ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

পাথরঘাটায় স্কুল ছাএীর আত্মহত্যা

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৫:১২ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  • / ৩৪০ ৫০০০.০ বার পাঠক

পাথরঘাটা প্রতিনিধি।

বাবা মায়ের সাথে অভিমান করে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন কলেজপড়ুয়া ছাত্রী লামিয়া আক্তার রিতি। বরগুনা সদর উপজেলার আয়লাপাতাকাটা ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামের নুর আলমের মেয়ে। রিতি কদমতলা বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান কলেজের ছাত্রী ছিলেন।

জানা যায়, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের সোবহান মিয়ার ছেলে আফরোজের সাথে প্রায় দুই বছর আগে রীতির সাথে বিয়ে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি মামলায় পড়ে নূরে আলমের স্ত্রী আসমার সাথে আফরোজের সাথে পরিচয় হয়, একপর্যায়ে নুর আলম বিদেশে থাকা অবস্থায় আসমা তার মেয়েকে আফরোজ এর কাছে বিয়ে দেয়। লামিয়া আক্তার রীতির বয়স কম থাকায় কোর্টের মাধ্যমে নোটারি করা হয়। বিয়ের পরে আফরোজ রীতির বাড়ি এক বছর যাওয়া আসা করে। নুরে আলম দেশে ফিরে মেয়ের বিয়ের কথা শুনে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। আফরোজ নিজের বউয়ের কাছে ছুটে আসায় তার শশুর নুরে আলম তার বিরুদ্ধে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার মামলা দায়ের করেন। জামাই আফরোজ ও পাথরঘাটায় নিজের স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার জন্য একটি মামলা দায়ের করেন। এখনো মামলা চলমান।

রিতার বান্ধবীরা কান্নায় ভেঙ্গেপড়ে বলেন, রীতি ছিল আমাদের খুব কাছের বান্ধবী! ওর স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে! কিন্তু ওর মা-বাবা ওর অনিচ্ছুক এক বয়স্ক লোকের সাথে ওকে বিয়ে দেয়! এ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়! তবে আমাদের কলেজ বন্ধ থাকার কারণে অনেকদিন যাবত ওর সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয় না হঠাৎ কী জন্য আত্মহত্যা করল জানিনা! আমরা শুনে নিজেকে আর বুঝ দিতে পারলাম না!

আয়লা বাজারের স্থানীয়রা জানান , নুরে আলম বিদেশে থাকা অবস্থায় নুরে আলম এর স্ত্রী আসমা ও রীতি ও জামাতা ফিরোজ অনেক দিন ধরে আয়লা বাজারে একসাথেই ছিল।

নাম গোপন রেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, আমার জানামতে রিতির আম্মু একজনের সাথে সম্পর্কে জরিয়ে গেলে পরে  পরিবেশ গরম হওয়ার আগেই সেই ছেলের সাথে রিতিকে বিয়ে দিয়ে দেয়। হয়তো রিতা সেটা সহ্য করতে না পেরে করেছে! আমার দেখামতে মেয়েটিকে খুবই ভালো ছিল।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মঞ্জু বলেন, রিতি মা পাথরঘাটার আফরোজের সাথে বিয়ে দিতে চাইলে আমরা সে বাল্যবিয়ে পড়াতে না দিলে তখন চরকলোনী এলাকাবাসী কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিয়ে পরায়! বিয়ের পর আয়লা বাজারে মেয়ে ছেলে ও নুরে আলমের স্ত্রী আসমা একবসায় থাকতো। এখন কি জন্য আত্মহত্যা করেছে বুঝতে পেরে উঠছি না! তবে বাবা মায়ের ভুলের কারণে অকালে একটি মেয়ের জীবন গেল এগুলো আসলেই মানার মতো নয়!

লামিয়া আক্তার রিতির স্বামী আফরোজ মুঠোফোনে বলেন, আমার শ্বশুরবাড়ির সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ মামলা চলার কারণে গত এক বছর যাবত আমার শ্বশুর বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ হয় না এমনকি আমার স্ত্রী আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেননি। আমি আমার বাবাকে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকাতে চিকিৎসার জন্য আছি। আমি আমার স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ শুনেছি।আমার মনে হচ্ছে আমার স্ত্রীর উপর আমার শশুর শাশুড়ি নির্যাতন করেছে বিধায় আমার স্ত্রীর আত্মহত্যা করেছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আপনাদের মাধ্যমে অপরাধী যেই হোক না কেন তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

রিতির বাবা নুরে আলম বলেন, প্রায় দুই বছর আগে আফরোজ রিতিকে স্ত্রী দাবি করে আমাকে, আমার স্ত্রী আসমা ও রিতিকে আসামি করে পাথরঘাটা আদালতে একটি মামলা দায়ের করে হয়রানি করে আসছে। মামলাটি এখনও চলমান। হলফনামায় বিয়ে দেখিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শনিবার ভাইরাল করে।

তিনি আরো বলেন, রিতি এগুলো দেখে মনের কষ্টে দুঃখে-অপমানে ক্ষোভে অভিমানে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় আমার বসতঘরে বসে আত্মহত্যা করে। মুমূর্ষু অবস্থায় রিতিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসক জরুরিভিত্তিতে বরিশাল প্রেরণ করেন রিতিকে। পথিমধ্যে বিকাল ৩টায় রিতি অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান। এ ঘটনার পর থেকে আফরোজের ফোন বন্ধ। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, বরগুনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশ সোমবার ময়নাতদন্তের পর বাবা-মা এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা করতে চাইলে আমরা মামলা নেব।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

