ঢাকা ০২:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
চট্টগ্রামে জনতা ব্যাংক সিবিএ নেতা আফসার আ.লীগের আমলে দাপট দেখিয়ে এখন বিএনপি নিয়োগ, বদলি, চাঁদাবাজি করে কামিয়েছেন টাকা মহারাষ্ট্রে ভূমিধস জয়ের পথে বিজেপি জোট, ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’ পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু জুলাই বিপ্লবে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে মো. বাবুকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড আজমিরীগঞ্জে  বিয়ের ছয় মাস পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা রায়পুরে দেশীয় শিল্প ও পণ্য মেলায় ভ্রাম্যমান আদালত, নগদ অর্থদণ্ড কালিয়াকৈরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উঠান বৈঠক ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  মোংলায় জলবায়ু ন্যায্যতার গণসংলাপে বক্তারা : সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা দিন অভিনব কায়দায় কুমড়া শাকের আড়ালে গাঁজা পাচারকালে ডিএনসি- কুমিল্লার হাতে ১৩ কেজি গাঁজাসহ আটক ০২ নারী মঠবাড়ীয়া সাফলেজা কচুবাড়ীয়া বসত ঘর ভাঙচুর লুটপাট ও যখম এর অভিযোগ আঃ খালেক হাওলাদার গংদের বিরুদ্ধে

হদিস নেই ‘কিংস পার্টি’র নেতাদের

সময়ের কন্ঠ রিপোর্টে
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪৭:১১ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৩ ৫০০০.০ বার পাঠক

ছবি: সংগৃহীত
কিংস পার্টির’ নেতারা এখন কোথায়-এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকের। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অংশ নেওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পায় ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে। এ দলগুলোর নেতৃত্বে বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দলের দলছুট বেশ কিছু নেতা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই নেতারা এখন বেকায়দায় পড়েছেন। তাদের বেশির ভাগই বর্তমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে অপরিচিত কয়েকটি রাজনৈতিক দল বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব দলকে নিবন্ধনও দেওয়া হয়েছিল। ‘কিংস পার্টি’ বা হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে ওঠা এসব রাজনৈতিক দলগুলো আসলে ‘পুতুল দল’ হিসেবে কাজ করে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপিকে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই দলগুলো এমন এক সময়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানায়, যখন দেশের অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পাওয়া নতুন এই দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিলেও জয় তো দূরের কথা, বেশির ভাগ প্রার্থীই জামানত পর্যন্ত হারিয়েছেন। আলোচিত-সমালোচিত কয়েকটি কিংস পার্টির নেতা এবং তাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, প্রলোভন ও চাপে পড়ে আওয়ামী লীগের সাজানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে এখন তারা মহা বিপাকে আছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে পাত্তাই পায়নি তৃণমূল বিএনপি। ২০১৫ সালে তৃণমূল বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হলেও দলটি নিবন্ধন পায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর দলটির প্রথম কাউন্সিলে যোগ দেন বিএনপির দলছুট দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার। দলটির প্রতীক সোনালী আঁশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৩৩টি আসনে প্রার্থী দেয় তারা। তবে কোনো আসনেই এই দলের কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে ২০২৩ সালের আগস্টে নিবন্ধন পায়। সবশেষ নির্বাচনে নোঙর প্রতীকে দলটি ৫৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। তবে কোনো প্রার্থীই এই নির্বাচনে জয় পাননি। বরং একজন বাদে দলের সব প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নির্বাচনের আগে গুলশানে একটি কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে বিএনএম। তবে নির্বাচনের পর এই কার্যালয়টিতে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর। নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম)-এর নেতৃত্বে যান সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্যকে গত বছর ২০ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে বিএনএম। শ্রমিকনেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর একসময় ছিলেন আওয়ামী লীগে, পরে বাকশালে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য হন। এরপর একই আসন থেকে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। ২০০৩ সালে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০৫ সালে ফরিদপুর-১ আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হন। অর্থাৎ শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বাংলাদেশের সব দলই করেছেন।

