ঢাকা ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
রায়পুরে দেশীয় শিল্প ও পণ্য মেলায় ভ্রাম্যমান আদালত, নগদ অর্থদণ্ড কালিয়াকৈরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উঠান বৈঠক ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  মোংলায় জলবায়ু ন্যায্যতার গণসংলাপে বক্তারা : সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা দিন অভিনব কায়দায় কুমড়া শাকের আড়ালে গাঁজা পাচারকালে ডিএনসি- কুমিল্লার হাতে ১৩ কেজি গাঁজাসহ আটক ০২ নারী মঠবাড়ীয়া সাফলেজা কচুবাড়ীয়া বসত ঘর ভাঙচুর লুটপাট ও যখম এর অভিযোগ আঃ খালেক হাওলাদার গংদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আখড়া বরগুনার পাসপোর্ট অফিস, দালাল ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট কাশেমপুর থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে বিট্টিমরাই স্কুল ছাত্র মোঃ রাব্বি নিজ খালাকে আটকিয়ে ? ওসি সাইফুল ইসলাম মোটা অংকের টাকার বিনিময় তাদের আসামি করে গ্রেফতার দেখান আনন্দবাজারকে ডা. শফিকুর রহমান কোনও রাজনৈতিক দলকে খারিজ বা সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই রাজনৈতিক দলগুলো যদি বলে যে তারা সংস্কার চায় না, তাহলে এখনই নির্বাচন দিয়ে দেবো: ড. ইউনূস দেশবাসীকে ফের কাঁদালেন শহিদ নাফিজের মা

বিজয় থেকে যেভাবে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে নেতানিয়াহু

আন্তর্জাতিক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : ০২:১৮:৫০ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৪৮ ৫০০০.০ বার পাঠক

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর। ঠিক এক বছর আগে হামাসের আক্রমণের পর গাজায় শুরু হওয়া সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব এবং কৌশল নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। বেশ কিছু বিশ্লেষক এক বছর পর এসে চলমান সংঘর্ষের সমাপ্তি আশা করেছিলেন। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন, যা সংকটের গভীরতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

চলমান সংঘর্ষের চিত্র

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ইসরাইলি বাহিনী গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালাতে শুরু করে। হামাসের মতে, তাদের ওই আক্রমণটি ছিল ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ।

তবে এরপর শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে গাজার ৭০ শতাংশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শহরটি একটি মানবিক সংকটে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুসারে, মৃত্যুর সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে এবং অবরুদ্ধ গাজার মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে।

নেতানিয়াহুর কৌশল এবং লক্ষ্য

নেতানিয়াহু তার সরকারের জন্য কৌশল নির্ধারণে তিনটি মূল লক্ষ্য স্থির করেছেন:

বন্দিদের মুক্তি: তিনি দাবি করেছেন যে বন্দিদের মুক্তি তার প্রধান উদ্দেশ্য, যা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।

হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ গ্রুপকে নির্মূল: নেতানিয়াহুর লক্ষ্য হচ্ছে হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে না পারে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অবসান: নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পকে একটি বড় হুমকি মনে করেন এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।

হামাসের প্রতিক্রিয়া

হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার চলমান এই সংকটকে একটি নতুন লড়াইয়ের সূচনা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে এবং আদায়ের লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের প্রতিরোধকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

হামাসের এই অবস্থানই মূলত ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং তাদের ওপর চালানো সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ ইসরাইলি সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফিলিস্তিনের সমস্যা মানবাধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি তুলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানিয়েছে।

নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার বিপরীতে হামাসের লড়াই

নেতানিয়াহুর ওই কৌশল সাময়িকভাবে হয়তো সফল হতে পারে। কিন্তু সিনওয়ারের নেতৃত্বে হামাস একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। সিনওয়ার ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন, যা হামাসের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। যদি সিনওয়ার তার লক্ষ্য অর্জন করেন, তবে ইসরাইলকে তার দখল করা ভূখণ্ড ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করা হতে পারে।

গত এক বছরের সংঘর্ষের পর ফিলিস্তিনের জাতীয় যে সমস্যা, তা নতুন করে সজাগ হয়েছে। নেতানিয়াহুর যুদ্ধ কৌশল পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের এই নতুন পর্যায়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। যেখানে কেবল সামরিক শক্তি নয়, কূটনীতির জায়গাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

সংঘর্ষের এই চিত্রটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। এই সংঘর্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। সেই সঙ্গে এটি দেখিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য এখন নতুন কৌশল এবং উদ্যোগ গ্রহণ করার সময় এসেছে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বিজয় থেকে যেভাবে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে নেতানিয়াহু

আপডেট টাইম : ০২:১৮:৫০ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর। ঠিক এক বছর আগে হামাসের আক্রমণের পর গাজায় শুরু হওয়া সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব এবং কৌশল নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। বেশ কিছু বিশ্লেষক এক বছর পর এসে চলমান সংঘর্ষের সমাপ্তি আশা করেছিলেন। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন, যা সংকটের গভীরতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

চলমান সংঘর্ষের চিত্র

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ইসরাইলি বাহিনী গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালাতে শুরু করে। হামাসের মতে, তাদের ওই আক্রমণটি ছিল ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ।

তবে এরপর শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে গাজার ৭০ শতাংশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শহরটি একটি মানবিক সংকটে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুসারে, মৃত্যুর সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে এবং অবরুদ্ধ গাজার মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে।

নেতানিয়াহুর কৌশল এবং লক্ষ্য

নেতানিয়াহু তার সরকারের জন্য কৌশল নির্ধারণে তিনটি মূল লক্ষ্য স্থির করেছেন:

বন্দিদের মুক্তি: তিনি দাবি করেছেন যে বন্দিদের মুক্তি তার প্রধান উদ্দেশ্য, যা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।

হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ গ্রুপকে নির্মূল: নেতানিয়াহুর লক্ষ্য হচ্ছে হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে না পারে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অবসান: নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পকে একটি বড় হুমকি মনে করেন এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।

হামাসের প্রতিক্রিয়া

হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার চলমান এই সংকটকে একটি নতুন লড়াইয়ের সূচনা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে এবং আদায়ের লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের প্রতিরোধকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

হামাসের এই অবস্থানই মূলত ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং তাদের ওপর চালানো সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ ইসরাইলি সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফিলিস্তিনের সমস্যা মানবাধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি তুলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানিয়েছে।

নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার বিপরীতে হামাসের লড়াই

নেতানিয়াহুর ওই কৌশল সাময়িকভাবে হয়তো সফল হতে পারে। কিন্তু সিনওয়ারের নেতৃত্বে হামাস একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। সিনওয়ার ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন, যা হামাসের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। যদি সিনওয়ার তার লক্ষ্য অর্জন করেন, তবে ইসরাইলকে তার দখল করা ভূখণ্ড ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করা হতে পারে।

গত এক বছরের সংঘর্ষের পর ফিলিস্তিনের জাতীয় যে সমস্যা, তা নতুন করে সজাগ হয়েছে। নেতানিয়াহুর যুদ্ধ কৌশল পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের এই নতুন পর্যায়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। যেখানে কেবল সামরিক শক্তি নয়, কূটনীতির জায়গাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

সংঘর্ষের এই চিত্রটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। এই সংঘর্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। সেই সঙ্গে এটি দেখিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য এখন নতুন কৌশল এবং উদ্যোগ গ্রহণ করার সময় এসেছে।