ঠাকুরগাঁওয়ে এক ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, সমন্বয়হীনতাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সচিব ইসাহাক আলী’র বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাকে দ্রæত বদলি বা তাকে চাকুরিচ্যুত করার দাবিও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সচিব ইসাহাক আলী’র বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, সমন্বয়হীনতাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে নিজ এলাকায় ও নিজ ইউনিয়নে চাকুরিত রয়েছেন ইউনিয়নের সচিব ইসাহাক আলী। সে কারণেই তার প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন স্থানীয় মানুষরা। তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের অনলাইন জন্ম সনদে সরকারি রেটের চেয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়, জন্ম সনদ প্রাপক ও তাদের অভিভাবকদের ভূল সনদ প্রদান, হয়রানিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা। এছাড়া শুধু জন্ম সনদ নয়, বিধাব ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্যও স্থানীয় মানুষদের কাছে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এই ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব নিয়ে ইউনিয়নের বাসিন্দাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের সাথে খারাপ ও অসংগতিপূর্ণ আচরণ করে ও ক্ষমতা খাটিয়ে তাদের চুপ করিয়ে রাখারও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে সরকারি চাকুরিতে পোষ্টিং দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ অন্যায় ও অবৈধভাবে নিজ , জেলা, উপজেলা এমনকি একই ইউনিয়নে ইউপি সচিব পদে চাকুরি করছেন ইসাহাক আলী। তাছাড়া বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, সমন্বয়হীনতাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের অনলাইন জন্ম সনদে সরকারি রেটের চেয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়, জন্ম সনদ প্রাপক ও তাদের অভিভাবকদের ভূল সনদ প্রদান, হয়রানিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা। এছাড়া শুধু জন্ম সনদ নয়, বিধাব ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্যও স্থানীয় মানুষদের কাছে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এই ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত ১৫ই ফেবুয়ারি মঙ্গলবার ইউপি সচিব ইসাহাক আলীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ভুক্তভগিরা।
এ বিষয়ে ০১ নংওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা সুরুজ্জামান বলেন, আমি আমার মেয়ের জন্ম সনদের জন্য ১৫-২০ দিন আগে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু টাকা নিয়েও ইউপি সচিব ইসাহাক আলী আমাকে ঘুরাচ্ছেন । কিন্তু সনদ দিচ্ছেন নাহ। আর এটা তো মানুষ হয়রানি । আমার মতো এমন শত শত মানুষ হয়রানি শিকার হচ্ছেন তার কাছে। এই হয়রানি কনে এটা বুঝতে পারছি
না । আর আমাদের কথা না শোনায় আজ আপনাদের স্মরণাপন্ন হয়েছি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রায়পুর ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ডেও বাসিন্দা কুসুমদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে আমার ছেলে ও মেয়ের জন্ম নিবন্ধন সনদদের জন্য ইউপি সচিব ইসাহাককে টাকা ও কাগজ দেই। কিন্তু টাকা ও কাগজ নিয়ে গত দুই মাসেও আমার সনদ দেননি সচিব। কাজ না করে উল্টো টালবাহানা করে সময় ক্ষেপন ও হযরানি করছেন আমাকে। আর কিছু বলতে গেলে বলেন, বেশি কথা বললে কাজ হবেনা। আর নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ইউনিয়নের জন্ম সনদসহ বিভিন্ন কাজ তিনি বাসায় নিয়ে গিয়ে করছেন। নিয়ম মাফিক কোন কাজ করেন না সেক্রেটারি বা সচিব বলেও অভিযোগ তার। চেয়ারম্যানকে অভিযোগ করেওকোন সুরাহা পাচ্ছি না আমরা বলেও অভিযোগ এই ভূক্তভুগির।
মেয়ের জন্ম সনদের কাগজ দিয়েছেন সচিবকে ০২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুদাম সেন গত ২৪ শে নভেম্বর ২০২১, কিন্তুু এ ঘটনার ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও কাগজ পাইনি। আর প্রতি কাগজ সনদ ৫০/- নেওয়ার কথা থাকলেও তার বিপরীতে নেওয়া হচ্ছে ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। আমার শুধু নয় এই ইউনিয়নের প্রায় ৫০০-৭০০ মানুষের এই জন্ম সনদের টাকা নিয়ে কাগজ দিচ্ছেন না। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও কাজ করে দিচ্ছেন না তারা। শুধু কারণে অকারণে হয়রানি করাচ্ছেন। এটার একটা সুরাহা হওয়া উচিত দ্রæত। তা না হলে আরো বেশি মানুষ হযরানির শিকার হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা বলেন, সচিব (সেক্রেটারি সাহেব) ইউনিয়ন পরিষদে যা খুশি তাই করে চলেছেন, কিন্তু দেখার কেউ নেই। জন্ম সনদে ৫০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও অনেক বেশি অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের কাজ পরিষদে করার নিয়ম থাকলেও তা বাইরে থেকে করে আনছেন। আর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সাথে সমন্বয করে জন্ম সনদের কাজ করার কতা থাকলেও তা কখনই করেন না তিনি।
