ঢাকা ০২:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
অর্থের লোভ দেখিয়ে ‘গণঅভ্যুত্থানের’ ব্যর্থ চেষ্টা, নেপথ্যে কারা? ইমরান খানের হাজারো সমর্থক গ্রেপ্তার প্রতারক বাবু যেন কাশিমপুর থানার একচ্ছত্র অধিপতি ১০ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, বাকিদের কথা ব্যক্তিগত সারাদেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একটি মডেল উদ্ভাবন করেছেন কাজী আবেদ হোসেন নিখোঁজ সংবাদ  ঠাকুরগাঁওয়ে নাগরিক প্লাটফর্মের ত্রৈমাসিক সভা ও জেলা কমিটি পুনর্গঠন মানুষের তৈরি মতবাদ আল্লাহর আইনের সাথে চ্যালেঞ্জ করার শামিল – ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগ নেতার দখলের চেষ্টা।এই বিষয়ে সময়ের কন্ঠস্বরে নিউজ প্রকাশের পর এসিল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞা

আদানি গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের নির্বাচনের সম্পর্ক কী?

অনলাইন রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : ১০:০৩:৩৩ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • / ১০৫ ৫০০০.০ বার পাঠক

ছবি: সংগৃহীত
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রবল পশ্চিমা চাপের মধ্যেও ভারত ও চীনের সমর্থন নিশ্চিত করে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত যেকোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পেছনে আছে আদানির সঙ্গে একটি ‘বিতর্কিত ব্যবসায়িক চুক্তি’।

বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খুব ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত আদানি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করতে পিছপা হননি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মোদিকে সতর্ক করেছিলেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে, ওই চুক্তির কারণে সে সতর্কতা কানে তোলেননি মোদি।

বিরোধী দলহীন নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের মান ও জনপ্রিয়তার কোনো ভূমিকা ছিল না। নির্বাচনে সমর্থনের জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থের একটি অংশ দিল্লিতে ক্ষমতার শীর্ষে থাকাদের কাছে পৌঁছে গেছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠিত ‘আদানি পাওয়ার লিমিটেড’ ভারতের বৃহত্তম বেসরকারী বিদ্যুৎ কোম্পানি। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ১.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে নির্মিত গোড্ডা প্ল্যান্ট নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনা হয়েছে। কারণ এই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) থেকে ব্যাপক লাভবান হয়েছে ভারতীয় এই কোম্পানি। ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসছে।

গত বছরের ৪ এপ্রিল এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। ৩০শে জুন থেকে পরবর্তী তিন মাসে এই কেন্দ্র থেকে ১৫৯.৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ (কিলোওয়াট-ঘণ্টা) উৎপাদন করা হয়েছে। ইউনিট প্রতি খরচ ছিল ১৪.০২ টাকা, যেখানে ২০১২ সালে ভারতের পাবলিক সেক্টর ‘বেহেমথ ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন’ (এনটিপিসি) থেকে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রতি ইউনিট ৩.২৪ টাকায় কিনতে রাজি হয়েছিল বাংলাদেশ।

