ঢাকা ০১:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
মানুষের তৈরি মতবাদ আল্লাহর আইনের সাথে চ্যালেঞ্জ করার শামিল – ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগ নেতার দখলের চেষ্টা।এই বিষয়ে সময়ের কন্ঠস্বরে নিউজ প্রকাশের পর এসিল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞা ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সমগ্র বাংলাদেশ) পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখা কমিটির সকলকে সনদ প্রদান ও আলোচনা সভা ২৫২ বছরের ইতিহাসে চট্টগ্রামে এই প্রথম নারী ডিসি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পদায়ন ফরিদা খানম গাজীপুর জেলা মহানগর কাশিমপুরে স্বাধীন মত প্রকাশের জেরে থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার গন্জেরহাটি গ্রামের সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রনব বনিকের দখলের চেষ্টা নরসিংদীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে আহত সাংবাদিকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চট্টগ্রামে জনতা ব্যাংক সিবিএ নেতা আফসার আ.লীগের আমলে দাপট দেখিয়ে এখন বিএনপি নিয়োগ, বদলি, চাঁদাবাজি করে কামিয়েছেন টাকা মহারাষ্ট্রে ভূমিধস জয়ের পথে বিজেপি জোট, ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’ পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাস্তবায়ন সম্ভব -বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০১:২৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ৫ জুন ২০২১
  • / ২৫৭ ৫০০০.০ বার পাঠক

  • জীবন বাঁচাতে সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেয়া হবে
  • টিকা কিনতে ১৪ হাজার ২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ
  • নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এবং দেশীয় শিল্পের বিকাশে করছাড়
  • কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মহামারী করোনার কবল থেকে জীবন বাঁচাতে দেশের সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ যাই থাক, টিকা কিনতে অর্থের কোন সমস্যা হবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ রাখা আছে। এবারের বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নযোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্যে ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিতে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। এতে দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ হবে। দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, গো খামার সুরক্ষায় বাজেটে মাংস আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-উত্তর অনলাইন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংবাদ সম্মেলনে সংযুক্ত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রী। ওই সময় নিজ নিজ দফতর থেকে আরও সংযুক্ত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রাহমাতুল মুনিম প্রমুখ।

বাজেট সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য। গত পাঁচ থেকে ছয়টি বাজেটে যে হারে প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জিত হয়েছে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, রফতানি ও রেমিটেন্সের আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হচ্ছে। গত মে মাস পর্যন্ত রফতানিতে ইতিবাচক ধারা বজায় রয়েছে। আর রেমিটেন্স অর্জনে রেকর্ড করে এখন তা ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এটাই বাস্তবতা। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এ বিষয়ে অর্থসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী একবছরের জন্য টিকা কিনতে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। টিকা কার্যক্রম চলতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সবাই জীবন বাঁচাতে করোনার টিকা পাবেন। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে করোনার টিকা আনা হচ্ছে। সবাই বিনামূল্যের সরকারী এই টিকা পাবেন।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশ হলে দেশে দ্রুত কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হবে। এ কারণে এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব করে সর্বক্ষেত্রে কর ও ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। এতে করে দ্রুত সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরে আসবে এবং কয়েক বছরের মধ্যেই রাজস্ব আদায় আবার বহুগুণ বাড়বে। এ কারণে কর ও ভ্যাট ছাড়ের বাজেট দেয়া হয়েছে। কালো টাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কেউ বলে এই সুযোগ রাখেন আরেকপক্ষ বলে, এটা ঠিক নয়। তবে দেশের স্বার্থে যেটা ভাল সেটা করার এখনও সময় আছে। বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আর এ কারণেই এবার অপ্রদর্শিত অর্থের বিষয়টি বাজেটে আনা হয়নি। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই সুযোগ ঢালাওভাবে দেয়া হলে যারা নিয়মিত ট্যাক্স ও ভ্যাট দেন তাদের প্রতি এক ধরনের অবিচার করা হয়। তাঁরা কর প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এসব বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা নেই ॥ বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, বরাদ্দ যাই থাক, এখাতের প্রয়োজনীয় ব্যয় সংকুলান ও টিকা কিনতে কোন সমস্যা হবে না। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও টাকা নিয়ে স্বাস্থ্য খাতে দেয়া যাবে, এ নিয়ে কোন সমস্যা নেই। উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন। মহামারীর মধ্যে তার এ বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। পাশাপাশি মহামারীকালে জরুরী প্রয়োজন মেটাতে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারীর বাস্তবতায় স্বাস্থ্যের এই বরাদ্দ প্রত্যাশা কিংবা প্রয়োজন, কোনটার সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের জন্যও কোন দিক নির্দেশনা তারা বাজেটে পাননি। বাজেটের পরদিন অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। অর্থমন্ত্রী অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এ বিষয়ে উত্তর দিতে অনুরোধ করেন। মহামারীর বাজেটে স্বাস্থ্য আসলে কী পেল? আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গত বছরের মূল বাজেটে যে বরাদ্দ ছিল, এবার তা ১৩ শতাংশের মতো বেড়েছে।

