লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টার ঘটনায় কড়া নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সরকারের প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানায়।
ঘটনাটি ঘটে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (SOAS) ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক সেমিনার শেষে। মাহফুজ আলমের জন্য নির্ধারিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে কয়েকজন বিক্ষোভকারী ডিম নিক্ষেপ করে এবং কিছু সময়ের জন্য গাড়ির গতিপথ আটকে রাখার চেষ্টা চালায়। তবে দ্রুত লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সৌভাগ্যবশত ওই সময় গাড়ির ভেতরে মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন না।
বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, ব্রিটিশ পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং উপদেষ্টার কর্মসূচি চলাকালে ‘পূর্ণ নিরাপত্তার’ আশ্বাস দিয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কেও একই ধরনের ঘটনার শিকার হন মাহফুজ আলম। সেখানকার বাংলাদেশ কনস্যুলেটে এক অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম ও বোতল নিক্ষেপ করে, এমনকি কাচের দরজা ভেঙে ফেলে। ওই ঘটনার পর মিশন কর্তৃপক্ষ স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম একে প্রকাশ্যে হয়রানির চেষ্টা বলে নিন্দা জানান। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও আয়োজক দেশগুলোর প্রশাসন সভ্যতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে, আর হামলাকারীরা বর্বরতা ও সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে।
সরকারের বিবৃতিতে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়, সহিংসতা কখনও প্রতিবাদ হতে পারে না, ভীতি প্রদর্শন বাকস্বাধীনতার সমার্থক নয়। গণতন্ত্রে বাকস্বাধীনতা, সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার আছে, তবে তা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কনস্যুলার গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু করা এবং বাধা দেয়া কেবল বেপরোয়া আচরণই নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন ভঙ্গের শামিল। সরকার লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে অপরাধীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।
সরকার আরও বলেছে, রাজনৈতিক দল বা সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠনের নেতাদের দ্ব্যর্থহীনভাবে এ ধরনের সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের নিন্দা জানানো উচিত। প্রবাসীদের উদ্দেশে বলা হয়, খোলামেলা আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য এগিয়ে আসুন, তবে শৃঙ্খলা ও মর্যাদা বজায় রেখে। আন্দোলনের শক্তি মাপা হয় না তার সহিংসতায়, বরং দেখা হয় কতটা দায়িত্বশীলভাবে তা পরিচালিত হয়েছে।
সরকার স্পষ্ট করেছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে। তবে সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে, কারণ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এ দুটোই অপরিহার্য।
প্রিন্ট