একদিন আব্দুর রহমান বা খাওলা ইন্তেকাল করলেন

- আপডেট টাইম : ০৩:৫২:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
- / ৫৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
স্বজনরা কাঁদছেন কেউ বা দিচ্ছেন সান্ত্বনা। অন্যদিকে চলছে দাফন কাফনের প্রস্তুতি। যখন দাফন কাফনের প্রস্তুতি চলছে তখন সেই প্রিয় মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে সবার অলক্ষ্যে। যখন কাফন পরানো হচ্ছিল, সে টুপ করে কাফনের নীচে ঢুকে যায়, বুকের সাথে লেপ্টে থাকে ব্যাথা না দিয়ে।
আঁকাবাঁকা পথ অতিক্রম করে সবাই খাটিয়া নিয়ে এগিয়ে চলল, উদ্দেশ্য পরের স্টেশন। পায়ের নিচে দলিত শুকনো পাতার শব্দ স্বজনদের কষ্টে ঢেউ তুললো।
নামানো হচ্ছে কবরে। পাশ থেকে কেউ কেউ বলে উঠলো আস্তে, আস্তে নামাও,খুব সাবধানে। যতটা সম্ভব সাবধানে নামানো হলো। কবরের মাটি সমান করে দেয়া হলো। স্বজনদের মধ্যে নাছোড় কেউ কেউ আসতে চাচ্ছিল না। কিন্তু তারপরও একটা সময় তাকেও চলে আসতে হল…কি করতে পারতো আর! মৃত কারো সাথে কি থাকা যায়?
কিন্তু,সে? যে লেপ্টে ছিল বুকের সাথে! সে কিন্তু থেকেই গেল। একটা সময় মুনকার ও নকীর আসেন, তাকে উঠিয়ে বসান। এই সময় সেই প্রিয় মাঝখানে অবস্থান নেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফেরেশতাদ্বয় তাঁকে বললেন তুমি একটু সর। সেই প্রিয় বলল, কাবা শরীফের প্রভুর কসম! সে আমার সাথী ও বন্ধু, তাকে অসহায় অবস্থায় কিছুতেই ছেড়ে যাবো না। তোমাদের প্রতি যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা তোমরা পালন করো। আমাকে আমার জায়গায় থাকতে দাও। তাকে জান্নাতে প্রবেশ না করানো পর্যন্ত তাকে ছেড়ে কোথাও আমি যাব না।
আব্দুর রহমান বা খাওলা প্রিয়’র দিকে তাকান। প্রিয় বলে উঠলো, আমি তো সে….
শুনবেন, সে কে?
জানতে চান, সেই প্রিয়’র প্রিয় কিভাবে হওয়া যায়?
তাহলে আসুন, জেনে নেই…
▪️▪️▪️হযরত মুয়ায বিন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রসূল (সা) বলেছেন: তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি রাতের বেলায় নামায পড়ে তাহলে সে যেন সশব্দে পাঠ করে। কেননা ফেরেশতারা তার সাথে সাথে নামায পড়ে এবং তার কিরাত শোনে। যে সমস্ত ঈমানদার জ্বিন শূন্যে বাস করে এবং তার যে সব প্রতিবেশী তার বাসস্থানে বাস করে, তারাও তার নামাযের সাথে নামায পড়ে এবং তার কিরাত শোনে। সে তার কিরাত দ্বারা নিজের বাড়ী থেকে এবং পার্শ্ববর্তী বাড়ীগুলো থেকে পাপিষ্ঠ জ্বিন ও খোদাদ্রোহী শয়তানদেরকে বিতাড়িত করে। যে বাড়ীতে কোরআন পড়া হয় সেই বাড়ীর ওপর একটা আলোকময় তাঁবু খাটানো হয়। যার আলোতে আকাশবাসী পথ খুঁজে পায়, যেমন উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো দেখে গভীর সমুদ্রে ও মরুভূমিতে পথ খুঁজে পাওয়া যায়।
👉🏿কোরআনের সাথী যখন মারা যায় তখন সেই তাঁবু তুলে নেয়া হয়। তখন ফেরেশতারা আকাশ থেকে তাকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু সেই আলো আর দেখতে পান না। তখন ফেরেশতারা এক আকাশ থেকে আর এক আকাশে গিয়ে তার সাক্ষাত পান। তখন তার রূহের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। অতঃপর ফেরেশতারা তাঁর সাথে অবস্থানকারী রক্ষীদেরকে (ফেরেশতা) অভ্যর্থনা জানান। অতঃপর ফেরেশতারা কিয়ামাত পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। কোন ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব শিখলে এবং কোন রাতের একটা ঘণ্টাও তা দিয়ে নামায পড়লে সেই রাত পরবর্তী রাতকে উপদেশ দেয়, সে যেন ঐ ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয় এবং তার জন্য রাত যেন হালকা হয়।(অর্থাৎ ঘুম গভীর না হয়)