তিনি বলেন, বরাদ্দ নিয়ে কোন সমস্যা নেই। এক বছরে যে টিকা আমরা দিতে পারব, তার চেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ আছে। সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও নেয়া যাবে। আর স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনার জন্য উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব। এ সময় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের অর্থনীতির এখন যা অবস্থা তাতে মহামারী মোকাবেলায় অর্থ কোন সমস্যা নয়। সরাবিশ্ব যেভাবে মোকাবেলা করছে, বাংলাদেশও তা করবে।

কর ছাড় দেয়া হলেও রাজস্ব আদায় বাড়বে ॥ অর্থনীতির গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে কর ছাড়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য রেখেছি, আইনটিকে আমরা সহজ করব। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যদি আমরা আইনটিকে সহজ করতে পারি, করদাতাদের যদি এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে রাজস্ব আদায় অনেক বৃদ্ধি পাবে। রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে পৃথিবীর অনেক দেশ চেষ্টা করেছিল। এমনকি আমেরিকায়ও কোন একসময় ৭৫ শতাংশ ট্যাক্সের পরিমাণ ছিল, সেটা এখন নেই। বেশি করে ট্যাক্স আদায় করা যায় কি না সেটি সবাই চেষ্টা করেছিল। রাজস্বের হার যদি আস্তে আস্তে কমানো হয়, তাহলে আমাদের সংগ্রহ বাড়বে। আমরা যে কর কমালাম, আমরা বিশ্বাস করি ‘উই উইল বি উইনার’। করের হার কমানো হয়েছে, আশা করি আমাদের রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ব্যবসায়ী যারা বলছেন ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট করার কথা। ব্যবসায়ী শব্দটি ফ্লেক্সিবল জব, এটাকে ফিক্সড করে রাখা যাবে না। প্রত্যেক সময় মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়। চাহিদা পূরণে ব্যবসায়ীদেরও পরিবর্তন আসে। তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও পরিবর্তন আসে। সুতরাং এটা কখনও ফিক্স রাখা যাবে না। আমাদের সিচুয়েশন কী ডিমান্ড করে, সারাবিশ্ব কী করছে, সেটি দেখতে হবে। উন্নত বিশ্ব যদি পিছিয়ে পড়ে, তাহলে আমরা কিন্তু এগোতে পারব না। কারণ উন্নত বিশ্বের মাধ্যমে কিন্তু আমরা সমৃদ্ধ। আজকে মার্কিন ইকোনমি এটাই আমাদের শেখায়, আমরা একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

দেশীয় শিল্প বিকাশ হলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে ॥ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, ফলে সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে। বাজেটের পুরোটাই হলো ব্যবসায়ী বান্ধব। আমি মনে করি, যে বাজেট ব্যবসায়ীবান্ধব হলেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেবেন। আর ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়ার মানে হচ্ছে উৎপাদনে যাওয়া। সেই উৎপাদনটি ঘটাবে আমাদের দেশের জনগোষ্ঠী। মানুষের কর্মসংস্থান না করা হলে কিভাবে তারা এগুলো করবেন? সেজন্য আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীরাই এ কাজটি করবেন। সেজন্য ব্যবসায়ীদের আমরা সুযোগ দিয়েছি, আমরা কমিটেড। তিনি বলেন, আমরা মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগ লাইনটা ব্যবহার করতে চাই। আমাদের দেশীয় প্রোডাক্ট যেগুলোকে বাড়তি সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে বাজেটে যা দেখেছেন সেটাই যে থাকবে তা নয়, আমরা কিছু ফ্লেক্সিবল থাকব। আমরা আরও পরিবর্তন করব, কখনও বাড়াব না। আমরা সবসময় প্রয়োজনে ট্যাক্স, ভ্যাট কমাব।

