ঢাকা ০৫:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার গন্জেরহাটি গ্রামের সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রনব বনিকের দখলের চেষ্টা নরসিংদীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে আহত সাংবাদিকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চট্টগ্রামে জনতা ব্যাংক সিবিএ নেতা আফসার আ.লীগের আমলে দাপট দেখিয়ে এখন বিএনপি নিয়োগ, বদলি, চাঁদাবাজি করে কামিয়েছেন টাকা মহারাষ্ট্রে ভূমিধস জয়ের পথে বিজেপি জোট, ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’ পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু জুলাই বিপ্লবে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে মো. বাবুকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড আজমিরীগঞ্জে  বিয়ের ছয় মাস পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা রায়পুরে দেশীয় শিল্প ও পণ্য মেলায় ভ্রাম্যমান আদালত, নগদ অর্থদণ্ড কালিয়াকৈরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উঠান বৈঠক ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  মোংলায় জলবায়ু ন্যায্যতার গণসংলাপে বক্তারা : সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা দিন

সফলতার চাবি কোথায় ঈশ্বর!

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৫:৪৭:৫২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১
  • / ৪১৩ ৫০০০.০ বার পাঠক

।।শাবলু শাহাবউদ্দিন।।
থাইল্যান্ডের ঘড়িতে বেলা দুটো বাজে। বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে দুপুরের খাবার খাওয়া কথা আমার। দেশে থাকলে বউ আমাকে অবশ্যই বেলা দেড়টায় ফোন করে মনে করিয়ে দিত; আমার নাস্তার সময় হয়েছে; নাস্তা করছি কী না? কেন করি নাই? ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। বউ যেন আমার যত্নের টাইম মেশিন। কপাল গুণে একটি বউ পেয়েছি। সব ঈশ্বরের কৃপা। বিদেশে সফরে আসলেও মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু এবার আর তা করছে না। থাইল্যান্ডে আনতে পারি নাই বলে মনে মনে ঘোষা করেছে। পাগলীকে বোঝাতে পারি না যে, বিদেশে ঘোরাঘুরি সরকারি খরচে করি । সরকার সবসময় বউ বাচ্চা নিয়ে বিদেশে সফরের অনুমতি দেয় না।
সে কিছুই বোঝে না; তার একটাই কথা, তুমি সচিবালয়ে চাকরি করো, তুমিই সরকার, তোমার অনুমতি নেওয়ার কী দরকার! কথা কিন্তু মিছে বলে নাই। তবুও মিছে কথা। আমার বস সবাইকে নিয়ে এসেছে, অথচ আমি আনতে পারলাম না। এ বার ঘুরে যাই; আগামী বার নিয়ে আসবো ইনশাল্লাহ্ ।
তিথির কাকের মত কেউ একজন বসের জন্য বসে আছেন শ্যাম থাই রেস্টুরেন্টে । আমি কাজ সেরে রুমে ফিরছিলাম । বস ডাক দিতেই চলে এলাম বসের সাথে । ছোট থেকে আমার এই একটা বদ অভ্যাস আছে। কেউ ডাক দিলে না বলতে পারি না; এই বদ অভ্যাসের জন্য কলেজ লাইফে মা আমাকে গালাগালি করেছে আর বলেছেন, “কে যদি বলে আইলো, তার পাছ পাছ যাইলো।” আসলে সেই অভ্যাস টা আজও ছাড়তে পারি নাই ।
