খুলে গেলো সপ্নের দ্বিতীয় দার
- আপডেট টাইম : ০১:০৮:১২ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১৫১ ৫০০০.০ বার পাঠক
পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে গেলো সপ্নের দ্বিতীয় দার সেই সঙ্গে এই রুট হয়ে বরিশাল-খুলনার সময়ের দুরত্ব কমেছে প্রায় দের ঘন্টার।
এতে করে এখন থেকে বরিশালর বিভাগের ৬ জেলার মানুষ স্বল্প সময়ে এবং সহজেই খুলনা, মংলা সমুদ্র বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়কপথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ করতে পারবে।
বরিশাল থেকে পিরোজপুর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার, আর পিরোজপুর থেকে বরিশালের দুরত্ব ৫৫ কিলোমিটার অথচ পিরোজপুর থেকে বিভাগিয় শহর বরিশালে যেতে সময় বেশি লাগতো প্রায় দের ঘন্টা যে কারনে বরিশালের পরিবর্তে খুলনার সাথেই যোগাযোগ টা ছিলো বেশি এবং উন্নত হয়েছে শিল্প নগরী খুলনার শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা সহ সকল ক্ষেত্রে।
ব্যবসায়ীক, সামাজিকসহ বিভিন্ন কারণে বরিশাল অঞ্চলের মানুষ ঢাকার পর সব থেকে বেশি যোগাযোগ রাখে খুলনার সঙ্গে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতু পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি পায়রা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক পথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করলো। ফলে বরিশাল ও খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠবে। এছাড়া বরিশাল অঞ্চল থেকে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে ভারতে যাতায়াতকারীদের ভোগান্তিও কমবে।
উন্নত চিকিৎসার জন্ন বরিশালের পরিবর্তে খুলনার সাথেই যোগাযোগ করতো হাজারো মানুষ এখন থেকে কম সময়ে দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ করে দিলো মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
আগে ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী কিংবা সাগরকন্যা কুয়াকাটায় যেতে হলেও খরস্রোতা কঁচা নদী পাড়ি দিতে হতো। আর বৈরি আবহাওয়া থাকলে তো এ নদী পার হওয়ার কথা কল্পনাও করা যেতো না। সেই সঙ্গে ফেরি বিড়াম্বনা তো ছিলই, এখানে যানবাহন যতই হতো একটি ফেরির বেশি চলাচল করতো না। তাই ফেরি একবার মিস করলে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট ঘাটেই বসে থাকতে হতো। সেতুতে যান চলাচলের মধ্য দিয়ে সব বিড়ম্বনার অবসান হবে।
দুই দিন আগে ফেরিঘাটের পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে এক কাস্টমস কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে কচা নদী তীরবর্তী বেকুটিয়া এলাকার বাসিন্দারা কলেজ শিক্ষার্থীরা কলেজে যেতে তারা আগে কচা নদী ফেরি, নয়তো ট্রলারে পার হতেন। বৈরি আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হয়েছেন দীর্ঘদিন । কিন্তু এ সেতু হওয়ার মধ্য দিয়ে এখন সহজেই তাদের কলেজসহ পিরোজপুর সদরে যাওয়া-আসা করতে থাকবেনা আর কোন বাধা।এতে খরচও কমবে বলে মনে করেন তারা সকল শ্রেনী পেশার মানুষ।
যদিও খরচ কমার থেকেও ভোগান্তি কমাকেই বড় করে দেখছেন বরিশাল-পিরোজপুর-বাগেরহাট হয়ে খুলনা রুটে চলাচলকারী বাসের চালকরা। তাদের মতে শুধু কচা নদীর ফেরির কারণে এ রুটের চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে ভোগান্তির শেষ ছিল না। এখন সহজেই পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল ও ঝালকাঠি থেকে পিরোজপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও মংলায় যেতে পারবেন যাত্রীরা। সেই সঙ্গে বাগেরহাট সংলগ্ন সুন্দরবন ও সাগরকন্যা কুয়াকাটাসহ অভ্যন্তরীণ পর্যটনেরও বিকাশ ঘটবে। এতে এই সড়ক পথে যাত্রীদের নির্ভরতা বাড়বে এবং পরিবহন ব্যবসার প্রসার হবে।
ঘাটের অন্তর্গত ব্যাবসায়িদের সাথে কথা বল্লে তারা যানান আমাদের বড় মাপের ক্ষতি হলেও এই যোগাযোগ আমাদেরকে নতুন ভাবে বেঁচে থাকার সপ্ন দেখাবে।
সব মিলিয়ে কঁচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে খুশি হয়েছেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের দুই বিভাগের ১১ জেলার মানুষ।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে পিরোজপুর সদরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের সেতুতে ১০টি পিলার ও ৯টি স্প্যান রয়েছে। ৮৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চায়না রেলওয়ে ১৭ ব্যুরো গ্রুপ লিমিটেড নামের একটি চীনা প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করে। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা চীন সরকার এবং বাকি অর্থ ব্যয় করেন বাংলাদেশ সরকার । ৪২৯ মিটার ভায়াডাক্টসহ দুই লেনের সৈতুটির দৈর্ঘ্য ১৪২৭ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার।