুনা জানান, বাজার থেকে কাঁচা মাছ কিনে নিয়ে আসার পর পরিষ্কার করে চাঁটায়ের ওপর রোদে শুকাতে হয়। গুঁড়া মাছের আঁশ ছাড়ানোর দরকার হয় না। লবণ দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হয়। এক মণ মাছ শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগে।

শুঁটকি তৈরিতে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পারিশ্রমিক পান রুনা। তারমতো আরও ৩০ জন এখানে কাজ করেন। প্রতিবছর এ কাজ করে তারা বাড়তি আয় করেন। তবে এ বছর মাছের অভাবে মন্দা যাচ্ছে বলে জানান তারা।

বড়দের পাশাপাশি মাছ পরিষ্কার করে বাড়তি আয় করে শিক্ষার্থীরাও। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা, সুমি ও নিশিতা জানায়, স্কুলে যাওয়ার আগে ও ছুটির পর কাঁচা মাছ থেকে আঁশ ছাড়ানো কাজ করে তারা। প্রতিদিন এ কাজ করে ৫০ থেকে ৮০ টাকা আয় হয় তাদের। কাজ করে বাড়তি আয় করায় তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে হাত খরচের টাকা নিতে হয় না।