বসের সাথে শ্যাম থাই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলাম। একটি থাই ছেলে এসে কুর্নিশ করে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলো নিরাপদ জোনে । পাঁচ থেকে সাতটি আলাদা আলাদা খোপ । সুন্দর করে নিরাপত্তা আবরণী দেওয়া। তিন নাম্বার খোপের কাছে এসে সেই রেস্টুরেন্টের ছেলে টি থেমে গেলো। বস তিন নাম্বার নিরাপদ খোপে ঢুকে গেলেন । বসের পিছু পিছু পোষা কুকুরের মত নেজ লাটাইতে লাটাইতে আমিও প্রবেশ করলাম । একটি ছোট্ট টেবিলের  দুপাশে দুইটি চেয়ার । একটি চেয়ারে বসে আছেন সিক্স প্যাক সমৃদ্ধ একজন টি-শার্ট পড়া লম্বা লম্বা সাদা দাঁড়িওয়ালা দানব রূপে মানব। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দেখেছি অনেক কর্মকর্তা প্রায় এমন। তবে হ্যাঁ, পোশাকে একটু ভিন্নতা আছে। তাদের গাঁয়ে থাকে দরবেশ বাবাদের মত সাদা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি। কিন্তু এই ব্যক্তি পরেছে টি-শার্ট। হয় তো স্যারের পরিচিত কোন খ্রিস্টান বন্ধু কিংবা পরিচিত কেউ হবে।
লোকটির সামনে জুস ভর্তি একটি গ্লাস। অন্য একটি জুস ভর্তি গ্লাস স্যারের চেয়ারের সামনে টেবিলের উপরে। স্যার চেয়ারের উপর বসলো। আমার চেয়ারও নাই টেবিলও নাই। দাঁড়িয়ে রইলাম।
রেস্টুরেন্টের ছেলেটি আমাদের জিজ্ঞাসা করলো,” Sir, anything will be needed?”
“No, you can go”, বললেন স্যারের পরিচিত ঐ ব্যক্তি ।
ছেলেটি চলে গেলেন। ভদ্রতা করে আমার একটি চেয়ারও দিয়ে গেলেন না। হয় তো ছেলেটি ভেবেছেন আমি মনে হয় নিরাপত্তা রক্ষী আমার স্যারের। নিরাপত্তা রক্ষীর মত দাঁড়িয়ে রইলাম আর বাংলাদেশ সচিবালয়ের কাজের কথা মনে করার চেষ্টা করলাম। বসে থেকে, কাজ না করে, কত নিরীহ বাঙালিকে এই ভাবে টেবিলের সামনে ঘন্টা পর ঘন্টা দাড়িয়ে রেখেছি। হয় তো তাঁরাও আমার মত বিরক্ত হয়েছে। হোক তাতে আমার কী ! তবে ঈশ্বর হয়তো সেই পাপের শাস্তি এখন আমাকে দিচ্ছেন।
আমি দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে লাগলাম;
তার পরে কী খবর তোর, মহিদুর? স্যারের পরিচিত লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন সারকে ।
হামিদুর ভাই, আর শুইনো না; খুব বিপদে আছি। ইনকাম কমে গেছে। উত্তর দিলেন স্যার।
কেন? হঠাৎ তোর ইনকাম কমার কারণ কী?
ঘুষ নেই। তারপরে সরকারি টাকা তছরুপ করতে পারছিনা ইত্যাদি ইত্যাদি ভাই ।
মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার গুলো কী করিস? ঐখান থেকে তো ব্যাপক আয় আসার কথা।
ভাই, গত বছর সাংবাদিকদের রিপোর্টের কারণে প্রকাশ্যে টিকিট করে টেন্ডার করতে হয়। কার কপালে উঠে কে যানে। আয় রোজগার কিছুই নাই ভাই। যাইহোক তোমার কী খবর?
আলহামদুল্লিল্লাহ ভালো আছি তোদের আর্শীবাদে।
ভাই তুমি এই দুঃসময়েও ভালো! কেমনে সম্ভব?
কীসের দুঃসময়? একটু বিরক্ত সুরে হামিদুর স্যার বললেন ।
টেন্ডার নেই, ঘুষ নেই, সাংবাদিকদের অত্যাচার, রাজনৈতিক নেতাদের টর্চার, দুর্নীতি করা কোন পথ নেই। কোন ইনকাম নেই। তারপরেও তুমি ভালো আছো ? কেমনে সম্ভব ভাই? ঠিক মুখস্থ বিদ্যার মত উগরাইয়া দিলেন আমার স্যার ।
কেমনে সম্ভব শুনতে চাস তুই?
