ঢাকা ১১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo গনহত্যার মাস্টারমাইন্ড আওয়ামী দোসর পারভেজ! Logo বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু Logo হেনরী-হাবিবে মিল্লাতসহ আ.লীগের ৫১ নেতাকর্মীর নামে মামলা Logo সাইবার হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি বাংলাদেশ ব্যাংকের Logo মোংলায় বাঘ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিতে বাঘ মহড়া ও প্রীতি ফুটবল ম্যাচ Logo সেই ‘সমন্বয়ক’ রিয়াদের বাসা থেকে আড়াই কোটির চেক-এফডিআর উদ্ধার Logo মাইক্রোপ্লাস্টিক: মানবদেহে কী প্রভাব ফেলছে, কারা বেশি ঝুঁকিতে? Logo মানবতাবিরোধী অপরাধ: মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেলেন আ.লীগ নেতা মোবারক Logo আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকায় থমথমে আবারও হতে পারে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ Logo আগস্টে শুরু হচ্ছে নতুন কোর্স, মহিলাদের জন্য থাকছে বিশেষ আবাসিক প্রশিক্ষণ

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে আমরা বদ্ধপরিকর

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৪৮:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
  • ৬ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

ঢাকায় একটি হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের উপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেইজ

সংস্কারের পাশাপাশি জুলাইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকায় একটি হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি নয়—ন্যায়বিচার মানে এমন একটি রাষ্ট্র গঠন, যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতা আর কখনও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাতির ত্যাগ, সাহস এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক সহায়তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজ আমরা একত্র হয়েছি একটি গভীর তাৎপর্যময় ঘটনার—জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী—স্মরণে। এটি ছিল এমন এক মুহূর্ত, যখন হাজার হাজার বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ—যাদের অধিকাংশই তরুণ—অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করেছিল। তাদের সাহস শুধু আমাদের জাতির জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির পক্ষেই উচ্চারিত হয়েছিল।’

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক দিনে, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত জাতিসংঘের অবিচল সমর্থনের কথাও স্মরণ করতে চাই, যারা সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে—১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট এবং গত বছরের জুলাই ও আগস্টের অন্ধকার দিনগুলোতেও।’

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ সকল মানুষের—জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে—অবিচ্ছেদ্য অধিকার সংজ্ঞায়িত ও রক্ষার লক্ষ্য নিয়েছিল। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা পৃথিবীর একটি নৈতিক দিকনির্দেশক হয়ে ওঠে, এবং তার মূলনীতি বাংলাদেশের সংবিধানেও সুপ্রতিষ্ঠিত। তবুও গত ১৬ বছরে, বাংলাদেশের নাগরিকদের এই অধিকার বারবার খর্ব করা হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে, স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে এবং সহিংসতা হয়ে উঠেছিল শাসনের মূল হাতিয়ার।

তবে গতবছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্পষ্টতা, সংকল্প এবং অসাধারণ সাহসিকতার সাথে নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধার করেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গতবছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তরকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারায়। এই সহিংসতা ছিল পরিকল্পিত, সংগঠিত এবং পূর্ববর্তী সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে পরিচালিত। এই সহিংসতা শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং তা মানবতা বিরোধী অপরাধ সম্পর্কেও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সত্য উন্মোচন শুধু ন্যায়বিচারের জন্য নয়, নিজেদের শোধরানোর জন্যও অপরিহার্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই অনুসন্ধানকে আরও সমর্থন করেছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, যার মধ্যে বিবিসি এবং আল জাজিরার রিপোর্টও রয়েছে। জাতিসংঘের হাইকমিশনারের দপ্তরের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, তারা শুধু এই নিপীড়নের প্রামাণ্য নথি প্রস্তুত করেনি, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে, তার জন্য একটি বিস্তৃত সুপারিশমালাও প্রদান করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান সরকার মানবাধিকার সুরক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন দণ্ডবিধির সংশোধন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগদান এবং জাতিসংঘের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। এই চুক্তির আওতায় ঢাকায় একটি সহায়তাকারী মিশন গঠিত হচ্ছে, যা সরকার ও সুশীল সমাজকে কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেবে।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গনহত্যার মাস্টারমাইন্ড আওয়ামী দোসর পারভেজ!

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে আমরা বদ্ধপরিকর

আপডেট সময় ০৯:৪৮:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

ঢাকায় একটি হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের উপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেইজ

সংস্কারের পাশাপাশি জুলাইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকায় একটি হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি নয়—ন্যায়বিচার মানে এমন একটি রাষ্ট্র গঠন, যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতা আর কখনও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাতির ত্যাগ, সাহস এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক সহায়তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজ আমরা একত্র হয়েছি একটি গভীর তাৎপর্যময় ঘটনার—জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী—স্মরণে। এটি ছিল এমন এক মুহূর্ত, যখন হাজার হাজার বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ—যাদের অধিকাংশই তরুণ—অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করেছিল। তাদের সাহস শুধু আমাদের জাতির জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির পক্ষেই উচ্চারিত হয়েছিল।’

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক দিনে, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত জাতিসংঘের অবিচল সমর্থনের কথাও স্মরণ করতে চাই, যারা সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে—১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট এবং গত বছরের জুলাই ও আগস্টের অন্ধকার দিনগুলোতেও।’

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ সকল মানুষের—জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে—অবিচ্ছেদ্য অধিকার সংজ্ঞায়িত ও রক্ষার লক্ষ্য নিয়েছিল। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা পৃথিবীর একটি নৈতিক দিকনির্দেশক হয়ে ওঠে, এবং তার মূলনীতি বাংলাদেশের সংবিধানেও সুপ্রতিষ্ঠিত। তবুও গত ১৬ বছরে, বাংলাদেশের নাগরিকদের এই অধিকার বারবার খর্ব করা হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে, স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে এবং সহিংসতা হয়ে উঠেছিল শাসনের মূল হাতিয়ার।

তবে গতবছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্পষ্টতা, সংকল্প এবং অসাধারণ সাহসিকতার সাথে নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধার করেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গতবছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তরকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারায়। এই সহিংসতা ছিল পরিকল্পিত, সংগঠিত এবং পূর্ববর্তী সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে পরিচালিত। এই সহিংসতা শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং তা মানবতা বিরোধী অপরাধ সম্পর্কেও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সত্য উন্মোচন শুধু ন্যায়বিচারের জন্য নয়, নিজেদের শোধরানোর জন্যও অপরিহার্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই অনুসন্ধানকে আরও সমর্থন করেছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, যার মধ্যে বিবিসি এবং আল জাজিরার রিপোর্টও রয়েছে। জাতিসংঘের হাইকমিশনারের দপ্তরের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, তারা শুধু এই নিপীড়নের প্রামাণ্য নথি প্রস্তুত করেনি, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে, তার জন্য একটি বিস্তৃত সুপারিশমালাও প্রদান করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান সরকার মানবাধিকার সুরক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন দণ্ডবিধির সংশোধন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগদান এবং জাতিসংঘের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। এই চুক্তির আওতায় ঢাকায় একটি সহায়তাকারী মিশন গঠিত হচ্ছে, যা সরকার ও সুশীল সমাজকে কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেবে।


প্রিন্ট