আদানির সঙ্গে চুক্তির অধীনে, বাংলাদেশ তুলনামূলক নিম্নমানের কয়লার জন্য তার অন্যান্য কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুতের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দাম দেবে। সেই কয়লা অস্ট্রেলিয়ার আদানি-মালিকানাধীন খনি থেকে ভারতের একটি আদানি-মালিকানাধীন বন্দরে সরবরাহ করা হবে যেখান থেকে এটি গোড্ডা প্ল্যান্টে পাঠানো হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আদানি পাওয়ার লিমিটেডের গোড্ডা প্ল্যান্টকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) ঘোষণা করার সময় যে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল, বাংলাদেশ সেই সুবিধা পাচ্ছে না। একটি বেসরকারি কয়লা প্ল্যান্টের জন্য একাধিক ট্যাক্স সুবিধা দেয়ার কারণে ভারতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা। নিজেদের পরিবেশ ও জনগণকে হুমকিতে ফেলে অন্য একটি দেশের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পেছনে তারা আদানি গ্রুপকে অতিরিক্ত সুবিধা পাইয়ে দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তারা।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমতুল্লাহ আল-জাজিরাকে বলেছিলেন যে, এই চুক্তিতে শুধুমাত্র আদানিরই লাভ হবে। রহমতুল্লাহ বলেন, দুর্ভাগ্যবশত এটাকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ সত্ত্বেও আমাদের সরকারের এই বিদ্যুৎ ক্রয় ব্যবস্থা সংশোধন করার বা এর থেকে বেরিয়ে আসার কোনো ইচ্ছা নেই। যদিও আদানি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যেকার এই চুক্তিটি প্রায় ছয় বছর পুরানো, তারপরেও এ নিয়ে খুব একটা ‘সমালোচনার ঝড়’ দেখা যায়নি- অন্তত রাজনৈতিকভাবে। কারণ এই চুক্তির বিস্তারিত কখনও প্রকাশই করা হয়নি। চুক্তিটি বাংলাদেশের একটি বিতর্কিত বিশেষ আইনের অধীনে করা হয়েছিল, যা সরকারকে অযাচিত পিপিএ বা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির সুযোগ দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ চুক্তির পথে গিয়েছিলো কারণ এতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের বড় রাজনৈতিক প্রভাব ছিল।

ব্রাসেলসের ভ্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা ফেলো সাইমুম পারভেজ আল জাজিরাকে বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে এটা অজানা ছিল না যে আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত এবং একটি ব্যবসায়িক চুক্তি শেষ পর্যন্ত মোদির কাছ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসবে। অত্যন্ত বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে রাজনৈতিক বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য প্রধান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের কাছ থেকে অনুগ্রহের প্রয়োজন ছিল আওয়ামী লীগের। আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের কাছ থেকে তাদের সব ধরনের সমর্থনের দরকার ছিল।

পারভেজ বলেন, বাংলাদেশ যখন মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যবৃদ্ধি, বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস এবং একাধিক ব্যাংক থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের ধাক্কা অনুভব করতে শুরু করে তখন জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিন পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ২০২২ সালের শেষদিকে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের বিক্ষোভ আয়োজন করেছিল। ২০২৩ এর শুরুতে সামনে আসে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট, যা বিক্ষোভের মধ্যে আরো ইন্ধন জুগিয়েছিল বলে মনে করেন পারভেজ।

আদানি মাত্র কয়েক মাস আগেও বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ নামে মার্কিন ভিত্তিক সংস্থার একটি বিস্ফোরক রিপোর্ট তাকে স্টক মার্কেট ম্যানিপুলেশনের দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। ওই জালিয়াতির অভিযোগের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদানি প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ হারান। ঝাড়খন্ডে আদানি-নির্মিত গোড্ডা আল্ট্রা সুপার-ক্রিটিকাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার পরে এই ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও গত জুলাই মাসে গৌতম আদানির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এখন জানা যাচ্ছে যে, আদানি পাওয়ার থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আদানির ব্যাপক মুনাফায় অবদান রেখেছিল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ‘আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ডের’ সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেটির প্রধান কার্যালয় আহমেদাবাদে অবস্থিত। বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্যুৎ আমদানি করতে এই চুক্তিটি ভারতীয় কোম্পানিটির জন্য আরও লাভ নিশ্চিত করবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আদানি পাওয়ারের রাজস্ব ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭ হাজার ১৭৩ কোটি রুপি (৪৮ হাজার ৯১১ কোটি টাকা) হয়েছে। এতে ঝাড়খণ্ড ইউনিট ৫ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা বা মোট ১৪.৩ শতাংশ অবদান রেখেছে।