জী ভাই শুনতে তো চাই বটেই, কিছু শিখতেও চাই ।
বাংলাদেশ সব বড় বড় টেন্ডার পায় কারা জানি? জানিস না। সব টেন্ডার ক্রয় করে আমার লোক। আমার ভাই-ভাতিজা, বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, শশুর-শাশুরি, শালা-সুমুন্দি সবার নামে একাধিক নামে বেনামে কন্সট্রাকশন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেও আছে। টেন্ডার আহ্বানে সময় এমন শর্ত দেই যে, বাইরের প্রতিষ্ঠান টেন্ডার ক্রয় করা তো দূরের কথা, আবেদনই করতে পারে না। যদিও কেউ করে লটারির টিকিট বক্সে তাদের সিলিপ এমন করে ফেলি কিংবা আটা মারি যাতে কারো হাতে না উঠে। লটারি খেলার শেষে সব টিকিট উন্মুক্ত করে দেই। সবাই নিজ হাতে চেক করে যে, তাদের নাম আছে কিনা। লটারির বক্সে তাদের নাম থাকে কিন্তু কোন দিন লটারির টানে ওঠে না, আমার বিশেষ কৌশল অবলম্বনের জন্য। যার কারণে টেন্ডার বাণিজ্যে আমি এখনো টিকে আছি, টিকে থাকবো। সাংবাদিকের ভয় দেখালি। সাংবাদিকের ভয় পাই না। কারণ বাংলাদেশের নাম করা শুফম বাংলা পত্রিকার সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি আমার নিজের ছোট ভাই নাননু মুক্তা, আমার নামে খারাপ নিউজ হওয়ার আগেই সব শেষ করে দেয় নিজ হাতে। রাজনৈতিক নেতাদের ভয় কিসের; বাংলাদেশ ছাত্র রাজনৈতিক নেতাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমার ভাতিজা মহিন। রাজনৈতিক সমস্যা সব সমাধান ও নিজেই করে।
বড় কোন সমস্যা হলে বাংলাদেশ উকিল বারের চেয়ারম্যান করেছি আমার ভাগ্নির। বল আর কী চাই আমার ?
ভাই তুমি তো দেখছি, আমলাতন্ত্র থেকে দেশটাকে পরিবারতন্ত্রে নিয়ে গেছো। সব কিছু নিজ হাতে পরিচালনা করছো। কেমনে করলা এগুলো?
পাগলা, পরিকল্পনা লাগে। সব পরিকল্পনা মাফিক চলতে হয়। ছোট ভাই বিদেশে ব্যবসায় করতে চাইলো, আমি বললাম, না । সাংবাদিক হও। পত্রিকা প্রকাশ করো । ও বললো পত্রিকা চালানোর মত বিজ্ঞাপন পাবো কোথায়। আমি বললাম সব সচিবালয় থেকে আসবে। সচিবালয়ে সব বিজ্ঞাপন ওকে দিলাম। খুব দ্রুত ওর পত্রিকা নাম কামালো। সারা বাংলাদেশ এখন এক নামে চেনে শুফম বাংলা পত্রিকাকে। ভাবছি সামনে একটা শুফম নামে টিভি চ্যানেল খুলবো। তাই সব ঝামেলা চুকে যাবে। বাংলাদেশ সব সেক্টরে এখন পরোক্ষ ভাবে আমি। ভাবছি চাকরি শেষে ভালো কোন দল থেকে নমিনেশন নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াব। এমপি হয়ে মন্ত্রী হবো।
আলহামদুল্লিল্লাহ । আল্লাহ্ আপনার আশা পূর্ণ করুক বলে গাই গরুর মত দীর্ঘ একটি শ্বাস নিলেন আমার স্যার।

 

স্যারের বন্ধু কথা শুনে আমিও দীর্ঘ শ্বাস নিলাম। মনে মনে স্যারের বন্ধু মত হতে চাইলাম। কিন্তু হতে পারবো না জানি। কারণ স্যারের মত শিক্ষিত ছোট ভাই নেই আমার, শিক্ষিত ভাতিজাও নেই। আমার যা আছে সবাই গণ্ডমূর্খ। কামলা দিয়ে খায়। স্রোতের বিপরীতে চলতে চলতে আজ সচিবালয়ে সহকারী সচিব হয়েছি। হয়তো কোন একদিন হামিদুর স্যারের চেয়ার আমার হবে কিন্তু স্যারের মত এত সফল একজন মানুষ আমি হতে পারবো না। হায় ঈশ্বর! সফলতার চাবি কোথায়, ঈশ্বর । সফলতার চাবি কোথায়?
আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সফলতার চাবি কোথায় ঈশ্বর!

আপডেট টাইম : ০৫:৪৭:৫২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১
।।শাবলু শাহাবউদ্দিন।।
থাইল্যান্ডের ঘড়িতে বেলা দুটো বাজে। বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে দুপুরের খাবার খাওয়া কথা আমার। দেশে থাকলে বউ আমাকে অবশ্যই বেলা দেড়টায় ফোন করে মনে করিয়ে দিত; আমার নাস্তার সময় হয়েছে; নাস্তা করছি কী না? কেন করি নাই? ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। বউ যেন আমার যত্নের টাইম মেশিন। কপাল গুণে একটি বউ পেয়েছি। সব ঈশ্বরের কৃপা। বিদেশে সফরে আসলেও মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু এবার আর তা করছে না। থাইল্যান্ডে আনতে পারি নাই বলে মনে মনে ঘোষা করেছে। পাগলীকে বোঝাতে পারি না যে, বিদেশে ঘোরাঘুরি সরকারি খরচে করি । সরকার সবসময় বউ বাচ্চা নিয়ে বিদেশে সফরের অনুমতি দেয় না।
সে কিছুই বোঝে না; তার একটাই কথা, তুমি সচিবালয়ে চাকরি করো, তুমিই সরকার, তোমার অনুমতি নেওয়ার কী দরকার! কথা কিন্তু মিছে বলে নাই। তবুও মিছে কথা। আমার বস সবাইকে নিয়ে এসেছে, অথচ আমি আনতে পারলাম না। এ বার ঘুরে যাই; আগামী বার নিয়ে আসবো ইনশাল্লাহ্ ।
তিথির কাকের মত কেউ একজন বসের জন্য বসে আছেন শ্যাম থাই রেস্টুরেন্টে । আমি কাজ সেরে রুমে ফিরছিলাম । বস ডাক দিতেই চলে এলাম বসের সাথে । ছোট থেকে আমার এই একটা বদ অভ্যাস আছে। কেউ ডাক দিলে না বলতে পারি না; এই বদ অভ্যাসের জন্য কলেজ লাইফে মা আমাকে গালাগালি করেছে আর বলেছেন, “কে যদি বলে আইলো, তার পাছ পাছ যাইলো।” আসলে সেই অভ্যাস টা আজও ছাড়তে পারি নাই ।
বসের সাথে শ্যাম থাই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলাম। একটি থাই ছেলে এসে কুর্নিশ করে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলো নিরাপদ জোনে । পাঁচ থেকে সাতটি আলাদা আলাদা খোপ । সুন্দর করে নিরাপত্তা আবরণী দেওয়া। তিন নাম্বার খোপের কাছে এসে সেই রেস্টুরেন্টের ছেলে টি থেমে গেলো। বস তিন নাম্বার নিরাপদ খোপে ঢুকে গেলেন । বসের পিছু পিছু পোষা কুকুরের মত নেজ লাটাইতে লাটাইতে আমিও প্রবেশ করলাম । একটি ছোট্ট টেবিলের  দুপাশে দুইটি চেয়ার । একটি চেয়ারে বসে আছেন সিক্স প্যাক সমৃদ্ধ একজন টি-শার্ট পড়া লম্বা লম্বা সাদা দাঁড়িওয়ালা দানব রূপে মানব। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দেখেছি অনেক কর্মকর্তা প্রায় এমন। তবে হ্যাঁ, পোশাকে একটু ভিন্নতা আছে। তাদের গাঁয়ে থাকে দরবেশ বাবাদের মত সাদা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি। কিন্তু এই ব্যক্তি পরেছে টি-শার্ট। হয় তো স্যারের পরিচিত কোন খ্রিস্টান বন্ধু কিংবা পরিচিত কেউ হবে।
লোকটির সামনে জুস ভর্তি একটি গ্লাস। অন্য একটি জুস ভর্তি গ্লাস স্যারের চেয়ারের সামনে টেবিলের উপরে। স্যার চেয়ারের উপর বসলো। আমার চেয়ারও নাই টেবিলও নাই। দাঁড়িয়ে রইলাম।
রেস্টুরেন্টের ছেলেটি আমাদের জিজ্ঞাসা করলো,” Sir, anything will be needed?”
