কাউন্দিয়া পুলিশ ফাঁড়ি’র ইনচার্জের ছত্রছায়ায় চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা (পর্ব- ১)

- আপডেট টাইম : ০৭:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
- / ০ ৫০০০.০ বার পাঠক
রাজধানীর উপকন্ঠ সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন দিন দিন পরিণত হচ্ছে মাদকের অভয়ারণ্য। আইনশৃংখলা বাহিনী মাদকের ব্যাপারে তৎপর থাকলেও কতিপয় পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতার কারণে মূল গডফাদাররা রয়ে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে মাদকের করাল গ্রাসে আজ ধ্বংসের পথে যুবসমাজ। স্কুল কলেজগামী ছাত্ররা আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকের এ মরণ নেশায়। বিপথগামী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে অনেক সময় তারা চুরি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা।
রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী ও আমিনবাজার লাগোয়া কাউন্দিয়া ইউনিয়নে গ্রামের সংখ্যা ২২টি। তুরাগ নদীবেষ্ঠিত কাউন্দিয়ার এসব গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। এ কারণে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীরা এ এলাকাকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
মাদকের এ করাল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষায় এলাকাবাসী প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট জোর দাবী জানালেও মাদক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং ৫ আগস্টের পর থেকে মাদক কারবারিরা নির্বিঘ্নে তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
অনেকেই বলছে, প্রকাশ্যে কতিপয় পুলিশের ছত্র-ছায়ায় বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা, হিরোইন, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। মাদক ব্যবসায়ীদের দাবী থানা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নেন। আর এ সকল মাদক ব্যবসা এখন সাভারে ওপেন সিক্রেট। আবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে পুলিশ ২-১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করলেও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ারও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
রবিবার (২০ এপ্রিল) কাউন্দিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ কাজী আব্দুর রহিম গোপন সংবাদে জানতে পারেন কাউন্দিয়ার বেদেপাড়া মসজিদ সংলগ্ন স্থানে সাইকেল মেকানিক মোশারফ মাদক বিক্রির জন্য অবস্থান করছে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই মাদক ব্যবসায়ী মোশারফ মাদক বিক্রি করে সটকে পড়ে। পরে মোশাররফের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পুলিশ তাকে আটক করে। আটকের পর মোশাররফ মাদক বিক্রির কথা স্বীকার করে বলে, ২০০ পিস ইয়াবা সে বিক্রি করেছে ২ জনের কাছে। তার কাছে আর কোনো মাদক নেই।
এমন সময় পুলিশের উপস্থিতিতে মাদকের ডিলার টিটু @ খাটা টিটু মাদক বিক্রির টাকা চেয়ে মোশাররফকে কল করে। কলটি রিসিভ করেন ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম। তার কন্ঠ শুনে লাইন কেটে দেয় টিটু। পরে টিটুকে খুঁজতে তার বাসায় গিয়ে দেখেন বাসা তালা লাগানো। মাদক কেনা-বেচার সত্যতা পেয়েও টিটুকে না পেয়ে মোশাররফের কাছে মাদক না পাওয়ায় তার কাছে থাকা মাদক বিক্রির ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যান। ফাঁড়ির ইনচার্জের এরকম কর্মকান্ডে এলাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নে চলছে মাদক কেনা-বেচা।
এদিকে টিটু পুলিশের ভয়ে দু’দিন এলাকার বাহিরে থাকার কথা জানা যায়। পরদিন ফাঁড়ির ইনচার্জ কাজী আব্দুর রহিমকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আবার এলাকায় নির্বিঘ্নে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে একাধিক মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডেইলি, সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে টাকা নিয়ে থাকেন আব্দুর রহিম। এ কারণে মাদক কারবারিরা নির্বিঘ্নে তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাভারের কাউন্দিয়ায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই একাধিক মাদকের স্পট রয়েছে। এর মধ্যে কাউন্দিয়া বাজার, মধ্যপাড়া, পশ্চিম পাড়া, বুড়িরটেক, বেলতলা, পাঁচকানী, মানকেরটেক, সিংগাসাইর, টিকালেরটেক, ঘাসিরদাহ, বেদেপাড়া, চেয়ারম্যান প্লট, ডিপজল প্লট, বসুন্ধরা প্লট, ৩০ ফিট, লেবু বাগানসহ বেশ কয়েকটি মাদকের স্পর্ট উল্লেখযোগ্য। এসব মাদকের স্পট থেকে নিজস্ব লোক দিয়ে মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলেএ অভিযোগ রয়েছে ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসী জানায়, কাউন্দিয়া ইউনিয়ন এখন অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠেছে অনেকেই মনে করেন। তারা জনায়, ছিনতাই, চুরি, দেহব্যবসা, ভূমি দখলসহ নানারকম অপরাধের ঘটনা এ এলাকায় এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতার কারণে ভুক্তভোগীদের আরও ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। এদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে আইনশৃংখলা বাহিনী এ সকল স্পটে হানা দেয়ার আগেই মাদক কারবারিরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়ে।
জানা যায়, এ ইউনিয়নের একসময়ের মাদকের (ইয়াবা) গডফাদার আনিস @ পাসপোর্ট আনিসের মাদক ব্যবসা এখন নিয়ন্ত্রণ করছে তার ছোট ভাই টিটু @ খাটা টিটু। এই টিটুর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টি মাকের স্পট৷ যেখানে ইয়াবার যোগান সে নিজেই দিয়ে থাকে। এছাড়া, মিরপুর, গাবতলি, আমিনবাজারসহ একাধিক মাদকের স্পটে টিটু মাদক সরবরাহ করে থাকে। একাধিকবার ডিবি, র্যাব ও পুলিশ মাদকসহ টিটুকে গ্রেফতার করলেও টাকার বিনিময়ে তা রফা করে নেন টিটুর ভাই আনিস।
কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত করতে ইতোপূর্বে একাধিকবার মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে পুলিশকে দেয়া হলেও কোনো প্রতিকার তো পাওয়া যায়নি বরং আরও বেড়েছে।
কাউন্দিয়ায় মাদকের ব্যবসা প্রসঙ্গে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, কাউন্দিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কোনো সদস্যের এ অভিযোগের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে কাউন্দিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক কাজী আব্দুর রহিমক মোশাররফ নামের এক যুবককে আটক করার কথা স্বীকার করেন এবং মাদক সম্রাট টিটুর বাসায় গিয়ে তালাবদ্ধ পান বলে জানান। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার পর গা ঢাকা দিলেও টিটু কাউন্দিয়া এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে এবং দেদারসে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।