অর্থমন্ত্রী বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দেশ ভাল করছে। সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। ভারতসহ অন্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ঋণ দেয়ার সময় এসে গেছে। আমরা ঋণ নেব না, ঋণ দেব। তিনি বলেন, বাজেটে ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে, গত বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। দেশ স্বাভাবিক হলে আবারও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দেখাব। আমরা এর আগে যা বলেছি তাই করেছি এবারও করে দেখাব। তিনি আরও বলেন, ৭ দশমিক ২ অর্জন করব। সারাবিশ্ব যখন নিচের দিকে যাচ্ছে আমরা উপরের দিকে যাচ্ছি। আমরা যা বলি তাই করি। জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জন করে দেখাব। আমারা সারা পৃথিবীতে আলোচনার বিষয়। সময় যত যাচ্ছে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণ করা হবে ॥ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কারণ এটা নিয়ে বিতর্ক আছে, বিতর্ক হচ্ছে। তবে দেশের উন্নয়নে যা ভাল সেটিই করা হবে। কালো টাকার সুযোগ না রাখার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কালো টাকা নিয়ে আমি কখনও কথা বলিনি। আমাদের বাজেটে আমরা যেই প্রভিশনটি রেখেছিলাম তা হলো অপ্রদর্শিত আয়। কালো টাকা এবং অপ্রদর্শিত আয়ের মধ্যে ব্যাপক ডিফারেন্স। কালো টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়, আর অপ্রদর্শিত টাকাটা আমাদের সিস্টেমের কারণে সৃষ্টি হয়। কালো টাকা সাদা করার সুযোগে যারা নিয়মিত কর ও ট্যাক্স দেন তাহলে অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, যারা সীমিত সম্পদকে এক্সপ্লয়েট করে ম্যাক্সিমাম আয় করবে তাদেরকে বেশি করে সুযোগ করে দেয়া উচিত ছিল। সেটা না করে যারা বেশি আয় করেছিল তাদের আরও বেশি চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, এটা ঠিক না। সেজন্য আমরা এই বিষয়গুলো দেখে যতটা সম্ভব হয়েছে এই বাজেটে খোলামেলাভাবে সুন্দর ও সহজ করে আরও সর্বজনীন করার চেষ্টা করেছি।

গো খামার সুরক্ষা ও মাংস উৎপাদনে উৎসাহিত করা হয়েছে ॥ দেশীয় গো খামার সুরক্ষা এবং মাংস উৎপাদন বাড়াতে প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি নিরৎসাহিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এনবিআর চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই সময় তিনি বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে এবং উৎপাদন বাড়াতে মাংস আমদানিতে ট্যারিফ বসানো হয়েছে। এটা শুধু মাংস না, প্রতিটি কৃষি খাতকেই উৎসাহিত করতে, আমদানির পরিবর্তে উৎপাদনকে প্রাধান্য দিতেই সরকার এটা ভাবছে। এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের সম্ভাবনাময় খাত কৃষি। এখন সময় এসেছে আমাদের আমদানি কমানোর। এখন আমরা উৎপাদন করতে চাই। আমরা উৎপাদনে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে রফতানিতে যাচ্ছি। এজন্য রফতানিতে সুযোগ দেয়া হচ্ছে আর আমদানিতে ট্যারিফ বসানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত দুই-তিন বছর ধরেই পোল্ট্রি খাত অনেক লোকসানে আছে।

আবার একটি গাভি থেকে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আমরা চাই উৎপাদন বৃদ্ধি পাক এবং উদ্যোক্তারা আরও সুযোগ পান। এতে আমাদের উৎপাদন বাড়বে, আমদানি কমবে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশ। তিনি আরও বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে এ খাত পুরোপুরি যান্ত্রীকিকরণ করা হবে। শ্রমিকদের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কৃষিকাজে অনেকে লোকসান করছেন। কিন্তু এ খাতের চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা গেলে উৎপাদন বিনিয়োগ বাড়বে। তিনি বলেন, কৃষিতে সরকার যা দিচ্ছে তা ভর্তুকি নয় এক ধরনের বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগের কারণে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