সুবিধাবাদী এই নেতা জীবনে গড়েছেন অনেক অবৈধ সম্পদ। শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জানিয়েছিলেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেই বিএনপি ছেড়ে নতুন দলে এসেছেন। ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আরেকটি রাজনৈতিক দল হলো বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। এই দলটি ৭৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। কোনো প্রার্থীই জয়লাভ করেননি। ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে দলটি নিবন্ধন লাভ করে। এই দলের নির্বাচনে প্রতীক একতারা। দলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হুসেইনী আল মাইজভাণ্ডারী।

কিংস পার্টির অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে বলে প্রচার করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের কিছু দিন আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। বিএনপি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে না-এমন অভিযোগ তুলে দল থেকে পদত্যাগ, এরপর দ্বাদশ নির্বাচনের আগে বিএনএমের দায়িত্ব নেন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। সে সময় তার সঙ্গে যোগ দেন বিএনপি ছেড়ে আসা আরো কয়েক জন নেতা।

হারিয়ে গেছে অনেক ‘কিংস পার্টি’

২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের সময় বাংলাদেশে কিংস পার্টির দাপট ছিল বেশি। ক্ষমতার স্বাদ নিতে রাতারাতি গঠন করা হয়েছিল নামসর্বস্ব কিছু রাজনৈতিক দল। এক-এগারোর সময় যাত্রা শুরু করা এই ছোটখাটো দলগুলো পরিচিতি পায় ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে। ওয়ান- ইলেভেনের সময় যেসব দলের সমন্বয়ে কিংস পার্টি গড়ে ওঠে, সেগুলো হলো-প্রয়াত ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী ফারুক আহম্মদের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, শওকত হোসেন নীলুর ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি।

এছাড়াও জাগপার প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে ‘কিংস পার্টি’ বেশ পরিচিতি লাভ করে। এছাড়া ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনের আগেও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ নামের নিবন্ধিত একটি দল নিয়ে তৎপরতা চলে। একপর্যায়ে দলটির প্রধানকে টেলিভিশন মার্কা প্রতীকে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য বানানো হয়। এক-এগারোতে গড়ে ওঠা দাপুটে কিংস পার্টিগুলোর নেতাকর্মীরা কে কোথায় আছেন, তার হদিস মিলছে না।

উচ্ছিষ্ট ক্ষমতার স্বাদ নিতে নানাবিধ দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কিংস পার্টি বর্তমানে লাপাত্তা। মূলত তাদের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতাসীন শক্তির ওপর ভর করে কিছুটা ক্ষমতার স্বাদ নেওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর পরই রাজনীতিপাড়ার হাওয়া আর তাদের গায়ে লাগেনি। কিংস পার্টির শেষ পরিণতি রাজনৈতিক আর্কাইভের আস্তাকুঁড়ে। কিংস পার্টিকে অনেকে মিরজাফর পার্টি বলেও ডাকেন।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

হদিস নেই ‘কিংস পার্টি’র নেতাদের

আপডেট টাইম : ০৭:৪৭:১১ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

ছবি: সংগৃহীত
কিংস পার্টির’ নেতারা এখন কোথায়-এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকের। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অংশ নেওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পায় ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে। এ দলগুলোর নেতৃত্বে বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দলের দলছুট বেশ কিছু নেতা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই নেতারা এখন বেকায়দায় পড়েছেন। তাদের বেশির ভাগই বর্তমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে অপরিচিত কয়েকটি রাজনৈতিক দল বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব দলকে নিবন্ধনও দেওয়া হয়েছিল। ‘কিংস পার্টি’ বা হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে ওঠা এসব রাজনৈতিক দলগুলো আসলে ‘পুতুল দল’ হিসেবে কাজ করে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপিকে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই দলগুলো এমন এক সময়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানায়, যখন দেশের অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পাওয়া নতুন এই দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিলেও জয় তো দূরের কথা, বেশির ভাগ প্রার্থীই জামানত পর্যন্ত হারিয়েছেন। আলোচিত-সমালোচিত কয়েকটি কিংস পার্টির নেতা এবং তাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, প্রলোভন ও চাপে পড়ে আওয়ামী লীগের সাজানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে এখন তারা মহা বিপাকে আছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে পাত্তাই পায়নি তৃণমূল বিএনপি। ২০১৫ সালে তৃণমূল বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হলেও দলটি নিবন্ধন পায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর দলটির প্রথম কাউন্সিলে যোগ দেন বিএনপির দলছুট দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার। দলটির প্রতীক সোনালী আঁশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৩৩টি আসনে প্রার্থী দেয় তারা। তবে কোনো আসনেই এই দলের কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে ২০২৩ সালের আগস্টে নিবন্ধন পায়। সবশেষ নির্বাচনে নোঙর প্রতীকে দলটি ৫৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। তবে কোনো প্রার্থীই এই নির্বাচনে জয় পাননি। বরং একজন বাদে দলের সব প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নির্বাচনের আগে গুলশানে একটি কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে বিএনএম। তবে নির্বাচনের পর এই কার্যালয়টিতে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর। নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম)-এর নেতৃত্বে যান সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্যকে গত বছর ২০ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে বিএনএম। শ্রমিকনেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর একসময় ছিলেন আওয়ামী লীগে, পরে বাকশালে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য হন। এরপর একই আসন থেকে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। ২০০৩ সালে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০৫ সালে ফরিদপুর-১ আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হন। অর্থাৎ শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বাংলাদেশের সব দলই করেছেন।

সুবিধাবাদী এই নেতা জীবনে গড়েছেন অনেক অবৈধ সম্পদ। শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জানিয়েছিলেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেই বিএনপি ছেড়ে নতুন দলে এসেছেন। ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আরেকটি রাজনৈতিক দল হলো বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। এই দলটি ৭৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। কোনো প্রার্থীই জয়লাভ করেননি। ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে দলটি নিবন্ধন লাভ করে। এই দলের নির্বাচনে প্রতীক একতারা। দলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হুসেইনী আল মাইজভাণ্ডারী।

কিংস পার্টির অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে বলে প্রচার করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের কিছু দিন আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। বিএনপি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে না-এমন অভিযোগ তুলে দল থেকে পদত্যাগ, এরপর দ্বাদশ নির্বাচনের আগে বিএনএমের দায়িত্ব নেন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। সে সময় তার সঙ্গে যোগ দেন বিএনপি ছেড়ে আসা আরো কয়েক জন নেতা।

হারিয়ে গেছে অনেক ‘কিংস পার্টি’

২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের সময় বাংলাদেশে কিংস পার্টির দাপট ছিল বেশি। ক্ষমতার স্বাদ নিতে রাতারাতি গঠন করা হয়েছিল নামসর্বস্ব কিছু রাজনৈতিক দল। এক-এগারোর সময় যাত্রা শুরু করা এই ছোটখাটো দলগুলো পরিচিতি পায় ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে। ওয়ান- ইলেভেনের সময় যেসব দলের সমন্বয়ে কিংস পার্টি গড়ে ওঠে, সেগুলো হলো-প্রয়াত ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী ফারুক আহম্মদের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, শওকত হোসেন নীলুর ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি।

এছাড়াও জাগপার প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে ‘কিংস পার্টি’ বেশ পরিচিতি লাভ করে। এছাড়া ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনের আগেও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ নামের নিবন্ধিত একটি দল নিয়ে তৎপরতা চলে। একপর্যায়ে দলটির প্রধানকে টেলিভিশন মার্কা প্রতীকে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য বানানো হয়। এক-এগারোতে গড়ে ওঠা দাপুটে কিংস পার্টিগুলোর নেতাকর্মীরা কে কোথায় আছেন, তার হদিস মিলছে না।

উচ্ছিষ্ট ক্ষমতার স্বাদ নিতে নানাবিধ দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কিংস পার্টি বর্তমানে লাপাত্তা। মূলত তাদের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতাসীন শক্তির ওপর ভর করে কিছুটা ক্ষমতার স্বাদ নেওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর পরই রাজনীতিপাড়ার হাওয়া আর তাদের গায়ে লাগেনি। কিংস পার্টির শেষ পরিণতি রাজনৈতিক আর্কাইভের আস্তাকুঁড়ে। কিংস পার্টিকে অনেকে মিরজাফর পার্টি বলেও ডাকেন।