নবাবগঞ্জে ভুয়া জমির দাতা সেজে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের অভিযোগ
- আপডেট টাইম : ০৯:১৬:১১ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ১৭৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তি নবাবগঞ্জ উপজেলার ৪নং শালখুরিয়া ইউনিয়নের ছোট তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত মোবারক আলী মন্ডলের পুত্র ছোট তেঁতুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ঈদগাহ্ ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব নুর মুহাম্মদ ও ছোট তেঁতুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেজবাউল হকের বিরুদ্ধে আবেদনকারির ওয়ারিশদের একই জমি দূ’টি প্রতিষ্ঠানে ভুয়া দলিলে রেজিস্ট্রি দেওয়ায় জমি উদ্ধার চেয়ে এলাকার মৃত: রহিম উদ্দিন মন্ডলের ছেলে ভূক্তভোগী নজরুল ইসলাম নবাবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ছোট তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত:মোবারক আলি মন্ডলের ছেলে হাজী নূর মোহাম্মদ সমাজে দানবীর সাজতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমার দাদা আইন উদ্দিন মন্ডলের রেকর্ডিয় সম্পত্তি ভুয়া দলিল করেন। যাহা ওয়ারিস হিসেবে আমাদের ভোগ দখলীকৃত।ছোট তেঁতুলিয়া মৌজার সি এস খং -১৮, এসএ খং ২৫, দাগ নং ১১ এর ১৪ শতাংশ ও দাগ নং ১৬ এর ৮ শতাংশ সহ ২২ শতাংশ জমি ছোট তেঁতুলিয়া নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় এর দাতা হিসেবে “মহাপরিচালক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষা অধীদপ্তর, ঢাকা” এর অনুকূলে দানপত্র দলিল সম্পাদন করেন। সেই জমি ২৯/১০/১৯৯৫ সালে ৫৯১৪ নং ও ১৪/০৯/১৯৯৫ সালে ৫৬৪২ নং দলিল মুলে ভুয়া মালিক সেজে রেজিষ্ট্রি দেন। এ রকম মসজিদ ও ঈদগাহে্র আরো অনেক জমির দলিল ভুয়া করে জবর দখল করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে স্কুলের সাইনবোর্ডে দেখা যায় স্কুলটি ১৯৯৪ খ্রী: প্রতিষ্ঠিত। অভিজ্ঞ মহলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে জমি দেওয়া হয়েছে ১৯৯৫ সালে আর স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ১৯৯৪ সালে। মহা প্রতারণার মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
এ বিষয়ে তেতুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেজবাউল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পূর্বের সভাপতি হাজী নুর মোহাম্মদ দাতা সভাপতি হিসাবে তেতুলিয়া মৌজার ২২,২০,২১,১৮, ১৭, ১১, ১২ দাগের মোট এক একর ১. ৪২ শতাংশ জমি স্কুলের নামে রেজিস্ট্রি দিয়েছেন। সেই মতেই মহাপরিচালক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ -ঢাকা এর পক্ষে সভাপতি / সম্পাদক প্রধান শিক্ষক তেঁতুলিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে ১৫ নভেম্বর ১৯৯৫ সালে ১৪৫ নং হোল্ডিং খুলিয়ে মিউটেশন করা হয়েছে। স্কুলের নামে খাজনা খারি হলেও চলমান জরিপে সাবেক সভাপতি অসৎ উদ্দেশ্যে তফশিল ভুক্ত জমি স্কুল, ঈদগাহ্ ও মসজিদ নামে পৃথকভাবে মাঠ পর্চায় খতিয়ান খুলতে জরিপ কর্মকর্তাদের তদবির করেছেন। কাগজের কলমে স্কুলের নামে জমি দেখানো হলেও বাস্তবে স্কুলের নামে নিঃকন্ঠক কোন জমি নেই বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ।
