১৮ বছর ধরে নোবেল বিজয়ীদের প্রথম অনুভূতি জানতে ফোন দিচ্ছেন অ্যাডাম স্মিথ
- আপডেট টাইম : ০৮:২৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩১ ৫০০০.০ বার পাঠক
অ্যাডাম স্মিথ। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিটি নোবেল বিজয়ীর গল্প আলাদা হলেও, একটি ব্যাপারে সাদৃশ্য রয়েছে—তাদের অনুভূতি জানার জন্য অ্যাডাম স্মিথের ফোন।
২০২৩ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী ফ্রান্সের অ্যান হুইলেয়ারের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। পুরস্কারের খবর জানাতে নোবেল কমিটি যখন তাকে ফোন দেয়, তখন তিনি ক্লাস নেওয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। কয়েকবার চেষ্টা করেও ফোন ধরতে না পারায়, শেষমেশ বিরতির সময় তিনি কল রিসিভ করেন। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য একটু সময় চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত, শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি।’
অ্যানকে নোবেল জয়ী হওয়ার খবর জানানো হলেও তিনি কোনো বড় প্রতিক্রিয়া দেখাননি, বরং নির্লিপ্তভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার ক্লাসে ফিরে যান। নিবেদিতপ্রাণ এই শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্বে এতটাই মনোযোগী ছিলেন যে, নোবেল অর্জনের মুহূর্তেও তা তাকে বিচলিত করতে পারেনি।
গত ১৮ বছর ধরে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তগুলো সযত্নে ধারণ করে আসছেন অ্যাডাম স্মিথ। প্রথম ফোনটি সাধারণত নোবেল কমিটির সেক্রেটারি বা রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের প্রধানের কাছ থেকে এলেও, বিজয়ীদের অনুভূতি জানতে স্মিথের ফোন থাকে অনিবার্য।
এই ফোনকলগুলোর প্রেক্ষাপটও বিচিত্র—কেউ হয়ত ঘুমিয়ে আছেন, কেউ কাজ করছেন, আবার কেউ হয়তো বিমানে ভ্রমণ করছেন। তবে যেখানেই থাকুন না কেন, নোবেল বিজয়ীরা স্মিথের কাছ থেকে ফোন পান এবং শোনান তাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া। তার উষ্ণ কণ্ঠ এবং সাবলীল কথোপকথন সেই মুহূর্তকে আরও বিশেষ করে তোলে।
সবসময় পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনা ঘটেনি। ২০১৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী পিটার হিগসের কথা ধরা যাক। অত্যন্ত ব্যক্তিগত জীবনযাপন করা হিগস ফোন বন্ধ রেখে মধ্যাহ্নভোজে বেরিয়েছিলেন। প্রথমবার নোবেল জয়ের খবর পান একজন প্রতিবেশীর কাছ থেকে, যিনি গাড়ি থামিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান।
আরেকটি ঘটনা ঘটে ২০০৪ সালে, যখন চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেলজয়ী লিন্ডা বাকের কর্মস্থলে যোগাযোগ করতে গিয়ে নোবেল কমিটি তার পরিচালককে ফোন করে। রাত ২টায় ফোন পেয়ে পরিচালক প্রথমে বিরক্ত হয়ে মনে করেছিলেন, কেউ চাকরির জন্য তদবির করছেন।
অনেক বিজয়ী পুরস্কার ঘোষণার আগে থেকেই কিছুটা আঁচ করতে পারেন। ২০২০ সালে রসায়নে নোবেলজয়ী এম্যানুয়েল চার্পেন্টিয়র বলেন, ক্রিস্পার-ক্যাস৯ নিয়ে মৌলিক কাজ করার পর সবাই তাকে বলত যে তিনি নোবেল পেতে যাচ্ছেন। একইভাবে, এবছর রসায়নে নোবেলজয়ী জন জাম্পারও ধারণা করেছিলেন যে, তাদের এআই মডেল ‘আলফাফোল্ড২’ পুরস্কার পেতে পারে।
রসায়নে নোবেলজয়ী জন জাম্পার। ছবি: সংগৃহীত।
রসায়নে নোবেলজয়ী জন জাম্পার। ছবি: সংগৃহীত।
তবে সব বিজয়ীর প্রতিক্রিয়া এমন হয় না। ২০১০ সালে নোবেলজয়ী কনস্টানটিন নোভোসেলভ স্মিথের ফোন পেয়ে বলেছিলেন, ‘আপনি কি বলতে চাইছেন, আমাকে আমার পরীক্ষা থামাতে হবে?’ এমনকি ২০০৭ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী ডরিস লেসিং পুরস্কার ঘোষণার খবর শুনে বিরক্তি নিয়ে বলেছিলেন, ‘ওহ, ক্রাইস্ট।’
সাহিত্যে নোবেলজয়ী ডরিস লেসিং। ছবি: সংগৃহীত।
সাহিত্যে নোবেলজয়ী ডরিস লেসিং। ছবি: সংগৃহীত।
অ্যাডাম স্মিথ বলেন, ‘আমি এত নোবেল বিজয়ীর সঙ্গে কথা বলেছি, যতজনের সঙ্গে আর কেউ কথা বলেনি। মাঝে মাঝে ভাবি, হয়তো একদিন তাদের সংখ্যা হিসেব করা উচিত।’
স্মিথের ফোনকলগুলো শুধু আনুষ্ঠানিক নয়; এগুলো নোবেলজয়ীদের জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই বিজয়ীরা পরবর্তীতে নোবেল প্রাইজ আউটরিচের মাধ্যমে তরুণ বিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন।
স্মিথের নেতৃত্বে তৈরি এসব মূল্যবান কথোপকথন সংরক্ষণ করা হয় ‘নোবেল প্রাইজ কনভার্সেশনস’ পডকাস্টে। তার মতে, ‘আমি যখন ফোন করি, অনেক সময় তারা মাত্রই খবরটি জেনেছেন এবং অন্য কারো সঙ্গে শেয়ারও করেননি। এই প্রথম প্রতিক্রিয়ার মুহূর্তটা অসাধারণ।’
১৮ বছর ধরে নোবেলজয়ীদের সঙ্গে এমন স্মরণীয় মুহূর্ত ভাগাভাগি করেও, স্মিথ এখনো মাঝরাতে কারো ব্যক্তিগত মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করতে কিছুটা দ্বিধায় থাকেন। তবে তিনি বলেন, ‘যখন সত্যিকার অর্থে কারো সঙ্গে সংযোগ করতে পারি, সেটি দারুণ এক অভিজ্ঞতা। আর যদি তা না হয়, সেটা হতাশার।’
আমি তাদের জীবন বদলে দেওয়ার মুহূর্তের সাক্ষী হতে চাই’, বলেন স্মিথ। সেই ফোনকলের মাধ্যমে বলতে চাই, ‘হ্যালো, কেমন আছেন? অভিনন্দন! এখন আপনার অনুভূতি কেমন?