ঢাকা ১০:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
বিএনপি’র লজ্জিত হওয়া উচিত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হওয়ার আশা প্রধান উপদেষ্টার ফের ইসরাইলের বেন গুরিয়ন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে হুথিদের হামলা চেম্বার কোর্ট থেকে ‘নো অর্ডার’ এলে কী বোঝাবে, সুপ্রিমকোর্টের ব্যাখ্যা রমজানে দ্রব্যমূল্য কমেছে, এ প্রচেষ্টা চালু থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শপথ নিলেন দুই বিচারপতি হান্নান মাসউদের ওপর হামলা, যে বার্তা দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ নতুন দেশ গড়ার সুযোগ এসেছে, এটা হারাতে চাই না: ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাজারী গলী মহল্লা কমিটির উদ্যোগে ইফতার পার্টি সম্পন্ন নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

বুড়ির বাঁধে মাছ শিকার উৎসবে মেতেছে ঠাকুরগাঁওবাসী

জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
  • আপডেট টাইম : ১২:২৬:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৯২ ৫০০০.০ বার পাঠক

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং এ দুই ইউনিয়নের মাঝে অবস্থিত শুক নদী। আর এ শুক নদীর বুড়ির বাঁধে মাছ শিকার উৎসবে মেতেছে ঠাকুরগাঁওবাসী। শীতের শুরুতে বুড়ির বাঁধের মাছ শিকার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সবার জন্য । এভাবেই বছরের পর বছর ধরে শীত শুরুর এ সময়টায় চলে আসছে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরার মিলনমেলা।

গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে বুড়ির বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়। পরে পানি কমলে মঙ্গলবার ভোর থেকে মাছ ধরতে নামে আশে পাশের কয়েক গ্রামের জেলেরা সহ জেলার বিভিন্ন প্রাান্ত থেকে আসা হাজারো মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, মাছ ধরার জন্য গ্রাম ও শহরের হাজারো মানুষ আকচা ও চিলারং এলাকার এ বুড়ির বাধে অবস্থান নিয়েছে মাছ শিকারের জন্য। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বৃদ্ধরাও রয়েছেন এ দলে। সবাই জাল, পলো, খোচা ও লাফিজাল নিয়ে নেমে পড়েছেন। এছাড়া যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও হাত দিয়ে মাছ ধরতে নেমেছেন কাঁদা পানিতেই। এছাড়াও মাছ শিকারিরা ফিকা জাল, লাফি জাল, কারেন্ট জাল, রিং জাল, চটকা জালসহ বিভিন্ন মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে বুড়ির বাঁধে আসেন মাছ শিকার করার জন্য।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আচকা ও চিলারং উইনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া শুক নদীতে একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে যার নাম বুড়ির বাঁধ রাখা হয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এখানে পানি আটকে রাখা হয় ওই এলাকার উঁচু জমি চাষাবাদ করার জন্য। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। আর শীতের শুরুতেই বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর চলে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব।

জেলা শহরের পারভেজ হাসান বলেন, প্রতিবারে আমি এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেক মানুষ আসেন মাছ ধরতে। সবাই মিলে একসাথে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা আজকের দিনে একটা মেলায় পরিণত হয়। গত দুই বছর থেকে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে অনেক মাছ পাওয়া গেলেও দেশীয় মাছের হাহাকার থেকেই যায়। তবে এবার দেশী মাছের দেখা গেলেও ব্যবসায়ীদের পাতা রিং জালের কারনে আমরা সাধারণ মানুষ যারা মাছ ধরতে আসছি , তারা মাছ মোটামোটি কম পাচ্ছি।

মাছ ধরতে আসা জেলেরা বলেন, জলকপাট আগামী কয়েকদিন খোলা থাকবে। মাছ ধরাও চলবে এই কয়েকদিন। তবে প্রথম দিনেই মাছ ধরার জন্য মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। আর গত ২/৩ বছর থেকে মাছ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। রিং জাল, কারেন্ট জালের কারণে এখন দেশীয় মাছ নেই বললেই চলে।