ঘাটতি বাজেট খারাপ নয়- পরিকল্পনামন্ত্রী ॥ ঘাটতি বাজেট খারাপ নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মহামারীকালে নতুন অর্থবছরের জন্য রেকর্ড ঘাটতি রেখে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মোট বাজেটের মধ্যে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা তিনি রাজস্ব খাত থেকে যোগান দেয়ার পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, যা বাস্তবায়ন করা হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে উন্নয়নশীল দেশে ঘাটতি বাজেট হতেই পারে, এটি নতুন নয়, বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ঘাটতি বাজেট নতুন নয়, আমরা উন্নয়নশীল দেশ, ঘাটতি বাজেট হবে। তবে সংশয় আছে ঘাটতির পরিমাণ নিয়ে। তবে আমি কনফিডেন্ট, অর্থমন্ত্রী এটিকে মোকাবেলা করতে পারবেন। আমরা একটি অনুমানের জগতে আছি। সেটাকে নিয়ে তর্ক করে কোন লাভ হবে না।

তিনি আরও বলেন, অর্থের জোগান দেয়া অন্যতম একটি বিষয়। যারা বাইরে থেকে আমাদের ধার দেবে, তাদের বাজার বেশ ভাল। বিদেশ থেকে যারা ধার দেয় তাদের কথাবার্তা ও আচরণে সেটি আমরা দেখেছি। আমাদের রেকর্ডও ভাল। আমরা সে ধরনের গ্রাহক নই। কোন সময় আমরা এগুলো মিস করিনি। আমরা সবকিছু পজিটিভলি করেছি বলেই পজিটিভলি গ্রোথ ধরে রাখতে পেরেছি। মাথাপিছু আয় করোনার মধ্যেও আমাদের ২৩০০ ডলারের কাছাকাছি। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, এত কঠিন সময়ের মতো আগে কখনও হয়ত বাজেট দেয়া হয়নি। সময়োপযোগী বাজেট হয়েছে। নদীভাঙ্গন এলাকায় নজর দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ বড়দের দেয়া হচ্ছে এটা সঠিক নয়। ৪০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে বৃহৎ সেক্টরের জন্য। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা বিতরণ হয়ে গেছে।। এসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার ৭৩.৭ শতাংশ বিতরণ হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। কৃষিতে ৫ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। সেখানে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। ব্যাংকিং খাত ৮০ ভাগ সাপোর্ট দিচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সাধারণত ব্যবসাবান্ধব বাজেট বলে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। এ কারণে যে ব্যবসা আবার সক্রিয় হোক। বেসরকারী খাত থেকে ৮০ ভাগ এবং সরকারীভাবে মাত্র ২০ ভাগ বিনিয়োগ হয়।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাস্তবায়ন সম্ভব -বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

আপডেট টাইম : ০১:২৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ৫ জুন ২০২১
  • জীবন বাঁচাতে সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেয়া হবে
  • টিকা কিনতে ১৪ হাজার ২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ
  • নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এবং দেশীয় শিল্পের বিকাশে করছাড়
  • কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মহামারী করোনার কবল থেকে জীবন বাঁচাতে দেশের সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ যাই থাক, টিকা কিনতে অর্থের কোন সমস্যা হবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ রাখা আছে। এবারের বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নযোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্যে ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিতে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। এতে দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ হবে। দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, গো খামার সুরক্ষায় বাজেটে মাংস আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-উত্তর অনলাইন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংবাদ সম্মেলনে সংযুক্ত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রী। ওই সময় নিজ নিজ দফতর থেকে আরও সংযুক্ত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রাহমাতুল মুনিম প্রমুখ।

