ঢাকা ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
কোস্ট গার্ডের অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ করিম শরীফ বাহিনীর দুই সহযোগী আটক নব নির্বাচিত হরিরামপুর প্রেসক্লাবের মাসিক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত ভৈরবে ভবানী পুর সালিশ বৈঠকে ২ বংশের মাঝে সংঘর্ষে ১জন নিহত ২০ জন হাহত হয় খামেনিকে বাদশাহ সালমানের চিঠি পৌঁছে দিলেন সৌদির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে: পাকিস্তান রাতেই ৯ অঞ্চলে ঝড়ের পূর্বাভাস, সতর্ক সংকেত বোট ক্লাবের ৩২ কোটি টাকা বেনজীরের পেটে মোংলায় কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৩১ কেজি হরিণের মাংস জব্দ বেড়েছে তেল, চাল ও পেঁয়াজের দাম, কমেছে মুরগির চেকপোস্ট ব্যারাক থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

পাথরঘাটায় শূন্য থেকে কোটিপতি ফ্রিল্যান্সার বেলাল হোসেন, করছেন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৯:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
  • / ২২৬ ৫০০০.০ বার পাঠক

নিজেকে স্বাবলম্বী করতে মাত্র ৪ থেকে ৫ বছর আগে ইন্টারনেট সংযোগকৃত কম্পিউটারের পর্দার সামনে বসে কিবোর্ড ও মাউসের ক্লিকে অতিবাহিত হওয়া ফ্রিল্যান্সিং পেশা বেছে নিয়েছিলেন বেলাল হোসেন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সাফল্যপূর্ণ এই পেশার মাধ্যমে তিনি এখন কোটি টাকার মালিক। ফ্রিল্যান্সিং করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় তরুণদেরকেও ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়ে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিচ্ছেন তিনি।

এমনটি করেছেন উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা মাদারতলী চরকখোল গ্রামের যুবক বেলাল হোসাইনের কথা। তার বাবা আলমগীর হোসাইন ছিলেন একজন দিনমুজর। মা আকলিমা বেগম একজন গৃহিণী। অভাব অনটন লেগেই থাকা সংসারে তিন সন্তানের লেখাপড়া ও ভরণপোষণ নিয়ে হিমশিম খেতে হতো বেলালের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের।

একদিকে নিজের লেখাপড়া, অন্যদিকে পরিবারের হাল ধরার কথা চিন্তা করে ২০০৪ সালে রাজধানী শহর ঢাকায় পাড়ি জমান বেলাল। সেখানে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা করে ২০০৮ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করেন তিনি। কিন্তু স্বাধীনচেতা মন বেলালকে আটকে রাখতে পারেননি কম্পিউটার অপারেটরের ছোট্ট গণ্ডিতে। ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। প্রথমে ফাইভার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম থেকে ১০ ডলার আয় করেন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার।

ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম ফাইভার, আপওয়ার্ক ও ফ্রিল্যান্সার ডট কমসহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করেন তিনি। গড়ে তুলেছিলেন সামি ডট কম নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানও। সেখানে ভার্চুয়ালি ৪০ জন কাজ করেছে তার অধীনে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের হয়ে ফেনি জেলার প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

এর আগে, ২০২০ সালে বাবা আলমগীর হোসাইনের মৃত্যুর পরে ঢাকা থেকে নিজ গ্রামের বাড়ি চলে আসেন বেলাল। সেই থেকে সেখানে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করছেন তিনি। ফ্রিল্যান্সিং থেকে এক মাসে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ডলারসহ এখন তার বছরে আয় ৩০ হাজার ডলার। বাংলা টাকায় যা ৩০ লাখ টাকারও বেশি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থ দিয়েই দরিদ্র বাবার ভাঙা টিনের ঘরটিকে এখন পাকা ভবন করেছে, কিনেছেন গাড়ি ও কৃষি জমি। দরিদ্রতাকে খুব কাছ থেকে দেখা বেলাল হোসাইন নিজেই শোনাচ্ছিলেন তার এ সফলতার গল্প।

বেলাল হোসাইনকে দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেলাল হোসেনও স্বপ্ন দেখছেন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ ও বেকারদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার। তাই নিজ বাড়িতেই আগ্রহী স্থানীয় তরুণ ও যুবকদের শিখিয়ে চলেছেন ফ্রিল্যান্সিং।

বেলাল হোসাইনের কাছে ফ্রিল্যান্সিং শেখেন পাথরঘাটার জাহিদ হাসান অশ্রু ও রিফাত শেখ। কথা হলে তারা জানান, ফ্রিল্যান্সিং করে বেলাল হোসাইনের মত তারাও স্বাবলম্বী হতে চান। তাই ভালোভাবে শিখতে ও কাজ পেতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা।

বেলাল হোসাইন দৈনিক সময়ের কন্ঠকে বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতার পেছনে সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটি আমার জন্য আশীর্বাদ ছিলো। আমি স্বপ্ন দেখি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের হাজারো তরুণ ও বেকাররা স্বাবলম্বী হয়ে দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনবে।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু দৈনিক সময়ের কন্ঠকে বলেন, বেলাল হোসাইনের মত দেশের হাজারো বেকার তরুণ-যুবকরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং  করার মাধ্যমে একটি সুনিশ্চিত ভবিষৎ গড়ে তোলার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের স্থানীয় সচেতন মহলের।
এদিকে বেলাল হোসেনের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এলাকার কিছু কুচক্রী মহল নানা অপপ্রচার ও কিছু মিডিয়া ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে বেলাল হোসেনের সুনাম ক্ষুন্ন করছে।
এ বিষয়ে বেলাল হোসেন তাদের কথায় কর্ণপাত না করে তিনি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এবং তার প্রতিষ্ঠানটি আরও সম্প্রসারিত করার আশা ব্যক্ত করেন।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