👉🏿অতঃপর সেই ব্যক্তি যখন মারা যায় এবং তার আত্মীয়-স্বজন তার দাফন-কাফনের প্রস্তুতি নিতে থাকে, তখন কোরআন অতীব সুন্দর রূপ ধারণ করে এসে তার মাথার কাছে দাঁড়ায়। যখন তাকে কাফন পরানো হয়, তখন কোরআন তার বুকের ওপর কাফনের নীচে থাকে। অতঃপর তাকে যখন কবরে রাখা হয়, কবরের মাটি সমান করা হয় এবং তাঁর সাথীরা তাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন মুনকার ও নকীর (দুইজন ফেরেশতা) তার কাছে আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। এই সময় কোরআন এসে তার মাঝে ও ফেরেশতাদ্বয়ের মাঝে অবস্থান নেয়। ফেরেশতাদ্বয় কোরআনকে বলেনঃ তুমি একটু সর, আমরা ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। কোরআন বলবে না, কাবা শরীফের প্রভুর কসম, সে আমার সাথী ও বন্ধু। তাকে কোন অবস্থাতেই অসহায় ছেড়ে দেব না। তোমাদেরকে যদি কোন কিছুর আদেশ দেয়া হয়ে থাকে, তবে তোমরা সে আদেশ পালন কর। আমাকে আমার জায়গায় থাকতে দাও। কেননা আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশ না করানো পর্যন্ত তাকে ছেড়ে কোথাও যাব না।
👉🏿অতঃপর কোরআন তার সাথীর দিকে তাকাবে এবং বলবে: আমি সেই কোরআন, যাকে তুমি গোপনে ও প্রকাশ্যে পড়তে এবং ভালোবাসতে। আমি তোমার বন্ধু। আর আমি যাকে ভালোবাসি, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। মুনকার ও নকীরের প্রশ্নের পর তোমার আর কোন দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থাকবে না। অতঃপর মুনকার ও নকীর তাকে প্রশ্ন করবেন এবং তারপর তারা ওপরে চলে যাবেন। এরপর সে ও কোরআন অবশিষ্ট থাকবে। সে বলবে: অমি তোমাকে নরম বিছানা বিছিয়ে দেব এবং তোমাকে চমৎকার ও মনোরম চাদর দেব। কেননা তুমি রাত জেগেছ এবং দিনেও কঠিন পরিশ্রম করেছ। এরপর চোখের পলকের চেয়েও দ্রুতগতিতে কোরআন আকাশে চড়বে এবং আল্লাহর কাছে নরম বিছানা ও সুন্দর চাদর চাইবে। আল্লাহ তায়ালা তৎক্ষণাৎ দিয়ে দেবেন। অতঃপর কোরআন ফিরে আসবে। তার সাথে ৬ষ্ঠ আকাশের হাজার হাজার ফেরেশতা অবতীর্ণ হবে। ফিরে আসার পর কোরআন তাকে অভিবাদন জানাবে এবং বলবে: তুমি কি দুশ্চিন্তায় পড়েছিলে? আমরা তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালার সাথে কথা বলে তোমার জন্য এই বিছানা ও চাদর আনা ছাড়া আর কোন কাজ করিনি। এখন এগুলো নিয়ে এসেছি, কাজেই তুমি ওঠ। ফেরেশতারা তোমার বিছানা বিছিয়ে দেবে।
👉🏿ফেরেশতারা তাকে সতর্কতার সাথে ও হালকাভাবে উঠাবে। তারপর তার কবরকে চারশো বছরের পথের সমান প্রশস্ত করা হবে। তারপর তাকে সবুজ রেশমের তৈরী ও সুগন্ধীযুক্ত বিছানা বিছিয়ে দেয়া হবে। তার পায়ের কাছে ও মাথার কাছে পাতলা ও মোটা রেশমের বালিশ থাকবে। মাথা ও পায়ের কাছে আরো থাকবে জান্নাতের আলোয় জ্বালানো দুটো প্রদ্বাপ, যা কেয়ামত পর্যন্ত আলোকিত থাকবে। এরপর ফেরেশতারা তাকে ডান কাতে কেবলামুখী করে শোয়াবে। অতঃপর বেহেশতের ইয়াসমীন ফুল তার কাছে আনা হবে এবং ফেরেশতারা তার কাছ থেকে বিদায় হয়ে ওপরে চলে যাবে। এ সময় কেবল সে ও কোরআন থাকবে। কোরআন ইয়াসমীন ফুলটাকে কবরের অধিবাসীর নাকের কাছে ধরবে এবং সে কেয়ামত পর্যন্ত তার ঘ্রাণ নিতে থাকবে। কোরআন তার সাথীর আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফিরে যাবে এবং প্রত্যেক দিনে ও রাতে তাকে সকল প্রয়োজনীয় খবর জানাবে। স্নেহময় পিতা যেমন তার পিতার সাথে কল্যাণমূলক আচরণ করে, তেমনি কোরআনও তার সাথে কল্যাণমূলক আচরণ করবে। তার কোন ছেলে যদি কোরআন শেখে তবে তাকে সেই সুসংবাদ জানাবে। আর তার উত্তরাধিকারী যদি খারাপ উত্তরাধিকারী হয়, তবে তাদের সকলের কল্যাণের জন্য দোয়া করবে। (বাযযার)
কি, চিনতে পেরেছেন সেই প্রিয় কে? কিভাবে তার প্রিয় হওয়া যায়? আসুন, হায়াত থাকতে তাকে সাথী বানাই। আজ তাকে অবহেলা করলে সেই ভীষণ একাকিত্বের সময়ে সেও অবহেলা করবে কিন্তু! তাই,একটুও দেরি না করি। কোমর বেঁধে লাগি, তাকে জানি ও মানার চেষ্টা করি। গেলাফে নয়, জীবনকর্মে জড়িয়ে নিব ইনশাআল্লাহ। রব্ব আমাদেরকে তাওফীক দিন…
#মাসুমা_তাসনিম
#গেলাফে_নয়_জীবনকর্মে_জড়িয়ে_নেই
০৩/০৩/২০২৫