বাজেট সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য। গত পাঁচ থেকে ছয়টি বাজেটে যে হারে প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জিত হয়েছে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, রফতানি ও রেমিটেন্সের আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হচ্ছে। গত মে মাস পর্যন্ত রফতানিতে ইতিবাচক ধারা বজায় রয়েছে। আর রেমিটেন্স অর্জনে রেকর্ড করে এখন তা ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এটাই বাস্তবতা। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এ বিষয়ে অর্থসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী একবছরের জন্য টিকা কিনতে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। টিকা কার্যক্রম চলতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সবাই জীবন বাঁচাতে করোনার টিকা পাবেন। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে করোনার টিকা আনা হচ্ছে। সবাই বিনামূল্যের সরকারী এই টিকা পাবেন।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশ হলে দেশে দ্রুত কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হবে। এ কারণে এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব করে সর্বক্ষেত্রে কর ও ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। এতে করে দ্রুত সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরে আসবে এবং কয়েক বছরের মধ্যেই রাজস্ব আদায় আবার বহুগুণ বাড়বে। এ কারণে কর ও ভ্যাট ছাড়ের বাজেট দেয়া হয়েছে। কালো টাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কেউ বলে এই সুযোগ রাখেন আরেকপক্ষ বলে, এটা ঠিক নয়। তবে দেশের স্বার্থে যেটা ভাল সেটা করার এখনও সময় আছে। বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আর এ কারণেই এবার অপ্রদর্শিত অর্থের বিষয়টি বাজেটে আনা হয়নি। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই সুযোগ ঢালাওভাবে দেয়া হলে যারা নিয়মিত ট্যাক্স ও ভ্যাট দেন তাদের প্রতি এক ধরনের অবিচার করা হয়। তাঁরা কর প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এসব বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা নেই ॥ বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, বরাদ্দ যাই থাক, এখাতের প্রয়োজনীয় ব্যয় সংকুলান ও টিকা কিনতে কোন সমস্যা হবে না। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও টাকা নিয়ে স্বাস্থ্য খাতে দেয়া যাবে, এ নিয়ে কোন সমস্যা নেই। উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন। মহামারীর মধ্যে তার এ বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। পাশাপাশি মহামারীকালে জরুরী প্রয়োজন মেটাতে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারীর বাস্তবতায় স্বাস্থ্যের এই বরাদ্দ প্রত্যাশা কিংবা প্রয়োজন, কোনটার সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের জন্যও কোন দিক নির্দেশনা তারা বাজেটে পাননি। বাজেটের পরদিন অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। অর্থমন্ত্রী অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এ বিষয়ে উত্তর দিতে অনুরোধ করেন। মহামারীর বাজেটে স্বাস্থ্য আসলে কী পেল? আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গত বছরের মূল বাজেটে যে বরাদ্দ ছিল, এবার তা ১৩ শতাংশের মতো বেড়েছে।

তিনি বলেন, বরাদ্দ নিয়ে কোন সমস্যা নেই। এক বছরে যে টিকা আমরা দিতে পারব, তার চেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ আছে। সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও নেয়া যাবে। আর স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনার জন্য উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব। এ সময় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের অর্থনীতির এখন যা অবস্থা তাতে মহামারী মোকাবেলায় অর্থ কোন সমস্যা নয়। সরাবিশ্ব যেভাবে মোকাবেলা করছে, বাংলাদেশও তা করবে।

কর ছাড় দেয়া হলেও রাজস্ব আদায় বাড়বে ॥ অর্থনীতির গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে কর ছাড়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য রেখেছি, আইনটিকে আমরা সহজ করব। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যদি আমরা আইনটিকে সহজ করতে পারি, করদাতাদের যদি এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে রাজস্ব আদায় অনেক বৃদ্ধি পাবে। রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে পৃথিবীর অনেক দেশ চেষ্টা করেছিল। এমনকি আমেরিকায়ও কোন একসময় ৭৫ শতাংশ ট্যাক্সের পরিমাণ ছিল, সেটা এখন নেই। বেশি করে ট্যাক্স আদায় করা যায় কি না সেটি সবাই চেষ্টা করেছিল। রাজস্বের হার যদি আস্তে আস্তে কমানো হয়, তাহলে আমাদের সংগ্রহ বাড়বে। আমরা যে কর কমালাম, আমরা বিশ্বাস করি ‘উই উইল বি উইনার’। করের হার কমানো হয়েছে, আশা করি আমাদের রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ব্যবসায়ী যারা বলছেন ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট করার কথা। ব্যবসায়ী শব্দটি ফ্লেক্সিবল জব, এটাকে ফিক্সড করে রাখা যাবে না। প্রত্যেক সময় মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়। চাহিদা পূরণে ব্যবসায়ীদেরও পরিবর্তন আসে। তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও পরিবর্তন আসে। সুতরাং এটা কখনও ফিক্স রাখা যাবে না। আমাদের সিচুয়েশন কী ডিমান্ড করে, সারাবিশ্ব কী করছে, সেটি দেখতে হবে। উন্নত বিশ্ব যদি পিছিয়ে পড়ে, তাহলে আমরা কিন্তু এগোতে পারব না। কারণ উন্নত বিশ্বের মাধ্যমে কিন্তু আমরা সমৃদ্ধ। আজকে মার্কিন ইকোনমি এটাই আমাদের শেখায়, আমরা একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