মাছ ধরতে আসা স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, আমি ভোরে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবারে শখের বসে এখানে মাছ ধরতে আসি। ভোর থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুটি, টেংরাসহ দুই কেজি মাছ পেয়েছি। এটাই বাসায় নিয়ে আনন্দ করে খাবো।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ির বাধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি মৎস অভয়াশ্রম রয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে আটকে রাখা পানিতে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন মাছের পোনা অবমুক্ত করে। আর শীতের শুরুতেই বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বুড়ির বাঁধে মাছ শিকার উৎসবে মেতেছে ঠাকুরগাঁওবাসী

আপডেট টাইম : ১২:২৬:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং এ দুই ইউনিয়নের মাঝে অবস্থিত শুক নদী। আর এ শুক নদীর বুড়ির বাঁধে মাছ শিকার উৎসবে মেতেছে ঠাকুরগাঁওবাসী। শীতের শুরুতে বুড়ির বাঁধের মাছ শিকার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সবার জন্য । এভাবেই বছরের পর বছর ধরে শীত শুরুর এ সময়টায় চলে আসছে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরার মিলনমেলা।

গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে বুড়ির বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়। পরে পানি কমলে মঙ্গলবার ভোর থেকে মাছ ধরতে নামে আশে পাশের কয়েক গ্রামের জেলেরা সহ জেলার বিভিন্ন প্রাান্ত থেকে আসা হাজারো মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, মাছ ধরার জন্য গ্রাম ও শহরের হাজারো মানুষ আকচা ও চিলারং এলাকার এ বুড়ির বাধে অবস্থান নিয়েছে মাছ শিকারের জন্য। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বৃদ্ধরাও রয়েছেন এ দলে। সবাই জাল, পলো, খোচা ও লাফিজাল নিয়ে নেমে পড়েছেন। এছাড়া যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও হাত দিয়ে মাছ ধরতে নেমেছেন কাঁদা পানিতেই। এছাড়াও মাছ শিকারিরা ফিকা জাল, লাফি জাল, কারেন্ট জাল, রিং জাল, চটকা জালসহ বিভিন্ন মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে বুড়ির বাঁধে আসেন মাছ শিকার করার জন্য।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আচকা ও চিলারং উইনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া শুক নদীতে একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে যার নাম বুড়ির বাঁধ রাখা হয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এখানে পানি আটকে রাখা হয় ওই এলাকার উঁচু জমি চাষাবাদ করার জন্য। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। আর শীতের শুরুতেই বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর চলে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব।

জেলা শহরের পারভেজ হাসান বলেন, প্রতিবারে আমি এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেক মানুষ আসেন মাছ ধরতে। সবাই মিলে একসাথে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা আজকের দিনে একটা মেলায় পরিণত হয়। গত দুই বছর থেকে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে অনেক মাছ পাওয়া গেলেও দেশীয় মাছের হাহাকার থেকেই যায়। তবে এবার দেশী মাছের দেখা গেলেও ব্যবসায়ীদের পাতা রিং জালের কারনে আমরা সাধারণ মানুষ যারা মাছ ধরতে আসছি , তারা মাছ মোটামোটি কম পাচ্ছি।

মাছ ধরতে আসা জেলেরা বলেন, জলকপাট আগামী কয়েকদিন খোলা থাকবে। মাছ ধরাও চলবে এই কয়েকদিন। তবে প্রথম দিনেই মাছ ধরার জন্য মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। আর গত ২/৩ বছর থেকে মাছ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। রিং জাল, কারেন্ট জালের কারণে এখন দেশীয় মাছ নেই বললেই চলে।

মাছ ধরতে আসা স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, আমি ভোরে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবারে শখের বসে এখানে মাছ ধরতে আসি। ভোর থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুটি, টেংরাসহ দুই কেজি মাছ পেয়েছি। এটাই বাসায় নিয়ে আনন্দ করে খাবো।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ির বাধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি মৎস অভয়াশ্রম রয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে আটকে রাখা পানিতে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন মাছের পোনা অবমুক্ত করে। আর শীতের শুরুতেই বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।