রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা করা হচ্ছে : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
- আপডেট টাইম : ১২:২৩:৩৩ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি ২০২১
- / ২৮৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।
ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে আয়তনের আলোকে জনঘনত্ব নির্ধারণে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টুরোডে তার সরকারি বাসভবনে ‘মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনের দুই বছর পূর্তি’ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ কথা জানান।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তত্ত্বাবধানে ২০ বছর মেয়াদী ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রণয়ন করা হচ্ছে। সম্প্রতি আমাকে এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি পেশাজীবীদের (পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও প্রকৌশলী) সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। আমার কাছেও এটাই মনে হয়েছে যে, ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে জনসংখ্যা বাড়ালে শহরকে বাসযোগ্য রাখা সম্ভব হবে না। এজন্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে এ শহরের আয়তন, সড়ক ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে জনঘনত্ব নির্ধারণ করতে হবে। সে লক্ষে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ড্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এটা বাস্তবায়নে সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগীতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ঢাকাশহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। প্রয়োজনের তুলনায় সড়ক অবকাঠামো নেই। আর ভবনের উচ্চতা বাড়ালে সড়ক অবকাঠামো সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে না। তখন শহরের যানজট বাড়বে। সে কারণে যতটুকুন উচ্চতা হলে এ শহর বাসউপযোগী থাকবে, সে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়টি সকলকে বুঝতে হবে। কেননা সকলে মিলেই একটি শহর বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রাজউক পূর্বাচল শহর গড়ে তুলছে ১০ লাখ মানুষের বসবাসের চিন্তা করে। কিন্তু যেভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে ধারণা করা যায় যে, সেখানে অন্তত ৫০ লাখ মানুষ বসবাস করবে। আর এটা হলে চার লেনের সড়ক হলেও তাতে যানজট নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এজন্য এসব বিষয় নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে ধাপে ধাপে এ শহরকে বাসযোগ্য করা সম্ভব হবে। সে লক্ষ্যে আমি সংশ্লিষ্টদেরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
ঢাকার খাল পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, খাল দখলুমক্ত করা বা রাখার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। এটা জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সেই বিবেচনা করে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকার দুই মেয়রকে খালের দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু, তৎকালীন দক্ষিণ সিটি মেয়র এ দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এজন্য সেসময় এটা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে বর্তমান দুই মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাদেরকে বিষয়টি বুঝালে তারা দায়িত¦ গ্রহণে আগ্রহী হওয়ায় যুগান্তকারী এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে খালের দায়িত্ব দিয়েই আমার বা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব শেষ করেনি। আমরা পরিকল্পনা করছি। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে খাল পুনরুদ্ধার ও টেকসই দখলমুক্ত রাখতে নানা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। দুই সিটি কর্পোরেশন এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ বিষয়ে শিগগিরই একটা সভা করবো। সেখানে দুই সিটি কর্পোরেশনকে এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। আর এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা অর্থায়ন করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা নিজস্ব এবং দাতা সংস্থার অর্থায়নে খালগুলো পুনরুদ্ধারে প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করবো।
গ্রামীণ অবকাঠামো সম্পর্কে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারের বিভিন্ন সভায় গেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) সড়কের মান খারাপ এমন অভিযোগ শুনতে হতো। তখন আমি বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করে জানতে পেরেছি এখানে সড়ক, ব্রিজসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দ কম থাকে। এজন্য উন্নয়ন কাজের টেকসই কম হতো। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি বুঝিয়ে সে সমস্যার সমাধান করেছি। বর্তমানে যেসব উন্নয়ন কাজ করছে, সেসব সড়ক ও ব্রিজের কাজের মান ভাল হচ্ছে। এরপরও কিছু ব্যতয়ের খবর গণমাধ্যমের সূত্রে জানতে পারছি। সেসব ব্যাপারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছি। কোন অনিয়ম হলে সেসব ব্যাপারে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপারে একটি গাইডলাইন করা হয়েছে। যে গাইন লাইনের আলোকে দেশের সকল এলাকার সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। যেমন-গ্রামীণ সড়কের প্রশ্বস্তা ১০ ফুট, ইউনিয়ন সড়কের প্রশ্বস্তা ১২ ফুট, উপজেলা পরিষদ সড়কের প্রশ্বস্ততা হবে ১৬ থেকে ২০ ফুট। এ গাইডলাইনে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করে দেয়া হচ্ছে। সেটা অনুসরণ করলে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভভ হবে। শিগগিরই এটা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
পৌরসভার বেতন-ভাতা বকেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর জানতে পারলাম অনেক পৌরসভা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করছে না। আর্থিক সক্ষমতা নেই, এমন দাবি করেন তারা। যদিও আইন অনুযায়ী পৌরসভাগুলো নিজস্ব আয়ে চলার কথা। তখন গোড়ার গলদ বোঝার চেষ্টা করলাম। যেসব পৌরসভায় বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ছে সেসব পৌরসভার জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ করে দেই। এমনও ঘটনা ঘটেছে এ ধরনের বিদেশ সফরে সচিব ও মন্ত্রীর যাওয়ার কথা থাকলেও সেসব সফর বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি পৌরমেয়র বা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরে এ কথা বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। তাহলে ট্যাক্স (রাজস্ব) আদায় বাড়বে। জনগণ স্বেচ্ছায় ট্যাক্স দেবে। এ উদ্যোগে আমরা অনেক সফলতা পেয়েছি। অনেক পৌরসভা আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে। এ নিয়ম অনুসরণ করে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার আয় ৮০ লাখ টাকা থেকে ৪ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যাগ্রস্থ পৌরসভা গুলোকে সহায়তা দেয়া হবে। তবে আমরা পৌরসভার সক্ষমতা বাড়াতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
ইউনিয়ন পরিষদ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে ইউনিয়ন পরিষদ কাঠামো। এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করা না হলে দেশ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদ কাঠামোকে শক্তিশালী করার বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বনির্ভর করতে চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা সম্ভব হলে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় নাগরিক সেবা পৌছে দেয়া সম্ভব হবে। বিগত দুই মেয়রের কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, আমার নীতি হল সবাইকে নিয়ে কাজ করা। আমি বিশ্বাস করি, সবাইকে নিয়ে কাজ করলে ফলাফল ভাল হয়। সে জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যে কোন বিষয়ে আলোচনার জন্য সুযোগ রেখেছি। এ কারণে আমার কিছু সময় বেশি খরচ হলেও কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা সহজতর হচ্ছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ওয়াসা, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের যে কোন প্রয়োজনে সহজেই আমরা সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ সকল ফাইলপত্র আমি দেখছি এবং বুঝে স্বাক্ষর করছি। এতে কাজের চাপ বাড়লেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন উদ্যোক্তা। অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। সেগুলো সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করেছি। এছাড়া দেশ-বিদেশ ঘুরে এবং রাজনীতি লব্ধ জ্ঞান থেকে দ্রুততম সময়ে এ মন্ত্রণালয়কে বুঝে নিয়েছি। সে কারণে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোন সমস্যা বোধ করিনা।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার দায়িত্বপালনকালে করোনাভাইরাস এবং এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস মোকাবেলা করতে হয়েছে। এসময় আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংশ্লিষ্টা সংস্থাগুলোক সঙ্গে নিয়ে মাঠে থেকেছি। সকলের প্রচেষ্টায় আমরা এ দুটি কঠিন সময় মোকাবেলা করেছি।