দেশীয় শিল্প বিকাশ হলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে ॥ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, ফলে সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে। বাজেটের পুরোটাই হলো ব্যবসায়ী বান্ধব। আমি মনে করি, যে বাজেট ব্যবসায়ীবান্ধব হলেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেবেন। আর ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়ার মানে হচ্ছে উৎপাদনে যাওয়া। সেই উৎপাদনটি ঘটাবে আমাদের দেশের জনগোষ্ঠী। মানুষের কর্মসংস্থান না করা হলে কিভাবে তারা এগুলো করবেন? সেজন্য আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীরাই এ কাজটি করবেন। সেজন্য ব্যবসায়ীদের আমরা সুযোগ দিয়েছি, আমরা কমিটেড। তিনি বলেন, আমরা মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগ লাইনটা ব্যবহার করতে চাই। আমাদের দেশীয় প্রোডাক্ট যেগুলোকে বাড়তি সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে বাজেটে যা দেখেছেন সেটাই যে থাকবে তা নয়, আমরা কিছু ফ্লেক্সিবল থাকব। আমরা আরও পরিবর্তন করব, কখনও বাড়াব না। আমরা সবসময় প্রয়োজনে ট্যাক্স, ভ্যাট কমাব।

অর্থমন্ত্রী বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দেশ ভাল করছে। সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। ভারতসহ অন্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ঋণ দেয়ার সময় এসে গেছে। আমরা ঋণ নেব না, ঋণ দেব। তিনি বলেন, বাজেটে ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে, গত বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। দেশ স্বাভাবিক হলে আবারও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দেখাব। আমরা এর আগে যা বলেছি তাই করেছি এবারও করে দেখাব। তিনি আরও বলেন, ৭ দশমিক ২ অর্জন করব। সারাবিশ্ব যখন নিচের দিকে যাচ্ছে আমরা উপরের দিকে যাচ্ছি। আমরা যা বলি তাই করি। জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জন করে দেখাব। আমারা সারা পৃথিবীতে আলোচনার বিষয়। সময় যত যাচ্ছে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণ করা হবে ॥ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কারণ এটা নিয়ে বিতর্ক আছে, বিতর্ক হচ্ছে। তবে দেশের উন্নয়নে যা ভাল সেটিই করা হবে। কালো টাকার সুযোগ না রাখার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কালো টাকা নিয়ে আমি কখনও কথা বলিনি। আমাদের বাজেটে আমরা যেই প্রভিশনটি রেখেছিলাম তা হলো অপ্রদর্শিত আয়। কালো টাকা এবং অপ্রদর্শিত আয়ের মধ্যে ব্যাপক ডিফারেন্স। কালো টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়, আর অপ্রদর্শিত টাকাটা আমাদের সিস্টেমের কারণে সৃষ্টি হয়। কালো টাকা সাদা করার সুযোগে যারা নিয়মিত কর ও ট্যাক্স দেন তাহলে অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, যারা সীমিত সম্পদকে এক্সপ্লয়েট করে ম্যাক্সিমাম আয় করবে তাদেরকে বেশি করে সুযোগ করে দেয়া উচিত ছিল। সেটা না করে যারা বেশি আয় করেছিল তাদের আরও বেশি চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, এটা ঠিক না। সেজন্য আমরা এই বিষয়গুলো দেখে যতটা সম্ভব হয়েছে এই বাজেটে খোলামেলাভাবে সুন্দর ও সহজ করে আরও সর্বজনীন করার চেষ্টা করেছি।

