ঢাকা ০৭:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
ঠাকুরগাঁওয়ে নারীদের ভূমি অধিকার ও কৃষি ভূমি সংষ্কার বিষয়ক সমাবেশ কালিয়াকৈরে ধর্ষণের অভিযোগে বাড়ির মালিক গ্রেফতার পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত কঠিন সময়ে কীভাবে পাশে ছিলেন স্ত্রী, জানালেন কোহলি ইতালিতে জি৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনার তালিকায় নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে আরো যা ‘পদক্ষেপ’ নিতে বললেন নূরুল কবির মেগা মানডে’: ৩ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী অর্থের লোভ দেখিয়ে ‘গণঅভ্যুত্থানের’ ব্যর্থ চেষ্টা, নেপথ্যে কারা? ইমরান খানের হাজারো সমর্থক গ্রেপ্তার প্রতারক বাবু যেন কাশিমপুর থানার একচ্ছত্র অধিপতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন দুর্নীতির চক্রে বন্দি রাকাব অনৈতিক পদোন্নতির ব্যাখ্যা, দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকসহ অর্থ আদায় ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা জোরদারের পরামর্শ

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৫:৪৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ২১৫ ৫০০০.০ বার পাঠক

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।

দুর্নীতি ও অনিয়মের দুষ্টচক্র ঘিরে ফেলছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটিতে অনৈতিকভাবে ১৬৮ জনের পদোন্নতি, পেনশন ফান্ডের অব্যবস্থাপনা ও চাকরি কোটার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের অনিয়ম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রাকাবে বিশেষ পরিদর্শনে গিয়ে এসবের সন্ধান পেয়েছে।

পরিদর্শন দলটি জাল সনদে ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা পেয়েছে। আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণের পরও শাস্তির পরিবর্তে ফের চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। ছয় বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রকাশ। কর্মীদের বদলির ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাও উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে বেরিয়ে আসা অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাকাবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর ৫ মাস গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বিশেষায়িত ব্যাংক ইউংয়ের অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশিদ মোল্লার সঙ্গে যুগান্তরের কথা হয়। তিনি বলেন, বিশেষায়িত বা বাণিজ্যিক যে কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনার জন্য নিজস্ব রুলস আছে। এটি ব্যত্যয়ের সুযোগ নেই। সে ধরনের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, রাকাবের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষায়িত প্রতিবেদনটি তার দৃষ্টিগোচর হয়নি। সামনে এলে অবশ্যই দেখা হবে।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাকাবে বিশেষ পরিদর্শন করে। দলটি ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অনিয়ম শনাক্তের পর তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের নীতিমালা লঙ্ঘন করে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা কর্মীর ব্যাচকে পদোন্নতি দেওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানের কর্মী ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এভাবে পদোন্নতি দেওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট রেকর্ড শাখার নোটে উল্লেখ নেই। ফলে এ ধরনের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটি, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা এবং সুবিধাভোগীদের মধ্যে অনৈতিক প্রভাব বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধা দেওয়ার আশঙ্কা আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অনৈতিক পদোন্নতির ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করেছে ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে।

এছাড়া রাকাবে গত এক বছরে ঋণ জালিয়াতি, অর্থ চুরিসহ বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে ১২টি বিভাগীয় মামলা হয়। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫টি। এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম সংক্রান্ত বিভাগীয় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পরামর্শ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে জাল-জালিয়াতি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকসহ অর্থ আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। পাশাপাশি ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এসব ঘটনা ব্যাখ্যা চাওয়া ও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্ত জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়নি। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ৪ থেকে ৫ জন কর্মকর্তার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। চক্রটি বিভিন্নভাবে এসব ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করার অপচেষ্টা করছে। পরে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ফের চিঠি দিয়ে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। গত মার্চ মাসে নতুন ব্যবস্থাপক যোগদানের পর এসব বিষয় তিনি তুলে নিয়ে আসেন।

জানতে চাইলে রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সব বিষয় জবাব ও কারণ দর্শাতে বলেছে এর মধ্যে অনেকগুলোর জবাব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দায়ী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অনেকে অবসরে চলে গেছেন। অনেকে মৃত্যুবরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কর্মীদের পদোন্নতিতে অনিয়ম : রাকাবে চাকরির বয়স ৪ বছর ৬ মাস হয়েছে এমন একটি ব্যাচের ১৬৮ জনকে মুখ্য কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাংকের বিধিমালা ২০০৬ এর তফসিল ৯ ধারা অনুসরণ করা হয়নি। কারণ মুখ্য কর্মকর্তা হিসাবে পদোন্নতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদেই ন্যূনতম ৩ বছরসহ চাকরির মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ করতে হবে। পাশাপাশি অন্য একটি ব্যাচ সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন ৩ বছর আগে। তাদের চাকরির মেয়াদ ৫ বছরের কম থাকায় পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এই ব্যাচের ক্ষেত্রে বিধিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। ফলে একই ব্যাংকে একটি ব্যাচকে বিধিমালা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অন্য ব্যাচকে বিধিমালা দেখিয়ে প্রমোশন দেওয়া হয়নি।

বদলিতে অনিয়ম : বদলি নীতিমালা-২০১৭ অনুসারে ‘প্রশাসনিক কারণ ব্যতীত যে কোনো কর্মীকে একই কর্মস্থলে ৩ বছরের অধিক রাখা যাবে না।’ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা অফিসে কিছু কর্মকর্তা ৩ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত বহাল আছেন ১৩ কর্মকর্তা। এরা ঢাকা অফিস এবং রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।

