টঙ্গীতে কথিত কুদ্দুস নেতার চাদাঁবাজির অত্যাচার অতিষ্ঠ শিল্প মালিকরা
- আপডেট টাইম : ০৭:৪১:২৬ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪
- / ৯৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
গাজীপুর মহানগর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ‘টঙ্গী বিসিক শিল্প মালিক সমিতি’র হর্তাকর্তা একজন শ্রমিকনেতা। তিনি টঙ্গীতে ‘কুদ্দুস নেতা’ নামে পরিচিত। টঙ্গী শিল্প নগরীতে তার বেশ প্রভাবও রয়েছে। আব্দুল কুদ্দুস ওরফে কুদ্দুস নেতা একটানা প্রায় দুই যুগ টঙ্গীস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টিউব কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি টঙ্গী বিসিক শিল্প মালিক সমিতিরও সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ দখল করে বসে আছেন। টঙ্গী বিসিকে তার কোনো শিল্পপ্লট বা কারখানা না থাকলেও শিল্প মালিকদের সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণ করেন । টঙ্গী বিসিক মালিক সমিতিতে তিনিই প্রধান।
টঙ্গীর একাধিক বিসিক শিল্প মালিকরা জানান, বিসিক এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ শিল্পবান্ধব সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বিসিক কর্তৃপক্ষের। এসব বিসিকের প্রকল্পভুক্ত সেবার মধ্যেই পড়ে। কিন্তু প্লট হস্তান্তরের পর বিসিক কর্তৃপক্ষের আর কোনো খবর থাকে না। শিল্প মালিকরা বিসিকে শুধু নিয়মিত ট্যাক্সই দেন, বিনিময়ে কোনো সেবা পান না। অপর দিকে সিটি করপোরেশনও প্রতি বছর নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্স নিলেও তারাও কোনো সেবা দেয় না। বিসিক মালিক সমিতিও প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেয়। তারাও কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয় না। যার যার শিল্পপ্লটের রাস্তা-ড্রেন তাকেই সংস্কার বা পরিষ্কার করতে হয়। কারখানার বর্জ্যও নিজস্ব গাড়ি দিয়ে বিসিকের বাইরে দূরে কোথাও নির্ধারিত স্থানে নিয়ে ফেলতে হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই বিসিক এলাকার রাস্তা, ড্রেন সংস্কার-পরিষ্কার, পানি ও পয়:নিষ্কাশন শিল্প মালিকরা নিজস্ব অর্থায়নেই করেন।এক সময় মালিক সমিতি বিসিক এলাকার সমস্যা সমাধানের জন্য বিসিক ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সহযোগিতা চাইতেন। এখন মালিক সমিতির কেউ সরকারি সেবা প্রদানকারী এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে আর যোগাযোগ করেন না। এর কারণ হিসেবে একজন শিল্প মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘ঐ প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা বিসিক মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সংগঠনটিকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। শিল্প মালিকরা এখন ঐ শ্রমিক নেতার কাছে জিম্মি। আগে টঙ্গী বিসিক শিল্প মালিকরা দ্বৈত করের কবলে ছিলেন। অর্থাৎ বিসিক ও স্থানীয় সরকার (পৌর/সিটি করপোরেশন) প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কর দিতেন। এখন মালিক সমিতি যোগ হওয়ায় তারা ত্রৈত করের কবলে পড়েছেন। বরং সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান শিল্প মালিকদের কাছ থেকে যে হারে টাকা নিচ্ছে মালিক সমিতির নামে এখন তার চেয়ে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। বিসিক মালিক সমিতি এখন শ্রমিক নেতা হাইজ্যাক করেছেন। এ সমিতিতে এখন আর আমাদের (শিল্প মালিকদের) একক কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই বর্তমানে মালিক সমিতির নামে শিল্প কারখানাগুলো থেকে দ্বিগুণ হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।’
ভুক্তভোগী ঐ মালিক আরো বলেন, ‘মালিক সমিতির কাজ মালিকদের অধিকার আদায়সহ শিল্পকারখানার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু তারা তা না করে মালিক সমিতিকে নিজেদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। বিভিন্ন সেবা প্রদানের নামে প্রতি মাসে নিয়মিত মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না শিল্প মালিকরা। নিজ নিজ কারখানার বর্জ্য ও ড্রেন পরিষ্কার, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক কাজ নিজেদের অর্থায়নেই করতে হয়।’তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে টঙ্গী বিসিক মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমি কমিটিতে যেতে চাইনি, শিল্প মালিকরাই আমাকে কমিটিতে রেখেছেন। আর শিল্প মালিকরাই মাসিক চাঁদা নির্ধারণ করে থাকেন। এখানে আমার একক সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিসিকে নিজের ফ্যাক্টরি বা শিল্পপ্লট না থাকা সত্ত্বেও মালিক সমিতিতে তার থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিসিকের একটি ফ্যাক্টরিতে আমার শেয়ার আছে।বিসিক মালিক সমিতির ম্যানেজার শামীম জানান, বর্তমানে ‘এ’ টাইপের শিল্পপ্লট থেকে চার হাজার, ‘বি’ টাইপের তিন হাজার, ‘সি’ টাইপের দুই হাজার ও ‘ডি’ টাইপের শিল্পপ্লল্ট থেকে মাসিক দেড় হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। নিরাপত্তা প্রহরীসহ মালিক সমিতির বর্তমানে প্রায় ২৫ জন কর্মচারী রয়েছে বলেও তিনি জানান।