“No, you can go”, বললেন স্যারের পরিচিত ঐ ব্যক্তি ।
ছেলেটি চলে গেলেন। ভদ্রতা করে আমার একটি চেয়ারও দিয়ে গেলেন না। হয় তো ছেলেটি ভেবেছেন আমি মনে হয় নিরাপত্তা রক্ষী আমার স্যারের। নিরাপত্তা রক্ষীর মত দাঁড়িয়ে রইলাম আর বাংলাদেশ সচিবালয়ের কাজের কথা মনে করার চেষ্টা করলাম। বসে থেকে, কাজ না করে, কত নিরীহ বাঙালিকে এই ভাবে টেবিলের সামনে ঘন্টা পর ঘন্টা দাড়িয়ে রেখেছি। হয় তো তাঁরাও আমার মত বিরক্ত হয়েছে। হোক তাতে আমার কী ! তবে ঈশ্বর হয়তো সেই পাপের শাস্তি এখন আমাকে দিচ্ছেন।
আমি দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে লাগলাম;
তার পরে কী খবর তোর, মহিদুর? স্যারের পরিচিত লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন সারকে ।
হামিদুর ভাই, আর শুইনো না; খুব বিপদে আছি। ইনকাম কমে গেছে। উত্তর দিলেন স্যার।
কেন? হঠাৎ তোর ইনকাম কমার কারণ কী?
ঘুষ নেই। তারপরে সরকারি টাকা তছরুপ করতে পারছিনা ইত্যাদি ইত্যাদি ভাই ।
মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার গুলো কী করিস? ঐখান থেকে তো ব্যাপক আয় আসার কথা।
ভাই, গত বছর সাংবাদিকদের রিপোর্টের কারণে প্রকাশ্যে টিকিট করে টেন্ডার করতে হয়। কার কপালে উঠে কে যানে। আয় রোজগার কিছুই নাই ভাই। যাইহোক তোমার কী খবর?
আলহামদুল্লিল্লাহ ভালো আছি তোদের আর্শীবাদে।
ভাই তুমি এই দুঃসময়েও ভালো! কেমনে সম্ভব?
কীসের দুঃসময়? একটু বিরক্ত সুরে হামিদুর স্যার বললেন ।
টেন্ডার নেই, ঘুষ নেই, সাংবাদিকদের অত্যাচার, রাজনৈতিক নেতাদের টর্চার, দুর্নীতি করা কোন পথ নেই। কোন ইনকাম নেই। তারপরেও তুমি ভালো আছো ? কেমনে সম্ভব ভাই? ঠিক মুখস্থ বিদ্যার মত উগরাইয়া দিলেন আমার স্যার ।
কেমনে সম্ভব শুনতে চাস তুই?