এইভাবে আদানি পাওয়ারের মুনাফা বছরে ২৩০ শতাংশ বেড়ে নয় মাসে ১৮ হাজার ৯২ কোটি রুপি (২৩ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা) হয়েছে। বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এবং উত্তরাঞ্চলে যেখানে বৃহৎ বিদ্যুতের ইউনিট নেই এমন অংশে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ওয়েবসাইট অনুসারে, যখন আদানির সাথে চুক্তি হয়েছিল তখন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২ হাজার ৯২২ মেগাওয়াট। এর সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ৯ হাজার ৫০৭ মেগাওয়াট। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলায় ৪২৫ হেক্টর জমিতে অবস্থিত এই প্ল্যান্টটি।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আদানি গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের নির্বাচনের সম্পর্ক কী?

আপডেট টাইম : ১০:০৩:৩৩ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ছবি: সংগৃহীত
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রবল পশ্চিমা চাপের মধ্যেও ভারত ও চীনের সমর্থন নিশ্চিত করে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত যেকোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পেছনে আছে আদানির সঙ্গে একটি ‘বিতর্কিত ব্যবসায়িক চুক্তি’।

বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খুব ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত আদানি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করতে পিছপা হননি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মোদিকে সতর্ক করেছিলেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে, ওই চুক্তির কারণে সে সতর্কতা কানে তোলেননি মোদি।

বিরোধী দলহীন নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের মান ও জনপ্রিয়তার কোনো ভূমিকা ছিল না। নির্বাচনে সমর্থনের জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থের একটি অংশ দিল্লিতে ক্ষমতার শীর্ষে থাকাদের কাছে পৌঁছে গেছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠিত ‘আদানি পাওয়ার লিমিটেড’ ভারতের বৃহত্তম বেসরকারী বিদ্যুৎ কোম্পানি। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ১.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে নির্মিত গোড্ডা প্ল্যান্ট নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনা হয়েছে। কারণ এই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) থেকে ব্যাপক লাভবান হয়েছে ভারতীয় এই কোম্পানি। ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসছে।

গত বছরের ৪ এপ্রিল এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। ৩০শে জুন থেকে পরবর্তী তিন মাসে এই কেন্দ্র থেকে ১৫৯.৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ (কিলোওয়াট-ঘণ্টা) উৎপাদন করা হয়েছে। ইউনিট প্রতি খরচ ছিল ১৪.০২ টাকা, যেখানে ২০১২ সালে ভারতের পাবলিক সেক্টর ‘বেহেমথ ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন’ (এনটিপিসি) থেকে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রতি ইউনিট ৩.২৪ টাকায় কিনতে রাজি হয়েছিল বাংলাদেশ।

আদানির সঙ্গে চুক্তির অধীনে, বাংলাদেশ তুলনামূলক নিম্নমানের কয়লার জন্য তার অন্যান্য কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুতের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দাম দেবে। সেই কয়লা অস্ট্রেলিয়ার আদানি-মালিকানাধীন খনি থেকে ভারতের একটি আদানি-মালিকানাধীন বন্দরে সরবরাহ করা হবে যেখান থেকে এটি গোড্ডা প্ল্যান্টে পাঠানো হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আদানি পাওয়ার লিমিটেডের গোড্ডা প্ল্যান্টকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) ঘোষণা করার সময় যে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল, বাংলাদেশ সেই সুবিধা পাচ্ছে না। একটি বেসরকারি কয়লা প্ল্যান্টের জন্য একাধিক ট্যাক্স সুবিধা দেয়ার কারণে ভারতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা। নিজেদের পরিবেশ ও জনগণকে হুমকিতে ফেলে অন্য একটি দেশের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পেছনে তারা আদানি গ্রুপকে অতিরিক্ত সুবিধা পাইয়ে দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তারা।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমতুল্লাহ আল-জাজিরাকে বলেছিলেন যে, এই চুক্তিতে শুধুমাত্র আদানিরই লাভ হবে। রহমতুল্লাহ বলেন, দুর্ভাগ্যবশত এটাকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ সত্ত্বেও আমাদের সরকারের এই বিদ্যুৎ ক্রয় ব্যবস্থা সংশোধন করার বা এর থেকে বেরিয়ে আসার কোনো ইচ্ছা নেই। যদিও আদানি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যেকার এই চুক্তিটি প্রায় ছয় বছর পুরানো, তারপরেও এ নিয়ে খুব একটা ‘সমালোচনার ঝড়’ দেখা যায়নি- অন্তত রাজনৈতিকভাবে। কারণ এই চুক্তির বিস্তারিত কখনও প্রকাশই করা হয়নি। চুক্তিটি বাংলাদেশের একটি বিতর্কিত বিশেষ আইনের অধীনে করা হয়েছিল, যা সরকারকে অযাচিত পিপিএ বা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির সুযোগ দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ চুক্তির পথে গিয়েছিলো কারণ এতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের বড় রাজনৈতিক প্রভাব ছিল।

