দখলমুক্ত হলো ওয়াকফ্ এস্টেটের সম্পত্তি, উচ্ছেদে কর্মহীন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
- আপডেট টাইম : ০৪:৫৩:০৬ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
- / ২১৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি।।
রাজশাহীর বাঘায় ওয়াকফ্ এস্টেটের সম্পত্তি থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারী) সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহরাব হোসেন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন।
এর আগে দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং করে ঘোষনা দেওয়া হয়। অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা সেচ্ছায় দোকান সরিয়ে নেন। কিছু ব্যসায়ীরা দোকান সরিয়ে না নেওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জানা গেছে, এতদিন মাজার এলাকার ওয়াকফ্ সম্পত্তিতে ও রাস্তার পাশে পলিথিন কিংবা উপরে টিনের চালার নীচে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলো এসব ব্যবসায়ীরা। এতে করে একদিকে বেদখল হয়ে যাচ্চিল ওয়াকফ্ এস্টেটের সম্পত্তি আরেকদিকে সৌন্দর্য হারাতে বসেছিল ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ ও মাজার এলাকা প্রাঙ্গন। স্বল্প পূজির দরিদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন জীবিকা নির্বাহ হলেও অবৈধ ওইসব দোকান থেকে সুবিধা ভোগ করতো এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্তভুগিরা। অন্যদিকে বখাটেদের উৎপাতসহ মাজার এলাকার চারপাশ অপরাধ কর্মকান্ডের নিরাপদ স্থান হিসেবেও পরিনত হয়। এরফলে মাজার ও রাজশাহীর ঐতিহাসিক বাঘা শাহী মসজিদ দেখতে আসা পর্যটকসহ দর্শনার্থীদের পড়তে হতো নানান সমস্যায় । বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সুধিমহলে আলোচনা হয়। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।
এদিকে উচ্ছেদের পর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বল্প পূজির দরিদ্র ব্যবসায়ীরা। যাদের সামান্যতম সামর্থ্য আছে, তারা জায়গা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালাতে পারলেও সিংহভাগ ব্যবসায়ী কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে এচিন্তা পেয়ে বসেছে তাদের। এদের কেউ ছিলো গার্মেন্টসের জামা-গেঞ্জি ব্যবসায়ী, কেউ রুটি বিক্রেতা,কেউ ছিলো পান সিগারেট ও চা বিক্রেতা। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারী) অভিযান চালিয়ে রাস্তার ধারে ও মাজার এলাকার ওয়াকফ্ সম্পত্তি থেকে শতাধিকের উর্ধ্বে দোকান উচ্ছেদ করে উপজেলা প্রশাসন।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,চা-সিঙ্গাড়ার দোকান বসিয়ে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি ছেলের লেখাপড়া করাতেন আব্দুস সালাম। তার মতো অনেকেই মাজার এলাকার ওয়াকফ্ সম্পত্তিতে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতো। উচ্ছেদের পর তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ব্যবসা করে সংসার চালানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন এসব ব্যবসায়ীরা। তাই সরকারের নিকট তারা কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছে ।
বাঘা পৌর সভার প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু বলেন,হাট বাজার ইজারা নেওয়ার সুবাদে ওয়াকফ্ এষ্টেটের জায়গায় অবৈধ দোকান থেকে বিভিন্নভাবে মাসোয়ারা নেওয়া হতো। সেখানকার জায়গাও আস্তে আস্তে দখল হয়ে যাচ্ছিল। বাজার বসানোর কারণে মাজার ও রাজশাহীর ঐতিহাসিক বাঘা শাহী মসজিদ দেখতে আসা পর্যটকসহ দর্শনার্থীদের নানা সমস্যায় পড়তে হতো।