পাথরঘাটায় শূন্য থেকে কোটিপতি ফ্রিল্যান্সার বেলাল হোসেন, করছেন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা

আপডেট টাইম : ০৩:২৯:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

নিজেকে স্বাবলম্বী করতে মাত্র ৪ থেকে ৫ বছর আগে ইন্টারনেট সংযোগকৃত কম্পিউটারের পর্দার সামনে বসে কিবোর্ড ও মাউসের ক্লিকে অতিবাহিত হওয়া ফ্রিল্যান্সিং পেশা বেছে নিয়েছিলেন বেলাল হোসেন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সাফল্যপূর্ণ এই পেশার মাধ্যমে তিনি এখন কোটি টাকার মালিক। ফ্রিল্যান্সিং করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় তরুণদেরকেও ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়ে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিচ্ছেন তিনি।

এমনটি করেছেন উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা মাদারতলী চরকখোল গ্রামের যুবক বেলাল হোসাইনের কথা। তার বাবা আলমগীর হোসাইন ছিলেন একজন দিনমুজর। মা আকলিমা বেগম একজন গৃহিণী। অভাব অনটন লেগেই থাকা সংসারে তিন সন্তানের লেখাপড়া ও ভরণপোষণ নিয়ে হিমশিম খেতে হতো বেলালের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের।

একদিকে নিজের লেখাপড়া, অন্যদিকে পরিবারের হাল ধরার কথা চিন্তা করে ২০০৪ সালে রাজধানী শহর ঢাকায় পাড়ি জমান বেলাল। সেখানে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা করে ২০০৮ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করেন তিনি। কিন্তু স্বাধীনচেতা মন বেলালকে আটকে রাখতে পারেননি কম্পিউটার অপারেটরের ছোট্ট গণ্ডিতে। ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। প্রথমে ফাইভার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম থেকে ১০ ডলার আয় করেন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার।

ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম ফাইভার, আপওয়ার্ক ও ফ্রিল্যান্সার ডট কমসহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করেন তিনি। গড়ে তুলেছিলেন সামি ডট কম নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানও। সেখানে ভার্চুয়ালি ৪০ জন কাজ করেছে তার অধীনে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের হয়ে ফেনি জেলার প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

এর আগে, ২০২০ সালে বাবা আলমগীর হোসাইনের মৃত্যুর পরে ঢাকা থেকে নিজ গ্রামের বাড়ি চলে আসেন বেলাল। সেই থেকে সেখানে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করছেন তিনি। ফ্রিল্যান্সিং থেকে এক মাসে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ডলারসহ এখন তার বছরে আয় ৩০ হাজার ডলার। বাংলা টাকায় যা ৩০ লাখ টাকারও বেশি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থ দিয়েই দরিদ্র বাবার ভাঙা টিনের ঘরটিকে এখন পাকা ভবন করেছে, কিনেছেন গাড়ি ও কৃষি জমি। দরিদ্রতাকে খুব কাছ থেকে দেখা বেলাল হোসাইন নিজেই শোনাচ্ছিলেন তার এ সফলতার গল্প।

বেলাল হোসাইনকে দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেলাল হোসেনও স্বপ্ন দেখছেন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ ও বেকারদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার। তাই নিজ বাড়িতেই আগ্রহী স্থানীয় তরুণ ও যুবকদের শিখিয়ে চলেছেন ফ্রিল্যান্সিং।

বেলাল হোসাইনের কাছে ফ্রিল্যান্সিং শেখেন পাথরঘাটার জাহিদ হাসান অশ্রু ও রিফাত শেখ। কথা হলে তারা জানান, ফ্রিল্যান্সিং করে বেলাল হোসাইনের মত তারাও স্বাবলম্বী হতে চান। তাই ভালোভাবে শিখতে ও কাজ পেতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা।

বেলাল হোসাইন দৈনিক সময়ের কন্ঠকে বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতার পেছনে সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটি আমার জন্য আশীর্বাদ ছিলো। আমি স্বপ্ন দেখি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের হাজারো তরুণ ও বেকাররা স্বাবলম্বী হয়ে দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনবে।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু দৈনিক সময়ের কন্ঠকে বলেন, বেলাল হোসাইনের মত দেশের হাজারো বেকার তরুণ-যুবকরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং  করার মাধ্যমে একটি সুনিশ্চিত ভবিষৎ গড়ে তোলার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের স্থানীয় সচেতন মহলের।
এদিকে বেলাল হোসেনের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এলাকার কিছু কুচক্রী মহল নানা অপপ্রচার ও কিছু মিডিয়া ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে বেলাল হোসেনের সুনাম ক্ষুন্ন করছে।
এ বিষয়ে বেলাল হোসেন তাদের কথায় কর্ণপাত না করে তিনি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এবং তার প্রতিষ্ঠানটি আরও সম্প্রসারিত করার আশা ব্যক্ত করেন।