পেনশন ফান্ডের অব্যবস্থাপনা : জানা গেছে, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেনশন ফান্ডের ১৪৪ কোটি ১১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি আমানত হিসাবে বিনিয়োগ করা হয়। পেনশন বা প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করে আয়কর বিভাগ থেকে স্বীকৃতি গ্রহণ করেছে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এ ফান্ড ব্যবস্থাপনা করতে হয়। রাকাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন দুর্নীতির চক্রে বন্দি রাকাব অনৈতিক পদোন্নতির ব্যাখ্যা, দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকসহ অর্থ আদায় ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা জোরদারের পরামর্শ

আপডেট টাইম : ০৫:৪৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।

দুর্নীতি ও অনিয়মের দুষ্টচক্র ঘিরে ফেলছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটিতে অনৈতিকভাবে ১৬৮ জনের পদোন্নতি, পেনশন ফান্ডের অব্যবস্থাপনা ও চাকরি কোটার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের অনিয়ম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রাকাবে বিশেষ পরিদর্শনে গিয়ে এসবের সন্ধান পেয়েছে।

পরিদর্শন দলটি জাল সনদে ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা পেয়েছে। আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণের পরও শাস্তির পরিবর্তে ফের চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। ছয় বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রকাশ। কর্মীদের বদলির ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাও উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে বেরিয়ে আসা অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাকাবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর ৫ মাস গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বিশেষায়িত ব্যাংক ইউংয়ের অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশিদ মোল্লার সঙ্গে যুগান্তরের কথা হয়। তিনি বলেন, বিশেষায়িত বা বাণিজ্যিক যে কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনার জন্য নিজস্ব রুলস আছে। এটি ব্যত্যয়ের সুযোগ নেই। সে ধরনের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, রাকাবের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষায়িত প্রতিবেদনটি তার দৃষ্টিগোচর হয়নি। সামনে এলে অবশ্যই দেখা হবে।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাকাবে বিশেষ পরিদর্শন করে। দলটি ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অনিয়ম শনাক্তের পর তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের নীতিমালা লঙ্ঘন করে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা কর্মীর ব্যাচকে পদোন্নতি দেওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানের কর্মী ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এভাবে পদোন্নতি দেওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট রেকর্ড শাখার নোটে উল্লেখ নেই। ফলে এ ধরনের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটি, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা এবং সুবিধাভোগীদের মধ্যে অনৈতিক প্রভাব বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধা দেওয়ার আশঙ্কা আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অনৈতিক পদোন্নতির ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করেছে ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে।

এছাড়া রাকাবে গত এক বছরে ঋণ জালিয়াতি, অর্থ চুরিসহ বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে ১২টি বিভাগীয় মামলা হয়। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫টি। এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম সংক্রান্ত বিভাগীয় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পরামর্শ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে জাল-জালিয়াতি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকসহ অর্থ আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। পাশাপাশি ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এসব ঘটনা ব্যাখ্যা চাওয়া ও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্ত জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়নি। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ৪ থেকে ৫ জন কর্মকর্তার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। চক্রটি বিভিন্নভাবে এসব ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করার অপচেষ্টা করছে। পরে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ফের চিঠি দিয়ে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। গত মার্চ মাসে নতুন ব্যবস্থাপক যোগদানের পর এসব বিষয় তিনি তুলে নিয়ে আসেন।

জানতে চাইলে রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সব বিষয় জবাব ও কারণ দর্শাতে বলেছে এর মধ্যে অনেকগুলোর জবাব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দায়ী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অনেকে অবসরে চলে গেছেন। অনেকে মৃত্যুবরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কর্মীদের পদোন্নতিতে অনিয়ম : রাকাবে চাকরির বয়স ৪ বছর ৬ মাস হয়েছে এমন একটি ব্যাচের ১৬৮ জনকে মুখ্য কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাংকের বিধিমালা ২০০৬ এর তফসিল ৯ ধারা অনুসরণ করা হয়নি। কারণ মুখ্য কর্মকর্তা হিসাবে পদোন্নতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদেই ন্যূনতম ৩ বছরসহ চাকরির মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ করতে হবে। পাশাপাশি অন্য একটি ব্যাচ সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন ৩ বছর আগে। তাদের চাকরির মেয়াদ ৫ বছরের কম থাকায় পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এই ব্যাচের ক্ষেত্রে বিধিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। ফলে একই ব্যাংকে একটি ব্যাচকে বিধিমালা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অন্য ব্যাচকে বিধিমালা দেখিয়ে প্রমোশন দেওয়া হয়নি।

বদলিতে অনিয়ম : বদলি নীতিমালা-২০১৭ অনুসারে ‘প্রশাসনিক কারণ ব্যতীত যে কোনো কর্মীকে একই কর্মস্থলে ৩ বছরের অধিক রাখা যাবে না।’ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা অফিসে কিছু কর্মকর্তা ৩ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত বহাল আছেন ১৩ কর্মকর্তা। এরা ঢাকা অফিস এবং রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।

পেনশন ফান্ডের অব্যবস্থাপনা : জানা গেছে, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেনশন ফান্ডের ১৪৪ কোটি ১১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি আমানত হিসাবে বিনিয়োগ করা হয়। পেনশন বা প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করে আয়কর বিভাগ থেকে স্বীকৃতি গ্রহণ করেছে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এ ফান্ড ব্যবস্থাপনা করতে হয়। রাকাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে।