বৃষ্টি নামলেই বেহাল ঢাকার সড়কগুলো, নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

- আপডেট টাইম : ০৭:২৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
- / ৪ ১৫০.০০০ বার পাঠক
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে রাজধানীর সিংহভাগ এলাকার সড়ক ও ফুটপাত তলিয়ে গেছে। এতে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করেন নগরবাসী। কিন্তু নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। সমস্যার সমাধানে কার্যকর অর্থে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ বিগত ৫ অর্থবছরে এ খাতে খরচ করেছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। খাল ও নর্দমার উন্নয়নকাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারের এ মোটা অঙ্কের অর্থ গচ্চা গেছে-এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, বেদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া খাল পুনরুদ্ধার করতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি নগরীর নর্দমাগুলোও সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনের উপযোগী করতে হবে। আর নর্দমা ও খালগুলোর সঙ্গে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর সংযোগ সৃষ্টি করা এ মুহূর্তে জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় বর্ষাকালে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার পুনরাবৃত্তি হবেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার খাল, নর্দমা এবং জলাধারগুলো নানাভাবে দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে বক্সকালভার্ট (খাল ভরাট করে সড়ক ও এর নিচে নর্দমা নির্মাণ) হয়েছে। আবারও কোথাও গড়ে উঠেছে অট্টালিকা। শত শত পুকুরও হারিয়ে গেছে। বিগত সরকারগুলোর সময় তদারকিতে থাকা সংস্থাগুলো এসব রক্ষায় আন্তরিক ছিল না। এখনো যতটুকু জলাশয়, খাল, ডোবা ও নর্দমা রয়েছে, সেগুলো রক্ষায়ও তাদের কার্যত কোনো আন্তরিকতা নেই। যদিও বিভিন্ন প্রকল্প বা কাজের নামে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসন এবং খাল পরিষ্কারের নামে খরচ করেছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর সুফল কি মিলেছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই তা বুঝতে পারেন নগরবাসী। তারা এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, দুয়ারে কড়া নাড়ছে বর্ষা মৌসুম। ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতেই রাজধানীতে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতেই আতঙ্কিত নগরবাসী। সামনের দিনগুলোয় আরও ভোগান্তি হবে, তা সহজে বুঝে নেওয়া যায়। এ অবস্থায়ও ঢাকাবাসীকে কোনো সুখবর দিতে পারছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। বরং তারা আশঙ্কার কথাই বলছেন। কেননা গত বছরে ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণের পর থেকে কার্যত স্থবিরতা বিরাজ করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে। এ কারণে খাল পরিষ্কার, নর্দমা পরিষ্কার এবং খাল ও নর্দমা উন্নয়নে তেমন কোনো কাজ হয়নি। যে কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা বেশি হওয়ার শঙ্কা খোদ দায়িত্বপ্রাপ্তদেরই।
দুই সিটির সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। এতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক, ফুটপাত এবং অলিগলি তলিয়ে যায়। হঠাৎ এমন বৃষ্টিতে মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হন নগরবাসী। সর্বশেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার সাগরের নিুচাপের কারণে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানীর সিংহভাগ এলাকা। অথচ বর্ষা মৌসুম আসন্ন। তখন কী অবস্থা দাঁড়াবে, তা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে বলে জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল, নর্দমা বড় উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। তবে পাশাপাশি রুটিন কিছু কাজ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম-খাল-নর্দমাগুলো পরিষ্কার রাখা এবং পানি নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক সচল রাখা। কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে এর সমাধান করা; এসব কোনো কাজ হচ্ছে না।
তিনি জানান, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশন খাল ও নর্দমার দায়িত্ব বুঝে নিলেও নিজেদের স্বতন্ত্র বিভাগ বা সার্কেল গড়ে তুলতে পারেনি। প্রস্তাবিত সার্কেল করে কাজ করলেও সেখানে ড্রেনেজ বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো লোক নেই। দুই নগর সংস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ বিষয়ে দক্ষ জনবল গড়ে তুলে তাদের দিয়ে সেসব কাজ পরিচালনা করতে হবে। এসবের পাশাপাশি খাল-নর্দমার টেকসই উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও জানান, রাজধানীতে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই সড়ক, ফুটপাত তলিয়ে যায়। কেননা এর চেয়ে বেশি ধারণক্ষমতা নেই ঢাকার। সেটুকু সচল রাখতে পারছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। আগে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা ছিলেন। এখন কেউ নেই। এ অবস্থায় এবারের বর্ষায় কী অবস্থা দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। এসব ভোগান্তি থেকে বাঁচতে হলে নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। পাশাপাশি কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ যুগান্তরকে বলেন, খাল-নর্দমা পরিষ্কারকাজ চলছে। বর্তমান প্রশাসক দায়িত্ব গ্রহণের পর এ কাজে বেশ গতি পেয়েছে। আমরা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। তিনি জানান, ভারি বর্ষণ হলে কিছু স্পটে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। সেসব স্পটের জলাবদ্ধতা নিরসনেও কাজ চলমান রয়েছে। আর বর্ষার মৌসুমজুড়েও বিশেষ তদারকি করা হবে। বৃহস্পতি ও শুক্রবারের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাদ্ধতা নিরসনেও কার্যকর তৎপরতা চালানো হয়েছে। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ কম হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সফি উল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, বর্ষার জলাবদ্ধতা নিরসন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অন্যবারের মতো এবারও সর্বশক্তি দিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে পুরো বর্ষা মৌসুমে বিশেষ তদারকি অব্যাহত রাখা হবে। তিনি জানান, সরকার ইতোমধ্যে একটি খাল উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর বাস্তবায়ন কাজ প্রক্রিয়াধীন। আর জলাবদ্ধতার হটস্পটের সমস্যায় খাল-নর্দমা পরিষ্কার এবং অন্যান্য উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা সহনীয় মাত্রায় রাখতে সংস্থার প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বৃহস্পতি ও শুক্রবারের বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীর অনেক দুর্ভোগ হয়েছে। এ দুর্ভোগ নিরসনে সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ একযোগে কাজ করেছে।