বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী যে রক্ষকের বদলে ভক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন, এমন অভিযোগ বারবার উঠেছে

- আপডেট টাইম : ০৭:২৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
বিগত ফ্যাসিস্ট্যান্ট সরকারের সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী যে রক্ষকের বদলে ভক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন, এমন অভিযোগ বারবার উঠেছে, গণমাধ্যমেও তা প্রকাশ পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুদককে কার্যকর করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পরিতাপের বিষয়, তা আদৌ কার্যকর হয়েছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বুধবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-সংস্থাটি এখনো পুরোনো পথেই হাঁটছে। একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, এখনো সংস্থাটিতে একের পর এক প্রেষণে নিয়োগ পাচ্ছেন বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তারা। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, আলোচিত এক দুর্নীতির মামলার আসামি উপসচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাও পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা থেকে প্রেষণে আসা অন্তত অর্ধশত কর্মকর্তা এখনো দুদকে বহাল তবিয়তেই আছেন।
দুদকের বিধিতে বলা আছে, প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৩ বছরের অধিক হলে নিজ সংস্থায় ফেরত যেতে বাধ্য। অথচ অনেক কর্মকর্তা প্রেষণে যোগদানের পর পদোন্নতি পান। আবার বছরের পর বছর সংস্থাটির শীর্ষ পদগুলোয় বহাল থাকেন, যা দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি নং ০৮(২)(ক)-এর সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আগে এ ধরনের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে স্থগিত রাখা উচিত। তা না হলে ধরে নিতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে এমন কোনো মহল আছে, যারা চাচ্ছে সংস্কারের আগে দুদককে আরও অকার্যকর করতে, যাতে পরবর্তীকালে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা না যায়।
Advertisement
আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকার দুদককে স্বাধীন ও কার্যকর সংস্থা হিসাবে গড়ে তুলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলেছিল। তাহলে কেন আগের মতোই দুদকের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদগুলোয় দীর্ঘদিন থাকা কর্মকর্তারা রয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাব প্রয়োজন। একইসঙ্গে প্রেষণে নিয়োগ বন্ধের পাশাপাশি যারা এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দুদকে কর্মরত আছেন, তাদের নিজ কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোও প্রয়োজন। যে সংস্থাটি দুর্নীতি দমনে নিয়োজিত, সেই সংস্থাটির বিরুদ্ধে এ ধরনের বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উদ্বেগজনক। যেহেতু, জুডিশিয়ারি, পুলিশ ও দুদকের কাজ একই ধরনের, তাই অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলার মতো কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গতিশীল করতে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের সংগ্রাম পদে পদে প্রশ্নবিদ্ধ হবে, কাঙ্ক্ষিত সুফলও মিলবে না। চলমান থাকবে