জী ভাই শুনতে তো চাই বটেই, কিছু শিখতেও চাই ।
বাংলাদেশ সব বড় বড় টেন্ডার পায় কারা জানি? জানিস না। সব টেন্ডার ক্রয় করে আমার লোক। আমার ভাই-ভাতিজা, বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, শশুর-শাশুরি, শালা-সুমুন্দি সবার নামে একাধিক নামে বেনামে কন্সট্রাকশন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেও আছে। টেন্ডার আহ্বানে সময় এমন শর্ত দেই যে, বাইরের প্রতিষ্ঠান টেন্ডার ক্রয় করা তো দূরের কথা, আবেদনই করতে পারে না। যদিও কেউ করে লটারির টিকিট বক্সে তাদের সিলিপ এমন করে ফেলি কিংবা আটা মারি যাতে কারো হাতে না উঠে। লটারি খেলার শেষে সব টিকিট উন্মুক্ত করে দেই। সবাই নিজ হাতে চেক করে যে, তাদের নাম আছে কিনা। লটারির বক্সে তাদের নাম থাকে কিন্তু কোন দিন লটারির টানে ওঠে না, আমার বিশেষ কৌশল অবলম্বনের জন্য। যার কারণে টেন্ডার বাণিজ্যে আমি এখনো টিকে আছি, টিকে থাকবো। সাংবাদিকের ভয় দেখালি। সাংবাদিকের ভয় পাই না। কারণ বাংলাদেশের নাম করা শুফম বাংলা পত্রিকার সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি আমার নিজের ছোট ভাই নাননু মুক্তা, আমার নামে খারাপ নিউজ হওয়ার আগেই সব শেষ করে দেয় নিজ হাতে। রাজনৈতিক নেতাদের ভয় কিসের; বাংলাদেশ ছাত্র রাজনৈতিক নেতাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমার ভাতিজা মহিন। রাজনৈতিক সমস্যা সব সমাধান ও নিজেই করে।
বড় কোন সমস্যা হলে বাংলাদেশ উকিল বারের চেয়ারম্যান করেছি আমার ভাগ্নির। বল আর কী চাই আমার ?
ভাই তুমি তো দেখছি, আমলাতন্ত্র থেকে দেশটাকে পরিবারতন্ত্রে নিয়ে গেছো। সব কিছু নিজ হাতে পরিচালনা করছো। কেমনে করলা এগুলো?
পাগলা, পরিকল্পনা লাগে। সব পরিকল্পনা মাফিক চলতে হয়। ছোট ভাই বিদেশে ব্যবসায় করতে চাইলো, আমি বললাম, না । সাংবাদিক হও। পত্রিকা প্রকাশ করো । ও বললো পত্রিকা চালানোর মত বিজ্ঞাপন পাবো কোথায়। আমি বললাম সব সচিবালয় থেকে আসবে। সচিবালয়ে সব বিজ্ঞাপন ওকে দিলাম। খুব দ্রুত ওর পত্রিকা নাম কামালো। সারা বাংলাদেশ এখন এক নামে চেনে শুফম বাংলা পত্রিকাকে। ভাবছি সামনে একটা শুফম নামে টিভি চ্যানেল খুলবো। তাই সব ঝামেলা চুকে যাবে। বাংলাদেশ সব সেক্টরে এখন পরোক্ষ ভাবে আমি। ভাবছি চাকরি শেষে ভালো কোন দল থেকে নমিনেশন নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াব। এমপি হয়ে মন্ত্রী হবো।
আলহামদুল্লিল্লাহ । আল্লাহ্ আপনার আশা পূর্ণ করুক বলে গাই গরুর মত দীর্ঘ একটি শ্বাস নিলেন আমার স্যার।

 

স্যারের বন্ধু কথা শুনে আমিও দীর্ঘ শ্বাস নিলাম। মনে মনে স্যারের বন্ধু মত হতে চাইলাম। কিন্তু হতে পারবো না জানি। কারণ স্যারের মত শিক্ষিত ছোট ভাই নেই আমার, শিক্ষিত ভাতিজাও নেই। আমার যা আছে সবাই গণ্ডমূর্খ। কামলা দিয়ে খায়। স্রোতের বিপরীতে চলতে চলতে আজ সচিবালয়ে সহকারী সচিব হয়েছি। হয়তো কোন একদিন হামিদুর স্যারের চেয়ার আমার হবে কিন্তু স্যারের মত এত সফল একজন মানুষ আমি হতে পারবো না। হায় ঈশ্বর! সফলতার চাবি কোথায়, ঈশ্বর । সফলতার চাবি কোথায়?