ঢাকা ০৪:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

আজ থেকে বন্ধ থাকবে সীমান্ত ॥ ভারতে ভয়াবহ রূপে করোনা

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৮:১৭ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১
  • / ২৫৫ ৫০০০.০ বার পাঠক

  • পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত
  • জরুরী পণ্য পরিবহন চলবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥

ভারতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। আজ সোমবার থেকে আগামী ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখা হবে। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে আকাশ পথে চলাচল বন্ধ রয়েছে। রবিবারের এ সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সঙ্গে স্থলপথে চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের ভারতের সীমান্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এটা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে জরুরী পণ্য পরিবহন সচল থাকবে।’

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পথে চলাচল বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বহু মানুষ প্রতিনিয়ত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করেন। হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত নিলে তারা বেকায়দায় পড়বেন বলে গত সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। রবিবার এ বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়মও মানা হচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমান্ত বন্ধ রাখা ছাড়া এখন পথ খোলা নেই।’

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৪ দিন কেউই দেশে ঢুকতে বা বের হতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘তবে সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। এছাড়া যেসব বাংলাদেশীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড টেস্ট ও কলকাতা মিশনের ছাড়পত্র সাপেক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওইসব বাংলাদেশীর দেশে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলক ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।’

রবিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের জরুরী বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের কোন মানুষ ভারতে যেতে পারছেন না, আবার কেউ আসতেও পারছেন না। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত কার্যত যেভাবে চালু থাকে সেভাবে চালু নেই। তবে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহন চালু আছে বলে ওই বৈঠকে মন্ত্রী জানান। এর আগে রবিবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোঃ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতে করোনার নতুন রূপ শনাক্ত হওয়ায় দেশটির সঙ্গে জরুরী পণ্য পরিবহন ছাড়া সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভারতে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে শনিবারই পরামর্শ দিয়েছিল দেশে করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কমিটি। কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নতুন ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে যারা আসছে যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পারে তাহলে অবশ্যই আমাদের দেশে এ ধরনের সংক্রমণ প্রবেশ করবে না।’

এদিকে আগামী দুই সপ্তাহ সীমান্ত বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়বেন ভারতে অবস্থান করা বাংলাদেশীরা। বর্তমানে দেশটিতে দু’হাজারের মতো বাংলাদেশী অবস্থান করছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, এরমধ্যে প্রায় ১৫শ’ রোগী এবং ৫শ’র বেশি ব্যবসায়ী আছেন। যারা মূলত ঈদের বাজারের কারণে ভারতে আছেন। এ বিষয়ে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের ডেপুটি হাই-কমিশনার তৌফিক হাসান বলেন, ‘হ্যাঁ মোটামুাটি দু’হাজারের মতো বাংলাদেশী ভারতে অবস্থান করছেন। তবে এখনই সঠিকভাবে বলতে পারব না। কতজন রোগী, কতজন আদার্স। কারণ রবিবার, ভারতে ছুটির দিন। তবে যারা ভারতে আছেন তারা দু’সপ্তাহের জন্য ফিরতে পারবেন না।’ ‘ব্যতিক্রম যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ। তবে এমন কোন ব্যক্তি থাকলে তাদের এখানে (দূতাবাসে) যোগাযোগ করতে হবে। এখান থেকে একটি প্রশংসাপত্র দেয়া হবে, তাই নিয়ে দেশে ফিরতে হবে। ’

জানা গেছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্য ও সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে বেশি। গত বছর দেশে যে ভ্যারিয়েন্ট এসেছিল তার চেয়ে এই দুই ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রামক। চলতি মাসের প্রথম থেকেই ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঢোকায় সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ভাঙতে থাকে রেকর্ডের পর রেকর্ড। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে এখন প্রতিদিন বিশ্বরেকর্ড গড়ছে দেশটি। এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার দাবি উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকে। ভারতে যে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছাড়াচ্ছে সেটি ৩শ’ গুণ শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ ভারতের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সফর বাতিল করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত কয়েকদিনে ভারতের শ্মশানগুলোতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও মিলছে না মরদেহ পোড়ানোর সিরিয়াল। কখনও জ্বালানো হচ্ছে গণচিতা। আর এসব ছবি এখন বিশ্বব্যাপী ভাইরাল। বাংলাদেশেও একই সময় থেকে সংক্রমণ-মৃত্যু বেড়েছে। এর মধ্যে যেন ভারতের ভ্যারিয়েন্ট নতুন করে দেশে প্রবেশ করে সংক্রমণ-মৃত্যু আরও না বাড়াতে পারে সেজন্য সতর্কতা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৭৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনে। এদিন আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ। গত ১০ দিনে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে দুই হাজারের বেশি।

বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভারত থেকে ফিরতে পারবেন বাংলাদেশীরা ॥ এদিকে সোমবার থেকে কার্যকর হচ্ছে ১৪ দিনের সীমান্ত বন্ধ। এই সময়ের মধ্যে সীমান্ত দিয়ে কেউ ভারতে যেতে বা আসতে পারবে না। তবে ভারতে অবস্থান করা বাংলাদেশী নাগরিক, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে, তারা বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারবেন।

করোনা মহামারীতে দীর্ঘদিন বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রয়েছে। তবে চিকিৎসা ও ব্যবসার জন্য ভারতে যেতে পারছেন বাংলাদেশী নাগরিকরা। সে কারণে ভারতে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশী নাগরিক অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস জানান, আগামী ১৪ দিন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বন্ধ থাকাকালে শুধু যেসব বাংলাদেশী নাগরিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে, তারা ভারতের কলকাতা মিশন থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ও নেগেটিভ টেস্ট রিপোর্ট দেখানো সাপেক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।

সূত্র জানায়, রবিবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার ভোর ৬টা থেকে ভারতে অবস্থানকারী কোন বাংলাদেশী দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। যদিও এ মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নাগরিকদের বেশিরভাগই চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। এর বাইরে কিছু ব্যবসায়ী রয়েছেন। তবে আগামী ১৪ দিন কেউই দেশে ফিরতে পারবেন না।

সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্লেন চলাচল আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। লকডাউন চলাকালে শুধু পাঁচটি দেশের সঙ্গে বিশেষ ফ্লাইট চালু রয়েছে। এই ৫টি দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও সিঙ্গাপুর। লকডাউনে এসব দেশ থেকে প্রবাসীদের ফিরতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে পুনরায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হতে পারে। সে সময় ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হবে কিনা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, লকডাউনে ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশী নাগরিকরা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসতে পারবেন। তবে ফেরার পর তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করবে। তবে রবিবার বাংলাদেশ সরকারের নেয়া ১৪ দিনের সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের পর এখন থেকে আর সেটা কার্যকর হবে না। তবে ১৪ দিন পর সীমান্ত খুলে দিলে পুনরায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে।

এদিকে লকডাউন চলাকালে প্রথম দফায় ১৪-২১ এপ্রিল ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২২-২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বর্ধিত করার পরিপ্রেক্ষিতে, জরুরী ভিসা ছাড়া বাংলাদেশের সব ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এই সময়ে ভারত যেতে বাংলাদেশের নাগরিকদের জরুরী প্রয়োজনে ভিসা দেয়ার কথা জানিয়েছিল ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আজ থেকে বন্ধ থাকবে সীমান্ত ॥ ভারতে ভয়াবহ রূপে করোনা

আপডেট টাইম : ০৬:২৮:১৭ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১
  • পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত
  • জরুরী পণ্য পরিবহন চলবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥

ভারতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। আজ সোমবার থেকে আগামী ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখা হবে। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে আকাশ পথে চলাচল বন্ধ রয়েছে। রবিবারের এ সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সঙ্গে স্থলপথে চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের ভারতের সীমান্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এটা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে জরুরী পণ্য পরিবহন সচল থাকবে।’

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পথে চলাচল বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বহু মানুষ প্রতিনিয়ত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করেন। হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত নিলে তারা বেকায়দায় পড়বেন বলে গত সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। রবিবার এ বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়মও মানা হচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমান্ত বন্ধ রাখা ছাড়া এখন পথ খোলা নেই।’

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৪ দিন কেউই দেশে ঢুকতে বা বের হতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘তবে সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। এছাড়া যেসব বাংলাদেশীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড টেস্ট ও কলকাতা মিশনের ছাড়পত্র সাপেক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওইসব বাংলাদেশীর দেশে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলক ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।’

রবিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের জরুরী বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের কোন মানুষ ভারতে যেতে পারছেন না, আবার কেউ আসতেও পারছেন না। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত কার্যত যেভাবে চালু থাকে সেভাবে চালু নেই। তবে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহন চালু আছে বলে ওই বৈঠকে মন্ত্রী জানান। এর আগে রবিবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোঃ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতে করোনার নতুন রূপ শনাক্ত হওয়ায় দেশটির সঙ্গে জরুরী পণ্য পরিবহন ছাড়া সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভারতে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে শনিবারই পরামর্শ দিয়েছিল দেশে করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কমিটি। কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নতুন ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে যারা আসছে যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পারে তাহলে অবশ্যই আমাদের দেশে এ ধরনের সংক্রমণ প্রবেশ করবে না।’

এদিকে আগামী দুই সপ্তাহ সীমান্ত বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়বেন ভারতে অবস্থান করা বাংলাদেশীরা। বর্তমানে দেশটিতে দু’হাজারের মতো বাংলাদেশী অবস্থান করছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, এরমধ্যে প্রায় ১৫শ’ রোগী এবং ৫শ’র বেশি ব্যবসায়ী আছেন। যারা মূলত ঈদের বাজারের কারণে ভারতে আছেন। এ বিষয়ে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের ডেপুটি হাই-কমিশনার তৌফিক হাসান বলেন, ‘হ্যাঁ মোটামুাটি দু’হাজারের মতো বাংলাদেশী ভারতে অবস্থান করছেন। তবে এখনই সঠিকভাবে বলতে পারব না। কতজন রোগী, কতজন আদার্স। কারণ রবিবার, ভারতে ছুটির দিন। তবে যারা ভারতে আছেন তারা দু’সপ্তাহের জন্য ফিরতে পারবেন না।’ ‘ব্যতিক্রম যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ। তবে এমন কোন ব্যক্তি থাকলে তাদের এখানে (দূতাবাসে) যোগাযোগ করতে হবে। এখান থেকে একটি প্রশংসাপত্র দেয়া হবে, তাই নিয়ে দেশে ফিরতে হবে। ’

জানা গেছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্য ও সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে বেশি। গত বছর দেশে যে ভ্যারিয়েন্ট এসেছিল তার চেয়ে এই দুই ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রামক। চলতি মাসের প্রথম থেকেই ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঢোকায় সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ভাঙতে থাকে রেকর্ডের পর রেকর্ড। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে এখন প্রতিদিন বিশ্বরেকর্ড গড়ছে দেশটি। এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার দাবি উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকে। ভারতে যে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছাড়াচ্ছে সেটি ৩শ’ গুণ শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ ভারতের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সফর বাতিল করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত কয়েকদিনে ভারতের শ্মশানগুলোতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও মিলছে না মরদেহ পোড়ানোর সিরিয়াল। কখনও জ্বালানো হচ্ছে গণচিতা। আর এসব ছবি এখন বিশ্বব্যাপী ভাইরাল। বাংলাদেশেও একই সময় থেকে সংক্রমণ-মৃত্যু বেড়েছে। এর মধ্যে যেন ভারতের ভ্যারিয়েন্ট নতুন করে দেশে প্রবেশ করে সংক্রমণ-মৃত্যু আরও না বাড়াতে পারে সেজন্য সতর্কতা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৭৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনে। এদিন আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ। গত ১০ দিনে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে দুই হাজারের বেশি।

বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভারত থেকে ফিরতে পারবেন বাংলাদেশীরা ॥ এদিকে সোমবার থেকে কার্যকর হচ্ছে ১৪ দিনের সীমান্ত বন্ধ। এই সময়ের মধ্যে সীমান্ত দিয়ে কেউ ভারতে যেতে বা আসতে পারবে না। তবে ভারতে অবস্থান করা বাংলাদেশী নাগরিক, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে, তারা বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারবেন।

করোনা মহামারীতে দীর্ঘদিন বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রয়েছে। তবে চিকিৎসা ও ব্যবসার জন্য ভারতে যেতে পারছেন বাংলাদেশী নাগরিকরা। সে কারণে ভারতে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশী নাগরিক অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস জানান, আগামী ১৪ দিন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বন্ধ থাকাকালে শুধু যেসব বাংলাদেশী নাগরিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে, তারা ভারতের কলকাতা মিশন থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ও নেগেটিভ টেস্ট রিপোর্ট দেখানো সাপেক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।

সূত্র জানায়, রবিবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার ভোর ৬টা থেকে ভারতে অবস্থানকারী কোন বাংলাদেশী দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। যদিও এ মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নাগরিকদের বেশিরভাগই চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। এর বাইরে কিছু ব্যবসায়ী রয়েছেন। তবে আগামী ১৪ দিন কেউই দেশে ফিরতে পারবেন না।

সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্লেন চলাচল আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। লকডাউন চলাকালে শুধু পাঁচটি দেশের সঙ্গে বিশেষ ফ্লাইট চালু রয়েছে। এই ৫টি দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও সিঙ্গাপুর। লকডাউনে এসব দেশ থেকে প্রবাসীদের ফিরতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে পুনরায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হতে পারে। সে সময় ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হবে কিনা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, লকডাউনে ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশী নাগরিকরা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসতে পারবেন। তবে ফেরার পর তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করবে। তবে রবিবার বাংলাদেশ সরকারের নেয়া ১৪ দিনের সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের পর এখন থেকে আর সেটা কার্যকর হবে না। তবে ১৪ দিন পর সীমান্ত খুলে দিলে পুনরায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে।

এদিকে লকডাউন চলাকালে প্রথম দফায় ১৪-২১ এপ্রিল ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২২-২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বর্ধিত করার পরিপ্রেক্ষিতে, জরুরী ভিসা ছাড়া বাংলাদেশের সব ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এই সময়ে ভারত যেতে বাংলাদেশের নাগরিকদের জরুরী প্রয়োজনে ভিসা দেয়ার কথা জানিয়েছিল ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।