নারায়নগঞ্জে ঘুষের রাজ্য হিসাবে পরিচিত সোনারগাঁও উপজেলা ভূমি অফিস
- আপডেট টাইম : ০২:০২:৩৩ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি ২০২১
- / ৫৯৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
আরিফুল ইসলাম শামিমঃ বেঁচে থাকার জন্য এক জন মানুষের শেষ অবলম্বন এক টুকরো জমি। সেই জমিকে নিজের করে রাখতে ওয়ারিশ ও সরকারী নিময়নুযায়ী নামজারি করতে হয়। আর এতেই সব আপত্তি। এক টুকরো জমি নামজারি করতে হয়রানি হতে হয় পদে পদে। ভুমি বন্দোবস্ত ও নামজারির জন্য বৃটিশ আমল থেকেই উপজেলা ভুমি অফিস ও ইউনিয়ন ভুমি করা হয়েছে। সেখানে নায়েব সহকারী নায়েব ও সহকারী কমিশনার কানুনগোসহ অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন ভুমি মালিকদের জমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মোতাবেক নামজারি ও ভুমি বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য। কিন্তু সেই নামজারি করতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয় সাধারণ মানুষকে। আবার অনেক সময় ভুমি কর্মকর্তারা অর্থের বিনিময়ে সরেজমিনে তদন্ত না করেই একজনের জমি আরেকজনের নামে নামজারি করে দেন। ফের প্রকৃত জমির মালিক জমির কাগজপত্র নিয়ে ভুমি অফিসে গেলে কাগজপত্র দেখে নায়েব অথবা সহকারী কমিশনার বলেন মিসকেস করতে। এতেও হয়রানির শেষ নেই প্রকৃত ভুমি মালিকের। এতে অর্থ ও সময় দুটোই ব্যয় করতে হয় ভুমির মালিককে।
এরকম হরেক রকমের হয়রানির অপর নাম সোনারগাঁ উপজেলা ভুমি অফিস। এভাবে দিন বছর শেষ হয় দেশ জিডিটার হয় কত কর্মকর্তা বদলী হন কিন্তু বদলায় না ভুমি মালিকদের হয়রানি।
সোনারগাঁ উপজেলা ভুমি অফিসে গিয়ে দেখা যায় ভুমি মালিকদের হয়রানির হরেক রকম চিত্র। কেউ নাম জারির জন্য ঘুরছেন মাসকে মাস আবার বছরও। টাকার পরিমান বেশী হলে নিদিষ্ট সময়ের আগেই হয়ে যায় নামজারি। আবার টাকা দিয়ে একটা নামজারীল জন্য ঘুরতে হয় বছরের পর বছর। আবার দেখা যায় ভুমি অফিসের কর্মকর্তাদের বিশেষ ক্ষমতায় একজনের জমি আরেক জনের নামে নামজারি করে দেন। পরে দু’পক্ষের লোকজনকে ডেকে নিয়ে নামিয়ে দেন মিসকেসের মামলায়। সেখানেও হয়রানির শেষ নেই। মিসকেস করতে ওমেদারকে দিতে হয় সাক্ষাত ফি হাজার টাকা। এরপর মিসকেসের তারিখ অনুযায়ী উকিরদের মতো দিতে হয় বিভিন্ন অংকের ফি। আবার টাকা কমবেশী হয়ে নিদিষ্ট সময়ের আগে পিছে করে দেন মিসকেসের তারিখ। অনেকে অভিযোগ করেন, দুই থেকে তিন বছর মিস কেস চালানোর পর হঠাৎ করে ভুমি অফিসে গিয়ে শুনেন তার নথি অফিস থেকে গায়েব। তখন কি করা? ওমেদারই পরামর্শ দেন হাজার খানেক টাকা দিয়ে নতুন করে কেস ফাইল খুলতে হবে। তারপর আবার বছরের পর বছর চলবে মামলা। খোয়াতে হবে নিজের পকেটের টাকা। এরকম হাজার রকমের অভিযোগ পাওয়া যায় ভুমি অফিসের সামনে থাকা অপেক্ষায় সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে।
ভূমি অফিসে নামজারি করতে আসা হানিফা জানান, গত এক বছর আগে তিনি তার পৃত্রিক সম্পতির সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিজের নামে নামজারি করতে দিয়েছেন। সময় মতো পিরোজপুর ভুমি অফিসের নায়েব জালালউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ না করায় তিনি আমার নামজারিটি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নামঞ্জুর করে দেন। কয়েকদিন পর তিনি ভুমি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নামজারিটি না মঞ্জুর করা হয়েছে। কি কারণে করা হয়েছে জানতে চাইলে জালাল সাহেব বিভিন্ন কারণ দেখান। পরে তিনি একই কাগজপত্রে করা আমার ভাইয়ের জমির খারিজের কাগজ নিয়ে নায়েবকে দেখালে নায়েব নিজে সর্ম্পূন কাগজ ঠিক করে ফের জমা দিতে বলেন। তিনি আরো ৬/৭ মাস আগে জালালউদ্দিনের দেয়া কাগজপত্র জমা দেয়ার পর এখনও নামজারিটি পাননি। এরপর তিনি নিজেও সহকারী কমিশনার (ভুমি) আল-মামুনকে সরেজমিনে গিয়ে দুইবার বলার পরও তিনি নামজারিটি সই করেননি তৎকালীন এসিল্যান্ড।
রবিউল ইসলাম জানান, গত দেড় বছর আগে আমি জামপুর মৌজায় একটি নামজারি দিয়েছি। এখন আমার নামজারিটি সর্ম্পুন হয়নি। নামজারির জন্য আমি দেড় বছর ধরে ভুমি অফিসে বিভিন্ন কর্মকর্তার ধারস্ত হচ্ছি তারপর নাম জারিটি পাচ্ছি না। কবে নাগাদ পাবো তাও জানি না।
সনমান্দি এলাকার মোবারক জানান, গত দুই বছর আগে তার পত্রিক সম্পতি নামজারি করে নিয়েছেন। এখন একই জমি তার বোনের নামে নামজারি করতে এসেছেন। আসার পর সার্ভেয়ার জানান তার জমিটি নাকি খাসজমি। মোবারক অভিযোগ করেন, আমার বাপ-দাদার নামের সম্পতিটি নাকি দুই বছরের মধ্যে সরকারী হয়ে গেছে। এটা কি কোন সুস্থ মানুষের কথা।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) গোলাম মোস্তফা মুন্না জানান, আমি এ ভুমি অফিসে নতুন যোগদান করেছি। আগে কে বা কারা মানুষকে হয়রানি করেছে আমার জানা নেই। আমি সবার উদ্দেশ্যে বলেছি, কাগজপত্র যদি ঠিক থাকে তাহলে নিদিষ্ট সময়ে মধ্যে প্রতিটি মানুষ ভুমি অফিসের সেবা পাবে।