ঢাকা ০৬:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত মোংলায় ভূমিদস্যু মেম্বার জাহাঙ্গীর মল্লিকের প্রতারণায় সর্বস্বান্ত দুলাল বিশ্বাস আজমিরীগঞ্জে চেয়ারম্যান  মেম্বারের পূর্ব বিরোধের জেরে  দুর্বৃত্তরা বিষ দিয়ে পুড়িয়ে দিল বর্গাচাষী কৃষকের সোনালী  স্বপ্ন ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রেন দূর্ঘটনায় নিহত ১, গুরুতর আহত ১ ধানমন্ডিতে র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতি, আটক ৪ ঈদ’কে সামনে রেখে পরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে চবিতে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ নিম্নমান সহকারীর ঈদের ছুটিতে দূরে যাচ্ছেন? বাসা ছাড়ার আগে বিষয়গুলো খেয়াল করুন চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা পিরোজপুর জেলার, মঠবাড়িয়া উপজেলায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়

কুমিল্লার রসমালাই

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৩২০ ৫০০০.০ বার পাঠক

সময়ের কন্ঠ রিপোর্টে।।

কুমিল্লার মিষ্টির খ্যাতি রয়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও। কুমিল্লায় গেছেন, কিন্তু রসমালাইয়ের স্বাদ নেননি এমন মানুষ পাওয়াই দুষ্কর। দেশের বিভিন্ন স্থানে রসমালাই তৈরি হলেও কুমিল্লার রসমালাই স্বাদে অতুলনীয়। সাম্প্রতিক সময়ে ভেজাল ও নকল রসমালাইয়ের কারণে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রসমালাইয়ের সুনামে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।

কুমিল্লা রসমালাইয়ের আদি উদ্ভাবক ত্রিপুরা রাজ্যের ঘোষ সম্প্রদায়। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ত্রিপুরা থেকে ঘোষ সম্প্রদায়ের লোকেরা বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী এ অঞ্চলের লোকদের বাহারি রকমের মিষ্টি সরবরাহ করতেন। সে সময় রসগোল্লার সঙ্গে মালাইকারির প্রলেপ দেওয়া এক রকম মিষ্টির প্রচলনও ছিল। কেউ কেউ একে ‘মালাই রসগোল্লা’ বলতেন। পরবর্তী সময়ে দুধ জ্বাল দিয়ে খির বানিয়ে তার মধ্যে শুকনো রসগোল্লা ডুবিয়ে তৈরি করা হয় খিরসহ রসগোল্লা। এর নাম দেওয়া হয় ‘খিরভোগ’। গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে এই রসগোল্লার আকার ছোট করে দুধের খিরের মধ্যে ডুবিয়ে পরিবেশন শুরু হয় এবং একপর্যায়ে এর নামকরণ হয় রসমালাই।

অনেকের মতে, পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার পর অবাঙালিরা কুমিল্লায় এসে খিরভোগকে রসমালাই বলতে শুরু করেন। প্রথম দিকে মাটির হাঁড়িতে করে বিক্রি হতো রসমালাই। পরে চালু হয় পলিথিনের ঠোঙা ও এরপর আসে প্লাস্টিকের কৌটায় করে বিক্রির প্রথা।

বর্তমানে প্রকৃত স্বাদের রসমালাই পাওয়া যায় হাতেগোনা কয়েকটি মিষ্টির দোকানে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় মনোহরপুরের মাতৃভাণ্ডার, ভগবতী পেড়া ভাণ্ডার ও শীতল ভাণ্ডার। মাতৃভাণ্ডার স্থাপিত হয় ১৯৩০ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা ফনিন্দ্র সেনগুপ্ত। তাঁদের আদি বাসস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া। প্রকৃত রসমালাই বিক্রির দোকানগুলোতে নেই চাকচিক্য। দোকানে বসার ব্যবস্থাও নেই। বাইরের চাকচিক্যের চেয়ে স্বাদ এবং মানই এদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিদিন ৮/৯ মণ রসমালাই তৈরি করা হয়। ভোরে ও বিকেলে ৫-৬ জন দুধ ব্যবসায়ী প্রায় ১৫-২০ মণ দুধ সরবরাহ করে থাকেন। মাতৃভাণ্ডারে প্রতিদিন তিনবার নির্দিষ্ট কারিগর দিয়ে রসমালাই তৈরি করা হয়।

প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। স্থানীয়রা ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে কুমিল্লায় বেড়াতে আসা লোকজন রসমালাই কিনতে ভুল করেন না। বাংলাদেশে আগত বিদেশি মেহমান আপ্যায়নের মেন্যুতেও থাকে কুমিল্লার রসমালাই। রাষ্ট্রীয় সফরে আসা অতিথিদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজেও রাখা হয় এটা।

ডায়াবেটিক রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিষ্টি এড়িয়ে চলেন। কিন্তু তাঁরা যাতে কুমিল্লার রসমালাইয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য এখন ‘ডায়াবেটিক রসমালাই’ও তৈরি হচ্ছে। এটি প্রথম তৈরি শুরু করে নজরুল অ্যাভিনিউয়ের অমৃত মিষ্টি ভাণ্ডার।