স্থানীয়রা জানান, যানজটে পথচারিদের চলাফেরায় বিঘœসহ পুরাতন স্থাপনা ঐতিহাসিক শাহী মসজিদটি বাইরে থেকে কোন ভাবেই দেখার উপায় ছিলনা। রাস্তায় চলাচলকারি লোকজনের মসজিদটি দেখার সুবিধার্থে মেইন সড়ক সংলগ্ন ওয়াকফ্ সম্পত্তিতে প্রাচীর দেয়া আছে। নিষেধাজ্ঞা সত্বেও সেই প্রাচীর ঘিরে ব্যবসা করতো।
ওয়াকফ্ এষ্টেটের সম্পত্তিতে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন এমন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,হাট বারের দিন খাজনা দিতে হয় ৩০ থেকে ২০ টাকা। আর প্রতিদিন দিতে হয় বিশ টাকার কম কিংবা বেশি। হাট বাজার ইজারা নেওয়া ইজারাদারের লোকজনকে এই টাকা দিতে হতো।
ওয়াকফ্ এষ্টেটের মোতয়াল্লী (রইশ) খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম বলেন, ওপরে টিনসেট ও তিন পাশে মোটা পলিথিন দিয়ে অসংখ্য দোকান বসানো হয়েছিল । এছাড়াও মাজার ও মসজিদ গেটের প্রবেশ দ্বার দিয়ে বিভিন্ন পণ্যর সারি সারি দোকান বসিয়ে ব্যবসা করতো। দখলে নেওয়ার কারণে অস্তীত্বহীন পড়েছিল আম গাছের নীচে দর্শনার্থীদের বসার পাকা সেড।
তিনি বলেন,জায়গার মালিক আমি হলেও প্রভাব খাটিয়ে সেখানে বাজার বসিয়ে হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ টাকা ফায়দা লুটেছে আরেকজন। দোকান সরিয়ে নেওয়ার কথা বললে আমাকেই চোখ রাঙিয়ে কথা বলেছে। বাজারের নামে ওয়াকফ্র জমি দখলের বিষয়টি ওয়াকফ্ এষ্টেটের মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় প্রশাসন ও কমিটির অন্য সদস্যদের জানানো হয়। তিনি বলেন, সেখান থেকে মাজার কর্তৃপক্ষ কোন টাকা পয়সা নেননি ।
ওয়াকফ্ এষ্টেটের মোতয়াল্লী (রইশ) খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম জানান,২০০৭ সালে সরকারি হাট বাজারের জমি থেকে দোকান ঘর উচ্ছেদের ওই সময় ওয়াকফ্ এষ্টেটের সম্পত্তি থেকে দোকান ঘর উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। পরে সীমানা প্রাচীর দিয়ে মাজার ও রাজশাহীর ঐতিহাসিক বাঘা শাহী মসজিদে প্রবেশের জন্য বিশাল আকারে দুইটি গেট নির্মাণ করা হয়। আর দর্শনার্থীদের বসার জন্য ওয়াকফ্ এষ্টেটের সম্পত্তির গাছের গোড়ায় গোল করে পাঁকা সেড নির্মাণ করা দেওয়া হয়। কিন্তু কর্র্তৃপক্ষের নিষেধ উপেক্ষা করে আবারো অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। সেখান থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে খাজনা আদায় ছাড়াও দর্শনার্থীদের যানবাহন থেকেও টাকা আদায় করা হতো।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে আবারো অভিযান চালিয়ে সড়কের ধারে ও মাজার এলাকার ওয়াকফ্ সম্পত্তি থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে উপজেলা প্রশাসন। আবার সেই জায়গা দখল করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির বাজার বসানো হয়েছিল ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির সাথে কথা বলে এসব ব্যবসায়ীদের পূর্নবাসনের চেষ্টা করবো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, বাঘা শাহী মসজিদ ও হযরত শাহদৌলা মাজার একটি পবিত্রস্থান। এর আশেপাশে কিছু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে দোকান বসানোর কারনে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছিল। এই পরিবেশ যেন আর বিনষ্ট না হয়, এ বিষয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাঘা ওয়াক্ফ এস্টেটের দোকান উচ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্তÍ হয়। সেই মোতাবেক দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, ওয়াক্ফ এস্টেটের