প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি ২০০০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। বিদ্যালয়ের জমিজমা সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানিনা। তবে বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ সাহেবই ভালো জানেন। আসলে সত্যটা কি ? সেই বিষয়ে জানার জন্য প্রধান শিক্ষক মেজবাউল হককে অনুরোধ করলে তিনি বিষয়টি পাঁচকান না করার শর্তে আরো বলেন, সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ এঁর একক ছত্রছায়ায় ও একক সিদ্ধান্তেই স্কুল ও স্কুল সংলগ্ন মসজিদটি পরিচালিত হয়ে আসতো। তিনি কাউকে বিদ্যালয়ের জমিজমাসহ কোন কিছুর বিষয়ে জানাতেন না। তাঁর ইচ্ছায় ও খেয়ালখুশি মতো ২০০৫ সালে খাজনা খারিজকৃত জমি বিদ্যালয়ের নামে একক ভাবে খতিয়ান না খুলে চলমান ভূমি জরিপে ছোট তেঁতুলিয়া মসজিদ, ঈদগাহ্ ও ছোট তেঁতুলিয়া নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় কে উল্লখিত মৌজার বে-নামি জমিজমা নিজের খেয়ালখুশি মতোই সেটেলমেন্ট অফিস কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভাগাভাগি করে মাঠ জরিপে পর্চা খতিয়ান খুলতে সহায়তা করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার বেশ কয়েকজন সচেতনব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ ঠক প্রতারক ভূমিদস্য। এলাকার সহজ- সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে নিজে দানবীর সাজার জন্য অপরের পৈতৃক সম্পত্তি নিজেই দাতা সেজে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে প্রদান করেছেন। তাঁরা জানান, জনৈক আমিনা খাতুন একই তফসিলের একই দাগের প্রায় ১, ৪২ একইর জমি ৭/৬/১৯৬৫ সালে ৩৯ নং দলিল মুলে ছোট তেঁতুলিয়া ঈদগাহ্ ও জামে মসজিদের সভাপতি সম্পাদক বরাবরে দান করেন। পুণরায় সেই তফসিলে জমি স্কুলের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ ছোট তেঁতুলিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ভূয়া রেজিস্ট্রি দেয়। পরবর্তীতে একই সম্পত্তি একই তফসিলের প্রায় ১.৪২ শতাংশ জমি পার্শ্ববর্তী ছোট তেতুলিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কে গত ২৯/১০/ ১৯৯৫ সালে ৫৯১৪ নং দলিল ও ১৪/ ৯ /১৯৯৫ সালে ৫৬৪২ নং দলিল করে প্রতারণার মাধ্যমে মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর দানপত্র দলিল হস্তান্তর করেছেন। যেহেতু তাঁর জমিই নয়, সেইহেতু অন্যের জমি কিভাবে মহাপরিচালক বরাবর দানপত্র দলিল করিয়ে দানবীর সেজেছেন বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসিদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
ছোট তেঁতুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মহরম আলি জানান, আমি সবেই অত্র বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়ীত্ব পেয়েছি। এ সব ঘটনার কোন কিছুই আমি জানিনা। ঈদগাহ ও মসজিদের সম্পত্তি অত্র বিদ্যালয়ের সাবেক পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ ভুয়া রেজিঃ দানপত্র দলিল করিয়েছেন। সেই বিয়ষটি আমি লোক মুখে শুনেছি। এখন আপনাদের কাছ থেকে জেনে নিশ্চিত হলাম। আমিও সঠিক সত্যটায় আশা করছি।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দীপক কুমার বণিকের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি ঘটনায় সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলার ছোট তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত:রহিম উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মো,নজরুল ইসলাম উপজেলার ছোট তেঁতুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমির মালিকানার দাবীতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ এঁর বিরুদ্ধে তাঁদের জমি বিদ্যালয়ের নামে ভুয়া জমির দাতা সেজে দলিল সম্পাদন করার অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এলাকার সর্বস্থরের সচেতন মহল তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের সনাক্তকরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।