একসময় কুমিল্লার রসমালাই সাধারণের নাগালের মধ্যে থাকলেও দিনদিন বাড়ছে এর দাম। এক কেজি রসমালাইয়ের দাম ২৮০ টাকা, আর এক প্লেটের দাম ৫০ টাকা। রসমালাই বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রতিদিন বিক্রি হয় কয়েক লাখ টাকার রসমালাই। বৃহস্পতি ও শুক্র বার বিক্রি বেড়ে যায়।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাতৃভাণ্ডারের নামের আগে নিউ, প্রিয়, আদি, কুমিল্লা ইত্যাদি শব্দ যুক্ত করে রসমালাই বিক্রি করায় যেমন ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রসমালাইয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কুমিল্লার রসমালাই

আপডেট টাইম : ০৬:০৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১

সময়ের কন্ঠ রিপোর্টে।।

কুমিল্লার মিষ্টির খ্যাতি রয়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও। কুমিল্লায় গেছেন, কিন্তু রসমালাইয়ের স্বাদ নেননি এমন মানুষ পাওয়াই দুষ্কর। দেশের বিভিন্ন স্থানে রসমালাই তৈরি হলেও কুমিল্লার রসমালাই স্বাদে অতুলনীয়। সাম্প্রতিক সময়ে ভেজাল ও নকল রসমালাইয়ের কারণে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রসমালাইয়ের সুনামে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।

কুমিল্লা রসমালাইয়ের আদি উদ্ভাবক ত্রিপুরা রাজ্যের ঘোষ সম্প্রদায়। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ত্রিপুরা থেকে ঘোষ সম্প্রদায়ের লোকেরা বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী এ অঞ্চলের লোকদের বাহারি রকমের মিষ্টি সরবরাহ করতেন। সে সময় রসগোল্লার সঙ্গে মালাইকারির প্রলেপ দেওয়া এক রকম মিষ্টির প্রচলনও ছিল। কেউ কেউ একে ‘মালাই রসগোল্লা’ বলতেন। পরবর্তী সময়ে দুধ জ্বাল দিয়ে খির বানিয়ে তার মধ্যে শুকনো রসগোল্লা ডুবিয়ে তৈরি করা হয় খিরসহ রসগোল্লা। এর নাম দেওয়া হয় ‘খিরভোগ’। গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে এই রসগোল্লার আকার ছোট করে দুধের খিরের মধ্যে ডুবিয়ে পরিবেশন শুরু হয় এবং একপর্যায়ে এর নামকরণ হয় রসমালাই।

অনেকের মতে, পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার পর অবাঙালিরা কুমিল্লায় এসে খিরভোগকে রসমালাই বলতে শুরু করেন। প্রথম দিকে মাটির হাঁড়িতে করে বিক্রি হতো রসমালাই। পরে চালু হয় পলিথিনের ঠোঙা ও এরপর আসে প্লাস্টিকের কৌটায় করে বিক্রির প্রথা।

বর্তমানে প্রকৃত স্বাদের রসমালাই পাওয়া যায় হাতেগোনা কয়েকটি মিষ্টির দোকানে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় মনোহরপুরের মাতৃভাণ্ডার, ভগবতী পেড়া ভাণ্ডার ও শীতল ভাণ্ডার। মাতৃভাণ্ডার স্থাপিত হয় ১৯৩০ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা ফনিন্দ্র সেনগুপ্ত। তাঁদের আদি বাসস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া। প্রকৃত রসমালাই বিক্রির দোকানগুলোতে নেই চাকচিক্য। দোকানে বসার ব্যবস্থাও নেই। বাইরের চাকচিক্যের চেয়ে স্বাদ এবং মানই এদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিদিন ৮/৯ মণ রসমালাই তৈরি করা হয়। ভোরে ও বিকেলে ৫-৬ জন দুধ ব্যবসায়ী প্রায় ১৫-২০ মণ দুধ সরবরাহ করে থাকেন। মাতৃভাণ্ডারে প্রতিদিন তিনবার নির্দিষ্ট কারিগর দিয়ে রসমালাই তৈরি করা হয়।

প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। স্থানীয়রা ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে কুমিল্লায় বেড়াতে আসা লোকজন রসমালাই কিনতে ভুল করেন না। বাংলাদেশে আগত বিদেশি মেহমান আপ্যায়নের মেন্যুতেও থাকে কুমিল্লার রসমালাই। রাষ্ট্রীয় সফরে আসা অতিথিদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজেও রাখা হয় এটা।

ডায়াবেটিক রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিষ্টি এড়িয়ে চলেন। কিন্তু তাঁরা যাতে কুমিল্লার রসমালাইয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য এখন ‘ডায়াবেটিক রসমালাই’ও তৈরি হচ্ছে। এটি প্রথম তৈরি শুরু করে নজরুল অ্যাভিনিউয়ের অমৃত মিষ্টি ভাণ্ডার।

একসময় কুমিল্লার রসমালাই সাধারণের নাগালের মধ্যে থাকলেও দিনদিন বাড়ছে এর দাম। এক কেজি রসমালাইয়ের দাম ২৮০ টাকা, আর এক প্লেটের দাম ৫০ টাকা। রসমালাই বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রতিদিন বিক্রি হয় কয়েক লাখ টাকার রসমালাই। বৃহস্পতি ও শুক্র বার বিক্রি বেড়ে যায়।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাতৃভাণ্ডারের নামের আগে নিউ, প্রিয়, আদি, কুমিল্লা ইত্যাদি শব্দ যুক্ত করে রসমালাই বিক্রি করায় যেমন ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রসমালাইয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।