মান্দায় বায়োচার প্রযুক্তিতে আগ্রহ মাটির স্বার্থও রক্ষা
- আপডেট টাইম : ১০:৪০:৪৫ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
- / ২৬৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
শাহাদুল ইসলাম (বাবু) নওগাঁ প্রতিনিধি।
নওগাঁর মান্দা উপজেলায় পরিবেশদূষণ রোধের পাশাপাশি কৃষিবন্ধু চুলার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এ চুলায় রান্নার পাশাপাশি উৎপাদিত বায়োচার (কার্বনসমৃদ্ধ জৈব সার) জমিতে ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্যও রক্ষা হচ্ছে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমিতে একবার বায়োচার ব্যবহার করলে শত বছর এর কার্যকারিতা থাকে। তাই কার্বনসমৃদ্ধ বায়োচার বা জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি জমির উর্বরতা ও ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মান্দার প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, সরিষা, গম, ধান, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ভুট্টাসহ নানা ফসলি জমিতে কার্বনসমৃদ্ধ বায়োচার বা কার্বনসমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করছেন। প্রকল্পটি আইসিসিও এবং কার্ক ইন এক্টাইয়ের সহায়তায় বেসরকারি সংস্থা সিসিডিবি (খ্রিষ্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ) মাঠপর্যায়ে ডিএইকে সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়ন করছে।
কৃষিবন্ধু চুলায় কাঠ বা গোবর ও বিভিন্ন ধরনের বায়োমাস বা কৃষি অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে বায়োচার পাওয়া যায়, যা কার্বনসমৃদ্ধ। এই কার্বনসমৃদ্ধ বায়োচার জমিতে ব্যবহারে উর্বরতা বৃদ্ধি পায় ও খরাপ্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চাষাবাদ করা যায়। বায়োচার জমিতে ভারী ও বিষাক্ত ধাতুকে (হেভি মেটাল) নিষ্ক্রিয় করে রাখে। ফলে উদ্ভিদের শিকড়ের সাহায্যে তা ফসল পর্যন্ত পৌঁছায় না। ফলে পাওয়া যায় নিরাপদ ও বিষাক্ত ধাতুমুক্ত ফসল। এই চুলায় ৩০-৪০ শতাংশ জ্বালানি কম লাগে তাই বনজ সম্পদ রক্ষা পায়। একই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার হাজি গোবিন্দপুর গ্রামের গৃহিণী আদুরি বেগম খাবার রান্নায় ভরসা করছেন কৃষিবন্ধু চুলার। আর চুলা থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে তৈরি করেন বায়োচার। তাঁর দাবি এসব বায়োচার ও কার্বনসমৃদ্ধ জৈব সার নিজের আলুর খেত ও বরজে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী কৃষিবন্ধু চুলা থেকে যে বায়োচার পান, তা ফসলে ব্যবহার করেন। এতে ফসলে পানি ও সার কম লাগে। ফসল অনেক তাড়াতাড়ি বড় হয়।
আদুরি বেগমের দেখাদেখি এলাকার অনেকেই বিভিন্ন সবজি ও পেঁয়াজের খেতে ব্যবহার করছেন বায়োচার। ব্যবহারকারীরা বলছেন, বায়োচার ও কার্বনসমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করায় জমিতে সেচ ও রাসায়নিক সার কম দিতে হচ্ছে। জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন। তাই দিন দিন বায়োচার প্রযুক্তিতে বাড়ছে ফসলের চাষাবাদ।
সম্প্রতি মান্দা উপজেলার হাজি গোবিন্দপুর গ্রামের বায়োচারের প্রদর্শনী প্লট ও কৃষিবন্ধু চুলায় বায়োচার উৎপাদন পরিদর্শন করেন নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ। এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন, সিসিডিবির বায়োচার প্রজেক্টের কৃষ্ণ কুমার সিংহ, মার্কেটিং কর্মকর্তা নির্মল টুডু, সিপিআরপির সিনিয়র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা কাওসার আল মামুনসহ সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, অধিক হারে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির জৈব পদার্থ কার্বন দিন দিন কমে যাচ্ছে। ক্রমে হ্রাস পাওয়া মাটিতে পরপর কার্বনসমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহারে কার্বন বৃদ্ধি পাবে। এর ব্যবহারে মাটির স্থায়িত্বশীলতা ও স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ফলে রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করেও কৃষকেরা ফসলের বাড়তি ফলন পাবেন।