আর সনদ করার জন্য অনলাইনের পাসওয়ার্ড কাজের জন্য কাজের জন্য উদ্যোক্তাদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেন না। ফলে অনেক কাজ জমা পড়ে আছে আর এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে করে বদনাম হচ্ছে পরিষদ ও ইউপি চেয়ারম্যানের । বার বার সবিচকে অনুরোধ করা স্বত্তে¡ও তিনি কর্ণপাত করেন না। বরং এই ইউনিয়নের বাসিন্দা হওয়ায় কাউকে তোয়াক্কা করেন না সচিব। এমকি চেয়ারম্যানের কথাও শোনেন না সচিব। এমন কর্মকান্ডের জন্য জনগণের হয়রানি দূর্ভোগ হচ্ছে। সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
রায়পুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা সুলতান আলী জানান, সচিব (সেক্রেটারি সাহেব) ইউনিয়ন পরিষদে অনিয়ম ও দূর্নীতিতে ত্রাসের রাজত্ব কামে করেছেন। জন্ম সনদে ৫০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও অনেক বেশি অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কাজ পরিষদে করার নিয়ম থাকলেও তা বাইরে থেকে করে আনছেন। তাছাড়া বিধাব ভাতা, চালের কার্ড, বযস্ক ভাতাসহ সব ব্যাপারেই টাকা নেন সচিব। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে টাকা নিয়ে অবৈধভাবে অযোগ্যদের কাজ করে দেন।
ফলে দরিদ্র ও অসহায়রা বঞ্চিত হচ্ছেন। তার এসব কর্মকান্ডে ইউনিয়ন পরিষদ ও চেয়ারম্যানের অসেক বদনাম হচ্ছে। এছাড়া তার অপকর্মের কারণে সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় জনগণের সাথে আমাদেরও দাবি এই দূর্নীতিবাজ সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক ও তাকে দ্রæত অন্যত্র বদলি করে এই ইউনিয়নের মানুষকে হযরানি থেকে মুক্তি দেয়া হোক।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, ইউপি সচিব ইসাহাক আলী’র বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ পাচ্ছি। অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যহার, সমন্বয়হীনতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এর মধ্যে। আমি চেয়ারম্যান হলেও আমার কথাও শোনেন না সচিব। আর জন্ম সনদ নিয়ে সচিবের অনিয়মের কারণে অনেক মানুষের হয়রানি অভিযোগ পাচ্ছি। সচিবের বিরুদ্ধে বিধাব ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্যও স্থানীয় মানুষদের কাছে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
একই ইউনিয়নে সচিবের বাসা হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব বিষয়ে বার বার বলার পরেও কথা না শোনায় ইউপি সচিবের বিষয়ে সদর ইউএনও মহোদয়ের কারণে মৌখিকভাবে আমি ও পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেছ্ িইউএনও মহোদয় ডিসি মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে এর সমাধান দেবেন। তারা সমাধান না দিলে আমি কিছুই করতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সচিব ইসাহাক আলী জানান, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো সঠিক নয়। তবে গ্রাহক কিছু হয়রানি হচ্ছে জন্ম সনদের আমাদের ভুল ভ্রান্তিসহ বিভিন্ন কারণে । আর মানুষ টাকা দেয় অতিরিক্ত জোর করে, দ্রæত
কাজ করে দেওয়ার জন্যই। আমি অনলাইন কাজের পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় কিছু লোকজন আমাকে বদনাম করছে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো: সামসুজ্জামান বলেন, ইউপি সচিব ইসাহাকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুখে ও মুঠোফোনে অনেকবার সর্তক করেও তিনি ভালো হননি। আর এ বিষয়ে ডিসি মহোদয়ের সাথে াালোচনা করে তার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, ইউপি সচিব ইসাহাক আলী’র বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছি। ভূল বশত তাকে নিজ উপজেলা ও ইউনিয়নে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে সেটা সংশোধন করা যাবে। কেউ আইনের উর্দ্বে নয় আর তার অনিয়ম দূর্নীতির জন্য তাই তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিধিগত ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।