যেমন হবে আগামীর অর্থনীতি
- আপডেট টাইম : ০৬:১৪:৫০ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি ২০২১
- / ২৭৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।
অসংখ্য প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২০২০। এলো নতুন বছর। নতুন বছর ঘিরেও জনসাধারণের মনে বিরাজমান উৎকণ্ঠা, কেমন কাটবে ২০২১—হতাশা, বিপর্যয়, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের, না অপার নতুন সম্ভাবনার ২০২১?
কোভিড-১৯ মহামারিতে ২০২০ সালে বিশ্বের মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। থমকে দিয়েছে সবকিছু। এ মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। অধিকাংশ দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক কিংবা সংকুচিত হয়ে গেছে। এখনো সম্পূর্ণভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য সব দেশ।
অন্যান্য সমস্ত অর্থনীতির মতোই মহামারি চলাকালে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ ও সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় আমাদের চাপ বেড়েছে। আমাদের অর্থনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে একীভূত হওয়ায় রফতানি ও বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।হঠাৎ কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের কারণে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের যাবতীয় কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে শ্রমিক ছাঁটাই এবং প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফিরে আসায় বেকারত্ব আরো বৃদ্ধি পায়। এই সবকিছুর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পড়েছিল।
সরকারি তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশের বিপরীতে ৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানের গবেষণামতে তা আরও নিম্নমুখী ছিল। বেশ কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে, করোনাকালে স্বল্প প্রবৃদ্ধি এবং ধীরগতির অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষা, বৈষম্য এবং অনেক সামাজিক দিকে কড়া প্রভাব ফেলেছে।
এছাড়া আমদানি, রফতানি, বেসরকারি বিনিয়োগ, বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এবং রাজস্ব আদায়ের মতো কয়েকটি অর্থনৈতিক সূচকের দুর্বল কার্যকারিতার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বেশ ধকল পোহাতে হয়েছে। নতুন বছর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে এখনো রয়েছে অনিশ্চয়তা। শত অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছি। ২০২০-এর বিষময় তিক্ত অভিজ্ঞতাতে ভুলে গিয়ে আমরা ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করতে পারলেই অর্থনৈতিক এ অচলাবস্থা থেকে মুক্তি সম্ভব হবে।
উন্নয়নের অভিপ্রায়ে বর্তমান বছর এবং আসন্ন বছরগুলোতে প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান অবস্থান বুঝে এখনই প্রয়োজনীয় ম্যাপিং করতে হবে, যাতে উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যের সঙ্গে ভবিষ্যত্ মহাকর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়। ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এগোনোর ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হবে। ফলে ভবিষ্যতে আরও উন্নত রোডপ্ল্যান করা সম্ভব হবে। ২০২০ সালের প্রতিকূল পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা ২০২১ সালে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে সারা বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক রোল মডেলের দেশ। বেশ কিছু দেশ তাদের কর্মপরিকল্পনায় বাংলাদেশের উপলব্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বলছে, মহামারির আঘাত সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক খাতগুলোতে গতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে।
এখন কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ গতিশীল রয়েছে। শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেই গতি ফিরছে না, পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে রফতানি আয়। এ বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়তে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। যেসব দেশে করোনার অধিক টিকা নিশ্চিত হবে, স্বভাবতই সেসব দেশের ভোগ-ব্যয় বাড়বে। এতে করে আমাদের রফতানি খাত দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়। এরই মধ্যে অনেকাংশেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে রফতানি বাণিজ্য। বিগত বছরের তুলনায় বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পরিবর্তন এসেছে এ বছরে।
প্রবাসীদের বেকারত্ব হ্রাস পেয়ে বেড়েছে আয়, বেড়েছে রেমিট্যান্স। ২০২০-২১ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট ১১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের (১১ কোটি ১৯ লাখ ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা) একই সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্সের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি। এছাড়া মেগা প্রকল্পে গতি এসেছে। সংকটে থাকা শেয়ারবাজারও যেন গতি ফিরে পেয়েছে। বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত টাকার জোগান রয়েছে ব্যাংকের কাছে।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ নামের ঐ রিপোর্টটি গত ২৫ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। এ রিপোর্টে বর্তমান বছর সম্পর্কেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
তবে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অন্তরায়ও রয়েছে। দরিদ্রতা, বেকারত্ব, অদক্ষ শ্রমশক্তি, দুর্নীতি, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার অভাব, দুর্বল অবকাঠামো ইত্যাদি। এসব সমস্যার নিরসন নিশ্চিত করাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে কাজ করতে পারলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে।
২০৩০ সাল নাগাদ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এখন যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার সুফল সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছাতে হবে। ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য হ্রাসকরণে অর্থনৈতিক উন্নতি, সুযোগ-সুবিধা ও প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষ যেন সমানভাবে পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই দেশের জনগণের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য হাতে ধরা দেবে।