ব্রাসেলসের ভ্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা ফেলো সাইমুম পারভেজ আল জাজিরাকে বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে এটা অজানা ছিল না যে আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত এবং একটি ব্যবসায়িক চুক্তি শেষ পর্যন্ত মোদির কাছ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসবে। অত্যন্ত বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে রাজনৈতিক বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য প্রধান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের কাছ থেকে অনুগ্রহের প্রয়োজন ছিল আওয়ামী লীগের। আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের কাছ থেকে তাদের সব ধরনের সমর্থনের দরকার ছিল।

পারভেজ বলেন, বাংলাদেশ যখন মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যবৃদ্ধি, বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস এবং একাধিক ব্যাংক থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের ধাক্কা অনুভব করতে শুরু করে তখন জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিন পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ২০২২ সালের শেষদিকে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের বিক্ষোভ আয়োজন করেছিল। ২০২৩ এর শুরুতে সামনে আসে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট, যা বিক্ষোভের মধ্যে আরো ইন্ধন জুগিয়েছিল বলে মনে করেন পারভেজ।

আদানি মাত্র কয়েক মাস আগেও বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ নামে মার্কিন ভিত্তিক সংস্থার একটি বিস্ফোরক রিপোর্ট তাকে স্টক মার্কেট ম্যানিপুলেশনের দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। ওই জালিয়াতির অভিযোগের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদানি প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ হারান। ঝাড়খন্ডে আদানি-নির্মিত গোড্ডা আল্ট্রা সুপার-ক্রিটিকাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার পরে এই ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও গত জুলাই মাসে গৌতম আদানির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এখন জানা যাচ্ছে যে, আদানি পাওয়ার থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আদানির ব্যাপক মুনাফায় অবদান রেখেছিল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ‘আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ডের’ সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেটির প্রধান কার্যালয় আহমেদাবাদে অবস্থিত। বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্যুৎ আমদানি করতে এই চুক্তিটি ভারতীয় কোম্পানিটির জন্য আরও লাভ নিশ্চিত করবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আদানি পাওয়ারের রাজস্ব ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭ হাজার ১৭৩ কোটি রুপি (৪৮ হাজার ৯১১ কোটি টাকা) হয়েছে। এতে ঝাড়খণ্ড ইউনিট ৫ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা বা মোট ১৪.৩ শতাংশ অবদান রেখেছে।

এইভাবে আদানি পাওয়ারের মুনাফা বছরে ২৩০ শতাংশ বেড়ে নয় মাসে ১৮ হাজার ৯২ কোটি রুপি (২৩ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা) হয়েছে। বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এবং উত্তরাঞ্চলে যেখানে বৃহৎ বিদ্যুতের ইউনিট নেই এমন অংশে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ওয়েবসাইট অনুসারে, যখন আদানির সাথে চুক্তি হয়েছিল তখন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২ হাজার ৯২২ মেগাওয়াট। এর সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ৯ হাজার ৫০৭ মেগাওয়াট। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলায় ৪২৫ হেক্টর জমিতে অবস্থিত এই প্ল্যান্টটি।