পাথরঘাটায় স্কুল ছাএীর আত্মহত্যা

আপডেট টাইম : ০৬:১৫:১২ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পাথরঘাটা প্রতিনিধি।

বাবা মায়ের সাথে অভিমান করে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন কলেজপড়ুয়া ছাত্রী লামিয়া আক্তার রিতি। বরগুনা সদর উপজেলার আয়লাপাতাকাটা ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামের নুর আলমের মেয়ে। রিতি কদমতলা বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান কলেজের ছাত্রী ছিলেন।

জানা যায়, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের সোবহান মিয়ার ছেলে আফরোজের সাথে প্রায় দুই বছর আগে রীতির সাথে বিয়ে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি মামলায় পড়ে নূরে আলমের স্ত্রী আসমার সাথে আফরোজের সাথে পরিচয় হয়, একপর্যায়ে নুর আলম বিদেশে থাকা অবস্থায় আসমা তার মেয়েকে আফরোজ এর কাছে বিয়ে দেয়। লামিয়া আক্তার রীতির বয়স কম থাকায় কোর্টের মাধ্যমে নোটারি করা হয়। বিয়ের পরে আফরোজ রীতির বাড়ি এক বছর যাওয়া আসা করে। নুরে আলম দেশে ফিরে মেয়ের বিয়ের কথা শুনে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। আফরোজ নিজের বউয়ের কাছে ছুটে আসায় তার শশুর নুরে আলম তার বিরুদ্ধে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার মামলা দায়ের করেন। জামাই আফরোজ ও পাথরঘাটায় নিজের স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার জন্য একটি মামলা দায়ের করেন। এখনো মামলা চলমান।

রিতার বান্ধবীরা কান্নায় ভেঙ্গেপড়ে বলেন, রীতি ছিল আমাদের খুব কাছের বান্ধবী! ওর স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে! কিন্তু ওর মা-বাবা ওর অনিচ্ছুক এক বয়স্ক লোকের সাথে ওকে বিয়ে দেয়! এ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়! তবে আমাদের কলেজ বন্ধ থাকার কারণে অনেকদিন যাবত ওর সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয় না হঠাৎ কী জন্য আত্মহত্যা করল জানিনা! আমরা শুনে নিজেকে আর বুঝ দিতে পারলাম না!

আয়লা বাজারের স্থানীয়রা জানান , নুরে আলম বিদেশে থাকা অবস্থায় নুরে আলম এর স্ত্রী আসমা ও রীতি ও জামাতা ফিরোজ অনেক দিন ধরে আয়লা বাজারে একসাথেই ছিল।

নাম গোপন রেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, আমার জানামতে রিতির আম্মু একজনের সাথে সম্পর্কে জরিয়ে গেলে পরে  পরিবেশ গরম হওয়ার আগেই সেই ছেলের সাথে রিতিকে বিয়ে দিয়ে দেয়। হয়তো রিতা সেটা সহ্য করতে না পেরে করেছে! আমার দেখামতে মেয়েটিকে খুবই ভালো ছিল।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মঞ্জু বলেন, রিতি মা পাথরঘাটার আফরোজের সাথে বিয়ে দিতে চাইলে আমরা সে বাল্যবিয়ে পড়াতে না দিলে তখন চরকলোনী এলাকাবাসী কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিয়ে পরায়! বিয়ের পর আয়লা বাজারে মেয়ে ছেলে ও নুরে আলমের স্ত্রী আসমা একবসায় থাকতো। এখন কি জন্য আত্মহত্যা করেছে বুঝতে পেরে উঠছি না! তবে বাবা মায়ের ভুলের কারণে অকালে একটি মেয়ের জীবন গেল এগুলো আসলেই মানার মতো নয়!

লামিয়া আক্তার রিতির স্বামী আফরোজ মুঠোফোনে বলেন, আমার শ্বশুরবাড়ির সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ মামলা চলার কারণে গত এক বছর যাবত আমার শ্বশুর বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ হয় না এমনকি আমার স্ত্রী আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেননি। আমি আমার বাবাকে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকাতে চিকিৎসার জন্য আছি। আমি আমার স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ শুনেছি।আমার মনে হচ্ছে আমার স্ত্রীর উপর আমার শশুর শাশুড়ি নির্যাতন করেছে বিধায় আমার স্ত্রীর আত্মহত্যা করেছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আপনাদের মাধ্যমে অপরাধী যেই হোক না কেন তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

রিতির বাবা নুরে আলম বলেন, প্রায় দুই বছর আগে আফরোজ রিতিকে স্ত্রী দাবি করে আমাকে, আমার স্ত্রী আসমা ও রিতিকে আসামি করে পাথরঘাটা আদালতে একটি মামলা দায়ের করে হয়রানি করে আসছে। মামলাটি এখনও চলমান। হলফনামায় বিয়ে দেখিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শনিবার ভাইরাল করে।

তিনি আরো বলেন, রিতি এগুলো দেখে মনের কষ্টে দুঃখে-অপমানে ক্ষোভে অভিমানে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় আমার বসতঘরে বসে আত্মহত্যা করে। মুমূর্ষু অবস্থায় রিতিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসক জরুরিভিত্তিতে বরিশাল প্রেরণ করেন রিতিকে। পথিমধ্যে বিকাল ৩টায় রিতি অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান। এ ঘটনার পর থেকে আফরোজের ফোন বন্ধ। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, বরগুনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশ সোমবার ময়নাতদন্তের পর বাবা-মা এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা করতে চাইলে আমরা মামলা নেব।