মিত্রবাহিনীর আত্মত্যাগ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি মূল কাজ প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ * ব্যয় ১৮৭.১০ শতাংশ এবং মেয়াদ শতভাগ বেড়েছে
- আপডেট টাইম : ০৭:২৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই ২০২২
- / ১৬৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগের ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও মূল স্তম্ভ নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি। দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু গত এপ্রিল পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ। ইতোমধ্যেই ব্যয় বেড়েছে ১৮৭ দশমিক ১০ শতাংশ এবং মেয়াদকাল বেড়েছে শতভাগ। স্থান নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় কজে ধীরগতি বিরাজ করছে। আর সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, মূল সমস্যা ছিল জমি অধিগ্রহণ নিয়ে। প্রথমবার যে জমিটি নির্বাচন করা হয়, সেটি পরবর্তী সময়ে নানা জটিলতার কারণে বদলাতে হয়েছে। তবে এখন আর কোনো জটিলতা নেই। পুরোদমেই কাজ শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে শেষ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সেটি না হলে এক বছর মেয়দ বাড়াতে হতে পারে। তবে ব্যয় বাড়বে কি না, সেটি এখনো বলতে পারছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প এলকায় বন্যার পানি ঢুকেছে। তবে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কাজ করা যাবে।
সূত্র জানায়, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে মিত্রবাহিনীর শহিদ সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রকল্প তৈরির সময় ২০১৪ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী সবকিছুর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। ফলে পরবর্তী সময়ে রেট শিডিউল পরিবর্তন করে ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযাযী ব্যয় ধরা হয়। ফলে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এরপর জমি অধিগ্রহণের সময় জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ মামলা করায় আরবিট্রেশন কোর্ট জমির মূল্য ৪ কেটি টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাড়িয়ে দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এটি মূল অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় ১৮৭ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি সম্ভব হয়নি। প্রথম সংশোধনীতে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ফলে মেয়াদ বৃদ্ধি পায় প্রায় শতভাগ।
গত মাসে চূড়ান্ত হওয়া আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থান নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে যথাসময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নিয়মিত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না দেওয়ায় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। পাশাপাশি প্রকল্পের পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) এবং পিএসসি (প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি) বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। আরডিপি (সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী, প্রকল্পটির আওতায় কাজের ১৮টি প্যাকেজ রয়েছে।
এর মধ্যে ১২টি প্যাকেজে পণ্য ক্রয় বাবদ ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়। ২০১৮ সালের ৬ জুন ৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩টি প্যাকেজে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও আসবাবপত্র কেনা হয়েছে। ৪টি পূর্ত প্যাকেজের আওতায় ৩৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলনের বিপরীতে একটি প্যাকেজে ৩৪ কোটি ২০ লাখ টাকা দরপত্র ২২ মে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। দুটি সেবা প্যাকেজ বাবদ ৮১ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলনের বিপরীতে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২ জন কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। একই বছর একটি প্যাকেজের আওতায় যানবাহন ভাড়া বাবদ এখন পর্যন্ত এ খাতে ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, প্রকল্পটির ভৌত অবকাঠামোর দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু হয়নি। এমনকি জমি হস্তান্তরের ৮ মাস পার হলেও সীমানাপ্রাচীর ও মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থানটি পানিতে নিমজ্জিত আছে। এজন্য বর্ষা মৌসুমে নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে না। আরও বলা হয়েছে, পরিপত্র অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর পিআইসি এবং পিএসসি বৈঠক আয়োজনের বিধান ছিল। এ হিসাবে প্রায় ২০টি করে বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু উভয় বৈঠকই হয়েছে মাত্র ২টি করে। প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৪ জন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে প্রকল্পটিতে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এছাড়া কার্যক্রম পরিকল্পনামাফিক হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্মাণকাজ শুরু করতে না পারা ছাড়াও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। প্রকল্পটির ঝুঁকি হিসাবে বলা হয়েছে, বাস্তবায়নকালে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া এটি বাস্তবায়নের পর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে অর্থের অভাব হতে পারে। এছাড়া ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমন্বয়ের অভাব হতে পারে।