ইয়েমেনে ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন যে নারী ইতিহাসের সাক্ষী
- আপডেট টাইম : ০৬:৩৮:১৭ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১১
- / ২৩৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
আন্তর্জাতিক রিপোর্ট।।
ইয়েমেনে ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন যে নারী
২১ মিনিট আগে।
ইশরাক আল মাকতারি, ২০১১ সালে
মিশর আর তিউনিসিয়ার গণঅভ্যুত্থানে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ইয়েমেনেও শুরু হয়েছিল পরিবর্তনের দাবিতে তরুণ ইয়েমেনিদের বিক্ষোভ।
কিন্তু ইয়েমেনে সেই বিক্ষোভ চাপা পড়ে গিয়েছিল পরবর্তীকালের যুদ্ধ আর মানবিক দুর্যোগে।
যারা সেই বিক্ষোভে যোগ দিতে সেদিন পথে নেমেছিলেন তাদের একজন ইশরাক আল-মাকতারি – ইয়েমেনের তায়েজ শহরের একজন আইনজীবী ও নারী অধিকার কর্মী।
তিনি তার দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে প্রথম দিনের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। সেই বিক্ষোভ ছিল ইয়েমেনের নারীদের জন্য আত্মপ্রকাশের এক নজিরবিহীন সুযোগ।
ইশরাক আল মাকতারির সাথে কথা বলেছেন বিবিসির সুমাইয়া বখশ – যা নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষীর এই পর্ব।
২০১১ সালের ২৭শে জানুয়ারি। আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তখন পরিবর্তনের দাবিতে যে গণঅভ্যুত্থান চলছিল – তার ঢেউ এসে পৌছালো ইয়েমেনে।
রাজধানী সানার রাস্তায় নেমে এলো হাজার হাজার মানুষ। এই বিক্ষোভেই পরবর্তীকালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন দীর্ঘদিন ধরে শাসনক্ষমতায় থাকা আলি আবদুল্লাহ সালেহ।
ইশরাক আল-মাকতারি বলছিলেন, “ইয়েমেনের পরিস্থিতি তখন অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে যখন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করলেন যে তিনি তার নিজের পুননির্বাচন এবং তার ছেলেকে তার উত্তরাধিকারী করার জন্য সংবিধানে সংশোধনী আনবেন, তখন বহু তরুণ যুবক বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছিল। দুর্নীতি আর মুদ্রাস্ফীতিও তখন বেড়ে গিয়েছিল।
ইশরাক আল মাকতারি ছিলেন ইয়েমেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় তায়েজ শহরের একজন আইনজীবী ও নারী অধিকার কর্মী।
ওই শহরটি ছিল প্রধানত শিক্ষিত লোকদের বৈপ্লবিক বিস্ফোরণ তখন অভাবনীয় কিছু ছিল না। আর আরব বসন্তের ঘটনাবলী তাকে আরো উস্কে দিয়েছিল – যা ঘটেছিল জানুয়ারি মাসে তিউনিসিয়া ও মিশরে” – বলছিলেন তিনি।
২০১১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি খবর ছড়িয়ে পড়লো যে মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক পদত্যাগ করেছেন – তখন ইয়েমেনিরাও অনুভব করলেন যে একটি নতুন ভবিষ্যতের সম্ভাবনা তাদের হাতের নাগালে।
“নিরাপত্তা বাহিনী নজর রাখছিল। বিক্ষোভকারীদের নাম টুকে রাখছিল তারা। আমার মনের মধ্যে যেরকম একটা আশাবাদ কাজ করছিল তেমনি, এটা স্বীকার করতেই হবে যে সাথে সাথে এক রকম ভয়ও করছিল। আমার দুটি ছোট ছোট মেয়ে, তাদের দায়িত্ব তো আমারই। কারণ সেদিন রাতে তাদের বাবা প্রদেশের বাইরে এক জায়গায় গিয়েছিল।”
“আমরা বাড়ি ফিরলাম ভোর তিনটার সময়। সাধারণ ইয়েমেনিদের কাছে এটা ছিল রাস্তায় রাত কাটানোর মতই অস্বাভাবিক ঘটনা।
“
সারা ইয়েমেন জুড়ে বিক্ষোভ এবং অবস্থান ধর্মঘট দানা বাঁধতে লাগলো। সমাজের সর্বস্তরের সব মত-পথের ইয়েমেনিরা এতে যোগ দিতে লাগলেন।
তার মধ্যে ছিল উত্তরের একটি বিদ্রোহী আন্দোলন – যাদের বলা হতো হুতি। এই হুতিদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট সালেহ অন্তত ৬ বার যুদ্ধ করেছেন।
এই অস্থিরতার মধ্যে হুতি বিদ্রোহীরা
ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের সা’দায় তাদের নিয়ন্ত্রণ সংহত করতে সক্ষম হলো।
অন্যদিকে তায়েজে বিক্ষোভকারীরা একটি অবস্থান কর্মসুচি পালন করছিল – যে জায়গাটি পরিচিত হয় ফ্রিডম স্কোয়ার নামে। এটা ছিল ইয়েমেনের নারীদের জন্য তাদের উপস্থিতি জানান দেবার এক অভূতপূর্ব সুযোগ।
দ্বিতীয় দিন থেকেই অনেক নারাী বিক্ষোভে যোগ দিতে লাগলো। এর মধ্যে ছিল আইনের ছাত্রী, ও সাংবাদিকরা, তার পর নারী শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকরা যোগ দিলেন।
এটা ছিল এক বিরাট ব্যাপার। তরুণী নারীরা চাইছিলেন, ইয়েমেনের নতুন প্রস্তাবিত সংবিধান রচনায় তাদের ভুমিকা থাকতে হবে। এবং মোটের ওপর বলতে গেলে তাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখানো হয়েছিল।
“
বিক্ষোভকারীরা নিজেদের সংগঠিত করলেন। তাদের রাজনৈতিক দাবির পাশাপাশি দেশে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলছিলেন তারা।
হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইয়েমেনের সরকারি বাহিনী”
আমি নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে কাজ করছিলাম। তাই বিক্ষোভকারীদের তাঁবুগুলোর ভেতরে আমি কিছু কোর্স করাচ্ছিলাম – আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে কথা বলছিলাম। মানুষ তখন মানবাধিকার সম্পর্কে জানতে চাইতো।
কয়েক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি খারাপ দিকে মোড় নিলো। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠলো নিরাপত্তা বাহিনী।মার্চের ১৮ তারিখ ছিল শুক্রবার – দিনটির নাম দেয়া হয়েছিল মর্যাদা দিবস। সেদিন রাজধানী সানায় সেনাবাহিনী এবং প্রেসিডেন্ট সালেহর অনুগতরা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। তাতে নিহত হয় ৫০ জনেরও বেশি লোক।তায়েজ শহরেও ফ্রিডম স্কোয়ারে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ চালায় সেনাবাহিনী । তাতে নিহত হয় প্রায় ২০ জন। বিক্ষোভকারীদের তাঁবুগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়।
ইয়েমেনে বিক্ষোভ শুরুর আগে তিন দশকেরও বেশি ক্ষমতায় ছিলেন আলি আবদুল্লাহ সালেহ” কিন্তু প্রতি শুক্রবারেই বিক্ষোভকারীরা ফ্রিডম স্কোয়ারে ফিরে আসতো।, সেখানে নামাজ পড়তো। ২০১১ সালের ১১ই নভেম্বর মাসে সরকারি বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু করলো। নিহত হলো তিন জন মহিলা সহ ১৩ জন।
কেউ ভাবতেই পারেনি যে মহিলারা যেখানে আছে এরকম একটা জায়গায় কেউ মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে পারে। আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলাম আমার বোনের কথা ভেবে। সে তখন ওই স্কোয়ারে ছিল। আমি সেখানে গেলাম।”
“খুব ভয় করছিল। কারণ তখনো গোলাবর্ষণ চলছিল। আমার মনে আছে আমি স্কোয়ারের পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোর দেয়াল ঘেঁষে হাঁটছিলাম। তাঁবুগুলোর ওপর গুলি এসে পড়ছিল। আমার চোখের সামনেই।”
ইশরাক তার বোনকে খুঁজে পাননি। তখন তিনি হাসপাতালে গেলেন।
“হাসপাতালে আসার সাথে সাথে সেখানেও গোলাবর্ষণ শুরু হলো। আমাদের সবাইকে মাটির নিচের তলায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। আমাদের মাথার ওপর ইট-সুরকি এসে পড়ছিল। আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম, কাঁদছিলাম । কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কারণ হাসপাতালের ওপর গোলাবর্ষণ করা হচ্ছিল। নারী ও শিশুরা আহত হয়েছিল। সেই দৃশ্য এখনো আমার চোখে ভাসে। এতে শাসকগোষ্ঠীর ওপর আমাদের রাগ আরো বেড়ে গেল।”
ক্ষমতাচ্যুত হবার পর আলি আবদুল্লাহ সালেহ হুতি বিদ্রোহীদের সাথে আঁতাত করেন”