কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গবে কখন ??
- আপডেট টাইম : ০৭:২৮:২০ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২
- / ১৪২ ৫০০০.০ বার পাঠক
বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আওয়ামীলীগের দুর্দিনের পরীক্ষিত নেতা,কর্মী, ভোটার, সমর্থকের চেয়ে বিএনপি, জামাতের লোকজন ও হাইব্রিডদের অবস্থান অনেক ভাল এবং আওয়ামীলীগ সরকারের এমপি,মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগনের নিকট হতে এবং আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা সহ সকল কমিটির নেতৃত্বদানকারি নেতাদের নিকট হতে তারা সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা পেয়েছে ও পাচ্ছে । বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কিছু নেতাদের আচরন ও কর্মকাণ্ডে তৃনমূলের কর্মী সমর্থক ও ভোটাররা হতাশ। যার কারনে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদি এখনি দলিয়ভাবে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। দলের দুঃসময়ে শক্তিশালী কর্মী তৈরি হয়, আর দলের সুসময়ে অনেক তেলবাজ ও চামচা উড়ে এসে জুড়ে বসে। বর্তমানে আওয়ামীলীগের কিছু কিছু নেতা ও প্রতিনিধি এরকম তেলবাজ ও চামচা দ্বারা আক্রান্ত। আওমীলীগ বেড়েছে কিন্তুু ভোট বাড়েনি, নেতা বেড়েছে, কর্মী বাড়েনি, এরাই হচ্ছে দুই কুলের সুযোগ গ্রহনকারি হাইব্রিড। একটা বিসয় সবার জানা যে, সুবিধাভোগিরা কখনো কারো আপন হয়না। যারা বর্তমানে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট হতে সুন্দর সুন্দর কথা বলে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন মোহ ও স্বপ্ন দেখায়ে সুযোগ সুবিধা গ্রহন করছে ঠিক তারাই পুর্বের বিএনপি,জাতীয় পার্টি সরকারের আমলে অনুরুপ কৌশল অবলম্বন করে সুবিধা গ্রহন করেছে। তারাই এখন আওয়ামীলীগ সরকারের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে সুবিধা গ্রহন করছে। চমৎকার তাদের কৌশল যারা জীবনে কোন দিন দেয়নি নৌকায় ভোট, তারা এখন পরে মুজিব কোট। ফলে আওয়ামীলীগের লোকজন আগে হয়েছে নির্যাতিত আর বর্তমানে নিজ দলের সরকারের আমলে হচ্ছে সুবিধা বঞ্চিত। একটা উদাহরণ দেই দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে বর্তমান সরকারের আমলে সরকারি সুবিধাভোগির সংখ্যা ৪৪ শত প্রায়, এখানে প্রতিটি পরিবারে অন্ততপক্ষে দুজন সদস্য আছে। তাহলে দুইটি করে হলেও ভোট নৌকা প্রতিক পাওয়ার কথা, সেখানে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা ভোট পায় ৪১ শত মাত্র। এর জন্য দায়ী কে? নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের উদাশিনতাই দায়ী।
বর্তমানে দেশে কেবলমাত্র নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু হওয়া মাত্র তারা নিজের প্লাটফর্মে ফিরে গিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার হটাও আন্দোলনে শরিক হয়ে নেতৃত্ব দেয়া শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ দিনে আওয়ামীলীগের সঙ্গে রাতে বিএনপির সঙ্গে থেকে উভয় কুল রক্ষা করে চলছে । আমাদের দলের কিছু নেতা, এমপি,মন্ত্রী ও তাদের স্টাফ এপিএস,পিএ,বিএনপি জামাত দলের অর্থ যোগানদাতা তৈরি করে দিয়েছে। প্রশ্ন আসতে পারে কেমনে ? হাঁ তারা বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারী, বেসরকারি চাকুরীতে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে চাকুরী পাইয়ে দিয়েছে। যারা আজ সরকারের খেয়ে বিএনপি জামাত দলকে পরিচালনা করার জন্য অর্থ যোগান দিচ্ছে। আবার কিছু লোককে দেখা যায় তারা সব সময় ক্ষমতাসীন দলের লোক, তারা ৭৫ পরবর্তীতে জিয়া সরকারের আমলে বিএনপির খোদ ভক্ত,আবার এরশাদ সরকারের আমলে এসে জাতীয় পার্টির থলে বহনকারী নেতা,পরবর্তীতে খালেদাজিয়া সরকারের আমলে এসে আবার বিএনপির কট্টর ভক্ত। একই ব্যক্তি আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেখা গেছে আওয়ামীলীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বদানকারি নেতাদের আস্তাভাজন মস্তবড় নেতা। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এবং তাদের পরামর্শে অনেক কাজের সীদ্ধান্ত গ্রহন করতেও দেখা গেছে। তারা কৌশল করে বিএনপি জামাতের অনেক লোককে আওয়ামীলীগের এমপি,মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিসদের চেয়ারম্যান সহ দলিয় নেতাদের নিকট হতে অনেক রকম সুবিধা পাইয়ে দিতেও পিছপা হননি। এর পেছনে অনেক কারনো আছে যা এই লেখার প্রকাশ করা ঠিক হবেনা। তবে তারা কৌশল জানে বটে। কোন কৌশলে, কোন কথায় এবং কি করলে একজন এমপি মন্ত্রী সহ নেতাদের মন জয় করা যাবে সেটা তারা খুব ভালভাবে জানে। স্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ( বর্তমান মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য, ততকালীন মন্ত্রী) কে গরু উপঢৌকন দিতেও দেখেছি তাদের। বর্তমানে আওয়ামীলীগের শত্রু নব্য আওয়ামীলীগ। তবু কি কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গবে না ? কর্মী থেকে নেতা হলে সেই নেতাই কর্মীর দুঃখ বুঝে, আর হটাৎ নেতা হলে সেই নেতা কখনোই কর্মীর মুল্যায়ন ও দুঃখ বুঝেনা।দলের দুর্দিনের নেতা কর্মীরা এটাও জানে তাদের মুল্যায়ন হবেনা তার পরও তারা রাজনীতি ছাড়তে পারেনা, কারন আওয়ামী রাজনীতি তাদের রক্তের সাথে মিশে গেছে। দলিয় কর্মী, ভোটার ও সমর্থকদেরকে নেতা নির্বাচন /নির্ধারণ করার স্বাধীনতা বা সুযোগ দিলে এইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেনা দল। স্ব-স্বার্থ সিদ্ধি করার লক্ষে পকেট কমিটি করার বলয় থেকে বের হয়ে এসে দলিয় কর্মীদেরকে পছন্দের ও জনগনের গ্রহণযোগ্য নেতা বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তবেই দল পরিচালনার জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা ফিরে আসবে বলে মনে করেন আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা। মনগড়া ও পকেট কমিটি গঠন করার কারনে যে আওয়ামীলীগের কমিটি হয় সেই কমিটি হয় প্রতিবন্ধী কমিটি। সেই কমিটির নেতাদের নিজস্বভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকেনা, ন্যায়কে ন্যায় অন্যায়কে অন্যায় বলার বাক স্বাধীনতাকে জমা দিতে হয় পকেটওয়ালার নিকট। কমিটির সদস্যদেরকে নিয়ে কোনো কাজ করতে গেলে পকেট ওয়ালার অনুমতির অপেক্ষায় থাকতে হয়। অনুমতি ছাড়া কিছু করলেই বিপদ, পরে পকেটওয়ালার রক্তচক্ষু দেখতে হয় এবং স্বপদও হারাইতে হয়,তাছাড়া হতে হয় গুরুত্বহীন। দেখা গেছে পকেটওয়ালার যে যত মোসাহেবি করেছে, কথায় কথায় জ্বি, আচ্ছা, যথাজ্ঞা বলেছে, তেল মারতে পেরেছে সেই হয়েছে আস্তাভাজন বড় নেতা। বর্তমানে অনেকাংশে এই সুযোগ গ্রহন করেছে হাইব্রিডরা।
তাই দলের যেই নেতারা দলের দুর্দিনের পরীক্ষিত তৃনমূলের নেতা, কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের অবমুল্যায়ন করেছে এবং বিএনপি জামাত থেকে আসা সুবিধাবাদি হাইব্রিড লোকজনের মুল্যায়ন করেছে তাদের বিরুদ্ধে দলের নিয়ম পরিপন্থী আচরনের জন্য দলিয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক বলে মনে করেন অনেকে । বিশ্বের বেসিরভাগ নেতার পতন হয়েছে নির্বাচিত হবার পর বা নেতৃত্বে এসে বিশ্বস্ত কর্মীদের দুরে সরে দিয়ে হাইব্রিড ও সুবিধালোভীদের
সঙ্গে নিয়ে পথ চলার কারনে।