গো খামার সুরক্ষা ও মাংস উৎপাদনে উৎসাহিত করা হয়েছে ॥ দেশীয় গো খামার সুরক্ষা এবং মাংস উৎপাদন বাড়াতে প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি নিরৎসাহিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এনবিআর চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই সময় তিনি বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে এবং উৎপাদন বাড়াতে মাংস আমদানিতে ট্যারিফ বসানো হয়েছে। এটা শুধু মাংস না, প্রতিটি কৃষি খাতকেই উৎসাহিত করতে, আমদানির পরিবর্তে উৎপাদনকে প্রাধান্য দিতেই সরকার এটা ভাবছে। এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের সম্ভাবনাময় খাত কৃষি। এখন সময় এসেছে আমাদের আমদানি কমানোর। এখন আমরা উৎপাদন করতে চাই। আমরা উৎপাদনে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে রফতানিতে যাচ্ছি। এজন্য রফতানিতে সুযোগ দেয়া হচ্ছে আর আমদানিতে ট্যারিফ বসানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত দুই-তিন বছর ধরেই পোল্ট্রি খাত অনেক লোকসানে আছে।

আবার একটি গাভি থেকে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আমরা চাই উৎপাদন বৃদ্ধি পাক এবং উদ্যোক্তারা আরও সুযোগ পান। এতে আমাদের উৎপাদন বাড়বে, আমদানি কমবে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশ। তিনি আরও বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে এ খাত পুরোপুরি যান্ত্রীকিকরণ করা হবে। শ্রমিকদের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কৃষিকাজে অনেকে লোকসান করছেন। কিন্তু এ খাতের চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা গেলে উৎপাদন বিনিয়োগ বাড়বে। তিনি বলেন, কৃষিতে সরকার যা দিচ্ছে তা ভর্তুকি নয় এক ধরনের বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগের কারণে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

ঘাটতি বাজেট খারাপ নয়- পরিকল্পনামন্ত্রী ॥ ঘাটতি বাজেট খারাপ নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মহামারীকালে নতুন অর্থবছরের জন্য রেকর্ড ঘাটতি রেখে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মোট বাজেটের মধ্যে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা তিনি রাজস্ব খাত থেকে যোগান দেয়ার পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, যা বাস্তবায়ন করা হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে উন্নয়নশীল দেশে ঘাটতি বাজেট হতেই পারে, এটি নতুন নয়, বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ঘাটতি বাজেট নতুন নয়, আমরা উন্নয়নশীল দেশ, ঘাটতি বাজেট হবে। তবে সংশয় আছে ঘাটতির পরিমাণ নিয়ে। তবে আমি কনফিডেন্ট, অর্থমন্ত্রী এটিকে মোকাবেলা করতে পারবেন। আমরা একটি অনুমানের জগতে আছি। সেটাকে নিয়ে তর্ক করে কোন লাভ হবে না।

তিনি আরও বলেন, অর্থের জোগান দেয়া অন্যতম একটি বিষয়। যারা বাইরে থেকে আমাদের ধার দেবে, তাদের বাজার বেশ ভাল। বিদেশ থেকে যারা ধার দেয় তাদের কথাবার্তা ও আচরণে সেটি আমরা দেখেছি। আমাদের রেকর্ডও ভাল। আমরা সে ধরনের গ্রাহক নই। কোন সময় আমরা এগুলো মিস করিনি। আমরা সবকিছু পজিটিভলি করেছি বলেই পজিটিভলি গ্রোথ ধরে রাখতে পেরেছি। মাথাপিছু আয় করোনার মধ্যেও আমাদের ২৩০০ ডলারের কাছাকাছি। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, এত কঠিন সময়ের মতো আগে কখনও হয়ত বাজেট দেয়া হয়নি। সময়োপযোগী বাজেট হয়েছে। নদীভাঙ্গন এলাকায় নজর দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ বড়দের দেয়া হচ্ছে এটা সঠিক নয়। ৪০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে বৃহৎ সেক্টরের জন্য। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা বিতরণ হয়ে গেছে।। এসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার ৭৩.৭ শতাংশ বিতরণ হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। কৃষিতে ৫ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। সেখানে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। ব্যাংকিং খাত ৮০ ভাগ সাপোর্ট দিচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সাধারণত ব্যবসাবান্ধব বাজেট বলে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। এ কারণে যে ব্যবসা আবার সক্রিয় হোক। বেসরকারী খাত থেকে ৮০ ভাগ এবং সরকারীভাবে মাত্র ২০ ভাগ বিনিয়োগ হয়।