ঋণখেলাপিদের সুযোগ মিলছে চামড়াশিল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিপত্র
- আপডেট টাইম : ০৯:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি ২০২১
- / ২৬৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
অর্থনৈতিক রিপোর্টার।।
খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে আবারো চামড়া শিল্পের খেলাপি হওয়া ঋণগুলোকে সহজ শর্তে পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত জুলাইয়ে করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও আরো দুবার এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই সুবিধা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন ট্যানারি মালিকরা। গত ৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, সাভারের শিল্প নগরীতে স্থানান্তরিত যেসব ট্যানারি মালিক ব্যবসা চালিয়ে নিতে পারছেন না, তারা মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে এককালীন প্রস্থান নীতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, বারবার সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও ঋণের কিস্তি প্রদানে ব্যত্যয় ঘটায় এই খাতের ঋণপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই এমন উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব ট্যানারি মালিকের পাঁচ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ ছিল, তারা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তিন বছর সময় পাবেন। আর যাদের ঋণ ৫ কোটি টাকারও উপরে, তারা পাবেন পাঁচ বছর সময়। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা এই সার্কুলার অবিলম্বে কার্যকর হবে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পরিপত্রকে স্বাগত জানালেও এতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন ট্যানারি মালিকরা। ট্যানারি শিল্পের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি ২ শতাংশের পরিবর্তে ডাউন পেমেন্ট ১ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে রপ্তানিতে ধস নেমেছে। এ কারণে গেল বছরের মাঝামাঝিতে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ নিতে পারেননি তারা। তবে এখন করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। তাই ২ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের সুযোগ দেওয়া হলে অনেকেই আগ্রহী হবেন।
শাহিন আহমেদ বলেন, ২০১৫-২০১৬ সালে যেখানে রপ্তানির পরিমাণ ছিল সাড়ে চারশ মিলিয়ন ডলার। সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬৩ মিলিয়ন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা নেমে আসে মাত্র ৮৯ মিলিয়ন ডলারে। তিনি জানান, ‘ক্লাসিফাইড’ লোনের কারণে এই শিল্পের অনেকেই সরকার ঘোষিত করোনাকালীন প্রণোদনা সুবিধা পাননি।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাকওয়াত উল্লাহ বলেন, সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর, করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে আমরা সমস্যার মধ্যে রয়েছি। আমাদের ব্যবসায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই শুধু ‘লোন রিশিডিউলিং’ সুবিধা যথেষ্ট নয়। ব্যাংকগুলোকে ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেওয়া ঋণের সুদ মওকুফ করা উচিত বলে জানান শাকওয়াত উল্লাহ।
নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে মূল ঋণ এবং বিনিয়োগ কোনোভাবেই মওকুফ করা যায় না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সার্বিকভাবে চামড়াশিল্পে ব্যাংকঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু কাঁচা চামড়া কেনার জন্যই ট্যানারি মালিকদের দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। বাকি ৪ হাজার ৯৪ টাকা বিতরণ করা হয়েছে চামড়াজাত পণ্য তৈরিতে। বিতরণ করা ৭ হাজার ৭০৭ কোটি টাকার মধ্যে ৮০ শতাংশই খেলাপি। যদিও এই ঋণের বড় অংশই বিশেষ সুবিধায় মাত্র ৭ শতাংশ সুদে বিতরণ করা হয়েছিল। জানা গেছে, চামড়া খাতে বিতরণ করা ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ গেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানে, যাদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের মামলা রয়েছে।
জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকেই ট্যানারি শিল্পের ঋণে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্প সাভারে স্থানান্তরের বিষয়ে সৃষ্ট ব্যাংকঋণ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বেশকিছু সুবিধা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
এরপর ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় একই রকমের সুবিধা দিয়ে নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, যেসব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর পর্যায়ে রয়েছে বা স্থানান্তর হয়ে গেছে, সেসব ট্যানারির অনিয়মিত ঋণ ব্লক হিসেবে স্থানান্তর, গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা প্রদান ও ঋণের জন্য নমনীয় পরিশোধ সূচি নিরূপণ করা যাবে এবং ব্লক হিসেবে স্থানান্তরিত ঋণের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৮ বছর পরিশোধ সময়কাল হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। এ ছাড়া এ ধরনের ঋণের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনারোপিত সুদ, স্থগিত সুদ খাতে রক্ষিত সুদ ও দণ্ড সুদ আংশিক বা সম্পূর্ণ মওকুফ করা যাবে। ট্যানারি মালিকরা এ সুযোগ নিলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। খেলাপি ঋণ এ খাতে বেড়েই চলেছে।