সম্প্রতি কয়েক মাস আগে দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, সেই নির্বাচনের আগের পরিষদে পরিলক্ষিত হয়েছে যে, নৌকা প্রতিকে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের পরিষদ জুড়ে অবস্থান নিয়ে চেয়ারম্যানের বাঁম,ডান,সামনে,পেছনে জামাত,বিএনপি, হাইব্রিড ও সুবিধালোভি লোকজনে পরিপূর্ণ। তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আওয়ামীলীগের লোকজনকে হটিয়ে দিয়ে সেই চেয়ারম্যানের নিকট হতে সকল প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহন করেছে। অনেক সময় দেখা গেছে দলের নেতৃত্বে থাকা পদ পদবিধারী অথবা দলিয় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা খোদ আওয়ামীপন্থী লোকজনদের কে শাসিয়ে, ধমক দিয়ে দমিয়ে রেখেছে। তাদের অভিযোগগুলো বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। এমনকি নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং দলের পদ পদবিধারী নেতাদের দলিয় দুর্দিনের কর্মীদের সঙ্গে বিরুপ আচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করেনা। কোন বিসয় নিয়ে তাদের স্মরণাপন্ন হলে তারা বিরক্তবোধ করেন। আবার তারাই জনপ্রিয় নেতা হিসেবে নিজেকে দাবী করেন। দেখা গেছে নির্বাচন বা কাউন্সিল আসলে তারা নিজের চরিত্র পাল্টিয়ে সেই পরীক্ষিত কর্মীদের ঘাঁড়ে পা দিয়েই নির্বাচন অথবা কাউন্সিল পাড়ি দেন। পার হয়েই আবার সাবেক স্বমুর্তি ধারন করেন। আসলে এই নেতা বা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দলের কতটা মঙ্গল চায় তা ভাবার বিসয়। তাদের এইসব আচরণের প্রেক্ষিতে বঞ্চিত হয়েছে সেই লোকজন যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রানের প্রিয় প্রতিক নৌকাকে নিপুল ভোটে বিজয়ী করে নিয়ে এসেছে। আবার সেই সুবিধালোভি জামাত বিএনপির হাইব্রিডদের কু প্রবঞ্চনায় স্বদলিয় নেতা / জনপ্রতিনিধিদের নিকট লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। মুখবুঝে সব লাঞ্ছনা অবিচার সয্য করে তবু আওয়ামীলীগের দুর্দিনের সেই লোকজন দল ও প্রতিককে ভালবাসার কারনে নির্বাচন আসলে ঠিক থাকতে পারে না, ঝাপিয়ে পড়ে প্রিয় প্রতিক নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে। অনুরুপ ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা সর্বপরি জাতীয় সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং দলের তৃনমুল হতে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যায় পর্যন্ত একই চিত্র বিদ্যমান। যার কারনে বিগত নির্বাচন গুলোতে অনেক যায়গায় পুর্বের সম্ভাবনা থাকা অবধিও পরাজিত হয়েছে নৌকা। তাই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও নৌকার তৃনমুল পর্যায়ের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আমি দলের নীতিনির্ধারকদের প্রতি অনুরোধ জানাই আসছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন আওয়ামীলীগ ও দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই পুর্বের ভুল ও অসঙ্গতি থেকে শিক্ষা গ্রহন করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেনো সেই ভুল ও অসঙ্গতির ধারাবাহিকতা বজায় না থাকে সে বিসয়ে সজাগ থাকতে হবে। এখনো সময় আছে দলের সেই সুবিধা বঞ্চিত, অবহেলিত, দুর্দিনের নেতা, কর্মীদের নিকট যান,তাদেরকে ডেকে নিন, দলে আবারো সক্রিয় করেন নচেৎ সামনে অন্ধকার দেখতে হবে। দলিয় প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা ও অবদান আপনাদের মতো কিছু অস্বচ্ছ নেতৃত্বের কারনে আজ যেনো ম্লান না হয় সেদিকে খেয়াল করুন। তৃনমুলের এহেন নেতৃত্বের ও পরিস্থিতির তথ্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট পৌঁছাতে শুর করেছে, সকল ধান্দাবাজি নেতৃত্বের বলয় থেকে বের হয়ে এসে সঠিক নেতৃত্ব দেয়া শুরু করেন নইলে নিজ কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে কবে। জয় বাংলা (চলবে)